রাজাকার শাইখুল হাদিস আজিজুল হক(ব্যাভিচারী মাওলানা মামুনুল হকের পিতা) এর সাক্ষাৎকার | সাপ্তাহিক বিচিত্রা | ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭
[pdf-embedder url=”https://songramernotebook.com/wp-content/uploads/securepdfs/2021/04/শাইখুল-হাদিস.pdf” title=”শাইখুল হাদিস”]
‘৭১-এ আমগো অবস্থান ছিল নিরপেক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে
– শাইখুল হাদীস মাওলানা আজিজুল হক
ইসলামী ঐক্যজোট বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। জোটের শাইখুল হাদীস মাওলানা আজিজুল হক ২৮ আগস্ট দুপুর বারটায় তার আজিমপুরের বাসভবনে সাপ্তাহিক বিচিত্রাকে একটি একান্ত সাক্ষাৎকার দেন। তিনি বলেছেন তাদের আদর্শ, উদ্দেশ্যের কথা। এখানে সেই সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন গোলাম মোর্তোজা। ১৯৯২ সালে ভারতে বাবরী মসজিদ ভাঙার পর মন্তব্য করেছিলেন, ‘ইসলাম নামক বৃক্ষটির গোড়ায় পানি নয়, রক্ত ঢালতে হবে।’ তারপরই দেশে শুরু হয়েছিল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। ১৯৬৯ সালে মানুষের চাঁদে যাওয়া বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘মানুষের পক্ষে চাঁদে যাওয়া বাস্তব নয় । অন্য কোনো দেশ থেকে ঘুরে এসে তারা দাবি করছে চাঁদে গিয়েছি।’ আর এখন ১৯৯৭ সালে মঙ্গল গ্রহ বিষয়ে তিনি বলছেন, ‘মঙ্গল গ্রহে যাওয়া পিকনিকে যাওয়ার মত ব্যাপার। চেষ্টা করলে আমরাও যাইতে পারি।’ ইসলামী ঐক্য জোট নেতা শাইখুল হাদীস মাওলানা আজিজুল হক বিভিন্ন সময়ে এরকম মন্তব্য করে আলোচিত হয়েছেন। জঙ্গী তালেবানদের মত ইসলামী বিপ্লব ঘটাতে চান। তালেবানদের প্রয়োজনে দেশ থেকে লাখ লাখ যোদ্ধা পাঠাতেও প্রস্তুত। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান থাকায় স্বাধীনতার পর তার মৎস্য ভবনের পাশের রমনা পেট্রোল পাম্পটি সরকার বাজেয়াপ্ত করে নেয়। পরে তদ্বির করে আবার উদ্ধার করেন। ‘৭১-এ তার অবস্থান যে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিল সেকথাও এখন অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে স্বীকার করেন। এবং ‘৭১-এর ভূমিকার জন্যে কোনো অনুশোচনা নেই- একথাও বলেন দাম্ভিকতার সঙ্গেই। এখন আন্দোলন করছেন মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সম্মানে নির্মিত শিখা চিরন্তন নেভানোর দাবিতে। শিখা চিরন্তন নির্মিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের রজতজয়ন্তী উপলক্ষে । এর অনেক আগে ক্যান্টনমেন্টে নির্মিত হয়েছে শিখা অনির্বাণ । উদ্দেশ্য একই । কিন্তু এ নিয়ে তাদের এতদিন কোনো উচ্চবাচ্য ছিল না। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ক্যান্টনমেন্টে তো অস্ত্র নিয়া মিলিটারী আছে।’ প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তিনি মোট ১৩টি সন্তানের জনক। ৮ মেয়ে ৫ ছেলে। ছেলেমেয়েরা সবাই মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছে। তার মতে, পরিবার পরিকল্পনা হারাম নাজায়েজ। মোঃপুর সাত মসজিদ জামেয়া রাহমানিয়া অ্যারাবিয়া মাদ্রাসা, মালিবাগ জামিয়া শরীয়া মাদ্রাসা, কল্যাণপুর দারুস সালাম এবং লাল মাটিয়া জামেয়া ইসলামিয়া– আজিজুল হক বর্তমানে একই সঙ্গে এই চারটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছেন। এই মাদ্রাসাগুলোতে শুধুমাত্র ধর্মীয় শিক্ষাই দেয়া হয়। এগুলো বেসরকারী মাদ্রাসা। মাদ্রাসা বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত নয়। তারা মনে করেন ধর্ম শিক্ষার বাইরে বাংলা, ইংরেজিসহ অন্য কোনো শিক্ষার প্রয়োজন নেই। মাদ্রাসা বোর্ডের আওতাভুক্ত মাদ্রাসাগুলোতে বর্তমানে বাংলা, ইংরেজি, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়গুলো পড়ানো হয়। তবে মাদ্রাসার শিক্ষকরা শুধু ধর্ম শিক্ষায় শিক্ষিত বলে, এই বিষয়গুলো ঠিক মত পড়াতে পারেন – এরকম অভিযোগ রয়েছে। মাওলানা আজিজুল হক মনে করেন, সাধারণ কোনো শিক্ষারই প্রয়োজন নেই। তার মতে, সব শিক্ষা বাতিল করে ধর্মীয় শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটাতে হবে। সেই অনুযায়ীই ; তারা কাজ করছেন। আন্দোলন করছেন। তিনি মনে করেন, পাসপোর্ট করা, হজে যাওয়া এরকম একান্ত জরুরি কাজ ছাড়া ছবি তোলা নাজায়েজ। তাই তিনি প্রথম অবস্থায় বিচিত্রা’র ক্যামেরায় ছবি তুলতে রাজি হননি। পরে অবশ্য ছবি তুলতে দিয়েছেন।একটি সূত্র থেকে জানা যায়, তিনি কিছুদিন আদম ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। মূলত মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোতে লোক পাঠাতেন। বিচিত্রা : আপনার নামের আগের এই ‘শাইখুল হাদিস’ বিষয়টা কী? শাইখুল হাদীস মাওলানা আজিজুল হকঃ হাদীস শাস্ত্রের বিশেষজ্ঞকে ‘শাইখুল হাদীস’ বলা হয় । বিচিত্রাঃ এই উপাধি কারা দেয়? আ. হ. : এইডা কেউ কাউরে দেয় না। হেঃ হেঃ। এইডা এমনে এমনেই হইয়া যায় । তার স্টাডি, সুখ্যাতি আল্লাহর রহমতে আলেমউলামাদের দোয়ায় জনগণের মধ্যে ছড়াইয়া পড়ে। বিচিত্রা : তারপর কী নিজে নিজেই নামের আগে শাইখুল হাদীস লাগিয়ে নেয়া যায়? আ. হ. : হ্যা, লাগায়া নেয়া যায় । না….মানে…… আলেম…… উলামাদের দোয়ায় এইডা এমনে এমনেই অইয়া যায় । বিচিত্রাঃ আপনার শাইখুল হাদীস কোন আলেম উলামাদের দোয়ায় হয়েছে? আ. হ.: দেশের বিশিষ্ট, বিখ্যাত আলেমউলামাদের দোয়ায় । বিচিত্রাঃ তাদের দু’ একজনের নাম বলবেন? আ. হ.: আছে অনেক। অনেক আছে। আমি তো হাদীস শাস্ত্রের উপর প্রচুর কাজ করছি। অনুবাদ করছি। এইভাবেই হইয়া গেছে। বিচিত্রা : আপনারা ইসলামী ঐক্যজোট গঠন করেছেন। আসলে আপনাদের উদ্দেশ্য কী? আ. হ. আমরা বর্তমান সরকারের ইসলাম বিরোধী কাজের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। আমরা সারা দেশের মানুষকে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ করে তুলব। বিচিত্রা : মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের সম্মান জানানোর জন্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘শিখা চিরন্তন।’ আপনারা এর বিরোধিতা করছেন কেন? আ. হ.: এইগুলো ফালতু কথা । ঐহানে আগুন পূজা করতাছে । এইডা মহাপাপ। শিরিকি । ক্ষমারযোগ্য না। বিচিত্রাঃ ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে তো ‘শিখা অনির্বাণ’ আছে। শিখা অনির্বাণ আর ‘শিখা চিরন্তন’ তো একই জিনিস। এছাড়া শিখা অনির্বাণ জ্বলছে আরো অনেক আগে থেকে। এটার বিরুদ্ধে আপনারা কিছু বলছেন না কেন? আ. হ.: ক্যান্টনমেন্টে তো অস্ত্র নিয়া মিলিটারি পাহারা দেয়। ঐখানে যাইতে হইলে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়া যাইতে অইব। আমরা সেই প্রস্তুতি নিতাছি। এছাড়া এমনি এমনি গেলে কিছু করা যাবে না। যেমন রেলগাড়ি দেইখা সামনে লাফ দিয়া পড়লে থামবো না। রেলগাড়ি থামাইতে অইলে সেইরকম একটা প্রস্তুতি নিয়া, দু’ চারটা হাতি নিয়া রেলের সামনে যাইতে অইবো। হাতির উপর দিয়া তো আর গাড়ি যাইতে পারব না। আমরা শক্তি সঞ্চয় করে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতাছি। হিন্দুদের মূর্তিপূজা করাও যা, আর শিখা চিরন্তনের সামনে গিয়া সম্মান করাও তাই। কারণ পূজা শব্দের অর্থই সম্মান প্রদর্শন। ক্যান্টনমেন্টের ভেতরের শিখা অনির্বাণের কথা আমরা আগে জানতামও না। আর শিখা চিরন্তন তো সারাদেশ ঘুরাইছে। এইডা তো আরো খারাপ অইছে। সারাদেশের মাইনষের পাপ অইছে। বিচিত্রাঃ যুদ্ধের প্রস্তুতিটা কী? আ. হ.: সরকার যদি এই আগুন পূজা বন্ধ না করে তাইলে দেশে গৃহযুদ্ধ বাইধা যাইব। তখন আর কিছু করার থাকবে না। আমরা সেই প্রস্তুতি নিতাছি। বিচিত্রা : আপনারা কীভাবে ট্রেনিং নিচ্ছেন? আ. হ.: আমরা প্রস্তুতি নিতাছি। বিচিত্রাঃ আগুন তো মানুষের খুবই প্রয়োজনীয় জিনিস। আপনার বাড়িতেও নিশ্চয় গ্যাসের চুলা জ্বলে …… আ. হ. : হ্যা। তা জ্বলে। তয় আগুনরে সম্মান করন যাইব না। গ্যাসের আগুনরে তো আমি সম্মান করি না। বিচিত্রাঃ এবার আমরা একটু অন্য প্রসঙ্গে যাই । আপনি ‘৭১-এ কোথায় ছিলেন? আ. হ.: ‘৭১-এ তো ঢাকায়ই ছিলাম ।’ বিচিত্রাঃ তখন তো সারা দেশে মুক্তিযুদ্ধ চলছে। ঢাকায় আপনারা কী করতেন? আ. হ.: ও তেমন কিছুই করতাম না । নিরপেক্ষ ছিলাম । বিচিত্রাঃ কিছুই করতেন না? আ, হ,: না। ‘৭১-এ আমাগো অবস্থান ছিল নিরপেক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে। আমরা কখনোই চাই নাই পাকিস্তান ভাইঙ্গা বাংলাদেশ স্বাধীন হোক। বিচিত্রাঃ মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে থাকার জন্যে অনুশোচনা হয় না? আ. হ. : না। আমরা তো ইসলামের পক্ষে ছিলাম। আমরা তখনো যা করেছি সেটাকেই ঠিক মনে করেছি। এখনো যা করছি এটাই ঠিক। বিচিত্রাঃ রাজাকার, আলবদর ,আল শামসের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না? আ।. হ.: না, না। এইগুলা জামাতী গো কাম। বিচিত্রাঃ মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি ‘৭১-এ পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল… আ. হ. : যাদের খুন করা হইছে, তারা খুবই বড় মানুষ ছিল । ভালো মানুষ ছিল। এগো তো মারছে মুক্তিযোদ্ধারা। রাজাকাররাও হয়ত কিছু মারছে। এইডা খুবই খারাপ কাম অইছে। বিচিত্রাঃ মিটিংয়ে কী টাকা দিয়া লোক আনেন? আ. হ.: ……..