You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.02 | স্থলে, জলে, অন্তরীক্ষে পাক ফৌজের সর্বাত্মক অভিযান | আনন্দবাজার পত্রিকা - সংগ্রামের নোটবুক

স্থলে, জলে, অন্তরীক্ষে পাক ফৌজের সর্বাত্মক অভিযান

পরাস্ত, বিপর্যস্ত পাক দখলদার বাহিনী এখন মরিয়া হয়ে বাংলাদেশের সর্বত্র মুক্তিফৌজের বিরুদ্ধে সর্বাত্নক আক্রমণ চালিয়েছে। আক্রমণ-জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে। বিস্তীর্ণ রণাঙ্গানে দিশেহারা পাক-সেনাদল প্রধানত শহরাঞ্চলে অভিপত্য বিস্তার করে আত্নরক্ষায় সচেষ্ট। সর্বত্র পাক-বাহিনীর নগ্ন বীভৎস আক্রমণ। বিমান থেকে ফেলা হচ্ছে নাপাম বোমা, ট্যাংক থেকে বর্ষিত হচ্ছে গোলা, আর সেই সঙ্গে উপকুলবর্তী এলাকায় জাহাজ থেকেও ঝাঁকে ঝাঁকে এসে পড়ছে গোলা। বৃহস্পতিবার প্রায় সারাদিন স্যাবার জেট নিয়ে প্রচণ্ড আক্রমণ জালানো হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। এর মুখোমুখি মুক্তিফৌজের প্রতিরোধ আরও তীব্র, সংহত। নতুন নতুন মুক্তাঞ্চল তৈরী হচ্ছে। ঢাকার কাছে জয়দেবপুরের অস্ত্র-কারখানা মুক্তিফৌজের দখলে। এক কথায় বলা যেতে পারেঃ পাক-সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব অক্ষুন্ন আছে ঢাকা শহরের কয়েকটি এলাকায়। আর চট্টগ্রাম, রংপুর, সৈয়দপুর, যশোর, রাজশাহী ও কুমিল্লার শহরাঞ্চলে। অন্যদিকে মুক্তিফৌজের আওতায়ঃ ময়মনসিংহ জেলা পুরোপুরি, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহীর অধিকাংশ। ঢাকা, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের শহর এলাকার বাইরে সর্বত্র। যশোর, কুষ্টিয়া ও খুলনা জেলার পশ্চিমবঙ্গ-সীমান্তবর্তী এলাকা।

মঙ্গল ও বুধবার-দু’দিন ধরে জঙ্গীশাহী পশ্চিম পাকিস্তানে সিংহল ও চীনের মধ্যে দিয়ে বিমানে, জাহাজে প্রচুর সৈন্য, অস্ত্রশস্ত্র ও খাদ্যসামগ্রী আমদানী করেছে।

বিভিন্ন রণাঙ্গনে সংগ্রামরত মুক্তিফৌজের ইউনিটগুলিকে একই কমান্ডের অধীনে আনা এবং পরস্পরের মধ্যে সংযোগ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে।

সরাদিন ধরে মুক্তিফৌজ ও পাক-দখলদার বাহিনীর মধ্যে প্রচণ্ড লড়াই হয়েছে ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও খুলনায়। ক্যান্টনমেন্ট ও বিমানঘাঁটি বাদ দিয়ে যশোরের সর্বত্র মুক্তিফৌজের অভিপত্য অক্ষুন্ন। মুক্তিফৌজের আক্রমণে পিছু হটার আগে যশোর শহরে পাক-বাহিনী আগুন লাগিয়ে দে। ক্যান্টনমেন্ট-এর পাক-সেনাদের আজ বিমান থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও খাদ্যসামগ্রী পাঠানো হয়েছে।

কুমিল্লায় প্রচণ্ড গোলাগুলি বর্ষণ করেও মুক্তিফৌজকে কাবু করতে পারেনি। মেঘালয়ের সমীপবর্তী শ্রীহট্ট শহরেও পাক-সেনারা আজও প্রচণ্ড দাপটে আক্রমণ চালায়। এখানে পূর্ব পাক রাইফেল বাহিনী মুক্তিফৌজের সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রতিরোধের দুর্ভেদ্য দুর্গ গড়ে তুলেছে।

রংপুর ক্যান্টনমেন্টের মুক্তিফৌজের অধিপত্য অক্ষুণ্ন। খাদিমনগরে পূর্ব পাক রাইফেলস এর ৬০০ জনকে শ্রম-শিবিরে আটক রাখা হয়েছে। আসাম থেকে পাওয়া খবরে প্রকাশ, রাজশাহী ও নবাবগঞ্জে প্রচণ্ড গোলাবর্ষণের ফলে মুক্তিফৌজের সহায়ক পুলিশ বাহিনীর ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ৭০ জন পুলিশ অফিসার নিহত হয়েছেন বলে খবরে প্রকাশ। চট্টগ্রামে পূর্ব পাক রাইফেল-এর সদর দফতরটি পাক-সৈন্যরা দখল করে নিয়েছে।

-আনন্দবাজার পত্রিকা, ২ এপ্রিল, ১৯৭১