শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৬৮। ‘ব্লীডিং বাংলাদেশ’ – কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ সহায়ক সমিতি কর্তৃক প্রকাশিত চিত্র সংকলনে সমিতির সভাপতির বক্তব্য | পুস্তিকা | আগষ্ট, ১৯৭১ |
সিনেট হাউস
কলকাতা-১২।
১৮ই আগষ্ট, ১৯৭১।
এস. এন. সেন, এম.এ., পিএইচ. ডি. (লন্ডন)
এইটি ছবিতে নিপীড়িত বাংলাদেশের গল্প বলার প্রচেষ্টা। প্রতিটি ছবিই বাংলাদেশের দুঃখী নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের মাঝে পাক বাহিনীর রেখে যাওয়া হস্তক্ষেপের চিহ্ন যা আসল এবং প্রকৃত প্রমাণ। ছবির পাতাগুলো উন্মোচন করে যে, তারা আসলে খুবই সাধারণ লোক, যাদের একমাত্র দোষ ছিল যে তারা তাদের নিজেদের দেশকে ভালবাসতো। আর্মিদের তৈরী এই ধ্বংসলীলা হতে মুক্তভাবে বেঁচে থাকার ইচ্ছাধারীদের কেউই রক্ষা পায়নি- শিশু, নারী, বৃদ্ধ জনতা- সবাই আক্ষরিক অর্থেই নির্যাতিত হয়েছে, তাদের সাধারণ ঘরবাড়ি এবং সকল ধরনের সাধারণ আমানত হয় লুন্ঠিত হয়েছে অথবা পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এই ছবিগুলো সেইসব কথা বলে এবং এইসব ছবি যেই নৃশংসতাকে উন্মোচিত করেছে তা আমরা আমাদের ক্রুদ্ধ উন্মন্ত মানসিক অবস্থাতেও আদৌ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি কি না তা নিয়ে গুরুতর সন্দেহের উদ্রেক জাগায়। আর এই সবই ঘটেছে বিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকে যখন, একজন চাঁদে হাঁটা শুরু করেছে তখন, অন্যদিকে অন্য পুরুষ সেই একই নিষ্ঠুরতম কাজগুলোর পুনরাবৃত্তি করছে যা তাদের পূর্বপুরুষেরা ২০০০ বছরেরও বেশী আগে সম্পন্ন করেছিল।
এই ছবিগুলো আসলে নিপীড়িত বাংলাদেশের বিষয়ে প্রকৃত ঘটনার শুধুমাত্র একটি ক্ষুদ্র অংশের প্রকাশ মাত্র। সেই দুঃখী দেশটিতে যা কিছু হয়েছে এবং এখনো যা ঘটে চলেছে তার সব কিছুর চিত্র ধারণ করা সম্ভব হয়নি, এমনকি যে সমস্ত ছবি ধারণ করা হয়েছে এবং সেই দেশ হতে বাইরে তা পাচার করে দেওয়া হয়েছে তার সবগুলোও সংগ্রহ ও ছাপানো সম্ভব হয়নি। কিন্তু এই অল্প সংখ্যক ছবিও পাকবাহিনীর দ্বারা বড় পরিসরে চালানো নির্বিচারে দমন পীড়নের একটি আভাস দেওয়ার জন্যই যথেষ্ট। তারা নিজেরাই প্রকাশ করছে তাদের পরিচালক কতটুকু নিকৃষ্ট এবং মুক্তি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে তার সেনাবাহিনী কত উন্মত্ত আচরণ করতে পারে।
ভাইস – চ্যান্সেলর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।