না…………তা ঠিক না। আমরা কি ক্ষমতায় আছি যে আমগো অত টাকা থাকব । সদস্যদের টাকায়ই পার্টি চলে । বিচিত্রাঃ মানিক মিয়ার জনসভায় আপনারা বলেছেন ইসলামী ঐক্যজোটই বাংলাদেশের একমাত্র রাজনৈতিক দল। সরকার বাধা না দিলে এক কোটি লোক জড়ো হতে পারত। তাহলে আপনাদের পার্টির সদস্য সংখ্যা কত? আ. হ.: কমছে কম, এক কোটি তো অইবই। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোক আনার জন্যে আমরা টাকা দিছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ বাধা দিছে। ফলে টাকা নিয়াও তারা আসতে পারে নাই।। বিচিত্রাঃ এক কোটি সদস্য হলে, তাদের পরিবারের সদস্য নিয়ে আপনাদের ভোটারের সংখ্যা তো কমপক্ষে দু’ আড়াই কোটি হওয়ার কথা? আ. হ. : হ্যা। তা তো হবেই । অবশ্য একটু কমও হতে পারে। বিচিত্রাঃ তাহলে গত নির্বাচনে সিট মাত্র একটি পেলেন কেন? নিজেদের সদস্যরাও কী আপনাদের ভোট দেয় নি? আ. হ. : হেঃ হেঃ । বুঝেন না, নির্বাচনে সন্ত্রাস হয়। ডাকাতি হয়। আমাদের সদস্যদের দিয়া জোর কইরা ওরা (আওয়ামী লীগ, বিএনপি) ভোট দেওয়াইয়া নেয় । বিচিত্রাঃ বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। আবার এখন বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন? আসলে আপনাদের আন্দোলনটা কাদের বিরুদ্ধে? আ. হ.: যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করি। তাই আগে বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। আর এখন বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করতাছি। আমাদের আন্দোলনে বিএনপি সাপোর্ট করতাছে। বিচিত্রাঃ নারী নেতৃত্ব বিষয়ে আপনাদের মতামত কী? আ. হ.: আমাদের ‘মসলা’ নারী নেতৃত্বের পুরাপুরি বিপক্ষে। রসুল (সঃ) বলছেন, ‘যে দেশে নারী নেতৃত্ব থাকবে সে দেশের উন্নতি হবে না। ঐ জাতি উন্নতি করতে পারবে না, তাদের কল্যাণ এবং মঙ্গল হবে না- তারা যখন শাসন ক্ষমতা নারীর কাছে অর্পণ করবে।’ নারী নেতৃত্ব অবৈধ। বিচিত্রাঃ বিএনপি’র নেতৃত্বে রয়েছেন খালেদা জিয়া। তিনি একজন মহিলা। তাহলে বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করছেন কেন? আ. হ.: জি….না…. মানে বিএনপিরে সাথে নিয়া আন্দোলন করতাছি না তো। নারী নেতৃত্ব অবৈধ । বিএনপি আমাদের আন্দোলনে সাপোর্ট করছে। বিচিত্রা : আপনি আগের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করছি। আ. হ.: ও এরকম কিছু বলি নাই (হেঃ হেঃ হেঃ) শুনেন নারী নেতৃত্ব থাকলে দেশের উন্নতি অইব না। দেশ দিন দিন রসাতলে যাইব। তাড়াতাড়ি নারী নেতৃত্ব সরান । বিচিত্রাঃ কবে নাগাদ ক্ষমতায় যাওয়ার আশা করছেন? আ. হ.: এইডা কী বলা যায় নাকি। আল্লাহ যহন চাইব। আল্লাহ চাইলে যাইতে পারি তাড়াতাড়িই। বিচিত্রাঃ তাহলে আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় যাচ্ছেন? আ. হ.: এইডা কয়ন যাইত না, কয়ন যাইত না ……. বিচিত্রাঃ ক্ষমতায় যেতে হলে তো আন্তর্জাতিক লবি শক্তিশালী হতে হয়। বাইরের কোন দেশ আপনাদের পক্ষে আছে? আ. হ.: পাকিস্তান। আরব । আরবের মুসলিম দেশগুলো একটু দূরে । এইডা একটা অসুবিধা। বিচিত্রাঃ আফগান তালেবানদের