You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.29 | রংপুর সিলেট কুমিল্লা ও নােয়াখালী সেকটরে হানাদার বাহিনীর নাভিশ্বাস - সংগ্রামের নোটবুক

রংপুর সিলেট কুমিল্লা ও নােয়াখালী সেকটরে হানাদার বাহিনীর নাভিশ্বাস

বিগত পক্ষকালে আরও চারটি জাহাজ বিনষ্ট মুক্তিবাহিনীর বীর যােদ্ধাদের দুর্বার আক্রমণের মুখে ইয়াহিয়ার সামরিক জান্তার হানাদার বাহিনীর নাভিশ্বাস উঠেছে। সম্প্রতি মুক্তিবাহিনীর অফিসারদের যে প্রথম দল ট্রেনিং গ্রহণ করে বেরিয়েছেন তারা মাতৃভূমিকে মুক্ত করার জন্যে স্ব স্ব দায়িত্ব গ্রহণ করায় বিভিন্ন রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের তীব্রতা | অনেক বেশী বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর মনােবল ভীষণভাবে ভেঙ্গে পড়েছে এবং বেলুচিস্থান, সীমান্ত প্রদেশ প্রভৃতি অঞ্চলের মুক্তিকামী মানুষের মনেও নতুন প্রেরণা সঞ্চার করেছে। খুলনা, চট্টগ্রাম, সিলেট, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া প্রভৃতি সেক্টরে ক্রমেই মুক্তিবাহিনীর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবং প্রতিদিনই মুক্ত এলাকার পরিসর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্ষণে মুক্তিবাহিনী কুমিল্লা শহরের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছে এবং ফেনী শহর ও তার সন্নিহিত অঞ্চল থেকে পাক হানাদারদের উৎপাদনের কাজ পূর্ণোদ্যমে চলছে। অসামরিক অধিবাসীদের ওপর বােমাবর্ষণ ওদিকে রংপুরের চিলমারী এবং সিলেটের ছাতক এলাকাতেও মুক্তিবাহিনীর দুর্বার আক্রমণের মুখে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী দিশেহারা হয়ে নিরীহ অসামরিক অধিবাসীদের ওপরে নির্বিচারে বােমাবর্ষণ করে চলেছে। ঢাকায় পাক সেনা নিহত খাস ঢাকা শহরেও গেরিলা যােদ্ধাদের আক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কয়েকদিন পূর্বে মতিঝিল, বাণিজ্যিক এলাকায় হাবিব ব্যাঙ্কের সামনে সামরিক বাহিনীর একটি গাড়ীতে মেয়াদী বােমা বিস্ফোরণের ফলে কয়েকজন পাকিস্তানী হানাদার সেনা নিহত হয়েছে।

জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত শুধু স্থলেই নয়, জল যুদ্ধেও মুক্তিবাহিনীর প্রাধান্য অব্যাহত হয়েছে। বিলম্ব পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে যে, বিগত পক্ষকালে মুক্তি যােদ্ধারা নৌযুদ্ধে বিশেষ সাফল্য অর্জন করেছে। গত ১২ই অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দরে গ্রীক জাহাজ ‘এলবােস মুক্তি যােদ্ধাদের দ্বারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই জাহাজে পাক সামরিক বাহিনীর জন্য বিশেষ প্রয়ােজনীয় সরবরাহ বহন করে আনা হয়েছিল। জলযুদ্ধে সাফল্য ইতিপূর্বে মুক্তিবাহিনীর হাতে আরও বারােটি বিদেশী জাহাজ মার খেয়েছে। ফলে অধিকৃত বাংলাদেশের বন্দরে কোন বিদেশী জাহাজ আর আসতে চাইছে না। ওদিকে এই সকল জাহাজের ক্ষতিপূরণের ব্যাপারেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। কোন বিদেশী বীমা কোম্পানীতে বীমা করা না হলে জাহাজ  কোম্পানীর মালিকরা পাকিস্তানের বন্দরে আসতে রাজী হচ্ছে না। অপর দিকে বিদেশী বীমা কোম্পানী যুদ্ধ শর্তের ভিত্তিতে বীমা করার দাবী জানাচ্ছে, স্বাভাবিক অবস্থায় বীমার যে শর্ত থাকে সে শর্তে রাজী  হচ্ছে না। এতে সরাসরি পাকিস্তানী দায়িত্বে বিদেশী জাহাজে সামরিক সরবরাহের জন্য মাল আনতে জাহাজের ব্যয় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে এবং মুক্তি যােদ্ধাদের হাতে জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিপুল ক্ষতিপূরণের বােঝা বহন করতে হবে।  উপরােক্ত গ্রীক জাহাজটির ক্ষতি করা ছাড়াও মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানের ন্যাশনাল শিপিং কর্পোরেশনের একটা নামকরা জাহজ ‘লালসিরা’ সুন্দরবনের কাছে ডুবিয়ে দিয়েছে এবং অপর একটি বাজের গুরুতর ক্ষতি করেছে।

মুক্তিবাহিনী সিলেট সেক্টরের ছাতক অঞ্চলেও তিনটী লঞ্চ ও তিনটি মােটর বােট ডুবিয়ে দিয়েছে। এর কিছুদিন পূর্বে মুক্তি যােদ্ধারা এম, ভি, নাসিম’ সহ দুটি পাকিস্তানী জাহাজেরও গুরুতর ক্ষতিসাধন করেছে। পাকিস্তানের হানাদার সেনারা মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে দিশেহারা হয়ে এখন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে পাক-ভারত সংঘর্ষে পরিণত করার জন্যে পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তে উস্কানীমূলক কার্যকলাপ শুরু করেছে। তা নইলে পশ্চিম সীমান্তে কোন আপাততঃ বিরােধ না থাকা সত্বেও পাকিস্তানী সামরিক জান্তা কেন পশ্চিম সীমান্তে যুদ্ধের পাঁয়তারা শুরু করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর চরম আঘাতেই তাদের সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হতে বাধ্য। মুক্তিবাহিনীর উন্নত রণকৌশল ও দুর্বার আক্রমণের গতিধারা দেখে পর্যবেক্ষক মহলের অনেকেই আশা করছেন যে পাক হানাদার বাহিনীর কবলিত এলাকার মুক্তি আসন্ন।

জয়বাংলা (১) [১: ২৫

২৯ অক্টোবর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