শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৫৮। ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি জয়প্রকাশ নারায়ণের আবেদন | হিন্দুস্তান ষ্ট্যাণ্ডার্ড | ৯, জুলাই, ১৯৭১ |
প্রধানমন্ত্রীর এখনই সময় ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেয়ারঃ জয়প্রকাশ
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রেসক্লাবে ৬৮ বছরে গরম ও আর্দ্র পরিবেশেও তাকে অসাধারণ ফিট দেখাচ্ছিল এবং চোখে অঞ্জলি উঠার কারণে কালো চশমা পড়েন। জনাব জয়প্রকাশ নারায়ণ- বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা প্রচারণার জন্য বিশ্বভ্রমণ শেষ করে ফিরে এসেছেন এবং বলেন, তিনি পূর্বে দিল্লীতে যা বলেছেন তার সাথে কিছু কথা যোগ করতে চান।
জনাব নারায়ণ বলেন, ক্ষমতাধর দেশগুলো এখনও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় আগ্রহী, তাদের মধ্যে কেউ কেউ সম্ভবত ভারতের সঙ্গে শরণার্থী বোঝা ভাগ করতে ইচ্ছুক কিন্তু কেউ বাংলাদেশ বা ভারতকে এই বিপদ থেকে মুক্ত করবে না।
তিনি বলেন, মিসেস গান্ধীর জন্য সময় এসেছে ইয়াহিয়া শাসন- যারা নিজের দেশের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা ভারতে রপ্তানি করছে- তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়ার।
জনাব নারায়ণ যোগ করেন, তার দিল্লীর বিবৃতির পরে দুটি জিনিস ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্র যে অজুহাতেই হোক না কেন পাকিস্তানে অস্ত্র পাঠিয়েছে। এবং পাকিস্তান এই অস্ত্র চালান থামানোর পরিবর্তে এটিকে সাহায্যের পুনরারম্ভ হিসেবে বিবেচনা করছে।
ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা জনাব নারায়ণের কাছে স্পষ্ট করেছিলেন যে, “তারা বাংলাদেশের প্রকৃত প্রতিনিধিদের সাথে রাজনৈতিক পুনর্বাসন দেখতে চায়, কারো হাতের পুতুলের সাথে নয়”- এমন বক্তব্য এবং জনাব স্বরণ সিং-এর আশ্বাসের বিরোধিতা করে।
এর পিছনে কার হাত রয়েছে? জনাব নারায়ণ দুইটি ব্যাখ্যা প্রদান করেন। প্রথমত, পাকিস্তানী সামরিক শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে শক্তিশালী পেন্টাগনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, দ্বিতীয়ত আইজেন- হাওয়ার প্রশাসনের সময় জনাব নিক্সন যখন ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন তিনি উপমহাদেশ পরিদর্শন করেন এবং পাকিস্তানে বিপুল পরিমাণে অস্ত্র সরবরাহের সমর্থনে রিপোর্ট পেশ করেন। জোট নিরপেক্ষ ভারত এটিকে ধারাবাহিক প্রক্রিয়া বলেই ধরেছে। জনাব নারায়ণ সতর্কভাবে উল্লেখ করেন যে, বরাবরের মতন স্থায়িত্বের এই মূল্যায়নের মিথ্যা বর্ণনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু জনাব নিক্সন এখান থেকে বের হওয়ার সময় সামান্যতম বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছেন- এমন কোনো আভাস বা ইঙ্গিত পাওয়া যায় নি।
জনাব নারায়ণের মতে সোভিয়েত মনোভাব অনেক বেশি সহায়ক ছিল। রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট জনাব পডগরনি একমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান যিনি ইয়াহিয়া খানের কাছে পাঠানো চিঠিতে তার অসমর্থন জানিয়েছেন ও পাকিস্তানী পদক্ষেপের জন্য সামান্য সমালোচনা করেছেন।
জনাব নারায়ণ আরব দেশগুলোর মধ্যে শুধু কায়রোতে ছিলেন এবং সেই সময় মিশর সহিংস রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার মধ্যে ছিল। তবে কায়রোতে তিনি মানুষের নামেমাত্র কৌতূহল ও অপর্যাপ্ত প্রেস কাভারেজে হতাশ হয়েছেন এবং ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়াতে এর ঠিক বিপরীত অবস্থা খুঁজে পেয়েছেন।
অহিংস আন্দোলন থেকে যুদ্ধে পরিবর্তন করে মুজিব কি সাঙ্ঘাতিক ভুল করেছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে জনাব নারায়ণ বলেন, “মুজিবকে বিচার করার জন্য বিচারকের আসনে বসা আমার পক্ষে সম্ভব না”। যেকোনো ঘটনায় তিনি সামান্য অস্ত্রে-সজ্জিত আক্রমণাত্মক বাংলাদেশ বাহিনীর মধ্যে অহিংস প্রতিরোধের লক্ষণ দেখেছেন। ইয়াহিয়া পরিষ্কারভাবে হিটলারের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন এবং স্বাধীনতা আন্দোলন নিশ্চিহ্ন করার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করেছিলেন। একজন সত্য গান্ধীবাদী হিসেবে জনাব নারায়ণ বলেন, একটি পরিস্থিতি যা মানুষের মর্যাদা অসম্মানজনক অবস্থায় পরিচালিত করতে পারে, এমতাবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই অস্ত্র হাতে নেয়া পরিস্থিতির দাবি হয়ে উঠে।
তারপর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে- ভারতের কি করা উচিত? জনাব নারায়ণ কোন শর্ত ছাড়াই পরিষ্কার করে বলেন যে, এমনকি আমি আগেও বলেছি বাংলাদেশ সরকার গঠন এবং আবারো বলছি ভারতকে অবশ্যই বাংলাদেশের ধারণা স্বীকার এবং যথাসম্ভব সহযোগীতা করতে হবে। এটা বোধগম্য হতে পারে যে, ইহা ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পরিচালিত করতে পারে কিন্তু এটি একটি অনিবার্য ঝুঁকি। তিনি দ্রুত যোগ করেন যে, তিনি কোন যুদ্ধে প্ররোচিত করা ও ভারতের বিপক্ষে সামরিক উদ্যোগ চান না। ভারতের বাংলাদেশ স্বীকৃতির মাধ্যমে তিনি আশা করেন যে, আক্রান্ত এলাকাসমূহে অন্যান্য দেশের বস্তুগত সাহায্য পৌঁছাবে।
জনাব নারায়ণ নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি উদ্বাস্তুদের নিরাপদে তাদের বাড়ি ফিরতে কতদিন সময় লাগবে। ছয় মাস, আবার এক বছরও লাগতে পারে। তবে তিনি আশা করেন যে তাদের প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুকূল অবস্থা অবশ্যই তৈরি করা হবে। এবং তার মানে এই যে, বাংলাদেশে ইয়াহিয়ার সামরিক দাসত্বের সমূলে উৎপাটনের মাধ্যমে।