You dont have javascript enabled! Please enable it!

কানুপুরের যুদ্ধ
প্রতিবেদনঃ সত্যেন সেন
(দৈনিক বাংলা ২১শে মার্চ ১৯৭২-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে সংকলিত)

রাজশাহী- একাত্তরের ২৯শে এপ্রিল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শেষবর্ষের ছাত্র আসাদ আহমদ বায়রনের নেতৃত্বে একদল গেরিলা নবাবগঞ্জ মহকুমার শিবগঞ্জ থানাধীন পাগল নদীর ওপার থেকে নদী পার হয়ে কানুপুর যাত্রার জন্য তৈরি হয়। রাত তখন নয়টা বেজে ত্রিশ মিনিট, দুর্লভপুর গেরিলা শিবির থেকে বায়রণ তার দল নিয়ে যাত্রা শুরু করে। সাথীদের সকলের চোখে মুখে যেন কিছুটা নৈরাশোর ছাপ। হয়তো মনে হচ্ছিল এই দুঃসাহসিক অপারেশন বুঝি কেউ আর ফিরে আসবে না। পরক্ষনেই তাদের আবার মনে হয়েছে যেমন করেই হোক তাদের ও অপারেশনে সাফল্যলাভ করতেই হবে। কারণ দখলদাড় নরঘাতক ইয়াহিয়া বাহিনীর কবল থেকে মুক্তির আশায় বাংলাদেশের মানুষ দিন গুনছে। দুটিমাত্র ছোট নৌকা তাদের সম্ভল, অস্ত্রশস্ত্র নৌকায় রাখা আর গেরিলারা নৌকায় ভেসে চলেছে। রাতের অন্ধকার ভেদ করে এগিয়ে চলেছে পশুহত্যার উল্লাসে। রাত পৌনে এগারটা। শেষ হলো জলে ভাসা। কানুনপুরের কাছে এক আখক্ষেতে নৌকা রাখা হয়। নৌকায় রাখা অস্ত্র তারা হাতে তুলে নেয়। আবার শুরু হয় যাত্রা। এক বুক পানি ভেঙ্গে এগিয়ে চলেছে। খানিকটা দূর ঘুরে কানুনপুর গ্রামটাকে পেছনে ফেলে এক আম বাগানে প্রবেশ করে। সেখানেই প্রত্যেককে দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়া হয়। তারা যখন আম বাগান প্রবেশ করে তখন শিবগঞ্জের খানসেনাদের ক্যান্টনমেন্ট থেকে ভেসে আসছিল মুহুর্মুহু গোলাগুলির আওয়াজ। পদপ্রদর্শক ছিল ১১ বছরের একটি বালক, এর নাম জানা যায়নি। প্রথমে যদিও এই বালকের ওপর ভরসা করা যায়নি, কিন্তু সে ভুল ভাঙতে খুব দেরি হয়নি। সে অত্যন্ত গেরিলাদের এগিয়ে নিয়ে গেল- পাঞ্জাবী আর রাজাকারদের ট্রেঞ্চ ও বাংকারগুলো খুব কাছ থেকে দেখিয়ে দিল। ক্রলিং করে গিয়ে পাহারারত রাজাকারকে কিছু করার সুযোগ না দিয়ে গলা টিপে হত্যা করে অস্ত্র কেড়ে নেয় এগারো বছরের বালকটি। এরপর শুরু হয় গেরিলাদের কাজ।

অন্যান্য গেরিলার তড়িৎবেগে দলের নেতার নির্দেশ অনুযায়ী কাজ আরম্ভ করে দেয়। যে ব্যাংকারে পাঞ্জাবী ছিল সেখানে গ্রেনেড চার্জ করা হয়। ব্যাংকারে তখন তিনজন পাঞ্জাবী ঘুমুচ্ছিল। মাত্র কয়েক সেকেণ্ড। প্রচণ্ড বিস্ফোরণের সাথে সাথে বাংকার ধসে পড়ে। পাশের বাংকার গ্রেনেড চার্জ করে হত্যা করা হয় চারজন রাজাকারকে। নিকটে এক বাড়িতে দু’জন রাজাকার ও তিনজন দালাল ছিল। তারা পালিয়ে পাঞ্জাবীদের কাছে খবর নিয়ে যাচ্ছিল। হাতের রাইফেল তাদের লক্ষ্য করে গর্জন করে উঠে। অবেরথ লক্ষ। মুহূর্তে লুটিয়ে পড়ে পাঁচজন মীরজাফর। ইতিমধ্যে পাঞ্জাবীরা টের পেয়ে যায়। প্রায় এক কোম্পানি পাঞ্জাবী ও রাজাকার আক্রমণের জন্য অগ্রসর হয়। আখক্ষেতে নৌকায় রেখে আসা হয়েছিল দু’জঙ্কে তারা তাদের সাথীদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের জন্য খানসেনাদের লক্ষ্য করে গোলাগুলি ছুঁড়তে আরম্ভ করে। ফলে খানসেনারা হকচকিত হয়ে পড়ে। খানসেনারা ভালভাবে কিছু বুঝতে পারার আগেই গেরিলারা নৌকায় ফিরে শিবিরে ফিরে যায়। কানুপুর অপারেশনে বায়রনের গেরিলা দল একটি এলএমজি, দুটি চীনা স্বয়ংক্রিয় রাইফেলসহ বেশ কিছু অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করে।

—————————————-

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!