You dont have javascript enabled! Please enable it!

মানবের তরে মাটির পৃথিবী দানবের তরে নয়

কুষ্টিয়া -যশােহর ও খুলনা রনাঙ্গনঃ ১৮ই অক্টোবর শিজলু ও খুবরি এলাকায় মুক্তি যােদ্ধাদের প্রবল আক্রমণে, ১০ জন খান সেনা ও ৭ জন রাজাকার নিহত এবং ১৩ জন গুরুতররূপে আহত হয়। গেরিলাদের আক্রমণে ভীত সন্ত্রস্ত মেজর মনসুরকে পাক কর্তৃপক্ষ এ অঞ্চল থেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। ২৬ অক্টোবর ভাটসালা, সাতক্ষিরা মুক্তি যােদ্ধাদের সাথে পাক হানাদারদের মুখােমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে ৮ জন পাক শত্রু সেনা নিহত ও অনেক আহত হয়। ২৪, অক্টোবর, খুলনা, শ্যামন নগর থানা মুক্তি বাহিনী আক্রমণ করে ৩ জন খান সেনা খতম করেন, ২৩, অক্টোবর পাটকেল ঘাটায় পাকসেনারা মুক্তি বাহিনী দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং ১৫ জন শত্রু সেনা খতম হয়। এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে খুলনার আসাগুনি ক্যাম্প মুক্তি বাহিনীর দ্বারা আক্রান্ত হয়। এ আক্রমণে ৬৪ জন রাজাকার নিহত ও ৩৫ জন আহত হয় এবং কয়েকটি রাইফেল ও কিছু পরিমাণ। গােলাবারুদ হস্তগত হয়। পাক সৈন্য বন্দী বরিশালঃ ৭ই অক্টোবর বিলম্বে প্রাপ্ত এক খবরে জানা গেছে, গৌরনদীর সাহেবের হাটে মুক্তি বাহিনী পুলিস লঞ্চ আক্রমণ করে বরিশালের এস, ডি, ও (নর্থ) ও এডিসনাল এস, পি সহ বেশ কয়েকজন  পাক পুলিশকে খতম করেছে। এখানে একজন পুলিশ হাবিলদার মুক্তি বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে; উক্ত পুলিশ লঞ্চটি ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৯ই অক্টোবর, রাটাজোরে গেরিলারা পাক সৈন্যের ছাউনিতে আক্রমণ চালিয়ে বেশ কয়েকজন সৈন্যকে আহত করে। ছাউনিটি ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। ৪ঠা অক্টোবর, কাউখালীতে ১৮০ জন পাক সৈন্য ও রাজাকারের সঙ্গে ১৪ জনমুক্তি বাহিনীর তুমুল যুদ্ধ হয়। ফলে ১৭ জন পাক সৈন্য ও ১০ জন রাজাকার খতম হয় এবং প্রচুর পরিমাণে আহত হয়। পরদিন গ্রামের লােকেরা তিন জন আহত আত্মগােপনকারী সৈন্যকে কুড়াল দ্বারা হত্যা করে। পরাজিত পাক সৈন্যরা অস্ত্র-শস্ত্র নদীতে ফেলে পালিয়ে যায় বলে জানা গেছে; পালাত গিয়ে তিনজন পাক সৈন্য মুক্তি বাহিনীর হাতে বন্দী হয়। বর্তমানে বন্দী তিনজন মুজিবনগরে আছে। এদের নাম জান গুল, বাতেন গুল, আবদুল মল্লিক। আর এক খবরে জানা গেছে ইন্দিরা হাটে এ মাসের ২য় সপ্তাহে পাক হানাদাররা লুটতরাজ শুরু করলে মুক্তি বাহিনী বাধা দেয়। ফলে ৮ জন হানাদার খতম হয়। এখানে ২টি রইফেল মুক্তি বাহিনীর হস্তগত হয়েছে। এছাড়া এ মাসের মাঝামাঝি জুলুহার নদীতে দু’টি পাট বােঝাই জাহাজে আগুন ধরিয়ে দেয়। গানবােট নিমজ্জিত পটুয়াখালীঃ পাথর ঘাটায় কচানদীর মােহনায় এ মাসের ৩য় সপ্তাহে মুক্তি বাহিনী একটি গ্রীন রংয়ের গান- বাের্ট ডুবিয়ে দেয়, ফলে গানবােটে যে ক’জন পাক সৈন্য ছিল তাদেরও সলীল সমাধি হয়, পরে মুক্তি বাহিনী গানবােটের ইঞ্জিন এবং অস্ত্র-শস্ত্র উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এছাড়া নেমতিতে দু’টি রসদ। বােঝাই লঞ্চ ডুবিয়ে দিয়েছে।

