শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৭১। এ্যান এ্যাপিল টু জেসীস টু মুভ দ্য পিপল অব দেয়ার ওয়ার্ল্ড – ইন্ডিয়ান জুনিয়র চেম্বারের পুস্তিকাব | পুস্তিকা | আগষ্ট, ১৯৭১ |
এ্যান এ্যাপিল টু জেসীস টু মুভ দ্য পিপল অব দেয়ার ওয়ার্ল্ড
ইউ এন রেজ্যুলুশন অন জেনোসাইড
ঘোষণা করে যে “আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে গণহত্যা এমন একটি অপরাধ যা সভ্য সমাজের কাছে তীব্র নিন্দনীয়। ”
১৯৪৮ সালের ৯ই ডিসেম্বরের ২৬০ III এ দ্বারা সাধারণ পরিষদ প্রস্তাব উপস্থাপন করে এবং অনুমোদন দেয়,
এই গণহত্যা যা শান্তি স্থাপন বা যুদ্ধের সময় যেভাবেই হোক না কেন তা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অপরাধযোগ্য যা তারা প্রতিহত করা এবং শাস্তি দেওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করে।
গণহত্যা এবং ধ্বংসযজ্ঞের এক ঝলক
সৃষ্টিকর্তা এবং অখন্ড পাকিস্তানের নামে ঢাকা বর্তমানে একটি চূর্ণ-বিচূর্ণ ও ভীত নগরী…
পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নির্মম ও ঠান্ডা মাথার গোলাবর্ষণের ২৪ ঘন্টা পর হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, বিস্তীর্ণ এলাকা মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং এভাবে পূর্ব পাকিস্তানের যুদ্ধকে নৃশংসভাবে শেষ করে ফেলা হয়েছে।
ছাত্রদের তাঁদের নিজ বিছানা মেরে ফেলা, কসাইদেরকে তাঁদের দোকানের পিছনে হত্যা করা, নারী ও শিশুদের তাঁদের ঘরেই জীবিত পুড়িয়ে মারা, পাকিস্তানী হিন্দু ধর্মালম্বীদের জোর করে ঘরের বাইরে এনে গণহারে গুলি করে হত্যা করা, বাজার এবং কেনাকাটার জায়গাগুলোতে আগুন লাগিয়ে ধ্বংস করে ফেলার চিত্রই শুধুমাত্র সামরিক বাহিনীর এমন ভয়াবহতাকে যথার্থভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে।
২৫শে মার্চে ঢাকায় এগিয়ে আসা ট্যাংকের প্রথম লক্ষ্যই ছিল ছাত্ররা। সাইমন ড্যুরিং
ডেইলী টেলিগ্রাফ, লন্ডন
৩০শে মার্চ, ১৯৭১
এই ক্ষতি সংশ্লিষ্ট সকলের নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণায় পরিণত হয়েছে, সাংবাদিকেরা দেখেছে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হাজারো পুড়ে যাওয়া ভবনের দেয়াল। শহরের মধ্যে কংক্রিটের দেয়ালগুলোতে শতাধিক বুলেটের চিহ্ন ফুটে আছে যেখানে ফায়ারিং স্কোয়াড তাদের কাজ করেছিল। লাশগুলোকে এলাকার কুয়োতে ফেলে রাখা হয়েছে এবং ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি এই ঘটনার হিংস্রতার সাক্ষ্য দিচ্ছে।
ম্যালকম ডব্লিউ. ব্রাউনি
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস্, নিউ ইয়র্ক।
উ. থান্টঃ জাতিসংঘের মহাসচিবঃ যদিও এই গৃহযুদ্ধ পাকিস্তানের অভ্যন্তরীন ব্যাপার, কিন্তু এর জন্য কিছু সমস্যা উদ্ভব হয়েছে যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগের কারণ।
আগা হিলালীঃ মার্কিং মুলুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতঃ পূর্ব পাকিস্তানে জনসাধারণ তাঁদের হাজারও বন্ধু এবং আত্মীয়কে হারিয়েছে।
জাতিসংঘের সনদঃ
প্রস্তাবনা
“পরবর্তী প্রজন্মকে যুদ্ধের অভিশাপ হতে রক্ষা করা; যা আমাদের জীবদ্দশায় দুই দুইবার মানবজাতির উপর অবর্ণনীয় দুঃখ বয়ে এনেছে এবং মানুষের ব্যক্তি সম্মান ও মূল্যবোধ, নারী ও পুরুষের সমান অধিকার এবং বড় ও ছোট দেশগুলিতে মৌলিক মানবাধিকারে পুনর্নিশ্চয়তার আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং যে চুক্তিসমূহ ও আন্তর্জাতিক আইনের অন্যান্য মাধ্যম হতে উদ্ভূত ন্যায়বিচার ও দায়িত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পরিস্থিতির প্রতিষ্ঠা করা এবং সামাজিক অগ্রগতি ও বৃহদতর স্বাচ্ছন্দ্যতার সাথে জীবন যাপনের মান অধিকতর উন্নততর করতে আমরা জাতিসংঘের সদস্যরা সংকল্পবদ্ধ।”
এবং এই সকল কিছুর জন্য সহনশীলতা ও ভাল প্রতিবেশী হিসেবে অন্যের সাথে শান্তিতে থাকার চর্চা করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে আমাদের দৃঢ়ভাবকে একত্রিত করতে হবে ও সমস্ত জাতির অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির উন্নয়নের জন্য ভারী যন্ত্রপাতির ব্যবহার শুরু করতে হবে।
কেন এই সংঘাত?
