1975.04.04 | বঙ্গবন্ধু বলেন দ্বিতীয় বিপ্লবের ৪ টি কর্মসূচী | সাপ্তাহিক বিচিত্রা | ৪ এপ্রিল ১৯৭৫
বঙ্গবন্ধু বলেন
দ্বিতীয় বিপ্লবের ৪ টি কর্মসূচী
দ্বিতীয় বিপ্লবের ৪ টি কর্মসূচী হল সকল প্রকার দুর্নীতি উৎখাত, উৎপাদন বৃদ্ধি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও জাতীয় ঐক্য। নতুন সমাজ ব্যবস্থা।
বর্তমান সমাজব্যবস্থা ঘুণে ধরে গেছে। এর বিরুদ্ধে আঘাত হানতে চাই যেমন আঘাত হেনেছি পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে।
গ্রামভিত্তিক সমবায় মাধ্যম
দেশের ৬৫ হাজার গ্রামের প্রতিটি গ্রামে ১০০ থেকে ২০০ সদস্যের বাজার সদস্যের একটি বহুমুখী সমবায় সমিতি গঠিত হবে। এটা হবে বাধ্যতামূলক। গ্রামের বেকার কর্মক্ষম প্রতিটি লোক এর সদস্য হবে।
এই বহুমূখী সমবায়ের মাধ্যমে উন্নয়নের লক্ষ্য ঠিক করে সকল সরকারী সাহায্য, মজুরী, টাকা পয়সা ব্যয় হবে। ওয়েস প্রোগ্রাম, টেস্ট রিলিফ বিতরণ সব কাজই এই সমবায়ের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। এভাবে আস্তে আস্তে ইউনিয়ন পরিষদ বিদায় নিবে। পাচ বছরের মধ্যে এই পরিকল্পনা কার্যকর হবে।
এই গ্রাম ভিত্তিক সমবায় সমিতি গঠনের উদ্দেশ্যে হছে প্রতিটা গ্রামকে স্বাবলম্বী করে তোলা। কৃষি পরিকল্পনা প্রণয়ন থেকে শুরু করে কৃষির সকল উপকরণই এই সমিতির মাধ্যমে বিতরণ করা হবে।
নতুন প্রশাসনিক ব্যবস্থা
এরপর প্রতি থানায় একটি করে থানা পরিষদ গঠিত হবে। স্থানীয় গণ প্রতিনিধি এর চেয়ার ম্যান হবেন। এতে স্থানীয় সরকারী কর্মচারী এবং যুব প্রতিনিধিরাও থাকবেন।
বর্তমান জেলা হুলোর প্রশাসনিক ইউনিট হিসেবে আর কোন অস্তিত্ব থাকবে না। প্রতিটি মহকুমা হবে এক একটি জেলা। প্রতি জেলায় একটি করে প্রশাসন কাউন্সিল থাকবে। এই কাউন্সিলের একজন চেয়ারম্যান থাকবেন।
ঘুণে ধরা ব্রিটিশ ও পাকিস্তানী আমলের শাসন ব্যবস্থা আর চলতে পারে না, একে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। তাহলেই দেশের মঙল হবে। আমি তিন বছর দেখেছি। আমার এই স্থির বিশ্বাস। বঙ্গবন্ধু বলেন, শাসন ব্যবস্থা জনগণের কাছে পৌছে দিতে হবে।
শোষিতের গণতন্ত্র
প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, জনগণই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবে। পার্লামেন্ট থাকবে। পার্লামেন্টে সদস্য নির্বাচনের জন্য তিনজন কে মনোনয়ন দেয়া হবে। জনগণই তাদের একজনকে নির্বাচিত করবেন। আমরা চাই শোষিতের গণতন্ত্র। আমরা চাই না শোষকের গণতন্ত্রঃ এটি পরিস্কারভাবে বলছি।
অর্হনৈতিক মুক্তি
আমি চেয়েছিলাম স্বাধীনতা কিসের স্বাধীনিতা রাজনৈতিক স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়েছে। এবার যদি অর্থনৈতিক মুক্তি না আসে। যদি দুঃখি মানুস পেট ভরে ভাত খেতে না পারে। বেকার সমস্যা দূর না হয়।
পদ্ধতি পরিবর্তন
দুঃখী মানুসের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য ও শৃংখলা ফিরিয়ে আনার জন্য শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন করেছি। এমন অবস্থা সৃষ্টি হল যে, আফিসে গিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে যায়। স্বাক্ষর দিয়ে ফ্রিস্টাইল। কারখানায় গিয়ে কাজ না করে টাকা দাবী করে। যেনো দেশে সরকার নেই। স্লোগান হল – বঙ্গবন্ধু কঠোর হও।
