শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৮৩। দিল্লী আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রতিনিধিদলের কর্তৃক বাংলাদেশে প্রবেশের সিদ্ধান্ত বাতিল | হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড | ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ |
প্রতিনিধিদলের সীমান্ত অতিক্রমের সিদ্ধান্ত বাতিল
(নিজস্ব প্রতিবেদকের বরাত দিয়ে)
দিল্লীতে বাংলাদেশকে নিয়ে করা সদ্য-সমাপ্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে থেকে যে প্রতিনিধিদল বুধবার সকাল ১১টা ৩৫ মিনিটে দমদম এসে পৌঁছেছেন তারা তাদের সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করার সিদ্ধান্ত বাতিল করেছেন।
এর আগে দিল্লীতে ঘোষণা দেয়া হয় যে এই প্রতিনিধিদল সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করবেন এটাই দেখাতে যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পাকিস্তানের এই দখলদারিত্বকে স্বীকৃতি দেয়নি।
২৪টি দেশের প্রতিনিধিত্বকারী ৩৫ জনের এই প্রতিনিধিদল, যাদের মধ্যে ৩ জন ভদ্রমহিলাও রয়েছেন, এখানে পৌঁছানোর পরপরই তাদের সীমান্ত অতিক্রমের সিদ্ধান্ত বিষয়ক এক রুদ্ধদার বৈঠকে বসেন।
বৈঠকের শেষে মিঃ লী জনসন, একজন অস্ট্রেলীয় সংসদ সদস্য, ঘোষণা দেন যে পেত্রাপোল দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে যাতে “বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান ছাড়া অন্য আর কোনো দেশ এই সমস্যার সাথে জড়িত আছে এমনটা মনে না হয়”।
সিদ্ধান্ত বাতিলের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে, মিঃ জনসন বলেন যে প্রতিনিধিরা ভারত সরকারের অতিথি হিসেবে একটি ভাড়া করা বিমানে করে কোলকাতা এসেছেন। তাই প্রস্তাবনা অনুযায়ী সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করলে তা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করতে পারে। তিনি আরো বলেন, “যদিও বাংলাদেশের জনগণের সার্বভৌমিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হওয়াতে আমরা আমাদের অকৃত্রিম ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি তবুও আমরা মনে করি যে এই মুহূর্তে সীমানা অতিক্রম করা অনুচিত হবে”।
জানা যায় যে বিমানযাত্রা পথে প্রতিনিধিদের মধ্যে এ বিষয়ে তুমুল আলোচনা হয়। কয়েকজন সীমান্ত অতিক্রমের পক্ষে ছিলেন।
এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে প্রতিনিধিদলের কোনো কোনো সদস্য ব্যক্তিগতভাবে সীমান্ত অতিক্রম করতে পারেন। ওমেগা পিস মিশনের কয়েকজন সদস্য খোলাখুলি জানিয়ে দেন যে তাদের কয়েকজন প্রতিনিধি কিছু দিনের মধ্যেই নিজস্ব ব্যবস্থায় সীমান্ত অতিক্রম করবেন।
পরবর্তীতে এই প্রতিনিধিদল সল্ট লেক শিবির পরিদর্শন করেন যেখানে ২৩২, ০০০ জন শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। দুটি স্টেশন-ওয়াগন গাড়িতে করে তাদেরকে ঐ এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয় বেলা ১টার দিকে। তারা শরণার্থীদের দুঃখ-দুর্দশা দেখেন এবং তাদের সাথে কথা বলেন। যখন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা শিবির ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন, তখন শরণার্থীরা মুজিবের মুক্তি, অন্যান্য দেশের কাছ থেকে বাংলাদেশ সরকারের স্বীকৃতি, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার শাস্তি, ইত্যাদি চেয়ে স্লোগান দিতে থাকে।
প্রতিনিধিদলের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন নরওয়ের অধিবাসী মিঃ এবং মিসেস হানিসদ্যাব। মিসেস হানিসদ্যাব বলেন শরণার্থীদের দুর্দশা তাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। বিগত বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি নিজেও একজন শরণার্থী ছিলেন। তাই তিনি খুব ভালোভাবেই জানেন শরণার্থী হবার কষ্ট কাকে বলে।
তিনি বলেন এটা অন্যান্য রাষ্ট্রের দায়িত্ব যে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানীদেরকে বিতাড়িত করা যাতে করে শরণার্থীরা নির্বিঘ্নে তাদের দেশে ফিরে যেতে পারে।
মিসেস ভিভিয়ান গুনোবর্ধন বলেন যে তিনি শ্রীলংকায় ফিরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মিসেস বন্দরনায়েকের উপর চাপ সৃষ্টি করবেন, যাতে সেখান থেকে পাকিস্তানী বিমানগুলোর তেল নেয়া বন্ধ করা হয়।
ভারতের প্রশংসা করে তিনি বলেন সমস্যার গুরুত্ব বিবেচনা করলে ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। বাংলাদেশের সমস্যার একমাত্র সমাধান হচ্ছে তার স্বাধীনতা লাভ করা।
সুদানের প্রতিনিধি মিঃ মোহাম্মেদ আলি সালিয়াহ বলেন যে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেয়ে এর স্বায়ত্ত্বশাসন লাভ করাকে বেশি সুবিধাজনক মনে করেন।
যখন তার কাছে জানতে চাওয়া হয় যে কেন তিনি সম্পূর্ণ স্বাধীনতার পক্ষপাতী নন তখন তিনি বলেনঃ “আমরা পাকিস্তান বা অন্য কোনো দেশেরই বিভাজন চাই না”।
ডঃ এ সুরিয়ান মালায়শিয়ান, মালয়শিয়ার একজন সংসদ সদস্য, বলেন যে, “বিশ্বের দেশগুলোর উচিত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া এবং এক্ষেত্রে ভারতের উচিত স্বীকৃতিপ্রদানে নেতৃত্ব দেয়া”।
সল্ট লেক শিবির পরিদর্শনের পর প্রতিনিধিদল হোটেল হিন্দুস্তান ইন্টারন্যাশনাল-এ আসেন মধ্যাহ্নভোজনের জন্য। তারা এরপর বিকাল ৫টায়, কোলকাতায় বাংলাদেশ দুতাবাসের প্রধান, মিঃ হুসাইন আলির সাথে সাক্ষাত করেন এবং তার সাথে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।