You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.13 | বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের জন্য মি.এম.সি চাগলার দাবি | টাইমস অফ ইন্ডিয়া - সংগ্রামের নোটবুক
শিরো্নাম সূত্র তারিখ
১৪৬। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের জন্য মি.এম.সি চাগলার দাবি টাইমস অফ ইন্ডিয়া ১৩ জুন, ১৯৭১

চাগলা চায় ইন্ডিয়া বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করবে
“দ্যা টাইমস অফ ইন্ডিয়া” পত্রিকা সংস্থা

বম্বে, জুন ১২- পূর্ব পাকিস্তান থেকে পঞ্চাশ লক্ষ শরণার্থী দেয়ায় ইন্ডিয়ার নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে, বাংলাদেশের চারজন নেতা ইন্ডিয়ান সরকারের নিকট গতকাল তাদের দেশকে স্বীকৃতি প্রদানের আবেদন করেছে।

এখানের এক গণসভায় তারা আবেদনটি করেন এবং এতে জনাব এম.সি. চাগলা শক্তভাবে সমর্থন জানান, তিনি বলেন, “বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান না করে ইন্ডিয়া বিশাল ভুল করেছে। ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।

জনাব চাগলা সভার সভাপতিত্ব করেন, বলেন যে যদি ইন্ডিয়া বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে, তাহলে ইহা দ্বিজাতি তত্বকে মারাত্বকভাবে ঘা দিবে, যে নোংরা ভিত্তিতে পাকিস্তান গঠিত হয়েছিল।

জনাব ফনী ভূষণ মজুমদার, বর্তমানে ইন্ডিয়া ভ্রমণরত বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা বলেন যে যদি বাংলাদেশ মুক্তিফৌজকে স্বীকৃতি মঞ্জুর করেন তাহলে তা মানুষিক উতসাহ দেয়া হবে।

তিনি প্রতিনিধিদলের অন্যান্য সদস্যদের বলেন, জনাব শাহ মোয়াজ্জেম হোসাইন, জনাব কে.এম ওবায়দুর রহমান এবং মিসেস নুরজাহান মুর্শেদ অনুভব করেন যে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করতে ইন্ডিয়ার দ্বিধা করা উচিত নয় যেহেতু উভয়পক্ষই গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র এবং অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে।

জনাব মজুমদার বলেন যে পাকিস্তানের গোড়া থেকে, পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তান দ্বারা, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক উভয়ভাবেই শোষিত হয়ে আসছে। এমনকি শতকরা ৫৬ জন মানুষ বাংলায় কথা বললেও, উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে আরোপিত করা হয় এবং বাঙ্গালী ছাত্ররা উর্দুকে প্রতিহত করতে তাদের জীবন পর্যন্ত উতসর্গ করে।

পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যুত্থান স্বঃস্ফূর্ত ছিল, তিনি বলেন। আওয়ামিলীগ লড়াই করেছে এবং শেখ মুজিবর রহমানের ছয় দফা আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচনে জয় লাভ করে। যখন জেনারেল ইয়াহিয়া খান এবং শেখ মুজিবর রহমানের আলোচনা চলছিল, জনগণের কোন ধারণাই ছিল না যে ইয়াহিয়া খান বিশ্বের ইতিহাসে সব থেকে বড় গণহত্যার পরিকল্পনা করতেছে।

জনাব শাহ মোয়াজ্জেম হোসাইন বলেন যে পাকিস্তানের গঠন নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে একমাত্র সংযোগ হচ্ছে ধর্ম, সাংস্কৃতিকভাবে, তাদের মধ্যে কোন কিছুরই মিল নেই। অনেকেই অনুভব করেছে যে বাঙালীদের সেখানে উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছিল। পূর্ব পাকিস্তান অর্থনৈতিকভাবে শোষিত এবং, যদিও বিশাল পরিমাণ অর্থ নতুন রাজধানী গঠনে ব্যয় হতো, পূর্ব পাকিস্তানে কিছুই ব্যয় হতো না।

তিনি বলেন যে জেনারেল ইয়াহিয়া, জনাব ভুট্টো, আর্মি এবং পাকিস্তানের পুজিবাদীরা ছিল যারা পাকিস্তানকে ভেঙে ফেলেছিল, শেখ মুজিবুর রহমানকে নয়, একসময় যাকে বর্তমান শাসনকালে শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল।

পাকিস্তানের তরুন প্রজন্ম জানে যে পাকিস্তানের গঠন ভুল ছিল এবং ইহার কার্যকারীতা ছিল অসম্ভব।

যে হাতে অপরাধগুলো করা হয়েছিল, সে হাত নাদির শাহ, চেঙিস খান এবং হিটলারের থেকেও ভয়ানক ছিল, তিনি বলেন। মার্চের একদিনেই, ১০, ০০০ জনগণ হত্যা করা হয়। “গোটা সৈন্যদলকে বাংলাদেশের নিষ্পাপ ঘুমন্ত জনগণের উপর লেলিয়ে দেয়া হয়েছিল”।

তিনি বলেন তাকে তিনবার গুলি করা হয়েছে এবং নারীদের ধর্ষিত হতে দেখেছেন। তিনি জেনারেল ইয়াহিয়ার অপরাধগুলোর বিচার দাবি করেন।

জনাব কে.এম. ওবায়দুর রহমান বলেন, সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র হিসেবে, ইন্ডিয়ার বাংলাদেশের গণতন্ত্রে দায়িত্ব রয়েছে।

মিসেস মুর্শেদ শেখ মুজিবর রহমানের মুক্তি, সকল কারাবন্দীদের মুক্তি এবং বাংলাদেশ থেকে সকল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের দাবি জানান।

দ্বিজাতি তত্ত্বের মৃত্যু

জনাব চাগলা বলেন যে বাংলাদেশ দ্বিজাতি তত্ত্বকে চিরতরে হত্যা ও নিখাত করে ফেলল। আমি বলেছিলাম যে এটা ধর্মীয় বিষয় ছিল না বরং সাংস্কৃতিক এবং জাতিগত ব্যাপারই একটি দেশ গঠন করে।

পাকিস্তান, যারা ইসলাম প্রচার করতে চেয়ে, হাজার হাজার মুসলিম হত্যা করেছে।

জনাব চাগলা বলেন যে যদি ইন্ডিয়া বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে, তাহলে বাংলাদেশে অস্ত্র সরবারহ করা হতে পারে। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করার অধিকার সংরক্ষণ করে।

তিনি সরকারের নিকট আবেদন করে, জাতির স্বার্থ, স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের নামে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করতে দ্বিধা করবেন না

তিনি বলেন, বাংলাদেশ, স্বাধীনতার ক্ষেত্রে কোন আপোষ করবে না এবং পাকিস্তানকে এটা স্বীকার করতে হবে। তিনি অনুভব করেন যে ইন্ডিয়ায় যদি গণভোট আয়োজিত হয়, তাহলে শতকরা ৯৫ ভাগ জনগণ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের পক্ষে ভোট দিবে। তিনি হুশিয়ার করেন যে যদি স্বীকৃতি অস্বীকৃতি করা হয়, তাহলে বাংলাদেশে হয়ত নতুন নেতৃত্ব আবির্ভাব হবে যা চীনের পন্থী হবে।