বঙ্গবন্ধু কঠোর হবে। কঠোর ছিল – কঠর আছে। কিন্তু দেখলাম চেষ্টা করলাম। এত রক্ত এত ব্যথা, এত দুঃখ- দেখি কি হয়। আবেদন করলাম, অনুরোধ করলাম। কিন্তু চোর নাহি শুনে ধর্মের কাহিনী।
দুঃখী মানুসের মুখে হাসী ফোটাবার জন্য এবং দেশে শান্তি শৃংখলা ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে পদ্ধতির পরিবর্তন সাধন করা হয়েছে।
শিক্ষকদের প্রতি
পাসের হার কমানোর মধ্যে কোন কৃতিত্ব নাই। আপনারা ছাত্রেদের মানুস করেন। রাজনীতি কম করেন। ছাত্রদের মানুষ করার দায়িত্ব আপনাদের। পাসের হার বাড়াবার জন্য আপনারা নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন।
ছাত্রদের প্রতি
আদর্শ নাগরিক ও পরিশ্রমী শিক্ষার্থী হতে হবে। ছাত্রদের গ্রামে গ্রামে যুবক কর্মীদের কাজ করতে হবে। ফুলপ্যান্ট ছেড়ে হাফ প্যান্ট ও পায়জামা ছেড়ে লুঙ্গী পরে গ্রামে কাজ করেন।
ক্ষমতা বন্ধুকের নলে নয়
সিস্টেম পরিবর্তনের আগেও ক্ষমতা বঙ্গবন্ধুর কম ছিলো না। আমি বিশ্বাস করি না ক্ষমতা বন্দুকের নলে। আমি বিশ্বাস করি – ক্ষমতা বাংলার জনগনের কাছে। জনগণ যে দিন বলবে – বঙ্গবন্ধু ক্ষকতা ছেড়ে দাও তার পর একদিনও রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী থাকবো না। আমি ক্ষমতার জন্য রাজণীতি করি না। বঙ্গবন্ধু দুঃখী মানুসকে ভালবেসে রাজনীতি করেছে শোষণ হীন সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের জন্য।
বিপ্লব গ্রাম ভিত্তিক
স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লব সফল করার পথ নির্দেশ করেছেন
জাতির জনক রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ৪র্থ বার্ষিকি দিবসে সহরাওয়ার্দি উদ্যান্যের এক বিশাল জনসভায় প্রশাসনের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন। বঙ্গবন্ধু ইতিপূর্বে দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। দিতীয় বিল্পবের কর্মসূচীর ক্ষেত্রে ছিলো (১) বাংলাদেশের মাটি থেকে দূর্নিতিবাজদের উৎখাত করা, (২) জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা, (৩) কল কারখানা ও ক্ষেত খামারে উৎপাদন বৃদ্ধি করা, (৪) জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা।
বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচী বাস্তবায়নের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার জন্য এল্পটি মাত্র রাজনৈতিক দল রাখা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলেছেনঃ যারা বাংলাকে ভালোবাসেন, এর আদর্শে বিশ্বাস করেন, ৪ টি রাষ্ট্রীয় আদর্শ মানেন, সৎ পথে চলেন, তারা সকলেই এই দলে সদস্য হতে পারবেন। একটি মাত্র রাজনৈতিক দল রাখার ঘোষণা ইতিপূর্বেই করা হয়েছে। স্বাধীনতা দিবসের জন সভায় বঙ্গবন্ধুর এই দলে অর্থাৎ বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) এর ৫ টি অঙ্গ দল রাখার কথা ঘোষণা করেছেন। কৃষক, শ্রমিক, যুবক, ছাত্র ও মহিলাদের নিয়ে এই অঙ্গ দল গঠন করা হবে।
জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য সম্ভাব্য সব রকমের কাজই শুরু হয়েছে বা অচিরেই হতে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু জাতিকে শতর্ক করতে যেয়ে বলেছেন, যদি আমাদের প্রত্যেক বছর ৩০ লাখ লোক বাড়ে, তাহলে ২৫ – ৩০ বছরে বাংলায় কোন জমি থাকবে না হাল চাষ করার জন্য বাংলার মানুস বংলার মানুসের মাংস খাবে। দুর্নিতি বাজদের উৎখাত করার জন্য সব রকমের ব্যবস্থায় সরকার ইতিমধ্যে গ্রহণ করেছেন।
দূর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার ডাক দিয়েছে বঙ্গবন্ধু। তিনিন এদের সামাজিক ভাবে ভয়কট করারও আহবান জানিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু দৃঢ কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন, এদের আর ক্ষমা করব না। যাকে পাবো ছাড়ব না। আমি গ্রামে গ্রামে নামব। গণ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে দূর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে। বঙ্গবন্ধু এ বিষয়ে আশা প্রকাশ করে বলেন, গত দু মাসে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার সব চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গটি ছিল গ্রাম ভিত্তিক বহুমুখী সমবায় সমিতি গঠন এবং প্রতিটি মহকুমা কে জেলায় পরিণত করার স্বীদ্ধান্ত। থানা ও জেলা পর্যায়ে নয়া প্রশাসনিক ব্যবস্থার কথা ঘোষণা করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, এর পর প্রতি থানায় একটি করে থানা পরিষদ গঠিত হ্যবে। স্থানীয় গণ প্রতিনিধি এর চেয়ারম্যান হবেন। এতে স্থানীয় সরকারী কর্মচারী ও যুব প্রতিনিধিরাও থাকবেন। বঙ্গবন্ধু আরোও বলেন, বর্তমান জে;লা গুলোর প্রশাসনিক ইউনিট হিসাবে আর কোন অস্তিত্ব থাকবে না। প্রতিটি মহকুমা হবে একটি জেলা। প্রতিটি জেলায় একটি করে প্রশাসনিক কাউন্সিল থাকবে। এই কাউন্সিলের একজন চেয়ারম্যান থাকবেন।
কেন্দ্রীয়ভূত প্রশাসনিক ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীয়করণ এই স্বীদ্ধান্তের গভীর তাতপর্য রয়েছে স্বাধীনতার পর থেকে আমলা ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে যে ব্যবধান রচিত হয়েছিল তাতে উৎপাদন ব্যবস্থা সহ দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি মারাত্নক ভাবে ব্যহত হচ্ছিল। বৃটিশ আমলে এই প্রশাসনিক ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য ছিল জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষাকে দমন করার কৌশলে গণ প্রতিনিধিদের জনগণ থেকে বিচ্ছিওন্ন করা এবং কঠোর আমলা তান্ত্রিক শাসন ব্যবসথা চালু রাখা। এই ব্যবস্থায় যে কোন ক্রমেই দেশের আপামর জনগণের মঙল সাধন করতে পারে না এটা আমরা তীক্ত অভিজ্ঞতার মাধ্যমে উপলব্ধি করেছি। আমলাতান্ত্রিক প্রশাসন কে গণমূখী করা এবং সরকারী কর্মকর্তা ও গণ প্রতিনিধিদের ভিতরকার বিরোধ নিরসনের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু নিঃসন্দেহে এক যুগান্তকারী স্বীদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমাদের মত অনুন্নত দেশের কেন্দ্রীয়ভূত শাসন ব্যবসথা অবশ্যই ক্ষতিকর। শরীলের সমস্ত রক্ত মুখে জমা হওয়া যেমন স্বাস্থের লক্ষ্যণ নয়, তেমনি প্রশাসনিক ক্ষমতা কেন্দ্রীয়ভূত হওয়া স্বাস্থকর নয়। এর ফলে প্রশাসনের সঙ্গে জনগণের বিচ্ছিনতা গড়ে এবং প্রশাসন কখনও গণমূখী হতে পারে না। আমরা বঙ্গবন্ধুর এই সময়চিত বাস্তব স্বীদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানায়।