সঙ্গে তো আপনাদের যোগাযোগ রয়েছে? আ. হ.: আমরা আফগান তালেবানদের সাপোর্ট করি। তারা ইসলামের জন্যে যুদ্ধ করছে। আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি, তাদের স্বীকৃতি দেয়ার জন্যে। পাকিস্তান আফগানদের স্বীকৃতি দিয়েছে। আমরাও তাদের সব রকম সাহায্য সহযোগিতা দেয়ার জন্যে প্রস্তুত আছি । বিচিত্রাঃ শোনা যায় তালেবানদের সাহায্যের জন্যে বাংলাদেশ থেকে আপনারা কিছু যোদ্ধা পাঠিয়েছেন? আ. হ.: না। পাঠাই নাই। তালেবানরা এখনো এরকম কোনো সাহায্য চায় নাই। চাইলে তো দুই একজন না, লাখ লাখ যোদ্ধা পাঠামু। যেমন বসনিয়ার মুসলমানরা যখন সাহায্য চাইছিল তখন আমরা এক লাখ মুজাহিদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছিলাম। পরে আর দরকার হয় নাই দেইখা পাঠাই নাই। বিচিত্রাঃ আপনাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা আছে। কোথায়? আ. হ.: আছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। বিচিত্রাঃ কাশ্মিরে তো আপনারা কিছু মুজাহিদ পাঠিয়েছেন? আ. হ.: কাশ্মিরে অনেক বাংলাদেশী মুজাহিদ আছে। আমরা পাঠাই নাই । বিচিত্রাঃ ইসলামপন্থী দলগুলোর মধ্যেও বিরোধ। জামাতের সঙ্গে আপনাদের এত বিরোধ কেন? আ. হ.: না, বিরোধ আর কই। তয় জামাতীরা দাড়ি রাখে ছোট ছোট (হেঃ হেঃ হেঃ)। নিয়ম অইল বড় দাড়ি রাখতে অইব (এই সময় তিনি নিজের দাড়ি ধরে দেখান। কত বড় দাড়ি রাখা উচিত)। তাছাড়া জামাতীরা একটু উগ্র। শুনছি ওরা নাকি মানুষের রগ কাইটা দেয়। তাগো রক্ত গরম। এইগুলা ইসলাম সাপোর্ট করে না। বিচিত্রাঃ তাবলীগ জামাতীদের সঙ্গেও তো আপনাদের বিরোধ আছে? আ. হ.: তাবলীগ জামাতীরা অইল এক্কেবারে নির্জীব । রক্ত ঠান্ডা। ইসলাম রক্ষার জন্যে কিছু করে না । তাই আমরা পছন্দ করি না। বিচিত্রাঃ আপনারা মানিক মিয়ার জনসভায় বলেছেন, ১৪ মাসে সরকার দেশের অর্ধেক ভারতের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। কীভাবে বিক্রি করল- একটু বুঝিয়ে বলবেন? আ. হ.: বুঝেন না, লোক দেখানো পানি চুক্তি করছে। হেঃ হেঃ হেঃ। ভারতরে ট্রানজিট দিতে চায়, বিদ্যুৎ আমদানী করতে চায়। সরকার খালি ভারত ভারত করে। একটু দূরে অইলেও পাকিস্তান থেকেও তো বিদ্যুৎ আনা যায় । বিচিত্রাঃ পাকিস্তান একটু বেশি দূরে হয়ে যায় না? আ. হ.: দূরে…. হ্যা তা একটু বেশি হয় । চেষ্টা করলে আনুন যায় । বিচিত্রাঃ ইসলাম বিরোধীদের তালিকা তৈরি করে কী করবেন? আ. হ.: রসুল (সঃ)-এর বদনাম করছে আলী আজগর । এই রকম আরো যারা আছে ইসলাম বিরোধী, যেমন কবীর চৌধুরী, শামসুর রাহমান, শাহরিয়ার কবির এইগুলার বিচার কইরা শাস্তি দিতে অইব। বিচিত্রাঃ কী শাস্তি দেবেন? আ. হ.: বিচারে যে শাস্তি হয়। দেশের মানুষ বিচার করব। বিচিত্রাঃ ডঃ আলী আজগর তো বলেছেন, তিনি রসুল (সঃ)কে অপমান করে কোনো কথা বলেন নি? আ. হ. : সে এখন কইলেই তো আর অইল না। সে কইছে। আমগো লোকজন শুনছে। এইডার কোনো মাপ নাই। তারে শাস্তি পাইতে অইব। বিচিত্রাঃ মহামান্য রাষ্ট্রপতির মঞ্চে জুতা নিক্ষেপ করার অভিযোগ আছে আপনাদের দলের বিরুদ্ধে? আ. হ.: সেইদিন রাষ্ট্রপতিরে