আর্থ-সামাজিক অবস্থার পটভূমিতে
পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) মাঝে ১২০০ মাইলের অধিক ভারতীয় অঞ্চলের দূরত্ব রয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তান অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত উন্নত এবং পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৬% নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান গঠিত যারা অত্যন্ত অনগ্রসর ও অনুন্নত। অধিকতর বৈষ্যম্যতার কারণে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মাঝে ভয়ংকর রকমের অস্থিরতা বিরাজ করছে। ধর্ম ভিন্ন এই দুই অঞ্চলের মধ্যে অন্য কোন মিল নেই। এমনকি এদের ভাষাও ভিন্ন; পশ্চিম পাকিস্তান উর্দু আর পূর্ব পাকিস্তান সাংস্কৃতিকভাবে তারা মেরুসম তফাতে।
১৯৪৬ সালের ১১ই ডিসেম্বরের ৯৬ (১) রেজ্যুলুশন অনুযায়ী সাধারণ পরিষদ
অর্থনৈতিক অসমতা | পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) | পশ্চিম পাকিস্তান |
১) আয়তন (বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (মিলিয়ন হিসেবে) প্রতি বর্গ মাইলে জনসংখ্যা |
৫৫,১১৬
৭.৫ ৯২২ |
৩,১০,৪০৩
৪.৩ ১৩৮ |
২) উন্নয়ন খাতে সরকারি ব্যয়
বেসরকারি বিনিয়োগ বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার রপ্তানি আয় আমদানি মোট বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহৃত বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির বোঝা |
৩৬%
২৫% ৪% ৫০.৭০% ২৫.৩০% ৩০% ৫৬% |
৫৪%
৭৫% ৬% ৫০.৩০% ২৫.৭০% ৭০% ৪৪% |
৩) কর্মসংস্থানের হারঃ
সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ রাষ্ট্রপতির সচিবালয় কেন্দ্রীয় সরকারী কর্ম কমিশন শিল্প বিভাগ কৃষি শিক্ষা |
৮.১% ১৯% ১৪.৫% ২৬% ২১% ২৭% |
৯১.৯% ৮১% ৮৫.৫% ৭৪% ৭৯% ৭৩% |
প্রশাসনের সকল উর্ধ্বতন সামরিক সদস্যই পশ্চিম পাকিস্তান হতে। পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান এবং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী, অর্থ বরাদ্দ প্রকল্পের সকল গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা সব সময়ই পশ্চিম পাকিস্তানী।
জয়সীস- বাংলাদেশ
“এই সংগঠনের চার দেয়ালে মাঝে প্রাণ যেখানে চরিত্র ও ভাল নাগরিকত্বের ভিত্তি স্থাপিত করা হয় সেখান হতে আমি আশা করি যে আগামীর কোন এক সময়ের এমন একটি বার্তা আসবে যা মানুষকে একটি স্থায়ী ও চিরস্থায়ী বিশ্ব শান্তির জন্য উদ্দীপিত করবে। ”
এই কথাগুলো জুনিয়র চেম্বার মুভমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা হেনরি গিসেনবিয়েরের। এটা স্পষ্ট যে আমাদের সকল প্রচেষ্টার চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে, আমাদের আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতার মতোই স্থায়ী ও চিরস্থায়ী বিশ্ব শান্তি। “এই লক্ষ্যটি সকলের বোধগম্যের। