You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.22 | বাংলাদেশের শরণার্থীদের সাহায্যে সকল রাজ্যকে আসার জন্য পশ্চিম বঙ্গ সরকারের  আহবান | দি স্টেটসম্যান - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
৮৪। বাংলাদেশের শরণার্থীদের সাহায্যে সকল রাজ্যকে আসার জন্য পশ্চিম বঙ্গ সরকারের  আহবান দি স্টেটসম্যান ২২শে এপ্রিল, ১৯৭১

বাংলাদেশের শরণার্থীদের সাহায্যে সকল রাজ্যকে আসার জন্য পশ্চিম বঙ্গ সরকারের আহবান
রিলিফের সকল খরচ বহন করার প্রতিশ্রুতি দিল কেন্দ্রীয় সরকার
(বিশেষ প্রতিনিধি)

বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তু আগমনের হার আশঙ্কাজনক হরে বৃদ্ধি পাবার পর পশ্চিম বঙ্গ সরকার জরুরীভিত্তিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে গত বুধবার এই বার্তা পাঠান যে তাদের প্রাদেশিক সরকার একা সব শরণার্থীদের খাদ্য, আশ্রয়, এবং চিকিৎসার ভার নিতে পারছে না এবং যেহেতু অন্য রাজ্যগুলোও বাংলাদেশের সমর্থক, তাই তাদের এই দায়িত্তের ভার নেয়া উচিত।

দিল্লিতে আমাদের বিশেয প্রতিনিধিসূত্রে জানা যায়, শ্রম ও পুনর্বাসন মন্ত্রী জনাব আর. কে. খাদিলকার বলেন যে পূর্ববাংলা থেকে আগত সব উদ্বাস্তুর জন্য ত্রাণ সামগ্রী কেন্দ্রীয় সরকার সরবরাহ করবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের চিন্তা আসলে যে গত মাত্র ১০ দিনে ২৭৩, ০০০ জন উদ্বাস্তু পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে, এ ধারায় চলতে থাকলে শীঘ্রই মোট উদ্বাস্তুর সংখ্যা ১০ লাখে পৌঁছাবে। তখন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার সামর্থ্য রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের কারোরই থাকবে না। অন্যান্য বছরগুলোতে যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল, যেমন গত ১৯৭০ সালে আসা মোট ২২৬, ০০০ জন উদ্বাস্তু কে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ব্যবস্থায় ভারতে প্রবেশের মাত্র ২ সপ্তাহের মধ্যে সারা ভারতে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়। তখন শুধু আশ্রয়স্থলের ব্যবস্থা করাই ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের মূল দায়িত্ব। কিন্তু এখন রাজ্য সরকারের জন্য সমস্যাটি আরো জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন বেশিরভাগ উদ্বাস্তুর জন্য শুধু আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দেয়াই যথেষ্ট নয়, বাংলাদেশে ফেরত যাবার মতো পরিস্থিতি না হওয়া পর্যন্ত তাদের জন্য স্থানাহার ও চিকিৎসার বন্দোবস্ত করতে হচ্ছে। তাই পশ্চিমবঙ্গ সরকার মনে করছে যে বাংলাদেশী উদ্বাস্তু সমস্যা শুধু তাদের একার নয়, বরং তা জাতীয়ভাবে মোকাবেলা করা উচিত আর অন্য সব রাজ্য যারা বাংলাদেশকে সমর্থন দিচ্ছে, তাদের উদ্বাস্তুদের ভার নেবার জন্য কেন্দ্র হতে আহ্বান জানানো উচিত।

প্রশংসিত ইঙ্গিত

রাজ্য সরকার অবস্ব শরণার্থীদের রক্ষার জন্য পূর্ন আর্থিক সাহায্যের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ওয়াদার প্রশংসা করেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ এতে সমস্যার শুধু ক্ষুদ্র একটি সমাধান হবে।

