You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.03.31 | সকল রণাঙ্গনেই পাকফৌজ গা বাঁচিয়ে চলছে | আনন্দবাজার পত্রিকা - সংগ্রামের নোটবুক

সকল রণাঙ্গনেই পাকফৌজ গা বাঁচিয়ে চলছে

মঙ্গলবার মধ্যরাত্রিতে বঙ্গ রণাঙ্গনের সমগ্র পরিস্থিতি মুক্তিফৌজের অনুকুল-বিভিন্ন খন্ডের রণক্ষেত্রে মুক্তিফৌজ প্রচণ্ডভাবে আঘাত হেনে চলেছে।

বাংলাদেশের দুরবিস্তৃত অধিকাংশ রণাঙ্গনেই পাকিস্তানী স্থলবাহিনী কোনরকমে গা বাচিঁয়ে চলছে এবং অনন্যেপায় হয়ে বিমান বাহিনীকে ডেকে আনছে এবং তারাও নির্বিচারে সামরিক প্রয়োজন-অপ্রোজনের কথা চিন্তা না করে বোমাবর্ষণ করে ঘাঁটিতে ফিরে যাচ্ছে। দিল্লির প্রতিরক্ষা অনুশীলন সংস্থার বিশেষজ্ঞারা সমগ্র রণাঙ্গনের চিত্রটি এভাবে একেঁছেনঃ

পূর্ব রণাঙ্গনঃ কুমিল্লা থেকে শ্রীহট্ট পর্যন্ত বিস্তৃত পূর্ব রাণাঙ্গনে মুক্তিফৌজ সীমান্তবর্তী সব কয়টি ঘাঁটি দখল করে নিয়েছে। তাদের বিমানধ্বংসী কামান হানাদার পাক বিমানকে বার বার তাড়িয়ে দিয়েছে। এই রণাঙ্গনেরই অন্তর্ভূক্ত আখাউড়ায় মঙ্গলবার সকালে পাক বিমান প্রচণ্ডভাবে বোমাবর্ষণ করেছে।

মঙ্গলবার সবচাইতে নৃশংস সংগ্রাম চলেছে চট্টগ্রাম-এর সঙ্গে কেবলমাত্র তুলনা চলতে পারে অবরুদ্ধ ঢাকা নগরীর রাজপথের লড়াই। পাকিস্তানী বিমানবন্দর এলকায় বোমাবর্ষণ করেছে। যুদ্ধজাহাজ গোলা ছুঁড়েছে। চট্টগ্রাম জ্বলছে।

উত্তর-মধ্য রণাঙ্গনঃ উত্তর-মধ্য রণাঙ্গনে ময়মনসিংহ মুক্তিফৌজের হাতে এসেছে।

দক্ষিণ রণাঙ্গনঃ দক্ষিণ রণাঙ্গনে বিপন্ন পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সাহায্য করার জন্য মধ্য রণাঙ্গন থেকে সৈন্য পাঠান হচ্ছে। নদী-নালা, খাল-বিল আকীর্ণ রণাঙ্গনে তারা রাত্রির অন্ধকারে চুপি চুপি অগ্রসর হচ্ছে।

মুক্তিফৌজের কমাণ্ড চারিটি রণক্ষেত্রের সংগ্রামরত সৈন্যদের মধ্যে নিখুঁত যোগাযোগ রেখে চলেছেন। চট্টগ্রাম থেকে খুলনা পর্যন্ত উপকূল বরাবর বিস্তৃত দক্ষিণ রণাঙ্গনের পূর্ব প্রান্ত চট্টগ্রামের দিকে জাহাজ বোঝাই করে সৈন্য পাঠানো হয়েছে পশ্চিম প্রান্ত খুলনা থেকে।

দক্ষিণ-পশ্চিম রণাঙ্গনঃ দক্ষিণ-পশ্চিম রণাঙ্গনে খুলনা-যশোর খণ্ডে মঙ্গলবার তেমন কোন বড় লড়াই হয়েছে বলে মনে হয়না। যশোর ক্যান্টনমেন্ট দখলের জন্য সোমবার প্রচণ্ড লড়াই হয়ে গিয়েছে। সম্ভবত উভয় পক্ষই আগামী দিনে তীব্রতর দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন।

দূরবিস্তৃত চারটি রণাঙ্গনের সর্বত্র আক্রমণোদ্যোগ এখন মুক্তিফৌজের হাতে, পশ্চিম রণাঙ্গন বাহিনী সর্বত্র আত্মরক্ষা করে চলেছে।

মুক্তিফৌজের স্থলসেনার অবিরাম চাপে বিব্রত পশ্চিম পাকিস্তানী স্থলবাহিনী বিমান ও হেলিক্প্টারের সাহায্য নিতে বাধ্য হচ্ছেন, কিন্তু তার ফলে পরিস্থিতি তাদের অনুকুলে যাওয়ার তেমন নেই।

-আনন্দবাজার পত্রিকা, ৩১ মার্চ, ১৯৭১