You dont have javascript enabled! Please enable it!

ঝিকড়গাছায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিফৌজের প্রচণ্ড লড়াই

ঝিকড়গাছা রণাঙ্গন, (যশোর), ৯ই এপ্রিল-পাকিস্তানী বাহিনী আজ ঝিকড়গাছা পর্যন্ত রণক্ষেত্র বিস্তৃত করেছে। কামান ও ৬ ইঞ্চির মর্টার নিয়ে পাকিস্তানী সৈন্যরা আজ ভোরে মালঞ্চ গ্রামের উপর নতুন আক্রমণ চালানে মুক্তিফৌজ গ্রাম ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়। গ্রামটি তারা ছেড়ে দিলেও তাদের মেশিনগানের গুলিতে প্রায় একশ’ পাকসৈন্য নিহত হয়েছে।

মালঞ্চ গ্রাম ছেড়ে মুক্তিফৌজ এখন একদিকে যশোর রোডের উপর লাউজানি লেভেল ক্রসিং গেটে এবং অন্যদিকে ঝিকরগাছা বাজারের উত্তর দিকে কপোতাক্ষ নদের পূর্ব পাড়ে পাকিস্তানীর সঙ্গে ‘ব্যাক টু দি ওয়াল’ লড়াই আরম্ভ করেছে।

সকালের দিকে পাকিস্তানী বাহিনী যখন যশোর রোড ধরে ঝিকরগাছার দিকে এগোচ্ছিল, সে সময় মুক্তিফৌজ লাউজার ক্রসিং গেট বরাবর মেশিনগান ও ৩ ইঞ্চির মেশিনগান মর্টার দিকে পাকবাহিনীর আক্রমণ রোধ করে। কিন্তু পাকবাহিনী তখন যশোর রোডের উপর তাদের একটি দল রেখে উত্তর দিকে চষা মাঠের মধ্য দিয়ে কাটাখাল পেরিয়ে ঝিকরগাছা বাজারের উপর মর্টারে গোলা ছুড়তে আরম্ভ করে।

পদ্মার তীরে নতুন যুদ্ধ ফ্রন্ট

শুক্রবার ভোর থেকে পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বিভিন্ন দিক থেকে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে নতুন করে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ হানবার চেষ্টা করছে। গতকাল রাত থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানী সেনা ঢাকা পশ্চিমাংশে পদ্মা তীরবর্তী আরিচাঘাট, শিবালয় প্রভৃতি স্থানে জমায়েত হয়। এ খবর বাংলাদেশের। দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের কমান্ডের মুক্তিফৌজ সদস্যরা ফরিদপুরের কাছে পদ্মার তীরে বাঙ্কার তৈরী করে সারারাত ধরে পাহারা দেয়। পাকিস্তানী সৈন্যদের জলপথে সেনা জমায়েত এই প্রথম হওয়ায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে আরো একটি নতুন যুদ্ধফ্রন্ট পদ্মা নদীর উত্তর দিক বরাবর এবং দক্ষিণ তীরের কিছু অংশে গড়ে উঠলো।

আজ সকালে পাকিস্তানী সৈন্যরা ঢাকা জেলার আরিচাঘাট ও শিবালয় থেকে গোয়ালন্দ ও নগরবাড়ীর দিকে নদী অতিক্রম করে বরবার যাবার চেষ্টা করে। নদী পারাপার কালে পাকিস্তানী সৈন্যদের সঙ্গে মুক্তিফৌজের দীর্ঘ লড়াই হয়। সারাদিক লড়াইয়ের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী যমুনা নদী পার হয়ে নগরবাড়ীতে নামতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম কমান্ডের সদর দপ্ত চুয়াডাঙ্গায় রাতের দিকে খবর আসে গোয়ালন্দের তীর বরাবর ফরিদপুরের দিকে পাকিস্তানী সেনারা এগুতে থাকলে বাংকারের ভেতর থেকে মুক্তিফৌজ আপ্রাণ চেষ্টায় তাদের অগ্রগতিকে প্রতিহত করেন। নদী পারাপারের সময়ে পাকিস্তানী সৈন্যরা মর্টার ও বিমানের সাহায্য নেয়। কিন্তু এত চেষ্টা সত্ত্বেও তারা গোয়ালন্দের দিকে নামতে সক্ষম হয়নি।

-যুগান্তর, ১০ এপ্রিল, ১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!