You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
১৪৫। গারো পাহাড়ের কেন্দ্রীয় ত্রাণ সংস্হা কতৃক প্রধাণমন্ত্রীর কাছে পেশকৃত স্মারকলিপি প্রচারপত্র ১২ জুন, ১৯৭১

গারো পাহাড়ের কেন্দ্রীয় ত্রাণ সংস্হা কতৃক প্রধাণমন্ত্রীর কাছে পেশকৃত স্মারকলিপি

শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী
প্রধানমন্ত্রী, ভারত।

মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী,

আমরা গারো পাহাড়ের অধিবাসীদের পক্ষ থেকে এই জেলায় আপনার আগমনকে স্বাগত জানাচ্ছি। আজ কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই সীমান্তবর্তী জেলায় আপনার আগমন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও প্রতীক্ষিত, সম্ভবত আগে কখনো আমরা এত অধীরভাবে আপনার আসার জন্য অপেক্ষা করিনি।

সমগ্র দেশবাসী ভাই-বোনদের সাথে সাথে আমরাও আপনার প্রগতিশীল নেতৃত্বের জন্য গর্ববোধ করি এবং দেশকে একটি শক্তিশালী ইমেজে গড়ে তোলা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আপনার অঙ্গীকারকে অন্তর থেকে সমর্থন করি। এই অঞ্চলের মানুষের জন্য আপনি সবসময় আন্তরিক উদ্বেগ, উৎকন্ঠা ও বন্ধুত্ব প্রদর্শন করেছেন, আমরা প্রার্থনা করি এখানকার মানুষের জন্য আপনার ভালবাসা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।

যাই হোক, আজ পূর্ব বাংলার মানুষের উপর পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদারদের নারকীয় নির্যাতন এবং আমাদের সীমান্তে তাদের নগ্ন আগ্রাসনের কারণে এই জেলায় একটি জটিল পরিস্হিতির উদ্ভব হয়েছে। ২৫শে মার্চ পাকবাহিনীর ধ্বংসলীলা শুরু হবার পর থেকেই আমাদের জেলার ১৪৪ মাইল সীমান্ত জুড়ে মানুষ আসছে। মানুষের এই ঢল এখনো অব্যাহত আছে এবং এখন পর্যন্ত ২ লাখ উদ্বাস্তু এই জেলায় ঢুকেছে, যার ফলে জেলার জনসংখ্যা ৪ লক্ষ থেকে বেড়ে ৬ লক্ষে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।

১৯৬৪ সালে আগত উদ্বাস্তুদের একটা অংশ এখনো জেলার বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আছে, এদের সাথে নতুন উদ্বাস্তুরা যোগ হয়ে প্রশাসন এবং যোগাযোগ ব্যাবস্হার উপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করছে।

সামগ্রিকভাবে আমাদের জেলার প্রায় পুরোটাই পাহাড়ী, সীমান্তের কাছে অল্প কিছু সমতলভূমি আছে যা কৃষিজমি হিসাবে ব্যাবহৃত হয়। আমাদের কমিটি শরণার্থীদের জন্য সাময়িক আশ্রয়কেন্দ্র নির্মান এমনকি তাবু খাটানোর জন্য জায়গা খুঁজে পেতে হিমশিম খাচ্ছে।

আমাদের জানামতে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন উইলিয়ামসন সাংমা ইতিমধ্যে জেলার সমস্যা সমূহ আপনার সামনে তুলে ধরেছেন, যার মধ্যে সমভূমির অভাব, অত্যন্ত দূর্বল যোগাযোগ ব্যাবস্হা, প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীর বেশীরভাগই জেলার বাইরে থেকে আমদানি করার প্রয়োজনীয়তা এবং বর্ষাকালে বন্যা ও ভূমিধসের কারনে যোগাযোগ ব্যাবস্হা ব্যাহত হওয়া উল্লেখযোগ্য। এসব কারণে মোট জনসংখ্যার প্রায় সমপরিমাণ উদ্বাস্তু আশ্রয় দেয়া এই জেলার জন্য অত্যন্ত কঠিন। শরণার্থীদের সাময়িক অবস্হানের কারনে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে, তাই অধিকাংশ উদ্বাস্তুকে খুব দ্রুত এই জেলা থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়াটা খুবই জরুরী।