ক্ষেতে খামারে উৎপাদন বাড়িয়ে দেশকে দ্রুত খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার জন্য বঙ্গবন্ধু গ্রাম ভিত্তিক বাধ্যতামূলক বহুমূখী সমবায় সমিতি গঠনের স্বীদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর কার্যক্রম ব্যখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, দেশের ৬৫ হাজার গ্রামের প্রতিটি গ্রামে ১০০- ১০০০ সদস্যের ১ টি করে বহুমুখী সমবায় সমিতি গঠিত হবে। এটা হবে বাধ্যতামূলক। গ্রামের বেকার কর্মক্ষম প্রতিটি লোক এর সদস্য হবে। জমির মালিকদের অভয় দিয়ে তিনি বলেছেন, আপনারা ভয় পাবেন না, আমি জমি নিব না। জমি তার মালিকেরই থাকবে। জমির ফসলও তার মালিক পাবেন। এই বহুমুখী সমবায়ের মাধ্যেম গ্রামের উন্নয়ন মূলক সকল কাজে সকল সরকারী সাহায্য মঞ্জুরী টাকা পয়সা ব্যয় হবে। ওয়াফফর্স প্রগাম, টেস্ট রিলিফ, সার বিতরণ সহ সব কাজই এই সমবায়ের মাধ্যমে সম্পন্ন্য হবে। এভাবে আস্তে আস্তে ইউনিয়ন পরিষদ বিদায় নিবে। ৫ বছগরের মধ্যে এই পরিকল্পনা কার্যকরী হবে। এই গ্রাম ভিতিক সমবায় সমিতি গঠনের উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রতিটি গ্রামকে স্বাবলম্বী করে তোলা। কৃষি পরিকল্পনা প্রণয়ন থেকে শুরু করে কৃষির সকল উপকরণই এই সমিতির মাধ্যমে বিতরণ করা হবে।
বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবিত গ্রাম পর্যায়ের এই স্বনির্ভর প্রকল্প একাধারে যেমন দেশের বিপুল পরিমাণ অবহেলিত কৃষি শ্রম কে কাজে লাগাতে সাহায্য করবে তেমনি ত্বরান্বিত করবে উৎপাদনের গতিধারাকে। কৃষি শ্রমিক, ভূমিহীন কৃষক সহ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষকরা উৎপাদনের সংগে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত নয় বলে আমাদের দেশে কৃষি উৎপাদনের এক নৈরাজ্য জনক পরিস্থিতি উদ্ভব হোয়েছিল। আমাদের দেশের মত উর্বরা জমি পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই। এত বেশি শ্রম শক্তিওম কোঠাও নেই। অথচ এই দুটি মূল্যমান সম্পদের সমন্বয়ে সাধিত না হওয়ার কারণে গ্রাম অঞ্চলের বিস্তর জমি অনাবাদী পড়ে থাকে, কোথাও বা সারা বছরে ১ টি মাত্র ফসল ফোলানো হয়। দেশের কৃষি শ্রমকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো গেলে আমাদের দেশের অধিকাংশ জমি থেকে বছরে ৩ টি ফসল তোলা সম্ভব, কম করেও হলেও দুটি ফসল তোলাই যাবে। গ্রামে গ্রামে কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যক্তি মালিকানা তথা ব্যক্তিগত স্বেচ্ছাচারিতার অবসান ঘটিয়ে সমবায়ের মাধ্যেম যৌথ উদ্যোগের ব্যবস্থা কার্যকরী হলে, উৎপাদন অচিরেই দ্বীগুণ বা তিন গুণ গিয়ে পৌছাবে। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু গ্রামীণ প্রশাসনের যে পরিবর্তন সাধনের কথা বলেছেন, তাতে গ্রামের টাউটদের দৌরাত্ন অবশ্যই কমবে। গ্রামের এই টাউটরা কেন্দ্রীভূত প্রশাসনের প্রতিনিধি হিসাবে উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক বিরাট অচলাবস্থা সৃষ্টি করে রাখে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথ অবলম্ভন করলে এই টাউটদের নির্মুল করা খুব একটা কঠিন কাজ হবে না।
