শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৫০। বাংলাদেশ কে স্বীকৃতির প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকারের বিলম্বের সমালোচনা | টাইমস অফ ইন্ডিয়া | ১৬ জুন ১৯৭১ |
স্বীকৃতি দিতে দেরি হওয়ায় কেন্দ্রের প্রতি অসন্তোষ
(নিজস্ব সংবাদদাতা)
নিজস্ব প্রতিবেদক, মাদ্রাজ, ১৫ই জুনঃ যদিও তামিলনাড়ু থেকে পশ্চিমবাংলা অনেক দূরে অবস্থিত কিন্তু বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীদের নজিরবিহীন প্রবাহকে অব্যাহত আছে। এখানকার মানুষ ও ইয়াহিয়া খানের হত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে।
এখানকার স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে ভারত সরকারের বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার বিলম্বের কারনে প্রত্যেহ রুষ্ঠ নেতাদের নানা উপস্থাপনা উপস্থাপিত হচ্ছে।
রাগান্বিত নেতারা স্থানীয় দৈনিকগুলোতে প্রতিদিন ডজনের উপরে চিঠি প্রকাশিত করছেন যেখানে ” বাংলাদেশ কে স্বীকৃতি দিতে ভারত সরকারের নিষ্ক্রিয়তা” নিয়ে তাদের ভাবনা উঠে এসেছে।
ফণীভূষণ এর নেতৃত্বে তিন সদস্যের বাংলাদেশী প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের মর্মান্তিক পরিস্থিতি এখানকার মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য তিন দিনের সফরে এই শহরে এসেছেন। জনাব মজুমদার আশা প্রকাশ করেছেন যে শরণার্থীদের এই প্রবাহ ভারতের সচিব পরিষদে উত্থাপিত হবে। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের আরেকজন শাহ মোয়াজ্জেম বলেছেন, জাতিসংঘে বাংলাদেশের নিজস্ব প্রতিনিধি রয়েছেন। শরণার্থীর সংখা আরো উন্নত করা সম্ভব যদিনা ভারত সরকার বাংলাদেশ এবং শরণার্থীদের স্বীকৃতি প্রদান করেন।
বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের তৃতীয় জন উল্লেখ করেন যে, ভারতের জন্য ইয়াহিয়া খান ও তার রক্তপিপাসু সৈন্যদের আক্রমনের শিকার এই বিশাল সংখ্যক শরণার্থীদের ভরনপোষন করা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
তিনি আরো উল্লেখ করেন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ইয়াহিয়ার লোকদের ক্যাম্প তৈরির আছে যেখানে জনসাধারনকে বিভিন্ন ধরনের প্রতারনা ও ফাঁদে ফেলা হয় যা মানুষজনকে ভারতের দিকে চলে যেতে বাধ্য করে।
ভারতীয় ট্রেড ইউনিয়নের জেনারেল কাউন্সিলের সাধারন সম্পাদক জনাব পি রামামূর্তি কোম্বাটুরের কেন্দ্রে চার দিন ব্যাপি বৈঠকের উদ্বোধনের সময় বলেন, বেতনে ভারসাম্য আসবেনা যতদিন না পর্যন্ত ভারত সরকার তার মুদ্রাস্ফীতি নীতি পরিত্যাগ করে।
তিনি সব স্তরের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া নিয়ন্ত্রন করতে একটি কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস কামনা করেন।
তিনি বর্ণনা করেন, “সরকারের মুদ্রাস্ফীতি নীতি জনগনের সাথে প্রকাশ্যে ডাকাতির ন্যায়”।
জনাব রামামূর্তি ভারতের সকল ট্রেড ইউনিয়ন ইউনিটের প্রতি সকল কেন্দ্রীয় শ্রম সংগঠনের সাথে একাত্ম হতে আহ্বান করেন। তিনি প্রধান কিছু শ্রম সংগঠনের প্রতিনিধিদের উত্থাপন করা আট দফা দাবিকে স্বাগত জানান এবং তিনি মনে করেন এটি সরকারের বিরুদ্ধে সম্মিলিত ভাবে প্রতিবাদ করতে শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করবে।
এই আট দফা দাবিগুলো হলো, সম্পত্তি অধিকার বিলুপ্তি, ক্ষতিপুরন ছাড়া পুঁজি সংগঠন একচেটিয়া ভাবে জাতীয়করন, সাধারন ভুমি সংস্কার, পূর্ণ কর্ম সংস্থান ও বেকারত্ব দূর করার জন্য একটি যৌক্তিক মজুরি নীতি তৈরি, নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যাদি জনগনের নাগালে রাখা, জনগনের কাছ থেকে সকল ঋণ আদায় স্থগিত রাখা শিল্প ও অর্থনীতিতে বৈদেশিক প্রভাব থেকে মুক্ত করার জন্য আর্থিক নীতিতে পরিবর্তন আনা।
উক্ত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, জনাব পি সন্দারায়া, জনাব জ্যোতি বসু, জনাব উমানাথ, জনাব কে রামানি, জনাব এ বালাসুবারমানিয়াম এবং জনাব বিশ্ব পুণ্যাহ। এই সম্মেলনে অন্তত ১২০ জন শ্রমিক নেতা উপস্থিত ছিলেন। ভারতীয় ট্রেড ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পর এটিই সাধারন পরিষদের প্রথম বাৎসরিক বৈঠক।
বরাবরের মতোই জনাব রামামুরতি লিখিত আকারে থাকা একটি বড় প্রতিবেদন পড়ে শোনান। তিনি জাতীয় বাজেটের বিশ্লেষন করেন এবং বলেন যে যদিও ঘাটতি ৩২০ কোটি রুপি দেখানো হয়েছে এটি আসলে ৫০০ কোটি রুপি হতে পারে।
দ্রব্যসমুহের পাইকারি দাম বিশ্লেষন করে জনাব রামামুরতি ভারতীয় অর্থনীতি সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে রয়েছে বলে কতৃপক্ষের দাবীর সাথে দ্বিমত পোষন করেন। ক্রমবর্ধমান কর্মসংস্থানকে একটি উন্নয়নশীল দেশের উন্নতির মাপকাঠি হিসেবে তিনি তুলে ধরেন যেখানে বিগত বছর এবং তার আগের বছরে ভারতে কর্মসংস্থান ক্ষেত্রে অবনতি ঘটছে বলে ফলাফল প্রকাশ করেন।
ভারতীয় চেম্বার অফ কমার্সের রিপোর্টেরর উধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, দেশে ১৯৭০-৭১ এর প্রথমার্ধে বেকারের সংখ্যা ১৩ মিলিয়ন যেখানে ১৯৬৯ সালে বেকারের সংখ্যা ১৯৬৭-৬৮ সালের ১৭ মিলিয়ন থেকে বেড়ে দাড়িয়েছিলো ১৯ মিলিয়নে আর এগুলো হয়েছিলো যখন বলা হচ্ছিলো দেশের অর্থনীতি সংকট কাটিয়ে উঠেছে।
‘সবুজ বিপ্লবের ‘ বিরুদ্ধেও জনাব রমামুরতির শ্লেষাত্বক সমালোচনা করেন। ১৯৬৪-৬৫ সালের ৮৯.৩৪ মিলিয়ন টন উৎপাদনের সঙ্গে ১৯৬৭-৬৮ সালে উৎপাদিত ৯৫.০৫ মিলিয়ন টনের তুলনা করে তিনি বলেন এটি বার্ষিক তিন শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।