শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১১৮। বাংলাদেশকে স্বীকৃতির জন্য ভারতের মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের আহ্বান | অমৃতবাজার পত্রিকা | ১৯ এপ্রিল ১৯৭১ |
মুসলমান বুদ্ধিজীবীদের স্বীকৃতির আবেদন
(দিল্লী দপ্তর থেকে)
এপ্রিল ১৮-এখানকার মুসলমান বুদ্ধিজীবীরা আজ ভারত সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে এবং অন্যান্য দেশের সরকারকেও বোঝাতে যেন তারাও একই কাজ করে।
ওখলার জামিয়া রুরাল ইন্সিটিউট-এ অনুষ্ঠিত এই সভায়, আরো উপস্থিত ছিলেন সোভিয়েত দ্বিতীয় সচিব, মিঃ বরিস রোমানোভ যিনি সামনের সাড়িতে বসেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম নিয়ে করা এই সম্মেলনে পুরোটা সময় উপস্থিত ছিলেন। ডঃ এস. আবিদ হুসাইন সভাপতিত্ব করেন।
সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে, ডঃ কে. জি. সাইয়াদিন, প্রাক্তন শিক্ষা সচিব, বলেন যে পূর্ব বঙ্গে যা ঘটছে তা মুসলমানদের দুই পক্ষের মধ্যে বা পাঞ্জাবী ও বাঙালীদের মধ্যেকার কোনো যুদ্ধ নয়, বরং এটা স্পষ্ট এবং সোজাসাপটা গণহত্যা। এটা প্রত্যেক স্বাভাবিক মানুষের দায়িত্ব এর প্রতিবাদ করা, তিনি বলেন।
মিসেস সালেহা আবিদ হুসাইন, একজন স্বনামধন্য উর্দু লেখক, বলেন পূর্ব বঙ্গে যে বর্বরোচিত ঘটনা ঘটছে তা বলার মতো ভাষা তার নেই। তিনি অনেকবারই মুসলমানদের বলতে শুনেছেন যে হিন্দুদের প্রভাব কমানোর জন্য একটা আলাদা মুসলমান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন, কিন্তু পাকিস্তানের সৃষ্টির পরেও এই সমস্যার সমাধান হয়নি, তিনি আরো বলেন।
আমাদের বিশেষ প্রতিবেদকের বরাত দিয়ে জানা যায়, পশ্চিম বঙ্গের খাদ্য মন্ত্রী, মিঃ কাশী দন্ত মৈত্র, আজ ঘোষণা দেন যে “এখন সময় এসেছে” বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেবার এবং যদি, তা করতে আরো দেরি হয় তাহলে “পশ্চিম বঙ্গের (নিরাপত্তা) পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে”।
তিনি বলেন “গনপ্রজাতন্রী বাংলাদেশ” সরকারের স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব “আইনি নিয়ামক”-ই রয়েছে। নিয়ামক হিসেবে তিনি তালিকায় উল্লেখ করেন জনসংখ্যা, ভূমি, সরকার বা সংগঠন এবং সার্বভৌমত্ব, অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক।
মিঃ মৈত্র বলেন যে পশ্চিম বঙ্গে যে বাংলা দেশী শরণার্থীরা আছেন তাদের মধ্যে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ৪০০ গ্রাম করে এবং প্রত্যেক শিশু ২০০ গ্রাম করে রেশনের চাল পান প্রতি সপ্তাহে (চাল দেয়া হয়, কেননা শিবিরে অন্য কিছু রান্না করা কষ্টসাধ্য হবে) যেখানে রাজ্যের অন্যদের সরকারী রেশন হিসেবে দেয়া হয় ৯২৮ গ্রাম করে প্রতি সপ্তাহে। পশ্চিম বঙ্গের সাহায্যের জন্য গভীর নলকূপ, মোবাইল হাসপাতাল পরিচালনা এবং সীমান্ত এলাকার শরনার্থীদের জন্য তিনি কেন্দ্রের কাছে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মানের আহবান জানান।
অল ইন্ডিয়া সিভিল লিবার্টিজ কাউন্সিলের এর সভাপতি এবং প্রাক্তন সাংসদ জনাব এন সি চ্যাটার্জী, ভারতে আমেরিকান রাষ্ট্রদূত জনাব কেনেথ কেটিং এর সাহসী এবং সুস্পষ্ট বক্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানান, তার বক্তব্য ছিলো, পাকিস্তানে যা হচ্ছে তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য উদ্বেগ এর বিষয়, যাকে কোন ভাবেই পাকিস্তানের “আভ্যন্তরীন সমস্যা” হিসেবে কঠোর ভাবে গন্য করা যাবে না।
ইউ এন আই আরো যোগ করলোঃ- সি পিঁ আই লিডার, জনাব জয়তী বসু কেন্দ্র কে আজ সতর্ক করে দিয়েছে, যদি অবিলম্বে বাংলাদেশ কে স্বীকৃত দেয়া না হয় এবং শেখ মুজিবর রহমান কে অস্ত্র সহ যাবতীয় বস্তুগত সাহায্য প্রদান করা না করা হয়, পশ্চিম বাংলা ভয়াবহ পরিনতির সম্মুখীন হবে।
sp;