You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
১০৭। পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাহায্যে ‘মুক্তি সংগ্রামে সহায়ক সমিতি’ গঠিত দৈনিক যুগান্তর ৬ এপ্রিল, ১৯৭১

মুক্তি সংগ্রামে সহায়ক সমিতি
সর্বাধিক সাহায্যের ব্যাপক ব্যবস্থা
(স্টাফ রিপোর্টার)

কলকাতা, ৫ই এপ্রিল-বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রাম সহায়ক সমিতি আগামী রবিবার, ১১ই এপ্রিল, সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটায় যে জনসভা ডেকেছেন, বাংলাদেশের মুক্তি ফৌজের কয়েকজন নেতা তাতে বক্তৃতা করতে চেয়েছেন। সমিতির সভাপতি শ্রী অজয় মুখোপাধ্যায় ঐ জনসভায় সভাপতিত্ব করবেন।

ঐদিন সকালে সমিতির চাঁদা সংগ্রহের জন্য দক্ষিণ ও উত্তর কলকাতা দু’টি মিছিল বার হয়। মুখ্যমন্ত্রী ও উপ-মুখ্যমন্ত্রী এই দু’টি মিছিল পরিচালনা করবেন। বিশিষ্ট শিল্পী, ক্রীড়াবিদ, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী এই মিছিলে থাকিবেন। একটি মিছিল শ্যামবাজার পাঁচ মাথা থেকে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার এবং অন্যটি গরিয়াহাট থেকে চৌরংগীর দিকে যাবে।

আজ সমিতির এক জরুরী বৈঠকের পর সভাপতি শ্রী অজয় মুখোপাধ্যায় সাংবাদিকদের জানান তাঁরা কৌটো করে চাঁদা সংগ্রহ পছন্দ করে না। এভাবে সংগৃহীত অর্থের অপব্যয় হতে পারে। তাঁরা চান দাতারা মনিঅর্ডার অথবা চেকে অর্থ পাঠান। ৩৪নং ইণ্ডিয়ান মিরার স্ট্রিটে (ফোন ২৪-২০২০) তাঁদের অফিস খোলা হয়েছে। সেখানে রসিদ দিয়ে দান গ্রহণ করা হবে।

নির্ধারিত কোন দিন কৌটো করে চাঁদা সংগ্রহ করা হলে আগে তা সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানান হবে। রবিবার এইভাবে চাঁদা সংগৃহীত হবে।

শ্রী মুখোপাধ্যায় জানান, তাঁরা রাজ্যের জনসাধারণের কাছ থেকে অর্থ ও অন্যান্য দ্রব্য সামগ্রী সংগ্রহ করবেন। মুক্তি সংগ্রামীদের জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ, চিকিৎসার যন্ত্রপাতি, পর্থ প্রভৃতির ব্যবস্থা করবেন এবং চিকিৎসকদের দ্বারা সাহায্য দেবেন। আহত মুক্তি সংগ্রামীদের জন্য রক্ত (প্লাজমা) সংগ্রহ করবেন। সীমান্ত এলাকায় চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল ইউনিট স্থাপন করবেন। মুক্তি সংগ্রামীদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য বস্ত্র প্রভৃতি প্রেরণ করবেন। বাংলাদেশ থেকে যাঁরা সীমান্তের এপারে চলে আসতে বাধ্য হবেন তাঁদের সর্বতোভাবে সাহায্য করবেন। স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহ করবেন এবং বাংলাদেশের প্রকৃত ঘটনা এবং পাকিস্তানী সামরিক চক্রের পৈশাচিক নির্যাতনের বাহিনী সংগ্রহ করে তা প্রচারের ব্যবস্থা করবেন।

২। সহায়ক সমিতি আজকের সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে বাংলাদেশের জনসাধারণকে তাঁদের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের জন্য অভিনন্দন জানান হয় এবং পাকিস্তানী সামরিক চক্রের দ্বারা সংগঠিত গণহত্যা ও নির্যাতনের তীব্র নিন্দা করা হয়।

প্রস্তাবে অবিলম্বে স্বাধীন সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবার জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট দাবি জানানো হয়েছে এবং বাংলাদেশে পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনীর গণহত্যা ও নির্মম অত্যাচার বন্ধ করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রসংঘকে অনুরোধ করার জন্য এবং এই ব্যাপারে বিশ্বের সকল রাষ্ট্র বিশেষ করে আফ্রো-এশীয় রাষ্ট্রগুলি যাতে উদ্যোগী হয় তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে সচেষ্ট হতে অনুরোধ করা হয়।

মুক্তিযোদ্ধাদের সমর্থন

বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সমর্থনে তাঁদের সর্বতোভাবে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে এবং বাংলাদেশের সরকারকে স্বীকৃতি দানের দাবি জানিয়ে এই রাজ্যের বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।

ইণ্ডিয়ান মেডিক্যাল এসোসিয়েশন রাজ্য শাখা রক্ত দানের ডাক দিয়েছেন।

ইনস্টিটিউট অফ এশিয়ান অ্যাণ্ড আফ্রিকান রিলেশনস-এর সভায় বাংলাদেশ পাকিস্তান সামরিক বাহিনী যে গণহত্যা চালাচ্ছে আজ তার নিন্দা করা হয়েছে।

কলকাতা বন্দরের শ্রমিক, জাহাজের মালিক, নিয়োগকর্তা, অফিসার এবং কর্মীদের এক সভায় আজ বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বতোভাবে সাহায্য দানের প্রস্তাব গৃহীত হয়। পোর্ট কমিশনার্সের চেয়ারম্যান শ্রী কে কে রায় সভাপতিত্ব করেন।

ব্যাংক কর্মীরা একদিনের বেতন দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করবেন বলে বংগীয় প্রাদেশিক ব্যাংক কর্মী এসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে বলেছেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সমর্থনে কলকাতা পোর্ট শ্রমিক ইউনিয়ন সামিল হয়েছে। ]

কলকাতার একদল মেডিক্যাল ছাত্র চুয়াডাংগা-দর্শনায় মেডিক্যাল মিশনে গিয়েছিল। তাঁদের মারফৎ চুড়াডাংগা মহকুমা আওয়ামী লীগের সম্পাদক মোহাম্মদ তাহের উদ্দিন একটি লিখিত পত্রে এ বাংলার সংগ্রামী যুব-ছাত্রদের কাছে সকল প্রকার সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামকে সফল করার উদ্দেশ্যে চাই সহযোগিতা।
sp;

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!