শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৭৪। দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ভাষণ | ইয়ার্স অফ এন্ডেভার | ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ |
কেন এই যুদ্ধ
আমি আপনাদের কাছে আসতে পেরে খুবই আনন্দিত। আপনাদের উদ্যম দেখতে পেরে এবং এখানে কথা বলতে আসতে পেরে ভালো লাগছে। যদিও নতুন করে আমার কিছু বলার নেই। আমরা কি জন্য যুদ্ধ করছি? আমরা শুধুমাত্র আমাদের অঞ্চল এবং সম্মানের জন্য না বরং কিন্তু কিছু উচ্চ আদর্শের জন্য যুদ্ধ করছি। আমি খুশি যে বর্তমান যুদ্ধে শুধুমাত্র আমাদের সাহসী অফিসার ও জওয়ান নয়, সামগ্রিকভাবে জনগণ, ছাত্রসহ সবাই অংশ নিচ্ছেন। আমি আপনাদের থেকে জওয়ানদের জন্য পাওয়া ১০১০০০ টাকার জন্য কৃতজ্ঞ। আমি নিশ্চিত যে আপনারা জাতি পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন।
শিক্ষার্থীরা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যদি ছাত্রসমাজ মুক্তির জন্য আমাদের সংগ্রামের পুরোভাগে না থাকতেন, তাহলে আমরা সাফল্য অর্জন করতাম না। বিগত বহু বছর ধরে, আমরা যে স্বাধীনতা শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি। সদা জাগ্রত থাকার দরুণ স্বাধীনতা অর্জিত হয়। আমরা সবসময় আমাদের একতা জোরদার করেছি এবং দৃঢ়তা ও সাহসের সঙ্গে তা করেছি। এছাড়াও, আমাদের এই কাজ মানুষের কাছে অর্থপূর্ণ হতে হবে।
আমরা অনেক অর্জন করেছি তবু আমাদের ভাগ্য এখনো আমাদের স্বপ্নের মত রূপ লাভ করেনি। দারিদ্র্য ও পশ্চাৎপদতা সাধারণ মানুষের স্বাধীনতার ফল পাবার পথে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। আমাদের জনগণ বিনামূল্যে নাগরিকের সব অধিকার ভোগ করতে সক্ষম হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করার সুযোগ আছে। এই দেশের অনেক মানুষ এখনও এই বিশেষ সুবিধা থেকে বঞ্চিত আছে। আমাদের স্বাধীনতা অসম্পূর্ণ থাকবে যতদিন প্রতিটি গ্রামে উন্নয়নের জন্য পূর্ণ সুযোগ থাকবে – হোক সেটা সমতল, পাহাড় বা মরুভূমিতে।
আমরা ক্রমাগত যে পথ নিজেদের জন্য বেছে নিয়েছি তার জন্য গর্বিত। আমাদের এই পথে অনেক দুর্বলতা, ভুল এবং বাঁধা এসেছে। আমাদের বিরুদ্ধে আগ্রাসন ছিল। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছিল। এই সব সত্ত্বেও এগিয়ে গেছি। একটি মুহূর্ত অবকাশ ছিল না। তোমরা আনুগত্যের নিশ্চয়তা দাও তাহলেই আমি জানি যে ছাত্রসমাজ এই দেশের সামনের সকল বিপদের জন্য প্রস্তুত হবে। আমাদের অবশ্যই জানতে হবে যে নিছক উদ্দীপনাই যথেষ্ট নয়। আমাদের আদর্শ ও মূলনীতির জন্য যুদ্ধ হয় যা এই দেশের ঐক্যের ভিত্তি।
আমরা যুদ্ধে যেতে চাই না। এটা সবাই জানে যে বিশ্বের শান্তির জন্য আমরা ২৫ বছর ধরে চেষ্টা করছি। এবং আমরা অবশ্যই বিশ্বের কিছু অঞ্চলে শান্তি আনার ব্যাপারে ভূমিকা রেখেছি। কিন্তু, শান্তি কি? শান্তি মানে এই নয় যে একটি প্রতিবেশী দেশের লোকদের অত্যাচার দেখেও আমরা শান্ত থাকব। যে যুদ্ধ আজ আমাদের সীমানার কাছে হচ্ছে এবং বাংলাদেশে – তাতে আমাদের কোন হাত নেই। এমনকি আমরা জানতাম না যে সেখানে একটি যুদ্ধ হতে চলছে।
আমরা খুশি ছিলাম যে পাকিস্তান সামরিক শাসনের অনেক বছর পর একটি সাধারণ নির্বাচন হয়েছে। একটি নির্দিষ্ট দলের নেতা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। আমরা নির্বাচনের সঙ্গে বা নেতাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলাম না। কিন্তু আমরা কি জানি যে যারা জয়ী হয়েছিল, ভারতের পক্ষ থেকে তাদের সাথে বন্ধুত্ব চেয়েছিলাম। আমরা কখনোই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে যুদ্ধ চাইনা। যাইহোক, কিছু ঝামেলা আছে, যেটা আমাদের ওপর প্রভাব ফেলে। আমরা খুশি ছিলাম যে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সেখানে একটি সরকার হবে যারা আমাদের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ হবে। এবং আমরা একসঙ্গে আমাদের সমস্যা সমাধান করব। মানুষের দারিদ্র্য বিমোচন ও দেশের উন্নতির জন্য।
আমাদেরও একটি সাধারণ নির্বাচন হয়েছিল। এবং আমরা একটি নতুন সরকার গঠন করি। আমাদের প্রতিবেশী দেশের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল। কিন্তু তাদের নিজস্ব সরকার গঠন করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। এই পর্যায়ে যুদ্ধ সত্যিই শুরু হবার উপক্রম হল।