অপরপক্ষে মন্ত্রিসভা হতে অর্থমন্ত্রি তরুন কুমার ঘোষ, পিডাব্লিউ মন্ত্রি সন্তোস রায় এবং পুনর্বাসন মন্ত্রি আনন্দমোহন বিশ্বাসের সমন্বয়ে সাবকমিটির ঘোষণা দেয়া হয়। তারা উদবাস্তুদের ত্রানের সমন্বয়সাধন করবেন। তাছাড়া মন্ত্রিদের কয়েকজন সীমান্তে কিছু জেলায় ঘুরে ঘুরে পরিস্থিতি যাচাই করবেন। নয়াদিল্লিতে আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি আরো যোগ করেন যে, খাদিল্কার বিশেবভাবে উল্লেখ করেননি যে আসলে মোট কত টাকা সাহাজ্য দেয়া হবে, কিন্তু মানবিক দিকগুলো বিশেষভাবে বিবেচনা করে কেন্দ্রিয় সরকার এই ভার বহন করতে প্রস্তুদ এবং তারা পুর্বপাকিস্তান হতে বাধ্যহয়ে চলে আসা মানুষদের সাহাজ্যে যত টাকা প্রয়োজন তা প্রদানে ইচ্ছুক। খাদিল্কার আরো যোগ করেন যে, আজঅবধি প্রায় ২৭৩, ২৯৯ জন মানুষ সীমান্ত পেড়িয়ে চলে এসেছন, এবং এপ্রিলের মাঝামাঝি অবধি আসা পুরুষরা পুরবপাকিস্তান ফিরে গিয়ে যুদ্ধ করতে চাছেন। শুধু নারি, শিশু, এবং বৃদ্ধরাই আশয়কেন্দ্রে থেকে যাচ্ছেন।

হটাত উত্থান

১৫ই এপ্রিলের পর থেকে উদবাস্তু আসার গতি হটাত করে বেড়ে যায়, ধারনা করা হচ্ছে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনির চরম নিঃশংস্রতার কারনে তা হচ্ছে। আর যারা সীমান্ত পেড়িয়ে আসছেন, তাদের অনেকেই সরকারের সাহাজ্য নিচ্ছেন না, যা বোঝা যায় এই দেখে যে তাদের মধ্যে মাত্র ৮৯, ৬০০ জন ক্যাম্পে আছেন আর বাকি ১৬৯, ১০০ জন আত্মিয় ও বন্ধুবান্ধবের সাথে আছেন।

খাদিল্কার আরো পরিষ্কার ভাবে ব্যাখ্যা করে তুলে ধরেন, যে বিভিন্য প্রদেশের ক্যাম্পে, যেমন পশ্চিমবঙ্গে ৬১, ৮০০ জন, আসাম ও মেঘালয়ে ১০, ৭০০ জন, ত্রিপুরায় ১৭, ১০০ জন আছেন। বাকি ১৬৯, ১০০ জন যারা ক্যাম্পের বাইরে আছেন তাদের অধিকাংশ পশ্চিমবঙ্গে। সেখানে ১৫১, ৪০০ জন, আসামে ৭, ৭০০ জন, ও ত্রিপুরায় ১০, ০০০ জন বিভিন্য আত্মিয়স্বজনের বাসায়। উদবাস্তুর সংখ্যা সরকারের জন্যে আসলে কম কি না, একজন তা জানতে চাইলে খাদিল্কার তা অস্বীকার করেন। ত্রান বিতরন ত্বরান্বিত করতে কলকাতায় একজন অতিরিক্ত সচিবের অধিনে মন্ত্রালয়ের বিশেষ শাখা স্থাপন করা হয়েছে। উক্ত শাখার অধিনে আসাম ও ত্রিপুরায় লিয়াজো অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অন্য আরেক প্রশ্নের জবাবে খাদিল্কার বলেন যে সরকার ত্রানকার্যে অবাঞ্ছিত সংঘটনের অযাচিত প্রভাব ব্যহত করতে সতর্ক থাকবে। সব সেচ্ছাসেবি সংগঠনদের তাদের ত্রান কার্য জাতিয় পর্যায়ে স্থাপিত বাংলাদেশ সহায়তা কমিটির অধিনে পরিচালনের জন্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

শরনার্থীর ছদ্দবেশে গুপ্তচর প্রবেশ থেকাতে সরকার কি করছে এই প্রশ্নের জবাবে খাদিল্কার বলেন যে তারা যারা আসছেন তাদের যাচাই করার সর্বত চেষ্টা করছেন। খাদিল্কার বলেন যে রাজ্য সরকার এইপরযন্ত ৫৫টি অভ্যর্থনা ও ত্রানকেন্দ্র স্থাপন করেছে। অভ্যর্থনাম কেন্দ্রের সংখ্যা যথাযথ, তবে দরকার হলে এর সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে। মৌসুমি ঋতু চলাকালিন সময়ে শরনার্থিদের সহায়তার জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।