এই বিপুল পরিমাণ শরণার্থী আসার কারনে সীমান্তবর্তী অঞ্চলের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও পাকিস্তানী বাহিনী সীমান্ত এলাকায় বারবার হামলা করছে, যার ফলে সীমান্ত অঞ্চলের গ্রামবাসীদের বাড়ি-ঘর, জমির ফসল ফেলে পালিয়ে আসতে হচ্ছে। তারা নিজের দেশেই উদ্বাস্তুতে পরিনত হচ্ছে। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো হতে বাস্তুচূত আমাদের এই ভাই-বোনদের জন্য বিশেষ ব্যাবস্হা নেয়ার এবং প্রয়োজনীয় ত্রাণ ও আন্যান্য সহযোগীতার দেয়ার জন্য আমরা সরকারকে অনুরোধ করছি।

সংসদে, বিভিন্ন জনসভায় বক্তব্য দেবার সময় আপনি বর্তমান সংকটের ব্যাপারে যে অবস্হান নিয়েছেন, আমরা বিনীতভাবে তার প্রতি আমাদের সমর্থন পুনব্যাক্ত করছি। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচারের ফলে সৃষ্ট উদ্বাস্তু সমস্যা এবং পাক বাহিনীর বার বার সীমান্ত লঙ্ঘন করে অনুপ্রবেশ ভারতের সীমিত সম্পদের উপর চাপের সৃষ্টি করছে, অনাবশ্যক রাজনৈতিক বোঝা তৈরি করছে এবং উন্নয়নের গতি ব্যাহত করছে। উদ্ভুত সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান খোঁজার লক্ষে আপনার ঐকন্তিক প্রচেষ্টা এবং পরাশক্তি ও বিশ্ববিবেকের উদ্দেশ্যে আপনার বক্তব্য সমূহের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।

এখন স্হানীয় সমস্যার দিকে নজর দেবার সময় নয়, সেগুলো যত গুরুত্বপূর্নই হোক না কেন। তারপরেও আপনার উপস্হিতির সুযোগে সীমান্তে নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং কৃষি শিল্পের অবকাঠামো উন্নয়নের ব্যাপারে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের ফলে সীমান্তে ব্যাবসা-বাণিজ্য বন্ধ, বার বার সীমান্ত অতিক্রম করে আসা শরনার্থীদের ঢল এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের কারনে আমাদের এই অঞ্চল অর্থনৈতিক ভাবে অনুন্নত রয়ে গিয়েছে। কৃষি শিল্পের অবকাঠামো শক্তিশালী করলে সেটা এই এলাকার উন্নয়নের গতি অনেক গুনে বাড়িয়ে দেবে।

আমরা সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি যেন লম্বা সময় আপনার হাতে আমাদের দেশ পরিচালনার ভার ন্যাস্ত করা হয়, আপনার সুযোগ্য নেতৃত্বে আমাদের শক্তি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায় এবং আমরা শান্তি ও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেতে পারি।
জয় হিন্দ
আপনার সেবায়

টুরা, গারো পাহাড় গ্রহণসিং এ. মারাক
জুন ১২, ১৯৭১ ডেপুটি স্পিকার, মেঘালয় বিধানসভা এবং চেয়ারম্যান,
সেন্ট্রাল রিলিফ কমিটি, টুরা।

মোদি কে. মারাক
চীফ এক্সিকিউটিভ মেম্বার,
গারো পাহাড় জেলা পরিষদ, টুরা।

সিংজান ডি. সাংমা এম.এল.এ
প্রেসিডেন্ট, গারো পাহাড়
জেলা কংগ্রেস কমিটি (আর)
এবং ভাইস-চেয়ারম্যান,
সেন্ট্রাল রিলিফ কমিটি, টুরা।

আলবিনস্টোন এম. সাংমা
কার্যনির্বাহী পরিষদ সদস্য,
গারো পাহাড় জেলা পরিষদ
এবং ভাইস-চেয়ারম্যান,
সেন্ট্রাল রিলিফ কমিটি, টুরা।
 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!