শহরে শহরে মুক্তিসেনার প্রতিরোধ
অদম্য মুক্তিফৌজের প্রবল প্রতিরোধের ফলে পাক সেনাবাহিনী দিশেহারা। এখন বর্ষার আগে শেষ ভরসা শুধু আকাশ থেকে বোমাবর্ষণ। স্বাধীনতার যুদ্ধে বাংলোদেশের মুক্তিফৌজ যে সমস্ত এলাকা দখল করে নিয়েছিল। তার কিছু কিছু অংশ পুনর্দখলের মরীয়া চেষ্টায় এদিন পাকস্থলবাহিনীকে অবিরাম মদত দিয়েছে বিমানবাহিনী।
মুক্ত শহর রাজশাহীতে শুক্রবার পর্যন্ত মোট গোলাবর্ষণ হয়েছে ১৫ বার। লক্ষ্যস্থল ঠিক না রেখে হানাদার বিমান এলোপাতাড়ি বোমা ফেলেছে রংপুর, শ্রীহট্ট, দিনাজপুর, ফেনী, হরিপুর, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া এবং আরও কয়েকটি জায়গায়। তৎপর মুক্তিফৌজের তাঁরা বিশেষ ক্ষতি করতে পারেনি, তবে অসামরিক ব্যাক্তিদের মধ্যে নিহতদের সংখ্যা অনেক।
ঢাকা থেকে শুরু হয়েছে দ্বিমুখী আক্রমণ। শহর থেকে ৫৬ কিলোমিটার দূরে মানিকগঞ্জের দিকে একটি সেনাদলকে অগ্রসর হতে দেখা গেছে। আর একটি সেনাদল ময়মনসিংহের দিকে। উদ্দেশ্য, নদীপথে পুরো দখল রাখা। টাঙ্গাইলের উত্তরে একটি সোনাদলকে আক্রমণ করেছে মুক্তিফৌজ। শেষ খবরে জানা যায়, সেখানে লড়াই চলছে তুমুল।
পাবনায় আরেকটি বড় রকমের সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। যমুনা পেরিয়ে পাবনা অভিমুখী একটি পাকসেনাদের গতি আটকে দিয়েছে মুক্তিবাহিনী। স্বাধীন বাংলা বাহিনীর দক্ষিণে-পশ্চিমে এলাকার পরামর্শদাতা ডঃ আশাবুল হক জানিয়েছেন যে, ঐ অঞ্চলে পাক স্থলবাহিনীকে সাহায্য করছে নৌজাহাজ ও বিমান-গোলাবর্ষণে, বোমাবর্ষণে। কিন্তু মুক্তিফৌজ অস্ত্রশক্তিতে হীনবল হয়েও হানাদারদের গতি রুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছে।
দিনাজপুরের প্রবল সংগ্রামের খবর আগে, এই শহরটি পুনর্দখল করার জন্য পাকফৌজ ট্যাংক আমদানী করেছে। রংপুরে অবশিষ্ট সৈন্যবাহিনীকে সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত করার জন্য চতুর্দিক থেকে আক্রমন কুষ্টিয়ার জঙ্গলগাছিতে পাকফৌজ নতুন করে আক্রমণ চালিয়েছে।
কুমিল্লাঃ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব খন্ডে কুমিল্লা শহর ও ক্যান্টমেন্ট প্রচণ্ড লড়াই চলছে। বিমান বন্দরটি এখন হানাদারদের দখলে। ঢাকা থেকে তাই রোজ সৈন্য আসছে। আসছে খাবার-দাবার। কুমিল্লা থেকে পাকসৈন্য জাঙ্গালিয়া রোড ধরে চাঁদপুরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। হয়ত তারা নদী ধরে কুমিল্লা যাওয়ার পথটি আবার চালু করার জন্য নতুন করে চেষ্টা চালাবে।
কুমিল্লা শহর থেকে কয়েক হাজার অধিবাসী পালিয়ে গিয়েছে। পাকসৈন্যরা অবাধ্য অধিবাসীদের শায়েস্ত করতে ওই অঞ্চলে আগুন জ্বালিয়েছে। সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজীপুর, বিবিরবাজার ও তরুনপুর।
-আনন্দবার পত্রিকা, ১০ এগ্রিল, ১৯৭১