You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.13 | ‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এর সাথে পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিংহের সাক্ষাৎকার | ‘দি নিউইয়র্ক টাইমস’ - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
৭৫। ‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এর সাথে পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিংহের সাক্ষাৎকার ‘দি নিউইয়র্ক টাইমস’ ১৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১

দি নিউইয়র্ক টাইমসে পররাষ্ট্র মন্ত্রী সরদার শরণ সিংহের সাক্ষাৎকার
ডিসেম্বর ১২, ১৯৭১

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজ (১২ ডিসেম্বর) এক সাক্ষাৎকারে বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তান নিয়ে তাঁর সরকারের কোন পরিকল্পনা নেই এবং পাকিস্তান ভেঙ্গে দিতে চায় না।

শরণ সিংহ, লম্বা দাঁড়িওয়ালা লোক, সাদা পাগড়ি ও নেহরু জ্যাকেট পড়ে ছিলেন। তিনি বলেন যে ভারত কখনই সোভিয়েত ইউনিয়ন কিংবা অন্য কোন শক্তির অধীন ছিল না। চীনের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় থাকবে বলে ভারত আশা রাখে, তিনি যোগ করেন।

মি শরণ সিংহ, কার্লাইল হোটেলে প্রশ্নোত্তরকালে তাকে প্রশ্ন করা হয় যে, পূর্ব পাকিস্তানের ভেঙ্গে স্বাধীন বাংলাদেশ পাকিস্তানের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হবে বলে তিনি মনে করেন কিনা। তিনি উত্তর দেনঃ

“আমি একে পূর্ব পাকিস্তানের ভাঙ্গন বলব না। ভুগোলিকভাবে, দুটি অংশ ১০০০ মাইলেরও বেশি দূরে। নৃতাত্ত্বিকভাবে এবং ভাষাগতভাবে, তারা সম্পূর্ণরূপে আলাদা। পাকিস্তানের কোন ভয়ের কারণ আমি দেখছি না। যদি তাঁদের স্ব-নির্ধারণী কথা বলার অধিকারের থেকে থাকে, বাংলাদেশের মানুষ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে সফল। ”

স্ব-অস্বীকৃতি আইন
“আমরা চাই না পাকিস্তান ধ্বংস হোক। ১৯৪৭ সালের ভারত ভাগে সম্মত নেতৃত্ব এখনও বলবৎ আছে।”

যখন ভারত বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মি শরণ সিংহ যোগ করেন যে, “আমরা ভারতের চিন্তা পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করেছি, বাংলাদেশকে নিয়ে আমাদের কোন আঞ্চলিক নকশা নেই।”

“এটি ছিল একটি আত্ম-অস্বীকৃতি”, তিনি বলেন। “আমরা চাইতাম না বাংলাদেশে কোন আর্মি দখলদারীত্ব কিংবা কোন আঞ্চলিক পরিকল্পনা থাকুক।”

হোয়াট হাউজে ডাকা এক নতুন সেক্রেটারি কাউন্সিল সভায়, উপমহাদেশের যুদ্ধকে পাকিস্তানের আর্মি দ্বারা আক্রমণকৃত “অস্তিত্বের” লড়াই বলে ঘোষণা করার কিছুক্ষণ আগে মি শরণ সিংহ এসব বলেন।

নিরাপত্তা পরিষদে চীনা একা প্রতিনিধি এই অভিযোগ করে তাঁকে উত্তেজিত করে যে, চীনকে আয়ত্বে রাখতে ভারত সোভিয়েত ইউনিয়নের পুতুল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং সে মনে করে যে চীনা হস্তক্ষেপ হুমকির মুখে পড়বে যদি পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়।

“আমি সুনিশ্চিতভাবে এবং খুব পরিষ্কারভাবে বলতে চাই যে, U S S R এর উপর ভারতের নির্ভরশীলতা নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকতে পারে না। ”

