একনজরে যুদ্ধ পরিস্থিতি
(নিজস্ব বার্তা পরিবেশক) জঙ্গীশাহী ভারতের পশ্চিম ও পূর্ব উভয় রণাঙ্গনে জোর রণ-সজ্জা চালাইয়া যাইতেছে ও অহরহ গােলাগুলী চালাইয়া উস্কানী দিয়া চলিয়াছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি গান্ধী বলেন যে, সীমান্তের পরিস্থিতি গুরুতর। কিন্তু ভারত যুদ্ধ। এড়াইতে চাহে। কারণ, বাংলাদেশ প্রশ্নকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই পাকিস্তান এই যুদ্ধ বাধাইতেছে। তবে, পাকিস্তান যদি ভারত আক্রমণ করেই থাকে, তাহা হইলে উহার সমুচিত জবাব দেওয়ার জন্য ভারতও প্রস্তুত হইয়া রহিয়াছে। তিনি ইয়াহিয়ার সহিত আলােচনায় বসার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন, যে হাত ঘুসি পাকাইয়া রহিয়াছে, সে হাতের সহিত করমর্দন চলেনা। ভারতের প্রতিরামন্ত্রী শ্রী জগজীবন রাম ঘােষণা করিয়াছেন, আমরাও প্রস্তুত। যুদ্ধ লাগিলে সে যুদ্ধ পশ্চিম পাকিস্তানের ভূখণ্ডেই হইবে। আর যুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানের যে এলাকা দখল হইবে, সেখান হইতে ভারতীয় সৈন্যরা আর ফিরিয়া যাইবে না। তিনি বলেন, আমরা লাহাের ও শিয়ালকোট পর্যন্ত যাইব। ভারতের প্রতিরক্ষা উৎপাদন দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী ভি. সি শুক্লা বলিয়াছেন, আমাদের জোয়ানরা পাকিস্তানী হুমকি পর্যদস্ত করিতে প্রস্তুত হইয়া রহিয়াছে। বিভিন্ন খবরে জানা যাইতেছে যে, লাহাের ও শিয়ালকোটসহ পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন সীমান্তে দারুণ আতঙ্ক দেখা দিয়াছে। বেসামরিক লােকজন ঘরবাড়ী ছাড়িয়া নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছুটাছুটি করিতেছে। পিণ্ডি, লাহাের, করাচী প্রভৃতি শহরের দেওয়ালে দেওয়ালে ও গাড়ীতে “ভারত ধ্বংস কর” শীর্ষক ছাপান পােস্টার লাগান হইয়াছে ও চরম যুদ্ধোন্মদনার সৃষ্টি করা হইতেছে। ভারতের সীমান্ত শহরগুলিতে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইতেছে। ভারত আমেরিকার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করিয়াছে। আমেরিকা তাহার প্রস্তাবে ভারতকেই সংযত হওয়ার অনুরােধ করিয়াছিল। ভারত ইহার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়া বলিয়াছে, ভারত এতদিন যে সংযম দেখাইয়া আসিতেছে, উহার স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। ভারত আরও বলিয়াছে, আমেরিকার সীমান্তে এমন কারবার চলিলে আমেরিকা কি করিত? বলা বাহুল্য, আমেরিকা আজ পর্যন্ত এই দাঁত ভাঙ্গা জবাবের কোন জবাব দিতে পারে নাই ।
নতুন বাংলা ১: ১১
২৮ অক্টোবর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