এ ছাড়া মুক্তি বাহিনী বেতাগীর কুখ্যাত আবদুস ছাত্তার ও আবদুল বারেককে হত্যা করেছে। এরা শান্তি কমিটির। ৮ জন ডাকাতকেও নিহত করেছে। তুষখালীতে আর এক সংঘর্ষে বারােজন রাজাকারকে খতম করে। এখানে প্রচুর অস্ত্র শস্ত্র মুক্তি বাহিনীর হস্তগত হয়েছে। ৬টি এম, এম, জি দখল ও ৭০ জন খানসেনা নিহত। ঢাকা-কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম রণাঙ্গণ ঃ ১৬ থেকে ১৮ই অক্টোবর কুমিল্লার সালদা নদীতে ৩৩নং পাকবেলুচ রেজিমেন্টের সাথে মুক্তি যােদ্ধাদের এক মুখােমুখি সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে প্রায় সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত বেলুচ রেজিমেন্টের ৭০ জন হানাদার সেনা নিহত এবং অসংখ্য সেনা আহত হয়। মুক্তি বাহিনী প্রচুর। গােলাবারুদ, ৬টি এম-এম- জিও ১৮টি হানাদার বাহিনীর মৃত্যু দেহ ছিনিয়ে রাখেন এবং সেকেণ্ড লেটানেন্ট পারভেজসহ অপর দুজন শত্রু সেনাকে কারারুদ্ধ করেন। সেতু ও রেললাইন বিধ্বস্ত রংপুর দিনাজপুর রাজশাহী রণাঙ্গণ ঃ গত ১৮ই অক্টোবর বিরলা অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর অসমসাহসী। যােদ্ধারা পাক হানাদার বাহিনীর উপর এক প্রবল আক্রমণ পরিচালনা করন। এই আক্রমণে হানাদার বাহিনীর ১৩ জন শত্রু সেনা খতম হয় এবং মুক্তিবাহিনীর ২০টি রাইফেল হস্তগত করেন।

মুক্তিবাহিনীর বীর সেনানীদের এক অতর্কিত আক্রমণে গত ১৬ই অক্টোবর খালপার এলাকায় পাক বাহিনীর একটি ঘাটি বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই আক্রমণে ৭ জন খান সেনা নিহত হয় এবং বেশ কিছুসংখ্যক গুরুতর ভাবে আহত হয়। উক্ত এলাকা থেকে হানাদার বাহিনী পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। গত ১৭ই অক্টোবর মুক্তি বাহিনীর প্রবল ঝটিকা আক্রমণে ফুটকিবাড়ি সড়কের ম্যধকার গুরুত্বপূর্ণ। সেতুটি সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হয় এবং রেললাইনের ক্ষতিসাধনও যােগাযােগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে। ১২ই  অক্টোবর মুক্তিযােদ্ধারা মেলবাড়ি এলাকায় পাহারারত পাক হানাদার বাহিনীর উপর আক্রমণ চালিয়ে ৫ জন শত্রুসৈন্য খতম এবং কয়েক জনকে গুরুতররূপে আহত হয়। তিনটি লঞ্চ দখল। ময়মনসিংহ শ্রীহট্ট ও মৌলভী বাজার রণাঙ্গন ঃ ১৬ই অক্টোবর বেতারগাও অঞ্চলে মালবােঝাই তিনটি লঞ্চ মুক্তি বাহিনী দখল করেন। ১৫ই অক্টোবর ময়মনিসংহের বিজয়পুর ও বিরিসিরি সড়কে পাক টহলদার বাহিনীকে মুক্তি যােদ্ধারা আক্রমণ করেন এবং ৪জন শত্রু সেনা খতম হয় । ১৭ই অক্টোবর মুক্তি যােদ্ধারা জামালপুর ও জগন্নাথ ঘাট রেল সেতুটি বিধ্বস্ত করেন। এবং বকশিগঞ্জ ও কামালপুরের মধ্যকার টেলিযােগাযােগ বিছিন্ন করে দেন। তেলখানি এলাকায় ২০ অক্টোবর মুক্তি যােদ্ধাদের মর্টার আক্রমণে ৩০ জন পাক শত্রু সেনা খতম হয়। মুক্তি বাহিনী এ অঞ্চলে পাক সেনাদের সব বাঙ্কারগুলাে বিনষ্ট করেন। একই দিনে সারি নদী অতিক্রম রত জলযান মুক্তি যােদ্ধারা ধ্বংস করেন এবং ১০ জন শত্রু সেনা এখানে খতম হয়। ২টি এল, এম, জি সহ ২০০ চীনা অস্ত্র উদ্ধার ফরিদপুর ও ভেদারগঞ্জ এলাকায় এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মুক্তি বাহিনীর সাথে পাক হানাদারদের এক প্রবল সংঘর্ষে ১৫০ জন খান সেনা খতম ও বহু সংখ্যক গুরুতর রূপে আহত হয়। এ ছাড়া ৯ জন খান সেনা মুক্তি বাহিনীর হাতে বন্দী হয় এবং ২শত চীনা রাইফেল, ২টি এল-এম-জি এবং প্রচুর গােলাবারুদ মুক্তিবাহিনীর হস্তগত হয়।

বিপ্লবী বাংলাদেশ | ১: ১১

৩১ অক্টোবর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!