রাজশাহীতে সৈন্যদের পুনঃসংগঠন
(অনুবাদ)
[ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর দিনলিপি থেকে, বিবি, পিএসসি (অবঃ),
তারপর মেজর গিয়াস; কমান্ডার অফ রাজশাহী সাব-সেক্টর-২০-৯-১৯৮৩]
১৩ এবং ১৪ তারিখ রাজশাহী শহরে পাক আর্মির সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষের পর আমি আমার ট্রুপস নওয়াবগঞ্জের দিকে সরিয়ে নিয়ে আসি এবং গোদাগাড়ী এলাকাতে শক্ত ডিফেন্স গড়ে তুলি। ঐ সময়ে আমার সাথে ছিল ৬ ব্যাটেলিয়ন ইপিআর এবং ৭ ব্যাটেলিয়ন যারা নওগাঁ থেকে এসেছিল এবং কিছু যারা চারঘাট থেকে আমাকে অনুসরণ করেছিল। এর সাথে প্রায় ২০০ স্বেচ্ছাসেবী মুক্তিযোদ্ধা ট্রুপসের সাথে ছিলেন, বাকীরা রাজশাহীর প্রাথমিক যুদ্ধে পরাজয়ের পর চলে যান। পাক আর্মি ১৭ এপ্রিল নওয়াব গঞ্জে অবস্থান সংহত করার পর আমাদের কাছ থেকে রাজশাহী পুনর্দখল করে। পথে পাক আর্মি ছোট ছোট বাঁধার সম্মুখীন হয় এবং ২০/২১ তারিখ রাতে রাজশাহী ফিরে যায়; পাক আর্মি প্রাণপণ চেষ্টা করে এবং রাতে নিজেদের সৈন্য গোদাগাড়ীর কাছাকাছি নিয়ে আসে। ভোরে তারা আক্রমণ করে। আমি তাদের কাছে এটাই আশা করেছিলাম। ২০ এপ্রিল আমি ৩০০ থ্রি নট থ্রি রাইফেল, ৯৬ বেরেটা গান এবং ৩ লাখ বিস্ফোরক নিয়ে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে গোদাগাড়ীর বিপরীতে নিয়ে যাই, যখন রাজশাহী আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল তখন এগুলো আমি রাজশাহী অস্ত্রাগার থেকে সংগ্রহ করি। আমি আরো পার করি ৪৮টি এলেমজি, ৪ টি ভিকার মেশিনগান, ৬টি ৩ইঞ্চি মর্টার; এগুলো ৬নম্বর উইঙের জন্য উদ্ধৃত্ত হয়েছিল কারণ তারা তখন ৮১ এমএম মর্টার এবং নতুন মেশিনগান (লেটেস্ট অ্যামেরিকান ভারশন) এবং ১৪০০ রাউণ্ড মর্টার শেল ব্যাবহার করছিল। এছাড়াও আমার কাছে আরও নানা রকম বিস্ফোরক এবং অস্ত্রপাতি ছিল যেগুলো আমি মূলত ইপিআর সেক্টর থেকে সংগ্রহ করি। দখলদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধে পরাজয়ের আগ পর্যন্ত ৬ নম্বর উইঙের হেড কোয়াটার ছিল নওয়াবগঞ্জ যেটা ২১ এপ্রিল পর্যন্ত স্বাধীন ছিল এবং আমাদের শক্ত ঘাঁটি ছিল।
ডিফেন্সে থাকা যোদ্ধাদের কাছে ছিল ৬০টি এলএমজি; ৬ টি ৮১ এমএম মর্টার, ১০ টি২ ইঞ্চি মর্টার, ৬ টি লিরাট (ব্রিটিশ রকেট লাঞ্চারের পুরাতন ভার্শন) এবং ব্যাক্তিগত অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং গ্রেনেড ছিল প্রতি যোদ্ধার সাথে। পাক আর্মি সবসময় রীতিবিরুদ্ধ সবচেয়ে নৃশংস আক্রমণের কৌশল ব্যাবহার করতো সকল অবকাঠামো এবং গ্রামের কুঁড়েঘরে তাদের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রশস্ত্র ফায়ার করার মাধ্যমে; এবং অগ্নি-বর্ষক দিয়ে পুরো এলাকা পুড়িয়ে ছাই করে দিত যেন মুক্তি বাহিনী আশ্রয় নিতে না পারে এবং আক্রমণের কোন সুযোগ না পায়। তিন সপ্তাহের মধ্যে মুক্তিবাহিনী যথেষ্ট রিসোর্স যোগাড় করে এবং গোদাগাড়ীতে পাকিস্তানী নৃশংস দখলদার বাহিনীকে কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি করে। ইপিআরের কিছু স্পিড বোটের সাহায্যে আমি পর্যায়ক্রমে আমার ট্রুপস পদ্মা নদী পার করে পরিকল্পিত ভাবে নিয়ে যেতে থাকি। ২১ এপ্রিল সন্ধ্যার ভিতর আমরা সমস্ত অস্ত্রপাতি এবং যন্ত্রপাতি সহ পদ্মার অপর পাড়ে নিরাপদে প্রত্যাহার করে নেই। এটি ছিল গোদাগাড়ি পুলিশ ষ্টেশনের ঠিক বিপরীতে। আমাদের মাত্র ৭ জন্য সামান্য আহত হয়। কিন্তু লোকাল মানুষের হতাহতের সংখ্যা ছিল খুব বেশী। আমি ২৪/২৫ জন আহত লোককে ফেরী পার হতে দেখি এবং ২/৩ টি মৃতদেহ মার্কেট এরিয়াতে বিচ্ছিন্ন ভাবে পড়ে ছিল। আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে চাল ও ডাল পার করি যা গোদাগাড়ী এলএসডি গোডাউনে ছিল। ১৭ থেকে ২১ এপ্রিল আক্রমণের সময় দখলদার বাহিনী আমাদের ডিফেন্সে প্রতিদিন গড়ে ৩টি করে এফ-৮৬ বিমান আক্রম চালায়। তারা বেশীরভাগ সময় এমজি এবং রকেট ব্যবহার করে আমাদের সৈন্যদের বিরুদ্ধে, এছাড়া বেসামরিক লোকজনসহ এবং নিরাপরাধ মানুষদের হত্যা করে।
—————————————————