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মাঝে ১৯৫১ সালে এই জুনিয়র আন্দোলনের জন্ম হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যেই ১৯৪৪ সালে আন্তর্জাতিক জুনিয়র চেম্বার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। ” সাতাশ বছর বিদ্যমান থাকার পর, স্থায়ী ও চিরস্থায়ী বিশ্ব শান্তির এখনই প্রকৃত সময়। এই পর্যন্ত প্রতিষ্ঠাতার স্বপ্ন পূরণে আমরা কি করতে পেরেছি? স্পষ্টতই “চরিত্র ও ভাল নাগরিকত্বের ভিত্তি স্থাপন” কার্যকরী নয় যদি তা অপ্রতিরোধ্য যুদ্ধ ও সহিংসতার মাঝে বিশ্বকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করতে থাকে।
বিশ্ব বর্তমান শতকে এরই মাঝে সমগ্র মানবজাতিকে জড়িয়ে দুই দুইটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। একই সাথে বিশ্ব অভিশাপ স্বরূপ কিছু দেশকে অন্য দেশ দ্বারা দাসত্ব বরণ করে নিতে দেখছে। এটাও যুদ্ধ্বের নামান্তর। এটা অবশ্যই জয়সী মতবাদের বিরুদ্ধে, যা বিশ্বাস করে যে “ মানুষের ভ্রাতৃত্ব জাতির সার্বভৌমত্বে রূপান্তরিত হয় যার অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার সর্বোত্তোমভাবে মুক্ত মানুষের মুক্ত উদ্যোগের দ্বারা অর্জিত হতে পারে।
এই মতবাদের ব্যাখ্যা হচ্ছে, এমনটাই বজায় রাখা হয়েছে যে ‘মুক্ত উদ্যোগ’ স্বাধীনতার পবিত্রতার উপর আস্থা প্রকাশ করে, মানব জীবনের মৌলিক উৎকর্ষতার উপর বিশ্বাসকে ঘোষণা করে, প্রত্যেকের মর্যাদা ও শান্তির সাথে বেঁচে থাকার অধিকারকে রক্ষা করে, প্রত্যেককে তার নিজের সমাজের মধ্যে নুণ্যতম নিয়ন্ত্রণের প্রভাবের সাথে নিজের সর্বোচ্চ সম্ভাব্য বিকাশ সাধনের সুযোগ প্রদান করে।
জয়সী হচ্ছে তারুণ্যের আন্দোলন। এই রকমের আন্দোলনের মধ্যে বিশ্বের সর্ববৃহৎ আন্দোলন। এর লক্ষ্যই হচ্ছে ব্যক্তির দক্ষতার উন্নয়ন করা এবং একজন তরুণকে মানবজাতির একজন হিসেবে আর্থিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিকভাবে উন্নত করার উদ্দেশ্যে হিসেবে যৌথভাবে উদ্দীপ্ত করার প্রয়াস। এই উদ্দেশ্য অর্জিত হওয়ার একটি উপায় হলো অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি করার মাধ্যমে।
বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ এবং যুদ্ধ সদৃশ কর্মকান্ডের কারণেই এইসব উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। শেষ বিশ্বযুদ্ধের পরের পঁচিশ বছর, আমরা এখনো দেখতে পাই যে বিশ্বের বিভিন্ন অংশ এখনো বর্বর যুদ্ধে উত্তাল। মনে হচ্ছে, শান্তি বিস্তৃতির পরিবর্তে এখন তা যেন যুদ্ধের ময়দান হিসেবে বিস্তার লাভ করছে।
প্রথমে তা ছিল কোরিয়া, এরপর এলো ভিয়েতনাম, মধ্যপ্রাচ্য-পাকিস্তান, ভারত-চায়না এবং আমরা এখন ভারত সীমান্তে বাংলাদেশের মধ্যে যুদ্ধ দেখতে পাচ্ছি। মনে হচ্ছে এটা যেন আমাদের সীমান্তের আরো একটি ভিয়েতনাম। এছাড়াও আয়ারল্যান্ডের মধ্যেও ঘটে চলেছে।
রাষ্ট্রের পরিস্থিতি বলতে আসলে কী বুঝায়? এটা কী অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা প্রদানের, স্বাধীনতার পবিত্রতা রক্ষা করার, মানবজীবনের শ্রেষ্ঠত্ব রক্ষা করার, ব্যক্তির শান্তি ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপনের অধিকার রক্ষা করার এবং ব্যক্তির তার নিজের সমাজের মধ্যে নিজের সর্বোচ্চ সম্ভাব্য বিকাশ সাধনের সুযোগ প্রদান করার পথ!
