You dont have javascript enabled! Please enable it!

লড়াকু মুক্তি সেনারা স্বাধীনতার লড়াইকে শেষ পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে দৃঢ়বদ্ধ

(রাজনৈতিক ভাষ্যকার)। বাংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াই ছয়মাস অতিক্রম করেছে অপ্রতিহত গতিতে। একের পর এক গেরিলা আক্রমণের তীব্রতায় পাক পেশাদার সেনাদের নাজেহাল দশা আর মুক্তি লড়াইয়ের বিজয়াৰ্জন-ছয় মাসে সাধারণ মানুষের মনে অনেক প্রত্যয়ের বীজ বুনেছে—যদিও দীর্ঘস্থায়ী স্বাধীনতার লড়াইয়ে ছয়টি মাস এমন বেশী কিছু সময় নয়। সাধারণ মানুষ আজ বিশ্বাস করতে পারছে এবং এই উপলদ্ধিতে তারা পেীছেছে যে, দীর্ঘস্থায়ী সশস্ত্র লড়াই ছাড়া মুক্তির দ্বিতীয় কোন পথ নেই এবং এই লড়াই ক্রমাগত চালিয়ে যেতে হবে চূড়ান্ত বিজয় অবধি। এবং এই ভাবেই স্বাধীনতাকামী মুক্তি সেনাদের অনুন্নত ও ছােট গেরিলা ও নিয়মিত বাহিনী দিয়ে আধুনিক ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত দখলদার বিশাল। সেনাবাহিনীকে নাজেহাল, বিপর্যন্ত ও বিধ্বস্ত করা সম্ভব। মুক্তি বাহিনীর গেরিলা আক্রমণের ব্যাপকতা আজ এমন একটি পর্যায়ে এসে পড়েছে যখন। পাশাপাশি নিয়মিত বাহিনীর আক্রমণাভিযানের প্রয়ােজনীয়তা অনিবার্য হয়ে পড়েছে। মুক্তি বাহিনীর হেড কোয়ার্টারের এক সংবাদে জানা যায়-মুক্তি বাহিনীর নিয়মিত সেনারা এবার পাক দস্যুদের সাথে সম্মুখ সমরে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। গেড়িলা সেনারাও প্রস্তুত পাশাপাশি তাদের অভিযানকে জোরদার লড়াকু মুক্তি সেনারা স্বাধীনতার লড়াইকে শেষ পর্যন্ত এেিয় নিয়ে যেতে দৃঢ়বদ্ধ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে উপরের রাজনীতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সমাধানের অবর্তে এই লড়াইকে অসার করে দেওয়ার প্রবনতার ব্যাপকতা দিন দিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। একদিকে রাইফেল আর একদিকে গােলটেবিল। দুটোরই কার্যকারীতা আছে- এটা অনস্বীকার্য। তবে গোল টেবিলে দস্যুর প্রস্তুতি এটা কোন প্রেক্ষিত হবে সেটাই প্রশ্ন। পাক রাষ্ট্র কাঠামাের মধ্যেই শুধু রাজনৈতিক সমাধানের জন্যই না চূড়ান্ত স্বাধীনতার প্রশ্নে?

বাস্তব অভিজ্ঞতাই জনগণকে ও জনগণের মুক্তিবাহিনীকে দেখাবে সঠিক পথ। বাংলাদেশের চারশ থানায় মুক্তিসেনাদের আক্রমণ ঘাটি প্রতিষ্ঠা। সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর আশির্বাদ ধন্য পঞ্চাশ হাজার মুক্তি সেনা বাঙলাদেশের চারশ থানায়। আক্রমণ ঘাটি প্রতিষ্ঠা কোরেছে দখলদার পাক দস্যুদের বিরুদ্ধে লড়াইকে তীব্রতর করার জন্য। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের রাজশাহীতেও এ লড়াইয়ের ব্যাপকতা দিন দিন বাড়ছে। মুক্তি সেনাদের ক্রমাগত আক্রমণের মুখে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছ পাক সেনারা। ভীতস্রস্ত হয়ে পড়েছে দালাল শ্রেণী, আত্মসমর্পন করছে রাজাকার বাহিনী। রাজশাহী জেলার নাটোর, নওগাঁ, নবাবগঞ্জ ও সদর মহকুমায় মুক্তি সেনাদের ক্রমাগত গেড়িলা আক্রমনে পাক সৈন্যদের প্রতিরােধ বুহ ভেঙ্গে পড়ছে এবং প্রচণ্ড মার খাচ্ছে।  জনগণের মনােবল ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সক্রিয় সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসছে। জনগণের বিশ্বাস এভাবে ক্রমাগত লড়াইয়ের মধ্যে দিয়েই মুক্তি আসবে। এবং জাতির প্রতি বিশ্বাসঘাতকদের কোন দিনই তারা ক্ষমা করবেনা।

বাংলার কথা। ১:৪ 

২৮ অক্টোবর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!