শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১০০। বাংলাদেশের ঘটনাবলীতে ভারতের বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া | দৈনিক যুগান্তর | ২৮ মার্চ ১৯৭১ |
কলকাতায় পাক দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ মিছিল
রবিবার সকালে পশ্চিমবং ছাত্র পরিষদের ( চৌরঙ্গী) উদ্যোগে পূর্ববঙ্গে মিলিটারী দাপটের প্রতিবাদে এবং সেখানকার জনগনের আন্দোলনের সমর্থনে একটি বিক্ষোভ মিছিল পাক ডেপুটি হাই কমিশন ভবনের সামনে সমবেত হয়।
ভবনের গেটের উপরে বাংলাদেশ এবং কংগ্রেস পতাকা টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়।
ছাত্র পরিষদ কর্মীদের অনশন ধর্মঘট
বাংলাদেশের সংগ্রামী জনতার সমর্থনে ছাত্র পরিষদের ( মহাজাতি সদনের) সভ্যগন রবিবার ডাঃ সুন্দরী মোহন এভেনিউ ও হাতিবাগান রোডের মোড়ে সারা দিন ব্যপী অনশন ধর্মঘট পালন করেন। ছাত্ররা গান্ধীজির মাল্যভূষিত মূর্তি সামনে রেখে দেশাত্মবোধক সঙ্গীত ও কাজী নজরুল এবং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কবিতা পাথ করেন।
শেখ মুজিবের প্রতি ছাত্র সমাজের অকুন্ঠ সমর্থন জানিয়ে বিভিন্ন ছাত্রকর্মী ও নেতা ওখানে সারাদিন তাঁদের বক্তব্য রাখেন।
বালকদের অনশন
বাংলাদেশের শোষন মুক্তির সংগ্রামে সমর্থন এবং পাকিস্তান সরকারের জঙ্গীশাহী দমন পীড়নের প্রতিবাদে যুব কংগ্রেসের ডাকে বি ও আর ক্যামপ কলিকাতা ৪০ এর মাঠে নিম্নলিখিত ১০ থেকে ১৪ বতসর বয়স বালকেরা রবিবার অনশনের মাধ্যমে বিক্ষোভ প্রকাশ করেন। দীলিপ কুমার দাশ সুজিত ঘোষ বিষ্ণু বসু গৌতম রায় অধিক্রম দাশ বীর বিক্রম দাস সুবিক্রম দাস ফটিক দে রঞ্জন গোস্বামী নির্মল কৃষ্ণ দে ত্রিবিক্রম দাশ ও সুবীর সরকার। এছাড়া শ্রীমতি লীলা বসু (৫৯) ও শ্রীমতি টুকুরানী দাশ ( ৪২) অনশন করেন।
স্বাধীন সরকারকে স্বীকৃতি দিতে জনসংঘের দাবী
রবিবার বিকালে ইউনিভার্সিটি ইন্সটিটিউট হলে জনসংঘের আহবানে এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক হরিপদ ভারতী।
অধ্যাপক ভারতী বলেনঃ বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবুর রহমান স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্ররূপে ঘোষনার সাথে সাথে পশ্চিম পাকিস্তানের ফৌজী নায়ক যুদ্ধবাজ খুনী ইয়াহিয়া খাঁ ও তার অনুগামীরা ব্যপক গণহত্যা করা সত্বেও বাংলাদেশের তরুন মুক্তিযোদ্ধারা যেভাবে রক্ত দিয়ে সমস্ত আক্রমনের মোকাবিলা করেছেন তার জন্য এপার বাংলার মানুষরূপে আমরা গর্বিত। আমরা মনে করছি বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ আগামী দিনবে অখন্ড ভারত প্রতিষ্ঠার দিক নির্ণয় করবে।
অধ্যাপক ভারতী তার ভাষণে বাংলাদেশের স্বাধীন সরকারকে স্বীকৃতি দান এবং বিশ্বের জনমতকে জাগ্রত করে রাষত্র সজ্ঞহের মাধ্যমে সাহায্য দানের ব্যবস্থা করার দাবী করেন।
সভায় শ্রী শক্তিশেখর দাস ভাংলাদেশের তরুণদের কাছ থেকে দেশপ্রেমের এবং দেশের জন্য ত্যগ স্বীকারের শিক্ষা নেবার আহবান জানিয়ে বক্তৃতা করেন।
সর্বশ্রী শ্যামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় দুর্গাপ্রসাদ নাথনি জ্ঞান ব্যানার্জী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ ভাষণ দেন।
জনসংঘের মশাল মিছিল
