You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.17 | রণাঙ্গণের খবর | বাংলাদেশ - সংগ্রামের নোটবুক

রণাঙ্গণের খবর

বাংলা বাহিনী দিনাজপুর রণাঙ্গনে বড় রকমের সাফল্য অর্জন করেছেন। তারা গতকাল দিনাজপুর শহর থেকে পাক সাঁজোয়া বাহিনীকে হটিয়ে দিয়েছেন। বাংলা বাহিনী এই আক্রমণে পাক বাহিনীর বিশেষ ক্ষতি সাধিত হয়। এছাড়া রংপুর শহরের বীরগঞ্জে বাংলা বাহিনীর হাতে পাক-বাহিনী পর্যুদস্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও ঢাকাতে পাক বিমান বাহিনী প্রচণ্ড বোমাবর্ষণ করেছে এবং মেশিনগান থেকে গুলি চালিয়েছে। রংপুরের উপকণ্ঠে পাকফৌজ দু’শ সাঁওতালকে হত্যা করেছে। তাদের ঘরবাড়ি সব পুড়িয়ে দেয়া হয়।

সিলেট শহরটি মুক্তিবাহিনীর দখলে রয়েছে। খবরে প্রকাশ, শতাব্দীর পুরোনো হযরত শাহ জালালের (রঃ) মাজারে উপর পাক বিমান বাহিনী বোমাবর্ষণ করেছে। আকাশাবানীর খবর প্রকাশ, বিদেশী চা-বাগানের মালিকগণ জানিয়েছেন যে, সমগ্র সিলেট থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ জায়গায় পাক সামরিক শাসনের কোন অস্তিত্ব নাই। তারা আশঙ্কা করেছেন যে শ্রীঘ্রই হয়তো বড় রকমের লড়াই বাধতে পারে।

রণাঙ্গনের দায়িত্বভারঃ গত ১৪ই এপ্রিল স্বাধীন বাংলার প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ তাঁর ঐতিহাসিক বেতার ভাষণে পাঁচজন সেনাধ্যক্ষের নাম ঘোষণা করেন। এই পাঁচজন সেনাধ্যক্ষ স্বাধীর বাংলার বিভিন্ন রণাঙ্গনে বিপুর বিক্রমে যুদ্ধ পরিচালনা করছেন। মেজর জলিলকে বরিশাল, খুলনা ও পটুয়াখালী; মেজর খালেদ মোশাররফকে সিলেট, কুমিল্লা; মেজর জিয়াউর রহমানকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী; মেজর সফিউল্লাহকে ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল এবং মেজর এম এ ওসমানকে কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, যশোর রণাঙ্গন পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।

সারা ব্রীজের যুদ্ধঃ ১৫ই এপ্রিল। খবরে প্রকাশ, অদ্য রাজশাহীর ঐতিহাসিক সারা ব্রীজের দখল নিয়ে বিপ্লবী মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তানী হানাদার জঙ্গী বাহিনীর মধ্যে সমস্ত দিন ধরে তুমুল লড়াই চলে। বিপ্লবী মুক্তিবাহিনী তীব্র আক্রমণের মুখে হানাদার বাহিনী নিদারুন মার খেয়ে অবশেষে পালাতে বাধ্য হয়, কিন্তু পালাতে গিয়ে বর্বর বাহিনীর কয়েকশত বর্বর পদ্মাগর্ভে পড়ে ডুবে মারা যায়। এবং মুক্তবাহিনী সগৌরবে সারা ব্রীজের দখল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হন।

তিনটি বিমান ধ্বংসঃ বরিশাল, ১৬ই এপ্রিল। স্বাধীন বাংলার বেতারে প্রকাশ, গত ১৬ই এপ্রিল বিপ্লবী মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমনের মুখে পাক হানাদার বাহিনী পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে। এই সময় পাক বিমানবাহিনীর তিনখানা বিমান ছত্রভঙ্গ পর্যুদস্ত শত্রুবাহিনীকে সাহায্যকল্পে এগিয়ে আসে। কিন্তু মুক্তিবাহিনীর তীব্র পাল্টা আক্রমনের মুখে তিনখানা বিমান ধ্বংস হয়ে যায়। এই নিয়ে মোট ১৭ খাঁনা বিমান ধ্বংস হয়।

মুক্তিবাহিনীর সাফল্যঃ বরিশাল, ১৬ই এপ্রিল। সংবাদের প্রকাশ, রংপুর-তিস্তা রেলসড়কের উপর বাংলা মুক্তিবাহিনী পশ্চিমা বাহিনীর একটি ট্রেনে আক্রমণ চালায়। বেশ কয়েক ঘণ্টা তুমুল যুদ্ধের পর পাকবাহিনী পরাস্ত হয়। এ যুদ্ধে ২০ জন পাক সেনা নিহত হয়।

সর্বশেষ সংবাদঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিকটে “তিতাস সেতু” নিয়ে বাংলা বাহিনী ও পাকফৌজের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। বর্তমানে সেতুটি বাংলা বাহিনীর দখলে রয়েছে।

বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে তুমুল সংঘর্ষ চলেছে। এছাড়া ঢাকার আশেপাশে মুক্তিবাহিনীর সাথে পাক বাহিনীর সংঘর্ষ চলছে। উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে পাক সৈন্যের আক্রমণ মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধ করেছে। উজিরনগর এখন বাংলা বাহিনীর দখলে রয়েছে। পাক বিমান বাহিনী ময়মনসিংহ, ফেনী, আশুগঞ্জ, সীতাকুন্ডে প্রচণ্ড বোমাবর্ষন করে।

সর্বশেষ খবরে প্রকাশ, মুক্তিবাহিনী চুয়াডাঙ্গার পাক বাহিনীর হামলা ব্যর্থ করে দিয়েছে। ময়মনসিংহ-কুমিল্লার ৯০০ কিলোমিটার পথে তুমুল যুদ্ধ চলেছে।

-বাংলাদেশ, ১ম বর্ষ, ১ম সংখ্যা, ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১