মঞ্চে বসাইয়া রাইখা সচিব আগে বক্তৃতা করতে উঠছে। শেখ মুজিব, জাতির পিতা…. এইগুলান কওয়া শুরু করছে। রাষ্ট্রপতিরে আগে বক্তৃতা দিতে না দেয়ায় এবং এইগুলান কওয়ায় লোকজন উত্তেজিত হয়ে মঞ্চে জুতা মারছে। আর অহন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ষড়যন্ত্র করতাছে খতিবের বিরুদ্ধে। বিচিত্রাঃ নিয়ম অনুযায়ী তো সচিবেরই আগে বক্তৃতা দেয়ার কথা—- আ. হ. : না, না। আগে রাষ্ট্রপতি বক্তৃতা দিব। তারপর অন্যরা। বিচিত্রা : আপনি একবার বলেছিলেন, মানুষের চাঁদে যাওয়ার কথা মিথ্যা। অন্য কোনো দেশ থেকে ঘুরে এসে বলছে, চাঁদে গেছিলাম । মানুষ যে চাঁদে গেছে এটা কী আপনার এখনো বিশ্বাস হয় না? আ, হ,: হ্যা, চাঁদে মনে হয় যাওয়া যায় । বিচিত্রা : এখন তো মানুষ মঙ্গল গ্রহে যাওয়ারও চিন্তা করছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী? আ. হ.: আরে চাঁদে যাওয়া, মঙ্গল গ্রহে যাওয়া এইগুলা বড় কোনো কাম অইল নাকি? এইডা তো একটা পিকনিক, হেঃ হেঃ । আপনারা যেমন দল বাইধা পিকনিকে যান, এইডাও ঐরকমই। তাছাড়া ঐহানে গিয়া অইবই বা কী? শুধু শুধু টাকা পয়সা নষ্ট। মঙ্গল গ্রহে, চাঁদে যে কেউই যাইতে পারে । ইচ্ছা করলে আমরাও যাইতে পারি । এইডা কোনো ব্যাপারই না। বিচিত্রাঃ পরিবার পরিকল্পনার বিষয়ে আপনার মতামত কী? আ. হ. : ইসলামে পরিবার পরিকল্পনা এক্কেবারে হারাম । নাজায়েজ। আমরা পরিবার পরিকল্পনার পুরাপুরি বিপক্ষে। এর জন্যে এত টাকা খরচ করে প্রচারের কোনো দরকার নাই এবং এই নাফরমানি প্রচারণা বন্ধ করতে অইব । বিচিত্রাঃ অপরিকল্পিতভাবে জনসংখ্যা বেড়ে গেলে দেশে খাদ্য সংকট দেখা দেবে না? আ. হ.: না । লোকসংখ্যা বাড়লে খাদ্য সংকট দেখা দিব না। আহার আল্লায়ই যোগাইব। আল্লাহর দোয়ায় আগের চেয়ে এখন খাদ্য উৎপাদন বাড়ছে। যত বেশি পোলাপান হোক না কেন, এইডা খারাপ না । জন্ম নিয়ন্ত্রণ মহাপাপ । বিচিত্রাঃ বাংলাদেশ তো নেপালকে ট্রানজিট দিল । এ বিষয়ে আপনাদের মন্তব্য কী? আ, হ,: নেপালকে ট্রানজিট পাকিস্তান আমলেই দেয়ার কথা ছিল। পাকিস্তানই দিতে চাইছিল। তাই এইডাতে কোনো সমস্যা নাই। এখানে ভারতের কোনো মাতুব্বরি ছিল না। কিন্তু ভারত এখন এইখানেও মাতুব্বরি করতাছে । তাই আমরা এইডারও বিরুদ্ধে। ভারতের মাতুব্বরি ছাড়া ভুটান, শ্রীলংকা এইগুলারেও ট্রানজিট দেয়া যায় । বিচিত্রা : শুধু ভারত ছাড়া….. আ. হ.: অন্য দেশগুলারে দিলে আমগো সার্বভৌমত্ব নষ্ট অইব না। কিন্তু ভারতরে দিলে সার্বভৌমত্ব থাকব না। ভারত আমগো বুকের উপর দিয়া আসা যাওয়া করব। এইডা আমরা মেনে নিতে পারি না। বিচিত্রাঃ দেশের শিক্ষা পদ্ধতি কী হওয়া উচিত? আ. হ. : এই সরকার কুদরত-এ-খুদার শিক্ষা পদ্ধতি চালু করতে চায়। এইডা চালু অইলে দেশে ধর্ম থাকব না। তাই আমরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করতাছি। দেশের ৯৫% মুয়াজ্জিন ঠিকমত আযান দিতে পারে না। ইমামরা নামাজ পড়াইতে পারে না। তাই ব্যাপক হারে ধর্ম শিক্ষার প্রসার ঘটাইতে অইব। সাধারণ শিক্ষা বাতিল কইরা ধর্ম শিক্ষা চালু করতে অইব। আলেম-উলামার সংখ্যা বাড়াতে হবে।