আমি বর্তমান ঝামেলাকে ঐতিহাসিক পটভূমি দিয়ে বুঝতে চাই। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং আমরা আশা করেছিলাম যে আলোচনা ফলপ্রসূ হবে এবং একটি জনপ্রিয় সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। যদিও আমরা জেনেছি যে সমঝোতার নামে চাতুর্য করে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে বিশাল পরিমাণ সেনা আনা হচ্ছিল। এই বাহিনী ২৫ মার্চ রাতে নিরস্ত্র মানুষের উপর বড় হামলা চালায়। আওয়ামী লীগ নেতারা আমাদের ২৪ তারিখ বলেছিল যে তারা আশা করে যে সমঝোতা ফলপ্রসূ হবে। কিন্তু তাদের উপর অতর্কিত আক্রমণ এর জন্য তারা প্রস্তুত ছিল না। একই ধরণের আক্রমণের চিন্তা তারা করেছিল যখন ভারত ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলনে ছিল। কিন্তু তারা সে সুযোগ পায়নি। তারা বন্দুক ও মর্টার দিয়ে হামলা চালায়। তাদের মহান নেতাকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে ‘অভিযুক্ত করা হয়। ফলে স্বাধীনতা চাওয়া ছাড়া তাদের আর কোন বিকল্প নেই।
বাংলাদেশে নৃশংসতার জন্য সেখানকার মানুষের জন্য আমাদের গভীর সমবেদনা আছে – যদিও পাক সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে ক্রোধ রয়েছে তবু আমরা চুপ করে রইলাম। আমরা একটি শব্দও উচ্চারণ করিনি বা একটি পদক্ষেপ নেইনি যাতে বাংলাদেশ ও পশ্চিম পাকিস্তানের নেতাদের মধ্যে একটি উপনিবেশিক মনোভাব আসতে পারে। তবে পাকিস্তান যখন বাংলাদেশের জনগণ, আবালবৃদ্ধ, নারী ও শিশু দের নির্যাতন করা শুরু করে এবং বন্যার মত আমাদের দেশে নিরস্ত্র অসহায় মানুষদের প্রবেশ শুরু হয় তখন এটি শীঘ্রই আমাদের জন্য একটি বড় বোঝা হয়ে ওঠে। এই সব করার পর এটা আর পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার থাকল না।
এই পর্যায়ে আমরা বলেছিলাম যে কি বাংলাদেশে কি ঘটছে তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন এবং যদিও এ সম্পর্কে কথা বলার কোন অধিকার আমাদের ছিলোনা। এটা সিদ্ধান্ত নিবে বাংলাদেশের জনগণ ও তাদের নেতারা। আমরা বলেছিলাম যে ভারত শুধু গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবে তাদের সমস্যার জন্য আমাদের কি প্রভাব পড়বে সেটি নিয়ে। এটি অবশ্যই আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আমরা আমাদের চোখ বন্ধ করে রাখতে পারিনা। আমরা এটা পুরো বিশ্বের কাছে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করেছি এবং বুঝাতে পেরেছি যে দুই দেশ যুদ্ধের কাছাকাছি এগিয়ে যাচ্ছে। যদি বিশ্বের দেশগুলি যুদ্ধ বন্ধ করতে চায় তাহলে এখনো তাদের সময় আছে – তারা তা পারে। তারা বাংলাদেশের জনগণের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করতে পারে।
আমরা জানি যে, এটা হঠাৎ করে করা যাবেনা। এবং আমরা বলি নি যে এটা অবিলম্বে সম্পন্ন করা উচিত। আমরা শুধুমাত্র বলেছি তাদের একটি বা দুটি ধাপ গ্রহণ করা উচিত। তাতে বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্খার পূরণ হতে পারে। এবং তা নিশ্চিত করার জন্য তাদের ইচ্ছা শোনা গেল। এমন পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে বাংলাদেশের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি হতে পারে। ভুয়া নির্বাচন অনুষ্ঠান হবে নির্ধারিত ছিল। এবং সর্বশেষে, আলোচনার কিছু বিষয় সাজানো হয় যা বাংলাদেশের জনগণ ভেবেছিল যে হয়ত হবে।
এই অবস্থায় একটি আন্দোলনের পরিবেশ ছিল। আমাদের বলা হয়েছিল বেসামরিক শাসন প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। আমরা স্পষ্ট বিশ্বাস করেছি যে আমরা এমন কোন সরকার মেনে নেবনা যারা নির্বাচনে হেরেছে। বাংলাদেশের মানুষও এমনটা মেনে নেবেনা।
আমরা কখনোই বলিনি যে আমরা পুরো বিষয়টা চেয়েছিলাম। আমরা শুধুমাত্র বাস্তব পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছি। আমরা সচেতন করেছিলাম যে পাকিস্তানের একটি নির্দিষ্ট বাহিনী বাংলাদেশে অন্যায়ভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যখন কোন মানুষ মুক্তির জন্য সংগ্রাম করে, নিজের প্রাণ উতসর্গ করতে প্রসূত থাকে, তাদের সংগ্রাম সফল হতে বাধ্য। এই সব ব্যাপারে বিশ্বজুড়ে মানুষের অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমরা বারবার যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলির কাছে বাস্তব পরিস্থিতির সন্ধান করতে বলেছি। স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম দমন করা সম্ভব না হলে ভবিষ্যতে অন্য পদক্ষেপ বিবেচনা করা হবে। কারণ বাংলাদেশ এখন আমাদের সীমানায়। কাজেই সীমানার কোন ঘটনা আমাদের উপর প্রভাব ফেলতেই পারে।
