বাংলাদেশে লড়াইয়ের দ্বিতীয় পর্যায়
মুক্তিফৌজের সাঁড়াশী আক্রমণে পাকবাহিনী পর্যুদস্ত
২১শে এপ্রিল-গতকাল বিকেলে বাংলাদেশে লড়াইয়ের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয়েছে। এতদিন যা হচ্ছিল, তা হল মুক্তিফৌজ কর্তৃক পাকিস্তানী সৈন্যের প্রতিরোধ করা এবং তা ছিল একরকম বিচ্ছিন্নভাবেই। অর্থ্যাৎ মুক্তিফৌজ তেমন সংগঠিত ছিল না। বিভিন্ন সেক্টরের সঙ্গে যুদ্ধনীতি অনুযায়ী সমঝোতাও ছিল না। কিন্তু গতকাল থেকে মুক্তিফৌজ পরিকল্পিতভাবে সংগঠিত হয়ে যুদ্ধনীতি অনুযায়ী পাল্টা আক্রমণ শুরু করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে মুক্তিফৌজের সংগ্রামীরা অনেক অভিজ্ঞ গয়ে উঠেছেন। তাদের প্রথম পাল্টা আক্রমণ পশ্চিম সেক্টর থেকেই শুরু হল এবং ক্রমে অন্যান্য সেক্টরও এই পাল্টা আক্রমণ আরম্ভ হবে।
গতকাল বিকেলেই মুক্তিফৌজ বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার সীমান্তবর্তী বুড়িপোতা, গবীপুর ও দৌলতপুর দিয়ে তিন পথে এক সঙ্গে সাঁড়াশী আক্রমণ চালিয়েছে। এই সাঁড়াশী আক্রমণের উদ্দেশ্য হল- মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা অঞ্চল দখল করা এবং মেহেরপুর থেকে সাত মাইল দূরে আমঝুপিতে পাকসৈন্য যে ঘাঁটি স্থাপন করেছে তাকে দখল করা এবং যশোর ক্যান্টনমেন্ট দখল করা। আজ সকাল পর্যন্ত খবর নিয়ে জানা গেছে যে, মুক্তিফৌজ ইতিমধ্যেই কোর্ট এলাকা দখল করে নিয়েছে এবং মুক্তিফৌজের তীব্র আক্রমণের মুখে পাকিস্তানী সৈন্যরা পিছু হটতে শুরু করেছে এবং পাকবাহিনী পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছে। মুক্তিফৌজের জনৈক মুখপাত্র জানিয়েছেন।
মুজিবনগর আক্রমণের চেষ্টা ব্যর্থ : এদিকে গতকাল মঙ্গলবার পাকিস্তানী সৈন্যরা মুজিবনগর আক্রমণের চেষ্টা ও পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু বিকেল থেকে প্রবল বৃষ্টি হওয়ায় এবং রাস্তাঘাট চলাচলের পক্ষে সুবিধাজনক না হওয়ায় পাকবাহিনীর উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যায়। মুজিবনগরে মুক্তিফৌজ ট্রেনিং ক্যাম্পঃ গতকাল বাংলাদেশের মুজিবনগরে মুক্তিফৌজের ট্রেনিং ক্যাম্প খোলা হয়েছে এবং আজ সকাল থেকে তার কাজ শুরু হয়েছে। এই ক্যাম্পে ২০০ জন করে শিক্ষার্থীকে সমরশিক্ষা দেওয়া হবে এবং শিক্ষা শেষে তাদের লড়াইয়ে পাঠানো হবে।
-যুগান্তর, ২২ এপ্রিল, ১৯৭১