You dont have javascript enabled! Please enable it!

মেহেরপুর আবার মুক্ত, শালুটিকরও বাংলাফৌজ নিয়ে নিল-
সোমবার সাফল্যের পর সাফল্য

মুক্তিফৌজের পক্ষে সোমবার সাফল্যের পর সাফল্য। আধুনিকতম মরণাস্ত্রে বলীয়ান পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রচণ্ড সংঘবন্ধ চালিয়ে মুক্তিফৌজ এদিন বাংলাদেশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল পুনরুদ্ধার করে নিয়েছে। রবিবার দিন যুদ্ধের অবস্থা অপেক্ষাকৃত শান্ত থাকায় আজ মুক্তিবাহিনী নতুনভাবে শক্তি সঞ্চয় করে তীব্র আক্রমণে নাজেহাল করেছেন হানাদার সৈন্যদের। শ্রীহট্ট শহরের অদূরে শালুটিকর বিমানবন্দরে গত কয়েকদিন ধরে দুই পক্ষের মরীয়া আক্রমণ চলছিল। পাকফৌজ সেখানে যেতে বাধ্য হয়েছে। আমাদের সংবাদদাতা শ্রী ধ্রুব মজুমদার জানাচ্ছেন, প্রায় ১৫০ জন্য পাকসেনা আত্নসমর্পণ করেছে মুক্তিফৌজের কাছে, ওদিকে হতাহতের সংখ্যা অনেক। শালটিকর থেকে মাত্র দু’কিলোমিটার দূরে খাদিমনগরে উপস্থিত হয়ে তিনি যুদ্ধের প্রত্যক্ষ ফলাফল পেয়েছেন। পাকবাহিনী এখন বিমানবন্দর থেকে হটে গিয়ে শেষ লড়াই চালাচ্চে। এখানে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়ে বৃটিশরাই একটি বিমানবন্দর বানিয়েছিল এবং পাকিস্তানী সরকার সেটিকে আধুনিক রূপ দিয়েছিল।

এদিন দুপুরের দিকে খবর আসে যে, ভারতে সীমান্তবর্তী মেহেরপুর পাকফৌজ দখল করে নিয়েছে। সন্ধ্যার পর আবার আনন্দ সংবাদ। মুক্তিবাহিনী এখান থেকে হটিয়ে দিয়েছে হানাদারদের। মেহেরপুর ট্রেজারির একজন কর্মী ভারত সীমান্তে আশ্রয় নেবার পর জানা যে, পাকফৌজ মুসলিম লীগের সহায়তায় শহরটি লুটপাট করে অনেক বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে। পরে তারা মুক্তিবাহিনীর তাড়া খেয়ে বাধ্য হয়। চুয়াডাঙ্গা শহরটি এখন মুক্তিসেনার দখলে। শহরের বাইরে যুদ্ধ চলছে।

আর একটি বড় জয় পূর্ব খণ্ডে কসবায়। আমাদের সাংবাদিক তুষার পণ্ডিত জানাচ্ছেন, আগরতলা থেকে ২০ মাইল দূরে ভারত সীমান্তের কমলাসাগরের ওপাশে কসবায় পাকবাহিনী ক’দিন ধরে ছাউনি গেড়েছিল। এই সমৃদ্ধ গ্রামটিতে পাকফৌজ যথেচ্ছ লুটতরাজ ও অগ্নিকাণ্ড চালিয়েছে। এদিন ভোর তিনটের ক্যাপ্টনে গাফফারের নেতৃত্বে মুক্তিফৌজ অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে দেড়’শ শত্রুসৈন্য নিহত করে অঞ্চলটি দখল করে নিয়েছেন। ভূতপূর্ব পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম লীগ মন্ত্রী তফাজ্জল আলীর বাড়িতে পাকফৌজ থানা গেড়েছিল। মুক্তিবাহিনী সেই বাড়িটিও উড়িয়ে দেন। এই শহরের বাড়িতে বাড়িতে যে পাকিস্তানী পতাকা ওড়ানো হয়েছিল স্বাধীন বাহিনীর সেনারা সেই সব পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেন। সমস্ত গ্রামবাসীরাও আবার আস্তে আস্তে এখানে ফিরে আসছে।

আখাউড়া রেল স্টেশনের কাছেও প্রব্ল যুদ্ধ চলছে। এখানে দখলদার বাহিনীরাই ফাঁদে আটকা পড়ার অবস্থা। আগরতলা থেকে দশ মাইল দূরে সিঙ্গুর বিল সেতুটি মুক্তিফৌজ উড়িয়ে দিয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও পাকফৌজ কঠিন প্রতিরোধের সম্মুখীন।

হার্ডিঞ্জ বা সারা সেতু লড়াই এখন তুমুল। ফেনীর কাছে এক আকস্মিক সংঘর্ষ দেড়শত পাকফৌজ নিহত হয়েছে। এখানে পাক বিমান বাহিনী বোমাবর্ষণ করেছে বিস্তর। রংপুর ও লালমনিরহাটের মধ্যে সড়ক ও রেলপথের যোগাযোগ ব্যবস্থাও আজ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে মুক্তিফৌজের তৎপরতায়। ঢাকা শহরের আশেপাশে এবং টাঙ্গাইলেও অবিরাম লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে।

আজ পাক সামরিক কর্তৃপক্ষ স্বীকার করতে বাধ্য হন যে, বাংলাদেশের বড় বড় শহরগুলি বস্তুত জনশূণ্য। সেনাবাহিনী অধিকৃত খুলনা বেতার কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে যে, এই শহরের প্রায় তিন হাজার অধিবাসী গ্রামে চলে গেছেন।

রংপুর অঞ্চলে ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর থেকে উত্তর অগ্রসরমান একটি পাক বাহিনীকে মুক্তিফৌজ প্রবলভাবে বাধা দেয়।
-আনন্দবাজার পত্রিকা, ২০ এপ্রিল ১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!