প্রতিটি দেশের তার নিজস্ব আদর্শ ও স্বার্থ রয়েছে। আমাদের আদর্শ ও দেশের স্বার্থ একই। আমরা শান্তি চাই, আমরা শান্তি পাব। এমনকি যদিও আমাদের শান্তির জন্য অভেদ্য লড়াই করতে হয়। এর জন্যই আজ যুদ্ধ চলছে। যতক্ষণ না বাংলাদেশের পরিস্থিতি শান্ত হয় ততক্ষণ সেখানে বা আমাদের দেশের পূর্বাঞ্চলে শান্তি আসবেনা।
বর্তমান অবস্থার কারণ পরীক্ষা করা যাক। পাকিস্তান একটি ভুল ভিত্তির ওপর গড়ে উঠেছে। যথা, তারা এক ধর্মের ভিত্তিতে একটি জাতির গঠন করতে চায়। বিশ্বে এমন কোন দেশ নাই যেখানে শুধু এক ধর্মের মানুষ রয়েছে। বস্তুত, সব দেশই আজ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ আছে এবং তাদের সমতা ও ন্যায়বিচার দেয়া হয়। পাকিস্তান গঠনের ভিত্তিতেই এই ভুলটা ছিল।
এখানে এমন কিছু লোক আছে যারা মনে করে পাকিস্তান চূর্ণ করার এটাই শেষ সুযোগ। যদিও এটি কখনই সরকারের নীতি না। আমি নিশ্চিত যে এটা দেশের মানুষের মতামত নয়। আমরা পাকিস্তানের অস্তিত্ব চাই। কিন্তু এটি সম্ভব শুধুমাত্র যদি সঠিক পথ অনুসরণ করা হয়। যদি পাকিস্তান নিজেই নিজের ধ্বংস ডেকে আনে তাহলে বাইরের কারো কিছু করার নেই।
বড় ক্ষমতাশালি দেশগুলো পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শক্তি বাড়ানোর ব্যাপারে সাহায্য করেছে কিন্তু তারা সেখানকার মানুষের জন্য কিছু করতে পারেনি। তারা যে সাহায্য দিয়েছে তা মানুষের কাছে কখনও পৌঁছেনি। শাসকরাই সব নিয়ে গেছে। ফলে পাকিস্তানের শক্তি সম্পর্কে মিথ্যা ধারনা হয়েছে – আসলে তাদের ভিত্তি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।
অনেক দেশ আমাদের ঐক্য নিয়ে উপহাস করেছে। তারা বলছে যে আমাদের আছে অনেক ভাষা এবং অনেক ধর্ম। এখানে কীভাবে একতা হয়। তারা বলেছিল কিভাবে নিরক্ষর এবং দরিদ্র মানুষের একটি দেশে গণতন্ত্র হবে? পশ্চিমা মন্তব্যকারীরা অবাক হল এটা দেখে যে কিভাবে ভারত এত বৈচিত্র্যের মুখে তাদের ঐক্য বজায় রাখতে পারল? যাইহোক, আমরা আমাদের পথ অনুসরণ করব। কারণ আমরা নিশ্চিত যে এটা সঠিক পথ। এবং যারা আমাদের সমালোচনা করবে তাদের অতীতের মত বহুবার আমরা প্রমাণিত করে দেব আমরা কি ছিলাম। এটা দু: খজনক যে তারা ভারত এবং তার সাহসী মানুষদের বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিল।
আমাদের দেশ অনেক পুরনো – আমাদের সভ্যতা কয়েক শতাব্দী পুরনো। এবং আমরা সেই সময় থেকে নীতি অনুসরণ করার চেষ্টা করি। মানুষ হিসেবে অবশ্যই সর্বোচ্চ আদর্শের অনুসরণ করার চেষ্টা করেছি। আমরা এও জানি যে, আমাদের সমাজ জীবনে সবসময় তা প্রতিফলিত হয় না। যাইহোক, আমরা চেষ্টা করি, এবং আমরা আদর্শ সমুন্নত রাখার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাব। আমরা আমাদের স্বপ্নের দেশ গড়ে তুলতে চেষ্টা করে যাব এবং এই প্রচেষ্টা আমাদের মানুষ যারা বিভিন্ন ধর্মের বিভিন্ন ভাষার এবং বিভিন্ন মতামতের – এদের সবাই মেনে চলব। তাই যতদিন আমরা এই আদর্শ অনুধাবন করব এবং আমাদের মনোনীত পথ মেনে চলব ততদিন কোন কিছুই আমাদের ঐক্য চূর্ণবিচূর্ণ বা আমাদের দুর্বল করে দিতে পারবেনা। এটাই বাইরের মানুষ বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে।
ছোট দেশ যেখানে মানুষ একাধিক ভাষায় কথা বলে – আমরা দেখেছি সেখানে অন্তহীন যুদ্ধ চলছে। ভাষা প্রশ্নে আমাদেরও প্রশ্ন জাগে কিন্তু বাইরে মানুষ বুঝতে অক্ষম যে এখানে মানুষ অনেক ভাষায়- প্রায় ষোলটি – কথা বললেও ঐক্য বজায় আছে। যাইহোক, এতে আমাদের কোন সমস্যাই হচ্ছেনা।
স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই আমরা দেশ গঠনে নিযুক্ত আছি। এটি একটি দু: খের বিষয় যে আমরা অনেক বছর দাসে পরিণত হয়ে ছিলাম। আমাদিগের এই মহান দেশ, তার সভ্যতা বিদেশী আধিপত্যের দ্বারা চূর্ণ হয়েছে। আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বৃহৎ পরিসরে নিষ্পেষিত হয়েছিল – যাতে করে আমরা নিজেদের দুর্বল ভাবতে বসেছিলাম। এবং আমরা অন্য দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পারছিলাম না। দুর্ভাগ্যবশত, এই ভয় কিছু মানুষের হৃদয়ের মধ্যে বদ্ধ হয়ে ছিল। তারা বিদেশী পণ্য ক্রয় করতেন এই চিন্তায় যে সেগুলোর মান উচ্চতর। তা সত্ত্বেও বিদেশীরা আমাদের দেশের কিছু ক্রয় করতে পেরে আনন্দিত হত। বিদেশী দের অধীনে থাকতে থাকতে আমাদের মধ্যে হীনমন্যতা আশ্রয় করে নিয়েছিল। আমরা কি তার বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করিনি?