আমরা, ভারতীয় হিসেবে কিন্তু আমাদের সীমান্তে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়ে তা অগ্রাহ্য করতে পারি না। জয়সী যেসব উদ্দেশ্য ও নীতির উপর দাড়িয়েছে তার প্রতিটি লঙ্ঘন করার মতো অনেক ঘটনাই উপস্থাপন করা যেতে পারে যেমনটি তার ইতোমধ্যেই লঙ্ঘন করেছে এবং বিশ্বের অন্যান্য অংশেও লঙ্ঘন করে চলেছে। বাংলাদেশের বিষয়টি কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটা সেই অস্থিরতারই একটি অংশ যা পুরো বিশ্বকে আঁকড়ে ধরেছে। পার্থক্য শুধু এইটাই যে ভারতের উপর এর নজিরবিহীন প্রভাব। এই রকম লক্ষাধিক শরণার্থীর বোঝা বহন করার মতো বিশ্বের আর কোন দেশের এমন কোন সময়ের ইতিহাস নেই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে যদিও তা রাজনৈতিক ক্রোধ প্রকাশ হিসেবে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, কিন্তু তার চাইতেও অপেক্ষাকৃতভাবে এর বিশাল মানবিক দিক রয়েছে।
এই দাবীগুলোই সমগ্র বিশ্ব হতে জয়সীস দ্বারা বিবেচনা করা হয়। যুদ্ধের ফলে তারুণ্যের স্বাভাবিক জীবন ব্যহত হয়, সহিংসতায় তারুণ্য আঘাতপ্রাপ্ত হয়, তারুণ্য লাঞ্চিত হয়। তরুণদের নেতৃত্ব বিকাশে সক্রিয় করার কোন প্রয়োজনীয়তাই নেই। যদি তাঁদের প্রতি কোন প্রত্যাশা উন্মুক্ত থাকে তবে তা হচ্ছে প্রতিটি নীতিকে অস্বীকার করা যা অলঙ্ঘনীয় হিসেবে ঘোষিত হয়। যে তারুণ্যকে স্বাধীনতা হতে বঞ্চিত করা হয়, শিক্ষা হতে বঞ্চিত করা হয়, খাদ্য হতে বঞ্চিত করা হয়, নিজের ভূমি হতে বঞ্চিত করা হয়, নিজের ভূমিতে উন্নতির সম্ভাবনা হতে বঞ্চিত করা হয়, সে তারুণ্যকে আদতে তার একমাত্র অস্তিত্ব হতে বঞ্চিত করা হয়।
আমরা ত্রাণ দিয়ে ও মানবেতর জীবন যাপন হতে মুক্ত করার জন্য সাহায্য করে যেতে পারি। আমারা আমাদের তরুণদের এই রকম পরিস্থিতির কর্মকান্ডের মাধ্যমের নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা অর্জনে সাহায্য করতে পারি। কিন্তু এই রকমের আচরণ কী আসলেই আমাদের প্রতিষ্ঠাতার মূল লক্ষ্যকে ফুটিয়ে তোলার মতো কাছাকাছিও নিয়ে যেতে পারে করে? বিশ্বের এমনতরো আবহ কী ভাল কিছুর জন্য পরিবর্তনের বদলে খারাপ কিছুর জন্য পরিবর্তনের মতো আমাদের উদ্দেশ্যের দিকে ধীস্থিরভাবে ধাবিত করতে পারে? আমাদের সকল প্রচেষ্টাই কি বৃথা ও ক্ষীণ আচরণের মতো নয়?
