যশোরের বোমাবর্ষণ
বনগাঁ, ৩১ শে মার্চ-সারা যশোর শহর দাউ দাউ করে জ্বলছে। সেই আগুনের আভা সন্ধ্যায় হরিদাপুরও থেকেও দেখা গেছে। যশোর ক্যান্টনমেন্ট পূর্ণদখলের উদ্দেশ্যে আজ বেলা সাড়ে বারটা নাগাদ পাক সামরিক বাহিনী ৫ খানি বিমানে করে ছাত্রীসৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র নামিয়ে দেয়। এরপর বিমান বাহিনী থেকে কিছু সময় পর পর বোমাবর্ষণ চলেছে বলে জানা গেছে।
পাক বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিফৌজের তীব্র লড়াই চলছে। একদল সৈন্য শহরাঞ্চলে মর্টারের সাহায্যে আক্রমন চালায়। শহরে বহু বাড়ি ধ্বংস হয়েছে। দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। সামরিক বাহিনীর লোকেরা অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেছ। কয়েকটি গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে।
আজ সকালের দিকে হরিদাসপুর সীমান্ত এলাকায় ৫ জন পাকিস্তানী সৈন্যের মৃতদেহ এবং একটি কাটা মুন্ডু দেখতে পাওয়া যায়। এখানে সন্দেহ করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশের মধ্যে হত্যা করে এই মৃতদেহগুলি এখানে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
খুলনায় এক খবরে প্রকাশ যে, খালিশপুরে একটি চটকল ডিনামাইট উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এবং রূপসা নদীর ধারে তীব্র সংঘর্ষ চলেছে।
আজ সকালে মুক্তিফৌজের লোকেরা বেনাপোল চেকপোস্টে পাকিস্তানী পতাকা নামিয়ে দেয়। সরকারী সূত্রে জানা গেছে যে, মোট ৩২ জন পাকিস্তানী পাঞ্জাবী সৈন্য এই সীমান্ত পার হয়ে আত্নসমর্পন করেছে।
আগরতলা, ৩১ শে মার্চ (পিটিআই) রাজশাহী, খুলনা ও আরও কয়েকটি স্থানে পাকিস্তানী স্যাবর জেট আজ বোমাবর্ষণ করেছে। পাক বিমান বাহিনীর এই হানায় বহু নিরস্ত্র লোক নিহত হয়েছে।
রাজশাহী, যশোর, খুলনা, কুমিল্লা ও ঢাকাতে তীব্র লড়াই চলছে।
ঢাকা বিমানবন্দরের আশেপাশে মর্টার ব্যবহার করা হচ্ছে। কামান থেকেও পাক সৈন্যরা গোলাবর্ষণ করেছে। চট্রগ্রামে দুর্ভেদ্য দুর্গঃ যুদ্ধরত চট্টগ্রামের কয়েকস্থানে প্রতেকটি গৃহ একটি দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত হয়েছে, পাক-সৈন্যরা কোথাও ঢুকতে পারছে না। রংপুর ও কুষ্টিয়া জেলা মুক্তিফৌজের পূর্ণ নিয়স্ত্রণে রয়েছে।
ঢাকাতে ৩০ হাজার নিহতঃ ২৫ শে মার্চ থেকে দুদিনে ঢাকা ও শহরাঞ্চলে প্রায় ৩০ হাজার লোক নিহত হয়েছে বলে ত্রিপুরায় আগত পাক-সাংবাদিকরা জানান।
-যুগান্তর, ১ এপ্রিল, ১৯৭১