You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
১৮১। বিশ্বের প্রতি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য দিল্লী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আহ্বান হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

বিশ্বের প্রতি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের আহ্বান
(আমাদের বিশেষ প্রতিনিধির বরাত দিয়ে)

নয়াদিল্লী সেপ্টেম্বর ২০.- বাংলাদেশকে নিয়ে করা আন্তর্জাতিক সম্মেলনের পক্ষ থেকে বিশ্বের সব দেশের সরকারকে আজ আহ্বান জানানো হয়েছে বাংলাদেশের সরকারকে স্বীকৃতি দিতে এবং পশ্চিম পাকিস্তানী জান্তার প্রতি সব ধরনের সামরিক সাহায্য বন্ধ করতে।

এই সম্মেলনের এক প্রস্তাবে ঘোষণা করা হয় যে বাংলাদেশের মানুষের এই রাজনৈতিক আন্দোলন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেখতে হবে একটি জাতির মুক্তির আন্দোলন হিসেবে।

বিশ্বের সকল সরকার ও জনগনের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানানো হয় বাংলাদেশ তাৎক্ষনিক এবং কার্যকরী সহায়তা প্রদানের জন্য।

উক্ত প্রস্তাবে বর্ণিত এই সাহায্য বলতে কোনো রাষ্ট্র বা ব্যক্তির জন্য এটা সামরিক সাহায্য হতে পারে আবার কারো জন্য হতে পারে অর্থনৈতিক এবং অহিংস সাহায্য।

প্রস্তাবে আরো বলা হয়, একটি সার্বভৌম জাতির সকল বৈশিষ্ট্যই বাংলাদেশের আছে এবং জনগনের ইচ্ছায় প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারই তাদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে।

জাতিসঙ্ঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে অনুরোধ করা হয় বাংলাদেশের সমস্যাটি যেন এই আন্তর্জাতিক সংস্থার সকল পরিসরে উত্থাপন করা হয় মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং বিশ্বশান্তির প্রতি হুমকিস্বরুপ হিসেবে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনের স্বপক্ষে করা প্রথম এই সম্মেলনে সব মহাদেশের ২৪টি দেশ থেকে ১৫০ জনেরও বেশি প্রতিনিধি অংশ নেন।

প্রতিনিধিদের মধ্যে ৬৫ জন এসেছেন প্রায় ২৩টি বিদেশী রাষ্ট্র থেকে। তাঁদের মধ্যে শান্তিকামী সাধারণ নারী ও পুরুষ ছাড়াও আছেন বিভিন্ন দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী, কয়েকটি দেশের সংসদ সদস্য, নেতৃস্থানীয় বুদ্ধিজীবী এবং স্বনামধন্য প্রকাশক।

এই মুক্তির আন্দোলনের স্বপক্ষে কি ধরণের সহায়তা দেয়া যেতে পারে সে ব্যপারে তাদের মধ্যে সামান্য মতানৈক্য থাকা সত্ত্বেও সম্মেলনের শেষ দিকে এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে প্রতিনিধিরা সমস্যাটি সম্বন্ধে আরও ভালো ধারণা পেয়েছেন।

নিজ নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার পর এই প্রতিনিধিদের অনেকেই বাংলাদেশের মানুষ ও পাকিস্তানী শাসন থেকে তাদের মুক্তির আন্দোলনের স্বপক্ষে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার কাজে ঝাপিয়ে পড়বেন।

কি ধরণের সাহায্য-সহযোগিতা করা হবে তা নিয়ে প্রতিনিধিদের মধ্যকার মতানৈক্য সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে বের হয়ে আসে।

খসড়া প্রস্তাবে বিশ্বের সরকারগুলোকে আহ্বান করা হয় “বাংলাদেশের সরকারকে তাৎক্ষনিক ও কার্যকরীভাবে সামরিক এবং অর্থনৈতিক সহায়তা” প্রদান করতে।

কতিপয় প্রতিনিধি মতপ্রকাশ করেন যে এই সম্মেলনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দেশের সরকারকে আহ্বান জানানো হোক তারা যেন “অবিলম্বে পাকিস্তান সরকারের প্রতি সব ধরণের অস্ত্র, গোলাবারুদ, খুচরা যন্ত্রাংশ এবং সামরিক সাহায্য সরবরাহ করা বন্ধ করে দেয়”।

অবশেষে, যারা বাংলাদেশের জন্য সামরিক সহায়তার পক্ষে এবং যারা সহায়তার ধরনটি উন্মুক্ত রাখার পক্ষে ছিলেন তারা উভয় পক্ষই একটি সমঝোতায় আসেন। সংশোধিত প্রস্তাবে সরকার এবং জনগনের জন্য এই সিদ্ধান্ত উন্মুক্ত রাখা হয় যে তারাই ঠিক করবে যে তারা সামরিক নাকি অর্থনৈতিক এবং অহিংস সহায়তা করবে।

এই প্রস্তাবে জাতিসঙ্ঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোকে আহ্বান জানানো হয় তারা যেন বাংলাদেশের সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের দুর্দশা লাঘবের উদ্দেশ্যে এমন ভাবে ত্রাণকাজ পরিচালনা করে যাতে করে সঠিক মানুষের কাছে সেই ত্রাণ গিয়ে পৌঁছায়।

বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্রদের সদস্য করে একটি আন্তর্জাতিক কমিটি গঠন করার কথাও এই প্রস্তাবে তোলা হয় যেটি নির্ভরযোগ্য সুত্র থেকে পাওয়া সংবাদ প্রচার করবে সরকারী ও বেসরকারী সংস্থা গুলোর কাছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনের স্বপক্ষে জনমত তৈরির কাজে সাহায্য করার জন্য।
এই সম্মেলনে সন্তোষ প্রকাশ করা হয় “বাংলাদেশের শরণার্থীদের মাঝে ত্রাণ বিতরনের ভারত সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগ” গ্রহন করার জন্য। আন্তর্জাতিক রেডক্রস সংস্থাকে আহ্বান জানানো হয় বাংলাদেশে ত্রাণকাজ পরিচালনা এবং বিতরনের সরাসরি দায়িত্ব গ্রহন করার জন্য।

“কোনো অবস্থতেই”, এই প্রস্তাবে বলা হয় “এই দায়িত্ব পাকিস্তানী সামরিক শাসকদের হাতে দেয়া যাবে না। ১৯১৯ সালের চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনের তৃতীয় ধারা মোতাবেক বাংলাদেশের সরকারের অংশগ্রহন এখানে নিশ্চিত এবং প্রয়োজনীয়”।

ব্যক্তি এবং বেসরকারী সংস্থাগুলোর কাজ হিসেবে এই সম্মেলন থেকে বলা হয় যে তারা বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহনকারীদের নিয়ে একটি ‘মুক্তির মিছিল’-এর আয়োজন করতে পারে যেটি অহিংসভাবে ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকবে।
 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!