You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সুত্র তারিখ
১৪১। জয়প্রকাশ নারায়ণ কর্তৃক বাংলাদেশ প্রশ্নে লন্ডনে বিশ্ব সফরের অভিজ্ঞতা বর্ননা দৈনিক “যুগান্তর” ৫ জুন, ১৯৭১

বাংলাদেশের শান্তি ফিরিয়ে আনতে বিশ্ব সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা
(বিশেষ প্রতিনিধি সুন্দর কাবাদি)

লন্ডন, ৪ঠা জুন- সর্বোদয় নেতা শ্রী জয় প্রকাশ নারায়ণ গতকাল বিকেলে এখানে এসেই গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন বৃটিশ রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। প্রথমেই তিনি দেখা করেন কমনওয়েলথ রিলেশনস অফিসের মিঃ এন্থনী কেরশার সঙ্গে। মিঃ কেরশা ভারত-পাক সমস্যা সম্বন্ধে বিশেষভাবে ওয়াকিবহাল।

শ্রী নারায়ণ বলেছেন, পাক সামরিক বাহিনীর গনহত্যার ফলে বাংলাদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ শরনার্থী ভারতে চলে আসায় যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে সেই ব্যাপারে বৃটিশ সরকারের যথেষ্ট সহানুভুতি রয়েছে। মিঃ কেরশা ভারতের এই সমস্যায় বৃটিশ সরকারের অকুন্ঠ সহানুভুতি প্রকাশ করেছেন।

শ্রী নারায়ণের মতে, পশ্চিম পাকিস্তানকে আর্থিক সাহায্য বন্ধ করার ব্যাপারে পশ্চিমা শক্তিগুলির অনিচ্ছার কারন আছে দুটি। একটি হল পশ্চিমী শক্তিগুলি মনে করছে সাহায্য বন্ধ করলে পাকিস্তানের কাছে আগেকার পাওনা টাকা হয়তো ফেরৎ পাওয়া যাবে না। দ্বিতীয়তঃ প্রয়োজনীয় আর্থিক সাহায্য না পেলে পাকিস্তান সাহায্য লাভের জন্য চীনের দ্বারস্থ হবে।

শ্রী নারায়ণ এর আগে কায়রো, রোম বেলগ্রেড, মস্কো, হেলসিঙ্কি, বন এবং প্যারিস ঘুরে এসেছেন। রবিবার শ্রী নারায়ণ লন্ডন ত্যাগ করেছেন। তিনি এরপর ওয়াশিংটন এবং অটোয়া সফরে যাবেন। তাঁর সফরের উদ্দেশ্য বাংলাদেশের সমস্যা বিষয়ে আন্তর্জাতিক সহানুভুতি প্রতিষ্ঠা এবং সেখানকার জনগনের জন্য গণতান্ত্রিক অধিকার অর্জন করা।

সমাজতন্ত্রী নেতাদের মনোভাব

গত সপ্তাহে শ্রী নারায়ণ হেলসিঙ্কি সফরে গিয়েছিলেন। সেখানে তখন আন্তর্জাতিক সমাজতন্ত্র সম্মেলন হচ্ছিল। এই সুযোগে শ্রী নারায়ণ বহু দেশের সমাজতন্ত্রী নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে পেরেছেন। যাঁদের সঙ্গে তাঁর কথাবার্তা হয়েছে তাঁদের মধ্যে ছিলেন পশ্চিম জার্মানীর চ্যান্সেলার উইলি ব্রান্ট, বৃটেনের বিরোধী দলের নেতা হ্যারল্ড উইলসন নরওয়ে ও সুইডেনের প্রধানমন্ত্রীদ্বয় এবং ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডের সমাজতন্ত্রী দলের নেতৃবর্গ।

এই নেতৃবর্গের সঙ্গে শ্রী নারায়ণএর আলাপ-আলোচনা বেশ সন্তোসজনক হয়েছে। মিঃ ব্রান্ট বাংলাদেশের সমস্যা সম্পর্কে যথেষ্ট সহানুভুতি হওয়া সত্ত্বেও তিনি জানিয়েছেন পশ্চিম জার্মানী পাকিস্তানের উপর রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে অক্ষম।

শ্রী নারায়ণ এই নেতৃবর্গের সঙ্গে সম্মেলনের বাইরে দেখা করেছেন এবং কথাবার্তা বলেছেন। এরপর তিনি বনে যান এবং সেখানে পার্লামেন্ট সদস্য এবং ক্রিশ্চান ডেমোক্র্যাট পার্টির সদস্যদের সঙ্গে তিনি কথাবার্তা বলেন। এরা বেশ সহানূভূতিশীল বলেই শ্রী নারায়ণের মনে হয়েছে। ভারতের আগত শরণার্থীদের সাহায্যের জন্য পশ্চিম জার্মানীর পার্লামেন্টে শীঘ্রই একটি বাড়তি বাজেট পেশ করা হবে।

শ্রী নারায়ণ যেদিন প্যারিসে গিয়েছিলেন সেদিন সেখানে ছুটির দিন। তাই তিনি গুরুত্বপূর্ণ সরকারী নেতৃবর্গের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। তবে তাঁর ধারনা ফরাসী নেতৃবর্গ বাংলাদেশ সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল আছেন। তাঁকে ফরাসী সরকারী সূত্র থেকে জানানো হয়েছে যে, পাকিস্তানকে কোনও অস্ত্র সাহায্য দেওয়া হচ্ছে না। তবে ফরাসী অস্ত্র ব্যবসায়ীদের পাকিস্তানে অস্ত্র বিক্রয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়নি।
 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!