এটা সত্য যে, আমরা অনেক কিছুতে পিছিয়ে আছি। তার কারণ আমরা এগিয়ে যাওয়ার জন্য সুযোগ পাইনি। একটা সময় ছিল যখন ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে শিল্প বিপ্লব ঘটে। আমরা ক্রীতদাস ছিলাম। আমরা পিছনে ছিলাম। আমাদের প্রশাসকদের এই দেশে কোন প্রগতিশীল শক্তি সৃষ্টি হোক তা ভালো লাগে নি। তারা চেয়েছে যাতে আমরা নিজেদের উপর বিশ্বাস দুর্বল করে রাখি কারণ তারা জানত য়ে এটাই আমাদের অনগ্রসর রাখার একমাত্র উপায় ছিল। কিন্তু ইতিহাসে এমন একটি সময় আসে যখন একটি জাতি ঘুরে দাঁড়ায়। বিদেশী শাসনের সময়কালে, এই ধরনের কিছু একটা ঘটেছে। এটা আমাদের মানুষকে শক্তি দিয়েছে এবং তারা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল।
ব্রিটিশ শাসকরা আমাদের সংস্কৃতি চাপা দেবার জন্য আমাদের ইংরেজি ভাষা শেখার জন্য আমাদের বাধ্য করেছে। আজ ইংরেজি অধ্যয়নের বিরোধিতা করা উচিত নয় কারণ এই ভাষা নতুন নতুন আইডিয়ার জন্য একটি বাহন হিসেবে কাজ করে এবং সত্যিকার অর্থে আমাদের স্বাধীনতার জন্য আমাদের সংগ্রাম করাতে উদ্বুদ্ধ করেছে। আমরা ইংরেজি শিখেছি এবং যারা বিদেশে গিয়েছে তারা জেনেছে স্বাধীনতা কি এবং দেখিয়েছে কিভাবে আমরা তা অর্জন করতে পারে। তারা শিখেছে আমরা কিভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারি এবং আমাদের নিজেদের দেশে একটা বিপ্লব আনতে পারি। এর আগে, আমাদের মানুষ এই ভাবে ভাবেনি। কিন্তু ব্রিটেন থেকে আমাদের কাছে এসে আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে এবং ব্রিটিশ শাসনের সংগ্রাম আমাদের সংকল্পকে আরও শক্তিশালী করতে ভূমিকা রেখেছে।
আমি তোমাদের একটি ঘটনা বলব যা আমার এই মুহুর্তে মনে পড়ছে। যখন আমি ইংল্যান্ডে স্কুলে পড়ি এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রীর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তখন স্কুলের প্রধান পরিদর্শক আমাকে আমাদের প্রথম সভায় জিজ্ঞাসা করলেন কেন আমি আমার দেশ এবং বাবা মাকে রেখে এই দেশে এসেছি যেখানকার ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন ছিল? আমার উত্তর ছিল যে আমি এখানকার মানুষকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে জানতে এসেছি যাতে আমি তাদের সাথে আরও ভালো করে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে পারি। ইংরেজি এমন একটি ভাষা যা আমাদের স্বাধীনতার অর্জনের জন্য জোর দিয়েছে। অবশ্য এটি একটি পুরানো গল্প।
আমাদের স্বাধীনতা আবার হুমকির সম্মুখীন। আমাদের অঞ্চল, আমাদের চিন্তাভাবনা ও আদর্শ – ধর্মনিরপেক্ষতা, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি ও আমাদের স্বাধীন চিন্তা – এমনকি আমাদের সংকল্প ও মতামত আজ আগ্রাসনের মুখোমুখি।
কিছু জাতি আছে যারা সহ্য করতে পারে না যে ভারত স্বাধীনভাবে তার নিজ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষমতা রাখে। তারা অন্যান্য জাতিকে নির্দেশ দেয় একটি নির্দিষ্ট আচরণ করার এবং তারা তা পালন করে। আমরা তাদের বন্ধুত্বকে স্বাগত জানাই এবং বলি যে, আমরা কৃতজ্ঞ জন্য সব ধরনের সাহায্যের জন্য। কিন্তু যদি এই বন্ধুত্ব, বা সাহায্যের সাথে স্বার্থ জড়িত থাকে যা আমাদের স্বাধীনতা এবং আমাদের স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করে, সেক্ষেত্রে আমরা সাহায্যের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেই। আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। এটা মনে হয় তারা বুঝতে পারেনি যে আমরা যা বলি তা করি। এবং আমরা আমাদের স্বাধীন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে বদ্ধপরিকর।
বিদেশে ভারতের সমালোচক অনেক। জাতিসংঘের একটি বড় সংখ্যা আমাদের বিরুদ্ধে ভোট দেয়। তারা বলে যে যুদ্ধ একটি খুব খারাপ জিনিস এবং যখন এটা বন্ধ করা হবে তখন কিছু বন্দোবস্ত পৌঁছে দেয়া হবে। আমরা আট মাসের জন্য একটি নিষ্পত্তির জন্য অপেক্ষা করছি। আমি কিছু কিছু নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করি এবং তাদের এই পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাই।