দ্বিতীয় বিপ্লবের গ্রাম ভিত্তিক অর্থনীতি ও প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলার জন্য বঙ্গবন্ধু দেশের সরকারী কর্মচারী, যুবক, ছাত্র ও বুদ্ধিজীবীদের সহযোগিতা চেয়েছেন। উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত না হলে দেশের বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষিত সম্প্রদায়ের পরাশ্রয়ী শ্রেণী হিসাবে জনগণের করুণা ও ধিক্কার কুড়াবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। বুদ্ধিজীবীদের দায়িত্ব হচ্ছে বিভিন্ন সময় ও ঘটনার প্রেক্ষিতে সমাজকে বিশ্লেষন করা। তারা তাদের এই গুরু দায়িত্ব টি তখনই যথাযথ ভাবে পালন করতে পারবেন যখন তারা মানুস ও সমাজকে পুরোপুরি জানতে পারবেন। বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিল্পবের মহান উদ্দেশ্যকে সাফল্যমন্ডিত করার জন্য সর্ব স্তরের জনগণকে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। বিশেষ স্বার্থানেশী মহল থেকে বাধাও আসবে। যে ধরণের বাঁধা ইতিপূর্বেই জাতীয়করণ কর্মসূচীর ক্ষেত্রে বা জমি সিলিং এর ক্ষেত্রে এসেছিল। সমাজতান্ত্রীক অর্থনীতির বুনিয়াদ কে সুদৃঢ করার জন্য সরকার হয়ত অচিরেই ভূমি সংস্কারের কথা বলবেন। এখন থেকেই আমাদের কর্তব্য হওয়া উচিৎ সমাজতন্ত্র তথা জনগণের শত্রুদের চিহ্নিত করা, সামাজিক ভাবে কোণঠাসা করা এবং যথাযথ আইনের মাধ্যমে তাদের নির্মুল করা। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে দ্ব্যার্থহীন কণ্ঠে ঘোষনা করেছেন, “আমরা চায় শোষিতের গণতন্ত্র। আমরা চাই না শোষকের গণতন্ত্র। এটা পরিস্কার ভাবে বলছি”। বঙ্গবন্ধু আরোও বলেছেন, আমি চেয়েছিলাম স্বাধীনতা। কিসের স্বাধীনতা? রাজনৈতিক স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যায়, যদি অর্থনৈতিক মুক্তি না আসে। যদি দুঃখি মানুস পেট ভরে ভাত খেতে না পারে। বেকার সমস্যা দূর না হয়। তা হলে শান্তি ফিরে আসতে পারে না। বঙ্গবন্ধু পুরো ভাষণে শোষিতার প্রতি তার অকৃত্তিম দরদ পুনর্বার ধবনিত হয়েছে। মানুসকে প্রকৃত মর্যাদা দেয়ার কথা তিনি বলেছেন। ঔপনিবেশিক আমলা তান্ত্রিক শিক্ষাভিমানী উন্নাস্নিক মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে বলেছেন। তিনি যে কর্মসূচী আমাদের সামনে রেখেছেন তার গুরুত্ব দেশের প্রতিটি মানুসকে অনুধাবন করতে হবে। তার নির্দেশিত পথে যদি আমরা এগিয়ে যেতে পারি তাহলে বাংলাদেশ অবশ্যই জগত সভায় সম্মান জনক আসন লাভ করবে। কলংকের হাত থেকে মুক্তি পাবো আমরা। বাস্তবের রূপ পাবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা।
[pdf-embedder url=”https://songramernotebook.com/wp-content/uploads/securepdfs/2021/04/1975.04.04-bichitra-.pdf” title=”1975.04.04 bichitra”]