ফরিদপুরের বহুগ্রাম এবং ঢাকার পশ্চিমাঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর প্রসাশন
বাংলা দেশের প্রতিটি শহরে এখন শতকরা ৩০ ভাগ লােক অনুপস্থিত। পিটি আই পরিবেশিত সংবাদের উল্লেখ করে ওয়াশিংটন টাইমসে এই খবর প্রকাশিত হয়। মুক্তি ফৌজ দমনে পাকসেনারা এখন মােটেই সুবিধা করতে পারছে না। মুক্তি বাহিনীর অধিকার এখন বাংলাদেশের বহু অঞ্চলেই প্রতিষ্টিত। ঢাকার পশ্চিমাঞ্চল এবং ফরিদপুরের বহু গ্রামে পাল্টা সরকার গঠিত হয়েছে বলেও পত্রিকাটিতে উল্লেখ করা হয়। বাংলাদেশ সম্পর্কে রিপাের্ট দিতে গিয়ে ঐ পত্রিকার ঢাকাস্থ সংবাদ দাতা জানান যে পাক বাহিনীর অত্যচারে সৃষ্ট ত্রাস ও সন্ত্রাসের রাজত্ব বিভিন্ন শহর গুলােতে কিছুটা হ্রাস পেলেও গ্রামাঞ্চলে এখনও তা অব্যাহত রয়েছে। ভীতি প্রদর্শন এবং গ্রামের ঘরবাড়ী, জ্বালানো এখনও পুরােদমেই চলছে। | পাক বাহিনী বাঙালীদের উপর কড়া নজর রাখছে এবং কঠোর শাস্তিও দিচ্ছে। বিদেশী সংবাদ দাতারা তাদের কোন বাঙালী বন্ধুর সাথে দেখা করলে পর মুহূর্তেই ঐ সব বাঙালীদের উপর নির্মম অত্যাচার চালানাে হয়।
বাংলা দেশের বিভিন্ন এলাকা এখন মুক্তি বাহিনী মুক্ত করে ফেলেছেন। জঙ্গীশাহী কোন উপায়েই তাদের দমন করতে পারছে না। ঢাকার পশ্চিমাঞ্চল এবং ফরিদপুরের বহু গ্রামে মুক্তি বাহিনী পাল্টা সরকারও গঠন করেছেন। পাক জঙ্গীশাহী সীমান্তে প্রচুর সৈন্য সমাবেশে করেছে। ফলে শহরাঞ্চলে সামরিক বাহিনীর সৃষ্ট সন্ত্রাস কিছুটা কমেছে। আবার অন্যদিকে গেরিলা তৎপরতাও প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে পত্রিকাটিতে উল্লেখ করা হয়। গত ৫ই সেপ্টেম্বর জঙ্গী ইয়াহিয়া খাঁ সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শনের কথা ঘােষণা করলেও খুব কম লােককেই মুক্তি দেয়া হয়েছে। তাছাড়া প্রত্যেকদিনই কিছু না কিছু লােককে গ্রেফতার করা হচ্ছে।
সম্প্রতি মুক্তিবাহিনী মর্টারের সাহায্যে ঢাকায় আক্রমণ পরিচালনা করে। বিমান বন্দরেও গেরীলা তৎপরতা চালানাে হয়। কিন্তু গােলাটি সেখানে না পড়ে কলেরা লেবরেটরী প্রাঙ্গনে পড়ে। ইতিমধ্যে ঢাকার দুটি ব্যাংক, একটি বড় হােটেল ও চট্টগ্রাম বন্দরেও বােমা বিস্ফোরণ ঘটানাে হয়। ঢাকার আন্ত -মহাদেশীয় হােটেলের সমানে বন্দুকের গুলি ছােড়া হয় এবং পার্শ্ববর্তী পুলিশকে আক্রমণও করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ে বাঙালীরা সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন পরিকল্পনা বানচাল করে দেয়ায় জঙ্গীশাহী ভীষণ নাজেহাল হয়ে পড়ছে বলেও পত্রিকাটিতে উল্লেখ করা হয়।
দাবানল : ৪ ০
৩১ অক্টোবর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