একবার আমাকে একটি বিদেশী দেশে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল এটি নিষ্পত্তির জন্য কত সময় লাগতে পারে। আমাদের রাষ্ট্রদূত বলেন, “মাত্র কয়েক সপ্তাহ”। এরপর তারা বলেন যে যদি আমরা কয়েক মাসের জন্য অপেক্ষা করি তাহলে সম্ভব। আমাদের রাষ্ট্রদূত বলেন যে অবস্থা মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে একটি বিশেষ মোড় নেবে। বেশ কয়েক সপ্তাহ এবং মাস পেরিয়ে গেছে কিন্তু তারা কিছুই করেনি। বিদেশের কিছু লোক বলে যে আমি আমার আগের বিবৃতি মেনে চলি না, বা আমি তাদের যুদ্ধের সম্ভাবনা বিরুদ্ধে সতর্ক করা করিনি। আমি জানতাম না একটি যুদ্ধ সৃষ্টি হবে। কিন্তু আমি খুব পরিষ্কারভাবে বিবৃত করেছিলাম যে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে খারাপ দিকে মোড় নিচ্ছে। যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তাহলে যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব নাও হতে পারে।
আমি তাদের বললাম যে, তারা যদি যুদ্ধ প্রতিরোধ করতে চায় তাহলে তারা পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এবং সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করুক। যদি এই কাজ করেন তাহলে যুদ্ধ হবেনা। অন্যথায়, যুদ্ধ এড়ানো কঠিন হবে। তারা একটি সমগ্র জাতিকে ধ্বংস করে যাচ্ছে যা ভারত সহ্য করবেনা। এটি বিশুদ্ধরূপে অভ্যন্তরীণ ব্যাপার হিসাবে গণ্য করা উচিত। কিন্তু বাংলাদেশে যে দমন চলছে তা একটি বড় সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতির এইভাবে ঘটানো হয়েছিল যে তা আমাদের মুখের সামনে চলে এসেছে এবং আমাদের না জড়িয়ে কোন উপায় নেই।
যদি আমরা যুদ্ধ শুরু করতে চাই আমাদের কিছু নেতা রাজধানীতে থাকতেন। আমি কলকাতা, যেখানে লক্ষ লোকের একটি খুব সভা ছিল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পাটনা এবং বেঙ্গালুরু থেকে ফিরছিলেন। অর্থমন্ত্রী পুনা ছিল এবং এমনকি জানি যে তিনি অবসরের ছিলেন কিনা বা অন্যত্র যাচ্ছেন কিনা। ৫ টা ৪৫ মিনিটে আমাদের পাকিস্তানি আগ্রাসন সম্পর্কে জানানো হয়। আমরা বিকাল ৫ টায় শুরু করেছিলাম। তখন দ্রুত আমি রাজধানীতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করি। আমরা যুদ্ধ শুরু করিনি। এমনকি, তবুও কিছু দেশ বলেছে যে ভারত আগ্রাসী ছিল।
আমরা স্বাভাবিকভাবেই গভীরভাবে আহত হয়েছি যে যারা গণতন্ত্রের পতাকাবাহী নামে মাত্র পরিচিত তারাই চুপ করে ছিলেন। একটি দেশ গণতান্ত্রিক ফর্মে চলবে নাকি সামরিক শাসনের অধীনে চলবে সেটা নিয়ে তাদের কোন চিন্তাই ছিলোনা। তারা বড় আদর্শের কথা বলে। কিন্তু যখন সময় আসে, তারা তা সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে। আমি জানি না তারা তাদের নিজেদের স্বার্থে বা অন্য কারো স্বার্থে তাই করেছিল কিনা। আমি তাদের বলেছি তারা যদি বাংলাদেশের ব্যাপারে সজাগ না হন, অথবা আমাদের নিজস্ব অসুবিধা সম্পর্কে – তাহলে তারা যা ইচ্ছা করতে পারেন।
এছাড়াও আমি আগেই বলেছি যে, তারা যদি তাদের স্বার্থ চিন্তা করেন তাহলে হয়ত বাংলাদেশ চূর্ণ হয়ে গেলেও তাদের কিছু যায় আসেনা। বাংলাদেশের নাশকতা পাকিস্তানকে শক্তিশালী করতে পারে না, বরং দুর্বল করে দেবে। অনেক দেশের সশস্ত্র বাহিনী সেখানে যেতে পারে কিন্তু যতক্ষণ মানুষ নৃশংসতার শিকার হচ্ছেন ততক্ষণ সেই জাতি কখনো শক্তিশালী জাতি হিসেবে গড়ে উঠতে পারেনা।
আজ আমরা পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি না – যারা নিপীড়িত। তাদের কণ্ঠস্বর শোনা যায় না এবং তারা অন্যরা কি বলে তাও শুনতে পায়না। তারা জানে না বাংলাদেশে ঘটছে। এমনকি করাচির মানুষ বেলুচিস্থান বা উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে কি ঘটছে তাও জানেনা। সেখানে মানুষ দরিদ্র। তাদের কাছে সরকারের সাহায্য পৌঁছায় না। কোনো ক্ষেত্রেই এই সাহায্যে উন্নয়ন কাজ করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে না। বিশ্বের দেশগুলি এই সরকারকে সাহায্য করছে। আমি পাকিস্তানের জনগণ ও সশস্ত্র বাহিনীকে জিজ্ঞাসা করতে চাই কেন তারা একটি সরকারের পক্ষে যুদ্ধ করছে যে তাদের স্বার্থ দেখছেনা? কেন তারা এমন যুদ্ধ করছে যা তাদের দুর্বল করে দিচ্ছে?