এটা হচ্ছে সেই পরিস্থিতি যা বিশ্বজুড়ে অবস্থান নেওয়ার মতো জয়সীসের প্রয়োজন। এটা সত্যি যে আমাদের মতবাদ আমাদেরকে কোন দলীয় রাজনৈতিক কর্মকান্ডে এবং একটা দেশের স্বার্থের উপর আরেকটির স্বার্থ প্রচারে অংশগ্রহণ করা থেকে নিষেধ করে। আমাদের দ্বারে এই প্রসঙ্গটি নিয়ে আসা হয়েছে যে বাংলাদেশে সৃষ্ট পরিস্থিতিকে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে অগ্রাহ্য করা যাবে না। এটা মানবিকতার বিষয়। এই প্রসঙ্গ অচিরেই আরও অনেক উন্নয়নশীল দেশের দ্বারা সম্মুখীন হতে পারে, কারণ বাংলাদেশ ফোর্ডের কাছে উপ-জাতীয়তার মধ্যে বহুজাতিক উন্নয়নশীল দেশের সম্পর্ককে নিয়ে এসেছে। যদি যুদ্ধের কোন অংশ বিভিন্ন জাতির মধ্যে চলে তবে উন্নয়নশীল দেশের মধ্যেও যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে, অচিরেই আমরা বিশৃঙ্খলতা ও বর্বরতার সীমা অতিক্রমের দিকে ধাবিত হতে যাচ্ছি। আমরা ইতোমধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন অংশে এমন হতে দেখে ফেলেছি। আমরা এখন তা বাংলাদেশেও হচ্ছে দেখতে পাচ্ছি। এটা এখন আর কিছুতেই রাজনৈতিক বিষয়ে নেই বরং মানবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মানবিকতার পটভূমিতে হলেও আমরা জয়সীস অবশ্যই বাংলাদেশের সমস্যার দিকে দৃষ্টিপাত করবো এবং এই প্রাসঙ্গিকে শান্তির উদ্দেশ্যে কাজ করার মতো বৈশ্বিক কার্যবিধি প্রদান করতে হবে। এর মাঝেই আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের সকল সম্পদকে গতিশীল করে ফেলতে হবে যাতে যুদ্ধের শিকার ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিতে পারি।
বিশ্বজুড়ে তরুণদের সর্ববৃহৎ সংগঠন হিসেবে আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে আমাদের ভবিষ্যৎ এমনতরো মানুষ ধ্বংসের মতো কাজ দ্বারা উপেক্ষিত নয় যা বৃদ্ধের সম্মানকে অস্বীকার করে, যে কাজ মানুষের ব্যক্তিত্বকে অধঃপতিত করে। এটা যুদ্ধের বিরুদ্ধে কার্যপ্রণালী এবং যুদ্ধের কারণ আমাদের মতবাদ দ্বারা, আমাদের উদ্দেশ্য দ্বারা এবং সেই স্বপ্ন দ্বারা বিচারিত হবে যা প্রতিষ্ঠাতা হেনরী গিসেনবিয়েরকে অনুপ্রাণিত করেছে।
সেই “আগামীর কোন এক সময়” এখন নতুন বার্তার জন্য চলে এসেছে “এই সংগঠনের চার দেয়ালে মাঝে প্রাণ যেখানে চরিত্র ও ভাল নাগরিকত্বের ভিত্তি স্থাপিত করা হয় সেখান হতে আমি আশা করি যে আগামীর কোন এক সময়ের এমন একটি বার্তা আসবে যা মানুষকে একটি স্থায়ী ও চিরস্থায়ী বিশ্ব শান্তির জন্য উদ্দীপিত করবে।”
কিভাবে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে
১৯৬৯ | |
২৫শে মার্চ | : জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা গ্রহণ করে, দেশজুড়ে সামরিক আইন জারি করে এবং জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ বাতিল করে। |
২৭শে মার্চ | : সামরিক আইন ভঙ্গকারীদের উপর সামরিক বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান বিকেন্দ্রীকরণের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। |
৩১শে মার্চ | :সরকারীভাবে সকল রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। |
