উত্তরাঞ্চলের চারটি জেলা মুক্তিফৌজের দখলে
দিনাজপুর, রংপুর, ময়মনসিংহ ও শ্রীহট্ট- বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের এই চারটি জেলা সম্পূর্ণরূপে মুক্তিফৌজের দখলে এসছে বলে সীমান্তের ওপার থেকে শিলং এ কাল খবর পৌঁছেছে। এই জেলাগুলোতে পাকিস্তানী সৈন্য সম্পূর্ণরূপে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার মধ্যে আটকা পড়েছে।
এদিকে পাকিস্তানী সৈন্যরা চালনা থেকে খুলনা শহর পর্যন্ত মধুমতি নদীর দুতীরে গানবোট থেকে গোলা ছুঁড়ে নির্বিচারে গ্রামবাসীদের হত্যা করছে। সরবরাহ পথ যাতে বন্ধ না হয়ে যায় সেই জন্যই এই মরণপণ চেষ্টা। বোমা বর্ষণে বহু লোক নিহত হয়েছে।
পাক বিমান ধ্বংসঃ পাক বিমান বাহিনী বগুড়া ও শ্রীহট্ট থেকে মুক্তিফৌজকে হটিয়ে দেওয়ার জন্য কাল বোমা বর্ষণ করে। সোমবার রাত্রে রাজশাহীতে মুক্তিযোদ্ধারা একটি স্যাবারজেট বিমান ধ্বংস করে। এই বিমানটি একটি খাদ্যবাহী হেলিকপ্টারকে পাহারা দিয়ে যাচ্ছিল।
যশোর শহরেও তুমুল সংঘর্ষ হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের হাত থেকে শহরটি পুনর্দখলের পর শহরটি যাতে আবার হাতছাড়া না হয় তার জন্য পাক সৈন্যরা প্রাণপণ টেষ্টা করছে। এখনও হাজার হাজার স্বাধীনতা সংগ্রামী যশোর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করে রয়েছে।
পাকিস্তানী বিমান বাহিনী কাল ময়মনসিংহ, নারায়নগঞ্জ, বগুড়া এবং রাজশাহীতে ব্যাপকভাবে বোমাবর্ষণ করে। প্রায় একপক্ষকালীন যুদ্ধের সর্বশেষে যে সংবাদ পাওয়া গেছে তাতে বলা হয়েছে যে, স্থলপথে যাতায়াতের সমস্ত সংযোগস্থান মুক্তিফৌজের দখলে রয়েছে। ঢাকা, কুমিল্লা, যশোর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, রংপুর, সৈয়দপুর, শ্রীহট্ট ও খুলনায় অবস্থিত পাক সৈন্যরা আত্নরক্ষার যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। এক ডিভিশনেরও বেশী সৈন্য ঢাকায় নিযুক্ত করা হয়েছে এবং অবশিষ্টদের কুমিল্লা এবং যশোরের ক্যান্টনমেন্ট শহরে হয়েছে। সংবাদে প্রকাশ, যশোর, কুমিল্লা এবং ঢাকার সামরিক ঘাঁটিগুলি ছাড়া অবশিষ্ট এলাকাগুলি দখলে, নয়তো সেগুলিকে অব্যবহার্য করে দেওয়া হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার সন্নিকটে রংপুরে এবং সৈয়দপুরে আজও প্রচণ্ড লড়াই চলছ্ রাজশাহীতে পাক সৈন্য মুক্তিফ্যেজের দ্বারা বেষ্টিত হয়ে পড়েছে। আরো সৈন্য ও রসদ আমদানীতে মুক্তিফৌজ বাধা সৃষ্টি করছে।
সমগ্র খুলনা জেলা মুক্তঃ খুলনা শহর এবং ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় পাক সৈন্যর ওপর মুক্তিফৌজ প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছে। জেলার অন্যান্য সমস্ত অঞ্চলই এখন মুক্ত। মুক্তিফৌজ যশোর এবং খুলনার মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী রাস্তাটি নষ্ট করে দেওয়ার প্রায় এক ব্রিগেড পাকিতস্তানী সৈন্য বেষ্টিত হয়ে পড়েছে।
কুষ্টিয়া ও ময়মনসিংহ মু্ক্তঃ সংবাদের প্রকাশ, কুষ্টিয়া ও ময়মনসিংহ সম্পূর্ণ মুক্ত করা হয়েছে। পল্লী অঞ্চল মুক্তিফৌজের সম্পূর্ণ দখলে রয়েছে। শ্রীহট্ট ও কুমিল্লা শহরে প্রচণ্ড লড়াই চলছে।
-যুগান্তর, ৫ এপ্রিল, ১৯৭১