You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.03.29 | কোলকাতায় মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির জনসমাবেশে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের দাবী | দৈনিক আনন্দবাজার - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
১০২। কোলকাতায় মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির জনসমাবেশে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের দাবী দৈনিক আনন্দবাজার ২৯ মার্চ ১৯৭১
বাংলাদেশে অস্থায়ী সরকারকে স্বীকৃতি দানের দাবী
(স্টাফ রিপোর্টার)

কলকাতা, ২৯ শে মার্চ- দুই বাংলার বেড়া ভেঙ্গে দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারকে অবিলম্বে স্বীকৃতি দেবার জন্য মার্কসব্দী কমিউনিস্ত পার্টির নেতা শ্রী জ্যোতি বসু আজ শহীদ মিনার ময়দানে এক বিশাল জনসভায় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবী জানিয়েছেন।

শ্রী বসু বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষের লড়াইএর জন্য সরবরাহেরো দাবী জানিয়েছে। তিনি কেন্দ্রীয় কংগ্রেসী সরকারের মিষ্টি মিষ্টি কথার সমর্থনের বদলে বাংলাদেশকে সর্বপ্রপকার সাহায্যের দাবী জানান। শ্রী বসু অবশ্য বলেন এ সাহায্য কেন্দ্রের কংগ্রেসী সরকার দেবে না। কেন্দ্রীয় সরকারের আচরণকে তিনি ভন্ডামি বলে বর্ণনা করেন।

সভায় আর এক বক্তা শ্রী হরেকৃশ্ন কোঙার তথ্য ও তত্ব উপস্থিত করে বলেন নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়ী হয়েও মুজিবুর রহমানকে সরকার গড়তে দেয়া হয়নি। তাই পশ্চিমবঙ্গের সামান্য কটি বেশী আসন পেলে সংযুক্ত বামপন্থী ফ্রন্টকেও সরকার করতে দেয়া হত কিনা সন্দেহ। তিনি বলেন ইয়াহিয়া খাঁ আর ইন্দিরা গান্ধী এই প্রসঙ্গে এক ও অভিন্ন। বিচ্ছিন্ন তার অভিযোগ ইন্দিরা গান্ধীও তার লেজুড় ডান কমিউনিস্টরা তুলেছে আমার পার্টির বিরুদ্ধে এবং একই অভিযোগ তুলেছে ইয়াহিয়া খাঁ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে।

সংযুক্ত বামপন্থী ফ্রন্টের ডাকে আজকের এই জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রী জ্যোতি বসু। শহরের বিভিনন অঞ্চল থেকে মিছিল করে বহু নরনারী জনসভায় যোগ দেন।

শ্রী জ্যোতি বসু বলেন পূর্ব বাংলার মানুষ যে সংগ্রাম করছে তা থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহন করতে হবে। আজ তারা অস্থায়ী সরকার গঠন করেছে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। নির্বাচনে ওরা অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করেছে। দীর্ঘ এগারো বছর সামরিক শাসনের অধীনে থেকেছে পূর্ব বাংলার মানুষ। তবু সমস্ত সাম্প্রদায়িকতা ভুলে ঐক্যবদ্ধ এই অভিযান বিস্ময়কর। তিনি অভিনন্দন জানিয়ে বলেন আমরা ওঁদের পাশে আছি। পূর্ব বাংলার লড়াই আমাদেরও লড়াই ওঁদের পরাজয় আমাদেরও পরাজয়।

শ্রি বসু বলেন আমার বিশ্বাস আমরা ওদের সাহায্য করতে পারব। সমস্ত বাধা অতিক্রম করে কংগ্রেস সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। ওঁদের অস্ত্রের প্রয়োজন। অস্ত্র ওঁরা কেড়ে নিচ্ছেন এটাই মুক্তিযুদ্ধের নিয়ম। এমনকি মেয়েরাও লড়াই করছেন। ঔষধ-ডাক্তার দরকার। কমপক্ষে ওয়াটার বটলও আমরা পাঠাতে পারি।

তিনি এ প্রসঙ্গে টাকার দরকারের কথা বলেন। তাই একদিনের মাইনে বা দু এক ঘন্টা বেশী কাজ করে মজুরী দানের কথা বলেন।

