শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৮২। বাংলাদেশকে আশু স্বীকৃতিদানের জন্য পশ্চিম বাংলার মন্ত্রীসভার সদস্যের আহবান | দৈনিক ‘হিন্দুস্থান টাইমস’ | ১৯ এপ্রিল, ১৯৭১ |
আশু স্বীকৃতি প্রদানের জন্য মন্ত্রীর আহবান
নয়া দিল্লি, এপ্রিল ১৮ (পিটি আই ) – পশ্চিম বাংলার খাদ্য এবং দুগ্ধসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী বাবু কে কে মৈত্র বাংলাদেশকে আশু স্বীকৃতিদানের আহবান জানিয়েছেন। আজ এখানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, ভারত বাংলাদেশ যে স্বীকৃতি দিতে আরো দেরি করলে আর এভাবে বাংলাদেশের নিরীহ সাধারণ জনগনের উপরে চলমান হত্যাযজ্ঞ যদি আরো দীর্ঘ সময় ধরে চলতেই থাকে, তাহলে পশ্চিম বাংলার পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটবে।
বাংলাদেশকে আশু স্বীকৃতিদানের দাবি জানিয়ে মৈত্র বাবু বলেন যে, সদ্যজাত দেশটি স্বীকৃতি পাওয়ার চারটি শর্ত যথা: জনসংখ্যা, ভৌগলিক সীমারেখা, সরকার এবং সার্বভৌমত্ব পূরণ করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যা ঘটছে তা একটি জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব ছাড়া কিছুই নয়। তার মতে সংবাদ মাধ্যম এবং অল ইন্ডিয়া রেডিও এর উচিত ” চীনের ভূমিকা” যথাযথভাবে তুলে ধরা, যা কিনা পশ্চিম পাকিস্তানকে একটি “শক্তিশালী গনমানুষের বিপ্লবকে” পৈশাচিকভাবে দমন করতে সহায়তা করছে।
মৈত্র বাবু আরো বলেন, পশ্চিম বাংলার সরকার পূর্ব বাংলার শরণার্থীর ঢল নামবে বলে আশঙ্কা করছে এবং উদভুত পরিস্থিতি যথাযথভাবে সামাল দেবার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে।
এক লাখের মত শরণার্থী ইতিমধ্যেই পশ্চিম বাংলায় এসে পৌঁছেছেন এবং তাদের মধ্যে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে ৪০০ গ্রাম চাল করে, এবং শিশু প্রতি ২০০ গ্রাম চাল করে প্রতিদিন দেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, শরণার্থী সমস্যা সামনের মাসগুলোতে আরো অবনতির দিকে যাবে এবং সেজন্য তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে উদার হস্তে রাজ্য সরকারের সাহায্যে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
এছাড়াও মৈত্র বাবু শরণার্থীদের জন্য রাজ্যের অভ্যন্তরে অন্যান্য জায়গায় আশ্রয় দেওয়ার উপরে জোর দেন কেননা, সীমান্ত এলাকাতে দীর্ঘ সময় ধরে অস্থায়ী আশ্রয় শিবির চালনা করা “বিপদজনক” হতে পারে বলে তিনি মনে করেন। তিনি অস্থায়ী শিবিরগুলোকে বিভিন্ন দানশীল প্রতিষ্ঠান যেমন: রামকৃষ্ণ মিশন দ্বারা চালিত করার পক্ষে মত দেন।
সাম্যবাদী কংগ্রেস পার্টির প্রেসিডেন্ট এবং এমপি অধ্যাপক শিবেন লাল সাক্সেনা ও বাংলাদেশকে “স্বাধীন সার্বভৌম দেশ” হিসেবে আশু স্বীকৃতি প্রদানের দাবি জানান। তিনি আরো একধাপ এগিয়ে বলেন ভারতের তার সেনাবাহিনীকে কে এই মুহূর্তে সেখানে গণহত্যা ও ধংসযজ্ঞ বন্ধ করতে “মানবতার মিশনে” প্রেরণ করা উচিত।
পশ্চিম বাংলার পূর্ব সীমান্ত এলাকাগুলোতে তিন দিনের এক সফর শেষে কংগ্রেস পার্টির এমপি শশী ভূষণ বাবু আজ এক বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশকে আশু স্বীকৃতি প্রদানের গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তার কোন দ্বিধা নেই। তিনি বলেন, আধুনিক অস্ত্রসস্ত্র এর তীব্র অভাব সত্বেও বাংলার মুক্তি বাহিনী আধুনিক মারণাস্ত্রে সজ্জিত পশ্চিম পাকিস্তানি সেনা দেড় বিরুদ্ধে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। তিনি অনতিবিলম্বে বাংলাদেশের সরকারকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য ভারতের সরকারের কাছে আবেদন করেন।
কোচিন: কেরালা প্রদেশ মুসলিম লীগের কার্যকরী সভায় পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানি বাহিনী কতৃক গণহত্যার নিন্দা জানানো হয় এবং বাংলাদেশ বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থানের সাথে একাক্ততা ঘোষণা করা হয়।