২৮শে নভেম্বর | : ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ সালের অক্টোবরের ৫ তারিখকে জাতীয় পরিষদের নির্বাচনের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেন। |
১৯৭০ | |
৭ই ডিসেম্বর | : জাতীয় পরিষদের নির্বাচন স্থগিত করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমানের দল, আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে জয় লাভ করেন। জেড. এ. ভূট্টোর দল ২য় হয়।
|
১৭ই ডিসেম্বর | : প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা দ্বারা অভূতপূর্ব জয় লাভ করে।
|
১৯৭১ | |
১৪ই জানুয়ারি | : ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবুর রহমানকে দেশের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করেন। |
১৩ই ফেব্রুয়ারি | : ইয়াহিয়া খান ৩রা মার্চকে পরিষদের অধিবেশনের জন্য নির্ধারণ করেন। |
১৬ই ফেব্রুয়ারি : | : রহমান আইনগতভাবে আওয়ামী লীগ দলের নেতা হিসেবে নির্বাচিত হন, ভূট্টো ক্রমাগতই দুই অংশের জন্য আলাদা আলাদা মন্ত্রীর প্রস্তাবনা দিয়ে যাচ্ছেন।
|
১লা মার্চ | : ইয়াহিয়া খান জাতীয় অধিবেশন স্থগিত করেন এবং পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর ভাইস- এ্যাডমিরাল এস. এম. আহসানকে বরখাস্ত করেন। জাতীয় অধিবেশন স্থগিতকরণের প্রতিবাদে রহমান ঢাকায় সাধারণ হরতালের ডাক দেন।
|
২রা মার্চ | : জন-অসন্তোষ ঢাকা সহ অন্যান্য স্থানে সহিংসতায় রূপ নেয়, সৈন্যরা এ্যাকশনে নামে এবং কারফিউ জারি করা হয়। |
৩রা মার্চ | : আওয়ামী লীগ শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলনে আরম্ভ করে, রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে ইয়াহিয়া খানের ১০ই মার্চের আমন্ত্রণ রহমান প্রত্যাখ্যান করেন।
|
৫ই মার্চ | : সেনাবাহিনীর হাতে ৩০০ জন নিহত হওয়ার খবর আসে। |
৮ই মার্চ | : অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। |
১৯শে মার্চ |
: ইয়াহিয়া খান ও রহমান সাংবিধানিক আলোচনা শুরু করেন।
|
২২শে মার্চ | : ইয়াহিয়া খান আবারও জাতীয় পরিষদের উদ্বোধনী স্থগিত করেন। |
২৬শে মার্চ | : গণহত্যা শুরু হয়। তখন থেকেই মুজিবের হদিস পাওয়া যায় না। |
১০ই এপ্রিল | : স্বাধীনতার ঘোষণাঃ বাংলাদেশ নির্বাচিত প্রতিনিধিরা নিজেরা গণপরিষদ গঠন করে বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী দেশে হিসেবে ঘোষণা করে।
|
১৭ই এপ্রিল | :বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ প্রতিবেশী দেশগুলোর নিকট অবিলম্বে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানে অস্ত্র সরবরাহের এবং খুনী সেনাবাহিনীর হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করতে একটি নবজাত দেশকে সাহায্য করার আহ্বান জানান। |
মে/জুন/জুলাই/আগস্ট/
সেপ্টেম্বর/অক্টবর’৭১ |
: তখন থেকেই প্রায় দশ লক্ষাধিক নারী ও শিশুসহ লোক পাকিস্তানীদের দ্বারা নিহত হয়। আরো ৯০ লাখ এই গণহত্যা থেকে বাঁচতে ভারতে পালিয়ে চলে আসে।
|
শরণার্থী
আতংকগ্রস্থ ও দরিদ্র হাজারো বাঙ্গালী যারা ভারতে অবাধে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছে তারা দূর্বল হয়ে গিয়েছে এবং রাস্তার পাশেই অবসন্ন হয়ে মারা গিয়েছে। কপর্দকহীন, ক্লান্ত এবং অসাড়তার মাঝে অনেকেই তাঁদের এই বিয়োগান্তক যাত্রার বর্ণনা করেছেনঃ
