যুদ্ধ বাধিয়ে বাংলার স্বাধীনতার সূর্যকে অস্তমিত করা যাবে না
মুক্তি সেনাদের জয় যখন সুনিশ্চিত, যখন মারমুখী আক্রমণের সামনে টিকতে না পেরে পশ্চাতে পালাতে শুরু করেছে হানাদার বাহিনী ঠিক তখনি আবার স্বার্থবাদী ইয়াহিয়া নতুন চক্রান্তে মেতে উঠেছে, আর এর ইন্ধন যােগাচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী গুষ্টি। চতুর ইয়াহিয়া যদি ভেবে থাকে শান্তিকামী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ বাধিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে নিশ্চিহ্ন করে পাক-ভারত সমস্যা বলে বিশ্বের নিকট তুলে ধরবে তাে জঙ্গীশাহী এখনাে মদের নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে। বিশ্বের কাছে ইয়াহিয়ার স্বরূপ উদ্ঘাটন হয়ে গেছে অনেক আগেই। ইয়াহিয়া যে “ঘােড়ায় চড়িয়া। মদ্দ হাটিয়া চলিল” দলের তা আর বুঝতে বাকী নেই বিশ্বের বিবেক সম্পূর্ণ মানুষের বাংলাদেশ লক্ষ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে পৃথিবীর মানচিত্র স্থান করে নিয়েছে এ অতিবাস্তব আর আজ এই অভিজ্ঞতার আলােকেই বাংলার বিপ্লবী তরুণরা দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য লড়াই করে হাসিমুখে মৃত্যুবরণ করছে। অথচ জঙ্গী ইয়াহিয়া বার বার এই মহান তরুণদের ভারতীয় অনুপ্রবেশকারী ও দুস্কৃতিকারী বলে বিশ্বের কাছে চিহ্নিত করবার চেষ্টায় মরিয়া হয়েও যখন ব্যর্থ হয়েছে এবং এই মুক্তি যােদ্ধাদের ক্রমবর্ধমাণ। সাফল্যে আতঙ্কগ্রস্ত নরপিশাচ ইয়াহিয়া যখন পায়ের নীচে মাটি পাচ্ছেনা তখন শান্তিকামী ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ বাধিয়ে পাক-ভারত সমস্যা বলে মিমাংসা করবার চক্রান্তে মেতে উঠেছে। ভারত পূর্বেই বলে। দিয়েছে, পাকিস্তান যদি ভারত আক্রমণ করে তাহলে তার উপযুক্ত জবাব পাবে। জবাব শুধু ভারত নয় জবাব দেবে বাংলাদেশের মুক্তিযােদ্ধারাও। ভারত বাংলাদেশের বন্ধু। বন্ধুর বিপদে বন্ধু নিচুপ থাকতে পারে না অতএব ভারত আক্রান্ত হলে বাংলার সেনারাও দুর্বার গতিতে ঝাঁপিয়ে পড়বে পশ্চিম পাকিস্তানের উপর। বাংলাদেশ নিয়ে কোন চক্রান্ত সহ্য করেনি করবেওনা। বাংলার সেনারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূর্য যেমন আজ বাংলার দিগন্তে জ্বলছে তেমনি চিরদিন জ্বলবে। একে নিভিয়ে দিতে পারে এমন শক্তি নেই পৃথিবীতে।
বিপ্লবী বাংলাদেশ। ১ : ১১।
৩১ অক্টোবর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