প্রস্তাব

সভায় গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়েছে যে ঐতিহাসিক সংগ্রামে পূর্ব বাংলার মানুষের পাশে কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে পশ্চিম বাংলার মানুষেরা দাঁড়াবে। শুধু নৈতিক কর্তব্যবোধেই নয় গণতান্ত্রিক সংগ্রামের বাস্তব প্রয়োজনে ভারতের জনসাধারন বাংলাদেশের জঙ্গী আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য ঐ দেশের মানুষকে সাহায্য করবে।

প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে শুধু মৌখিক সমর্থনই বাংলাদেশের মানুষের কোন উপকার করবে না। প্রস্তাবে তাই প্রকৃত সাহায্য দেবার জন্য এবং অবিলম্বে বাংলাদেশের সার্বভৌম স্বাধীন প্রজাতন্ত্রকে ভারত সরকার যাতে স্বীকৃতি দেন তার জন্য দাবী তোলা হয়েছে।

সংযুক্ত বামপন্থী ফ্রন্টের আহবায়ক শ্রী সুধিন কুমার সভায় প্রস্তাবটি পেশ করেন।

শ্রী হরেকৃষ্ণ কোঙার বলেন জনগনের রায়ে পূর্ব বাংলার মানুষেরা নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য এগিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তা বাধা পেল কায়েমী স্বার্থগোষ্ঠীর কাছে। তাই তাদের কাছে খোলা ছিল গোলামীর পথ বা মুক্তির পথ। গর্বের বিষয় যে তারা মুক্তির পথই বেছে নিয়েছেন। সংগ্রামের মধ্য দিয়েই তারা বেছে নিয়েছেন মুক্তির পথ। তাই তাদের সঙ্গে আমরা আছি। পূর্ব বাংলার মানুষকে আজ অস্ত্র রসদ ওষুধপত্র প্রভৃতি দিয়ে সাহায্য করা উচিত। তিনি সাধারন মানুষকে সতর্ক করে দিয়ে আরো বলেন পূর্ব বাংলার সংগ্রামকে নিয়ে স্বার্থসিদ্ধির কাজেও লাগাবার জন্য প্রতিক্রিয়াশীলরা বিভ্রান্তিকর প্রচার চালাচ্ছে। তাতে যেন কেউ সায় না দেয়।

সর্বশ্রী জ্যোতি ভটাচার্য সুকুমার রায় রাম চ্যাটার্জী নেপাল ভট্টাচার্য প্রমুখ ও বক্তৃতা করেন।

হাওড়ার নাগরিকদের সভা

যুগান্তরের হাওড়া অফিস থেকে জানানো হয়েছে যে সোমবার হাওড়া টাউন হলে নাগরিকদের এক সভায় স্বাধীন বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষদের অভিনন্দন জানিয়ে তাদের প্রতি পূর্ন সমর্থন জ্ঞ্যাপন করা হয়েছে। কেবলমাত্র সি পি এম ব্যতীত প্রায় সব দলই এই সভার উদ্যোক্তা ছিল। শ্রী সুরেশ্বর দত্তের পৌরহিত্যে সম্পন্ন এই সভায় ইয়াহিয়ার বর্বর অত্যাচারের প্রতিবাদ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদানের জন্য পশ্চিমবংগ তথা ভারতের যুবশক্তির প্রতি আহবান জানানো হয়।

সর্বশ্রী অরবিন্দ ঘোষাল ফঃ বঃ শরদিন্দু শেঠ কংগ্রেস সংগঠন সর্দার আমজাদ আলী বাং কং প্রফুল্ল রায় কং অমর মজুমদার সি পি আই শংকর বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস সং রামপ্রসাদ শর্মা পি এস পি কৃষ্ণপদ রায় কং শা দিলীপ দাশ ও সুবোধ কর প্রভৃতি এই সভায় বক্ত্রৃতা করেন।

হাওড়া ছাত্র মিছিল

আজ হাওড়া শহরের সব স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা কালো ব্যাজ পরেন। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বিরাট এক ছাত্র মিছিল হাওড়া শহর পরিক্রম করে স্বাধীন বাংলাফদেশের মুক্তিফৌজকে অভিনন্দন জানায়। নরসিংহ দত্ত কলেজ ব্যাঁটরা মধুসূদন পাল চৌধুরী বিদ্যালয় ব্যাঁটরা শিক্ষায়তন রামকৃষ্ণ ইন্সটিটিউট মিছিলের আয়জন করে।

ছাত্ররা ব্যাঁটরা থানার সামনে পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের একটি কুশপুত্তলিকা দাহ করেন।