১)“আমরা উত্তরে ভারত সীমান্তের দিকে হাঁটা শুরু করি। যাত্রাপথেই আমরা লোকজন মারা যেতে দেখেছি। অন্যরা মাটিতেই অবসন্ন হয়ে লুটিয়ে আছে। প্রথমে মারা যেতো শিশুরা, এরপর ক্রমান্বয়ে অগ্রসর হতে হতে বৃদ্ধ ও শিশুরা দূর্বল হয়ে লুটিয়ে পড়তো এবং তারপর মহিলারা। ”
২) দুই বোন, রহিনা বেগম; যার বয়স ১৬ এবং জিনাত বেগম; বয়স ১৫, তাঁদের পায়ে এবং বাহুতে বুলেটের ক্ষত রয়েছে। রহিনা জানিয়েছে তার পুরো পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে যখন ছোট্ট নৌকায় করে নদী পার হয়ে ভারতে আসতে চেয়েছে তখনই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাঁদের ছোট্ট নৌকায় গুলিবর্ষণ করে।
৩) আহমেদ আলী, একজন কৃষক যার বয়স ২৫, তার ডান পায়ে এবং বাহুতে প্লাস্টার লাগানো, জানায় যে তার গ্রামে সেনাবাহিনী প্রবেশ করে এবং শক্ত সমর্থ যত জন যুবককে তারা পেয়েছে বেঁধে ফেলে। “তারা আমাদের জিজ্ঞেস করে আমরা কী বাঙ্গালী নাকি অবাঙ্গালী এবং আমাদেরকে বলে মাটিতে শুয়ে থাকতে। তারা আমাদের ঘিরে ফেলে এবং গুলি বর্ষণ শুরু করলে আমার বাহুতে গুলিতে লাগে এবং তারপরেও আমি শুয়েই থাকি। এরপরে তারা চলে, তারা আমার ঊরুসন্ধিতে বেয়োনেট দিয়ে খোঁচা মারে এবং থেঁতলে দেয় ও আমার পা ক্রমাগত আঘাতে গুড়িয়ে দিতে থাকে। ”
পিটার হেজেলহার্স্ট
দ্য টাইমস লন্ডন
বিবেক এবং বাংলাদেশ
এপ্রিলের শুরু হতে অল্প কিছু মাসের মধ্যেই পূর্ব বাংলার গৃহযুদ্ধ প্রায় আশি লক্ষ পুরুষ, নারী, এবং শিশুকে তাঁদের জন্মভূমির পরিস্থিতি হতে বাঁচতে তাঁদের নিজেদেরকে ভারতে নিয়ে আসে। অন্য আরো অগুনতি হাজারও জনকে তাঁদের দেশের মধ্যেই খন্ডযুদ্ধে খুন করে ফেলা হয়েছে অথবা ভিটে ছাড়া করা হয়েছে। পূর্ব বাংলার লাখো নারী অব্যাহত ভীতি, রোগ এবং অনাহারের সম্মুখীন, যদি না তারা অনতিবিলম্বে ত্রাণ পায়।
এই অবর্ণনীয় বিয়োগান্তক ঘটনা এখনও বিশ্ব বুঝে উঠতে পারেনি। আমি আপনাকে বলতে পারি যে, সরেজমিনে প্রত্যক্ষ না করা পর্যন্ত এর বিশালতা বুঝতে উঠতে শুরু করবেন। উদ্বাস্তুদের আর্তনাদ, তাঁদের মুখ তাঁদের গল্প ইত্যাদি শুনেছি যা এমনই চূড়ান্ত লজ্জার যা কি না বিশ্বের মানুষের নৈতিক সংবেদশীলতাকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে।
শরণার্থী শিবিরের অবস্থা বর্ণনাতীত। আপনি অস্থিচর্মসার বাচ্চাদের দেখতে পাবেন যাদের নিজেদের মাথা ধরে রাখার শক্তি পর্যন্ত নেই। আপনি দেখবেন শিশুদের পা ও পায়ের পাতা অপুষ্টিজনিত কারণে ফোলা। আপনি তাঁদের বাবা মায়ের চোখের দিকে তাকালে সন্তান থাকাতেও তাঁদের হতাশা দেখবেন। এবং, এইসবকিছুর মধ্যে সবচাইতে কঠিন হচ্ছে গতরাতে মারা যাওয়া শিশুর লাশ।
ভারত সরকার উদ্বাস্তুদের থাকা খাওয়ার জন্য যে প্রচেষ্টা করছে তা অসাধারণ কৃতিত্বের যা ইতিহাস ধারণ করবে এবং মনে রাখবে।
পূর্ব পাকিস্তানের এই ট্র্যাজেডি শুধু মাত্র পাকিস্তানের ট্র্যাজেডি নয়। এটা শুধু ভারতের ট্র্যাজেডিও নয়। এটা মূলতঃ পুরো বিশ্ব সম্প্রদায়ের ট্র্যাজেডি এবং এই সঙ্কট লাঘবে একযোগে কাজ করাটা সেই সম্প্রদায়েরই দায়িত্ব।
-এডওয়ার্ড কেনেডি
(১৯৭১ সালের ১৬শে আগষ্ট, ওয়াশিংটনে ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবের সম্মুখে প্রদেয় ভাষণ)