এখন আমরা যুদ্ধে লিপ্ত। জয় আমাদের প্রথম প্রচেষ্টা। একটি মুহূর্ত আমি আস্থা হারাইনা। আমাদের বিজয় হবেই। কারণ আমাদের সেনাবাহিনী শক্তিশালী এবং সাহসী। আমাদের যখন প্রথম হামলা চালানো হয়, তখন আমাদের সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তানের অনুরূপ ছিল। তারা তাদের লোকদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন। কিন্তু ১৯৬২ এর যুদ্ধের পর এবং বিশেষ করে ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পর, মানুষ এবং সশস্ত্র বাহিনী একে অপরের খুব ঘনিষ্ঠ করিয়েছি। সেনাবাহিনী জানে দেশের জনগণ কি করছে। তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা কি কি এবং তারা কিভাবে একটি ভাল জীবন নিশ্চিত করার জন্য সমাধান করতে পারে। আমাদের সাহসী সৈন্যরা তাদের বাবা, ভাই-বোন, যারা দেশের অন্যত্র আছে এবং তাদের যাই হোক না কেন এগুলো একে অন্যকে প্রভাবিত করে।
আজ যাদের গায়ে সেনাবাহিনীর পোশাক নেই তারাও এক এক জন সৈন্য। যুদ্ধে সবার হাত যুক্ত আছে। আমি আনন্দিত যে আপনারা রক্ত দান করছেন। আমরা আরও চাইব। কিন্তু সে সময় এখনও আসে নি। আজ আমাদের সেনাবাহিনীর পিছনে একটি শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ জাতি আছে। যা সময়ের সাথে সাথে আরও শক্তিশালী হচ্ছে।
আমরা পূর্ণ বিজয় অর্জন করব যখন বাংলাদেশ সম্পূর্ণ স্বাধীন হবে এবং তার নিজস্ব সরকার থাকবে। এখন তাদের একটি সরকার আছে, কিন্তু সেটাকে সংগঠিত করতে হবে এবং, তারা তাদের সব উদ্বাস্তু ফিরিয়ে নিয়ে যাবে, তাদের কাজ দেয়া হবে, যাতে বাংলাদেশ আবার সোনার বাংলা হয় – তাদের জাতীয় সংগীতে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে।
এগুলো আমাদের করতে হবে। যারা সীমান্তে নাই তারা আমাদের সামাজিক সব দুর্বলতা সরিয়ে ফেলবেন। যাতে যখন যুদ্ধ শেষ হয়, তখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় আগের গতিতে। শুধুমাত্র যুদ্ধ ক্ষেত্র নয় বরং আমাদের নাগরিক জীবনেও বিজয়ী হতে হবে। আমাদের গর্ব করার মতো এগিয়ে চলতে হবে। তোমাদের আর আমার সামনে এখন অনেক কাজ।
আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে আমরা অন্যদের নিন্দা করিনা। যদিও তারা আমাদের বিরোধিতা করে। আমরা বিশ্বকে দেখাতে চাই যে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আছি এবং কেউ আমরা পরিবর্তন করতে পারবে না – এমনকি যদি পুরো বিশ্ব আমাদের বিরোধিতা করে। আমরা সঠিক পথে আছি এবং আমরা প্রমাণ করব যে এটাই সঠিক। আমার বিশ্বাস আমরা আমাদের দীর্ঘ চেষ্টায় সফল হব। এই আমাদের দেশের ঘটনা ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে প্রমাণিত হবে।
আমরা জাতিসংঘকে বৃহত্তর সমর্থন দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। আমরা তার সর্বোচ্চ কমিটিকে সম্মান করি কিন্তু আমরা তার দুর্বলতার ব্যাপারেও সচেতন। তারা অনেক রেজুলেশন গ্রহণ করেছে কিন্তু তার অনেকগুলোই অকার্যকর হয়েছে। জাতিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাদের এই ৫৫ কোটি মানুষ এক থাকবেন কি থাকবেন না।
বিশ্বের কয়েকটি দেশ আছে যেখানে তাদের পুরো জনসংখ্যা জাতি নির্মাণ কাজে নিয়োজিত। যুদ্ধ একটি সাম্প্রতিক ব্যাপার কিন্তু আমাদের প্রধান কাজ আমাদের উন্নয়ন এগিয়ে নেয়া। যদি আমরা শক্তিশালী হয়ে উঠি এবং আমাদের আদর্শ তুলে ধরতে পারি তাহলে শুধুমাত্র ভারত নয় বরং সমগ্র বিশ্বের উপকার হবে। আমরা বিশ্বের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেব। কিন্তু আজ তা শোনা হচ্ছে না।
এটা একটি ক্লান্তিকর বিষয় বাইরে থেকে এত এত পরামর্শ শোনা। এমন লোকদের কাছ থেকেও পরামর্শ আসে যাদের নিজস্ব নীতিই ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে। এমনকি আমাদের নিজের দেশে আমরা মাঝে মাঝে আমাদের সংবাদপত্র ও আমাদের ভাইদের কাছ থেকে পরামর্শ পেতে পারি। তারা এখানে আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, । রেফারেন্স নেওয়ার প্রয়োজন নাই। কারণ এরা তাদের নেতাদের মতামত অনুযায়ী প্রকাশ করে। এমনকি একজন সাধারণ ব্যক্তি তার মতামত পুনর্বিবেচনা করতে অয়ারেন যদি তিনি ভুল বলেন। পরিবর্তে, তাদের নেতাদের আরেকটি মতামত যা সমানভাবে ভুল বলে প্রমাণিত হতে পারে।