“স্বাধীনতার শুরু থেকে, ভারত, তার পরিচয় প্রতিষ্ঠা করেছে এবং ভারতীয় ব্যক্তিত্ব সব সময় যেকোন শক্তির পুতুল হওয়াকে প্রত্যাখান করে এবং সবসময় প্রত্যাখান করবে। আমাদের কাজ করার নিজস্ব পন্থা এবং নিজস্ব উদ্দেশ্য আছে।”

প্রতিবেশীদের মধ্যকার দূরত্ব
“ভারত এবং চীন প্রতিবেশী রাষ্ট্র। নিকট অতীতে, এবং বর্তমান সময়ে, দূরত্ব রয়েছে। প্রতিবেশীদের মধ্যে দূরত্ব থাকাটা অপ্রচলিত নয়। আমরা বিশ্বাস করি যে চীনের জনগণ এবং ভারতের জনগন ভাল প্রতিবেশী হিসেবে বসবাস করতে চায় এবং ওই সময়টা দূরে নয় যখন সম্পর্কগুলো স্বাভাবিক হবে।”

“চলমান স্বৈরশাসনে পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক আইন বলবৎ এবং নির্বাচনের ফল মেনে না নেয়া বর্তমান পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এটাই, অপরিণামদর্শী রাষ্ট্র, যা বাংলাদেশের জনগণকে একতাবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীতা সৃষ্টি করেছে যা চরম ভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের উত্থানে ভূমিকা রাখে। ” তিনি উত্তর করেন।

আমি বুঝি না কেন গণপ্রজাতন্ত্রী চীন একটা বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে যা, উৎপত্তিগত এবং ঐতিহাসিকভাবে, পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের মধ্যকার সামরিক শাসনের বিষয়। আমরা ১০ মিলিয়নের মত উদ্বাস্তুকে ভারতের মাটিতে জায়গা করে দিয়েছি।

“আমি বুঝি না কিভাবে এবং কেন গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সরকার এই পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করার প্রয়োজনীতা বোধ করে।”

সংকটের সময়ের যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলতে গিয়ে মি শরণ সিংহ বলেন,

“আমরা বিশ্বাস করি যে যুক্তরাষ্ট্র তার চরমভাবে প্রভাবিত রাষ্ট্রপতিকে(আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান) নিয়ে তাদের প্রভাব প্রয়োগের মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক নেতাদের এবং বাংলাদেশের জনগণের এক পুনর্মিলন নিয়ে আসতে পারবে। যদি যুক্তরাষ্ট্র প্রভাব প্রয়োগ করে তাহলে পাকিস্তানের এই সংকট সমাধানে সহায়ক হবে। ”

বিলম্বের অভিযোগ অস্বীকার

ভারতের নিরাপত্তা পরিষদ এবং সাধারণ সভা তার বাহিনী দেয়ার মাধ্যমে বিলম্বিত আক্রমণে পূর্ব পাকিস্তানে জয় অর্জন করতে চায় বলে কিছু প্রতিনিধির করা অভিযোগ পররাষ্ট্রমন্ত্রী শক্তভাবে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “আমাদের নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকতে পারে না। আমরা কখনই যুদ্ধ শুরু করিনি। কখনই যুদ্ধের ঘোষণা দেইনি। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় এটি পরিবর্তিত হচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণ ছাড়া স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ অবস্থার বিবেচনা করার সম্ভাবনা ব্যর্থ হবে। এই বিবেচনায় বলা যায়, বাংলাদেশে কি ঘটছে তা জানতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ব্যর্থ হয়েছে।”

“পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী জেনারেদের সংঘর্ষের শেষ করতে হবে এবং বাংলাদেশ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের বাহিনী সরিয়ে নেয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে করে, বাংলাদেশের জনগণ তাঁদের ভবিষ্যৎ তাঁদের নিজের হাতে নিতে পারে। এটাই আসল বিষয়। ”