You dont have javascript enabled! Please enable it!

দিনাজপুর ইপিআর সেক্টর হেডকোয়ার্টারের ঘটনাবলী
সাক্ষাৎকারঃ নায়েক সুবেদার মোহাম্মদ আনসার আলী
১৯-১১-১৯৭৩

২৫ শে মার্চ থেকেই দিনাজপুর শহরে ছাত্র-জনতার মিছিল বের হতে শুরু করে। ২৬ শে মার্চ সকালেই আমরা সামরিক শাসন জারী করার কথা শুনি।এটা শুনে আমাদের সাথের পশ্চিম পাকিস্তানীরা আনন্দিত হয়েছিল এবং বাঙালিদের বিরুদ্ধে নানা কথা বলছিল। ২৬ শে মার্চ বেলা দশটার দিকে আমি ৩০/৪০ জন লোক নিয়ে নিউ টাউনে ডিউটি করতে যাই।

২৭ শে মার্চ ১/২ টার দিকে বিহারীরা প্রায় ১২/১৩ জন বাঙালিকে হত্যা করে।এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

২৭ শে মার্চ বেলা ১২/১ টার সময় তিনজন মেজর,কর্নেল এবং দুই/তিনজন ক্যাপ্টেনসহ পশ্চিম পাকিস্তানীরা এক বৈঠক করে।বেলা সাড়ে তিনটার সময় বৈঠক শেষ হয়।শেষ হবার পর ঢাকার সাথে যোগাযোগকারী সিগন্যাল সেটের কমান্ডারকে জীপে উঠিয়ে নেয় এবং তার বাসার দিকে রওয়ানা হয়।সেক্টর হেডকোয়ার্টারে ১৫/২০ জন বাঙালি ছিল।কোয়ার্টার মাষ্টার আবু সাইদ খোন্দকার,হাবিলদার ভুলু এবং প্লাটুন হাবিলদার নাজিমও ছিল।বাকি সবাইকে ডিউটিতে বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হয় যাতে তারা এক জায়গায় একত্রিত না হতে পারে।জীপটা যখন অফিস থেকে রওয়ানা হয় সেই সময় আমাদের ৬-পউন্ডার প্লাটুন হাবিলদার নাজিম উদ্দিন ঐ জীপকে লক্ষ্য করে গোলা বর্ষন করে।কিন্তু গুলীটা জীপে না লেগে অফিসের কর্নারে লেগে যায়। তখন চারিদিক থেকে গোলাগুলি শুরু হয়ে যায়।বিকাল পাঁচটার মধ্যে সমস্ত পশ্চিম পাকিস্তানীদের হত্যা করা হয়।জনগণ হেডকোয়র্টারে এসে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যায়।সেক্টর হেডকোয়ার্টারের একটু দূরে সার্কিট হাউসে ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের প্রায় ১৫০ জন সৈন্য রিজার্ভ ছিল।

কাঞ্চন নদীর ওপারে গিয়ে আমরা অবস্থান নিতে শুরু করি।অস্ত্রগার থেকে সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র নদীর ওপারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।নদীর ওপারে গিয়ে আমরা রিজার্ভে ১৫০ জনের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হই।এই সংঘর্ষ দুই তিন দিন চলেছিল।

এপ্রিলের ৩ তারিখে ২/৩ টা জীপে করে সার্কিট হাউস থেকে তারা পলায়ন করে দক্ষিণ দিকে পার্বতীপুর যাওয়ার জন্য অগ্রসর হয়।মোহনপুরের আগে যাওয়ার পর সুবেদার শুকুর সাহেবের কোম্পানী তাদেরকে বাধা দেয়।তারা আবার দিনাজপুরে ফিরে আসে,ফিরে আসার পর শালবাগানে তাদের অনেককেই জনসাধারণ এবং বাঙালি ইপিআর মেরে ফেলে।কর্নেল তারেক রসুল জীপ নিয়ে পার্বতীপুরে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল।

২৭ শে মার্চ দিনাজপুরের সীমান্ত এলাকায় সমস্ত বিওপিতে সংবাদ পাঠিয়ে দেয়া হয় এবং সেখানে যত পশ্চিম পাকিস্তানী ইপিআর ছিল সবাইকে হত্যা করা হয়।

এপ্রিল মাসে দিনাজপুর টাউন শত্রুমুক্ত হবার পর পুলিশকে দিনাজপুর হস্তান্তর করে আমাদের কিছু লোক পার্বতীপুরের দিকে এবং কিছু লোক সৈয়দপুরের দিকে রওয়ানা হয়ে যায়।

এপ্রিল মাসের ১২/১৩ তারিখে সৈয়দপুরের কিছু দূরে পাকিস্তানীদের সাথে আমাদের সংঘর্ষ হয়।শেষ পর্যন্ত প্রচণ্ড আক্রমনের মুখে টিকতে না পেরে আমরা পশ্চাদপসরণ করি।

পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ১৫ এপ্রিল তারিখে দিনাজপুর শহর পুনরায় দখল করে নেয়।

—————————————-

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!