আমি আজ তাদের সমালোচনা করতে চাইনা। কারণ আমরা এক আছি। আমরা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। এটা দুটি টি উপায়ে করা যেতে পারে, রক্ত দান করে এবং যেসব সৈন্যরা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের পরিবারকে সাহায্য করে। এটা জানা মানুষের দরকার যে বর্তমানে আমাদের কোন পার্থক্য নেই। আমরা শুধুমাত্র দেশকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করব এবং যা কিছু আমাদের স্বার্থ বিরোধিতা থেকে বিরত থাকব। কখনো কখনো কিছু কিছু জিনিস আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভুল ব্যাখ্যা ও অপব্যবহার হয়। যদিও আমরা কখনো নিজেরা আগে থেকে যুদ্ধে লিপ্ত হইনি। আমরা তাদের সাথে আলাপ করেছিলাম বলে তাঁর মনে করে আমরা যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এই সময় সবার উপলব্ধি করতে হবে যে আমরা যা করেছি দেশের স্বার্থে এবং দৃঢ়ভাবে আমরা তা মেনে চলব।
আমি আপনারদের কাছে কৃতজ্ঞ কারণ আপনারা বলেছেন আপনারা আমার সাথে আছেন। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে সরকার ও জনগণ এক। আমাদের লক্ষ্য মানুষকে শক্তিশালী করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। আমরা জানি যে, গণতন্ত্র দৃঢ় হতে পারে না যদি সেখানে মানুষ আর সরকারের মধ্যে দূরত্ব থাকে।
দুর্বল গণতন্ত্র মানে দুর্বল মানুষ। এবং যদি মানুষ দুর্বল হয় তাহলে সেনাবাহিনী শক্তিশালী হলেও জাতীকে শক্তি দিতে পারেনা। এগুলো আমদের মনে রাখতে হবে।
আজ আমাদের শুভ কামনা এবং প্রার্থনা সেই সব সাহসী অফিসার ও সৈন্যদের প্রতি যারা দেশের জন্য জীবন বলিদান দিয়েছেন। এটা গৌরবের বিষয় যখন একজন নাগরিক দেশের জন্য তার জীবন সমর্পণ করেন। এটা একটি বড় সুযোগ। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কি পরিমাণ ত্যাগস্বীকার করব বিভিন্ন ক্ষেত্রে। আমি আশা করি ছাত্ররা গভীরভাবে এগুলো বিবেচনা করবে তারা এই সঙ্কটের সময়ে কি ধরণের সাহায্য দিতে পারে।
ছাত্ররা বিবেচনা করবে তারা শহর ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কি দরকারী পরিবর্তন করতে পারেন। আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বছরগুলিতে ইংল্যান্ডে সবকিছুর সংকট ছিল। সেখানে সব ধরনের অসুবিধা ছিল। তবুও মানুষ সেখানে তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, তাদের স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য জিনিস সংস্কার করেন। এখন আমরা সব ঐক্যবদ্ধ, আমরা জাতি কে আকৃতি দিতে কাজ করব। স্বাস্থ্য সেবা ও স্যানিটারি অবস্থার উন্নতি করার চেষ্টা করব।
আমাদের অঙ্গীকার করতে হবে যে আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করব। আমরা কোন হুমকিকে ভয় করিনা। এবং আমরা সব চাপ প্রত্যাখ্যান করতে পারি। এর মানে এই নয় যে আমরা অন্যদের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করতে অপছন্দ করি। আমরা সবসময় অবশ্যই অন্যদের কাছ থেকে শুনতে চাই। আমরা গুরুত্ব সহকারে তাদের পরামর্শ বিবেচনা করব। কিন্তু যখন আমরা দেখি যে তারা আমাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করবে তখন আমরা তা ভেবে দেখব। আমরা বলছি না যে, আমরা কোনো পরামর্শ গ্রহণ করব না। যদি তা লাভজনক হয় তাহলে আমরা তা বিবেচনা করব এবং মানুষের মতামত গ্রহণ করব। কিন্তু যদি সবাই মনে করে যে এতে জাতির স্বার্থ ছিল না, তাহলে সেটা বিবেচনা করার অধিকার আমাদের নেই। সেক্ষেত্রে আমরা সঠিক পথ বেছে নেব।
