You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.07 | রাষ্ট্রসংঘ মহাসচিবের প্রতি পশ্চিমবঙ্গের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের আবেদন | দৈনিক আনন্দ বাজার - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সুত্র তারিখ
১২৭। রাষ্ট্রসংঘ মহাসচিবের প্রতি পশ্চিমবঙ্গের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের আবেদন দৈনিক আনন্দ বাজার ৭ মে ১৯৭১

বাংলাদেশের গণহত্যা নিয়ে বৌদ্ধ থানন্টের কাছে বাঙ্গালী বৌদ্ধদের তার
(বিশেষ প্রতিনিধি)

ইয়াহিয়া ফৌজের কোপানল থেকে বাংলাদেশের ৫ লাখ বৌদ্ধও বাদ পড়েনি। চট্রগ্রাম ও কুমিল্লা জুড়ে পাক ফৌজ বৌদ্ধ গ্রামগুলিতে ঢুকে নির্বিচারে হত্যা শুরু করে দিয়েছে।

পাক হানাদারের অত্যাচার থেকে বাঙ্গালী বৌদ্ধ শ্রমণ ও ভিক্ষুরাও নিস্কৃতি পাচ্ছেন না। কুমিল্লা পূর্ণানন্দ মহাস্থবির গুরুতর আহত। পাকিস্তান বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রসার সংঘের সভাপতি জ্যোতিপাল মহাস্থবির কোনক্রমে প্রাণ নিয়ে বরইগাঁও বিহার থেকে পালিয়েছেন। চট্রগ্রামের রাঙ্গামাটি রোডের ধারে রাউজান বৌদ্ধ গ্রাম বিলুজড়ির ওপর নেমে এসেছে মধ্যাহ্নের অন্ধকার। পাক ফৌজ সেখানে ঢুকে বারো হাত উচু দীর্ঘ মূর্তি চুড়মার করে ফেলেছে।

চট্রগ্রাম মহাবিহারের অধ্যক্ষ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান পাক ফৌজের অত্যাচারের ভয়ে কিছু বৌদ্ধ শস্ত্র নিয়ে চলে গেছেন দূরে এক গ্রামে।

বাংলাদেশ থেকে বৌদ্ধরা আসছেন ত্রিপুরায়। ত্রিপুরা হয়ে কয়েকশত পরিবার ইতিমধ্যেই কলকাতায় এসেছেন। কলকাতায় বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর মহাসভার কিছু দূর্গত বৌদ্ধ পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছেন।

বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর মহাসভার মন্দিরে বসে কথা হচ্ছিলো ধর্মধার মহাস্থবিরের সঙ্গে। পীত বসন পরা এই প্রবীণ সন্যাসীর বাড়িও চট্রগ্রামে। চট্রগ্রামে মানুষের দুঃখে তিনি অভিভূত। সারা বাংলাদেশ জুড়ে বৌদ্ধ নির্যাতনের খবর দিয়ে তিনি বললেন, আমরা বাঙ্গালী বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে উথান্টকে একটি তারবার্তা পাঠিয়েছি। উথান্টাক নিজেও বৌদ্ধ। মানবতার এতো বড় বিপর্যয়েও তিনি কি কিছু করবেন না?

মহাস্থবির বললেন, শ্রমণদের ছেড়ে ভিক্ষুরা দেশ ত্যাগ করতে চাইছেন না। কুমিল্লার আলিশ্বরে পূর্ণানন্দ মহাস্থবিরের ওপর এতো অত্যাচার স্বত্বেও তিনি আসেননি। তবে আব্দুল্লাপুর ফটিকছড়ি থানা, চট্রগ্রাম জেলা থেকে দুইজন ভিক্ষু এসেছেন। এসেছেন, কুমিল্লার ধর্মরক্ষিত আর প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু।
কলকাতার মাঠে আশ্রয় নিয়েছেন দিনাজপুরের সাব জজ শীলব্রত বড়ুয়া আর চট্রগ্রামের অধ্যাপক অরবিন্দ বড়ুয়া। এরা দুজনেই বৌদ্ধ।

আর কয়েকটি পরিবারকে দেখলাম। বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভায় আশ্রয় নিয়েছেন। দেখা হলো গহিরা (চট্রগ্রাম) গ্রামের শ্রীমতি নিরুপমা বড়ুয়ার সঙ্গে। ১২ এপ্রিল ১১ টায় যখন পাক ফৌজ ওদের গ্রামে এলো তখন ওরা পালিয়ে পাঁচ-ছয় মেইল দূরে এক বৌদ্ধ মন্দিরে আশ্রয় নেন। তখন ওদের গ্রাম দাউ দাউ করে জ্বলছে। তারপর দীর্ঘ ক্লান্তিকর যাত্রার শেষে রামগড় থেকে ফেনী পেরিয়ে সাবরুম। সেখান থেকে কোলকাতা।

ব্রিটেন প্রবাসী প্রায় দেড় লাখ বাঙ্গালীর অধিকাংশই এসেছেন পূর্ববঙ্গ থেকে। তাদের অনেকেই চলনসই ইংরেজী বলতে পারলেও রেডিও টেলিভিশনের ইংরেজী যথাযথ বুঝতে পারেন না। এই সত্যটা উপলব্ধি করে গত বছরের ঘূর্ণিঝড়ের পর অনেকদিন বিবিসি, বাংলায় বিশেষ সংবাদ পরিবেশন করেছিলেন। টাইমস পুনরায় সুপারিশ করা সত্ত্বেও বিবিসি কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সে রকম কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তদুপরি, করাচী থেকে প্রচারিত বাংলা সংবাদও কেবল পাঞ্জাবী অপপ্রচার। এমতবস্থায় আমার অনুরোধ অল ইন্ডিয়া রেডিও তাদের ওভারসীজ সার্ভিসে ইংরেজী খবরের সঙ্গে যেনো বাংলায়ও খবর প্রচার করেন। পূর্ব বাংলার এই দূর্দিনে ভারতীয় বেতার কতৃপক্ষ আশা করি এই অনুরোধটি রক্ষা করবেন।

শ্রী ধন রায়, বার্মিংহাম।