সন্ধ্যায় ভারতীয় জনসংঘের কলকাতা শাখার পক্ষ থেকে ইউনিভার্সিটি ইন্সটিটিউট হল থেকে বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের সমর্থনে এক মশাল মিছিল বের হয়। এই মিছিল রাজভবনের সামনে গিয়ে স্বাধীন বাংলার স্বীকৃতি দাবী করে বিক্ষোভ দেখায় এবং ইয়াহিয়া খানের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।
বাংলা জাতীয় দলের দাবী
বাংলা জাতীয় দলের উদ্যোগে আহূত এবং শ্রী রণদেব চৌধুরীর সভাপতিত্বে শনিবার মহারোধী সোসাইটি হলে বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দের এক সভায় স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকার করে নেয়ার জন্য দাবী জানানো হয়। সভার শেষে একটি মিছিল রাজভবনে যায় এবং প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে উপরোক্ত দাবী সম্বলিত এক স্মারকলিপি পেশ করা হয়।
দিল্লী পাক হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ
নয়াদিল্লী ২৭ শে মার্চ বাংলাদেশের জনগনের স্বাধীনতা সংগ্রামকে ধ্বংস করবার জন্য পাকিস্তানী জঙ্গী প্রশাসন যে সেনাবাহিনী নিয়োগ করেছে তার প্রতিবাদে শত শত লোক বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তারা পাকিস্তান বিরোধী ধ্বনি দেয় এবং কালো পতাকা উত্তোলন করে।
শ্রী কর্পুরী ঠাকুরের বিবৃতি
পাটনা ২৮ মার্চ এস এস পির চেয়ারম্যান ও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী কর্পুরী ঠাকুর ভারতের জনগনকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রেমিক ভাইদের পাশে দাঁড়াতে বলেন।
নিঃ ভাঃ ফরোয়ার্ড ব্লক
নয়াদিল্লী ২৮ মার্চ নিখিল ভারত ফরোয়ার্ড ব্লকের কেন্দ্রীয় কমিটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের জন্য পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যে অমানুষিক অত্যাচার শুরু করেছেন তার তীব্র নিন্দা করেন এবং বাংলাদেশকে সমর্থনের জন্য ভারত সরকারের নিকট আবেদন করেন।
লেখক শিক্ষক ও ছাত্রদের সহানুভূতি
রাইপুর ২৮ মার্চ স্থানীয় লেখক সাংবাদিক শিক্ষক ও ছাত্রগন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে সমর্থন জানান।
ভারতীয় বার্তাজীবি সংঘ
পশ্চিম পাকিস্তানী প্রশাসন বাংলাদেশে বিদেশী সাংবাদিকদের কর্তব্য সম্পাদনে যেভাবে বাধা দিচ্ছেন ভারতীয় বার্তাজীবি সংঘ আজ তীব্র ভাষায় তার নিন্দা করেন।
গনতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশে সাংবাদিকরা যেভাবে আত্মনিয়গ করছেন সংঘের সভাপতি শ্রী ভি এন রাও আন্ত্ররিকভাবে তার সমর্থন জানান।
– পি টি আই ও ইউ এন আই
বোমবাইতে বাংলাদেশ সংহতি কমিটি গঠিত
বোমবাই ২৭ মার্চ বাংলাদেশের জনসাধারনের গণতান্ত্রিক অভ্যুত্থানকে সমর্থন করবার জন্য এই শহরে বাংলাদেশ সংহতি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
স্থানীয় বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলির ট্রেড ইউনিয়ন সংস্থাগুলির প্রতিনিধিদের একটি সভায় এই কমিটি গঠিত হয়।
পাক সহ হাই কমিশনারের অফিসের সামনে বিক্ষোভ
শহরে পাকিস্তানী সহকারী হাই কমিশনারের অফিসে সামনে বাংলাদেশে পাক সৈন্যবাহিনী ব্যপক গণহত্যার প্রতিবাদে শত শত লোক বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
রাষ্ট্রীয় লোকসেনার বোম্বাই শাখার ৪০০০ লোকের এক মোরচা অবিলম্বে গণহত্যা বন্ধ করার দাবী জানিয়ে এক স্মারকলিপি পেশ করে।
h5>