আমরা আমাদের সাহসী সৈন্যদের অর্জনে খুশি। তারা অনেক স্থানে বিজয়ী হয়েছে। সামনে কঠিন ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে। কিন্তু আমরা আমাদের হৃদয়ে আলো জ্বালিয়ে রাখব। যদি তা পারি তাহলে আমরা আমাদের দেশকে যেমন সমৃদ্ধিশালী করতে পারব তেমনি সুখ বয়ে আনতে পারব – এবং ইসিহাসে অনবদ্য এক জাতী হিসেবে পরিচিতি পাব। আমি জানি শুধু যুবকরাই সেই আলো জ্বালিয়ে রাখতে পারে। যা গড়ে তুলতে পারি একটি জাতী আর মানবতা। যুদ্ধ যাবে আসবে কিন্তু আমাদের সবচেয়ে বড় কাজটি আমাদের স্বপ্নের ভারত গড়ে তুলতে হবে।
আমি সবশেষে এখান থেকে আপনাদের উদ্যেশ্যে বলতে চাই সাধারণ নির্বাচন এর পরে আমরা নির্দিষ্ট নীতি ও আদর্শের জন্য যুদ্ধ করেছি। নির্বাচনী প্রচারণা আমরা আমাদের নিজের লোকদের সামনে করেছি। এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশ ও তা পর্যবেক্ষন করেছে। আমরা ফুটিয়ে তুলেছি এই দেশের লক্ষ্য ও ভবিষ্যৎ চিত্র। আমরা বিশ্বের কাছে প্রমাণ করেছি যে আমাদের জনগণ আমাদের বুঝতে পেরেছে এবং তাদের দায়িত্ব বুঝতে শুরু করেছে। যদি এই কথা কাজগুলোকে যুদ্ধ বলা যায় – তবে তা ছিল কথা যুদ্ধ – যার প্রেক্ষিতে আমরা ভোটে জয় ছিনিয়ে এনেছি।
যুদ্ধ এখন অন্য ধরণের রূপ লাভ করছে। নির্বাচনের আগে যারা আমাদের বিরোধী ছিলেন তারা আজ আমাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। এগুলো দেশের সব মানুষ, সব রাজ্যের, সব ধর্মের, এবং বিভিন্ন ভাষার, সবার কাছে পেশ করা হয়েছে। আমরা গণতন্ত্রের জন্য আজ যুদ্ধ করছি এবং বিশ্বকে দেখাতে চাই যে একটি জাতি ধর্মের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা করা যায় না। পৃথিবীতে সব দেশে আজ নানা ধর্মের মানুষ আছে। প্রশ্ন হল সংখ্যালঘুদের নাগরিক সব অধিকার দেওয়া হয়েছে কিনা। আজ লড়াইয়ের কারণ আমরা বিশ্বাস করি প্রত্যেক জাতি স্বাধীনতার অধিকার রাখে। এবং তার দাবী যদি ন্যায্য হয় তবে তার কন্ঠস্বর সবার কাছে পৌছা উচিৎ। আমরা নিশ্চিত যখন মানুষ স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও ভ্রাতৃত্বের জন্য যুদ্ধ করে তখন তারা নিশ্চিত বিজয়ী হয়। আমাদের অনেক সৈনিক আমাদের সীমান্তে যুদ্ধে আজ প্রাণ হারাচ্ছেন এবং অনেকে আহত হয়েছেন। ভারতের সমস্ত জনগণ তাদের পিছনে আছে।
ভারত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভাল অগ্রগতি লাভ করেছে। আমরা যা চেয়েছিলাম তা অর্জন করতে পারছি। কিন্তু আমরা জানি যে অন্ধকার দিন এগিয়ে আসছে এবং আমাদের বিপদও ক্রমশ বাড়ছে। যারা গণতন্ত্রের কথা বলেন এবং আমাদের দিকে আঙুল উত্থাপিত করেন – এই বলে যে, সম্ভবত আমাদের গণতন্ত্র, বিশ্বাস, যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল না – তারা এখন ভুলে গেছে তারা এর আগে আমাদের সম্পর্কে কি বলতেন। যারা গরীব মানুষের রক্ষক বলে নিজেদেরকে উপস্থাপন করত ও স্বাধীনতার জন্য সকল সংগ্রামকে সমর্থন দিত বলে দাবি করত, তারাই আজ তাদের নীতি-নৈতিকতা ও প্রকাশ্য ঘোষণা ভুলে গিয়ে আমাদেরকে বল প্রয়োগের মাধ্যমে দমন করছে। ।
আপনারা একটি গান শুনেছেন সারফারোসি কি তামান্না…… (আমরা স্বাধীনতার জন্য আমাদের প্রাণ দিতে প্রস্তুত ) – যখন আমি ছোট ছিলাম এই গান স্বাধীনতার জন্য খুব জনপ্রিয় ছিল। এটা সভা ও বিক্ষোভ মিছিল গাওয়া হতো। আরেকটি জনপ্রিয় গান যারে তো যারে……… (ভারত আমাদের জীবনের বিনিময়ে হলেও স্বাধীনতা ফিরে পাবে) – এ পুরানো গান আজ আমাদের জাতীয় জীবনে একটি নতুন অর্থ অর্জন করেছে। আমরা এখন একটি বড় বিপদের সম্মুখীন। এটা এ কারণে যে আমরা অন্য দেশের অঞ্চল দখল করতে বা অন্য কোন জাতি ধ্বংস করতে চাই না। আমরা এমনকি অন্য এলাকার এক ইঞ্চি জায়গা দখলের বা কোনো দেশের ক্ষতি করতে চাইনা। আমরা জানি যে বাংলাদেশে স্বাধীনতার জন্য যে চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে তা দুনিয়ার কোন শক্তি দ্বারা চূর্ণ করা যাবে না। যে আগুন দেশপ্রেমিকদের অন্তরে জ্বলছে তা আমাদের নিজস্ব স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং মৌলিক নীতিগুলো বিপন্ন করতে পারে। এই জন্য আজ আমরা যুদ্ধ করছি।
আমরা অন্যের জমির এক ইঞ্চির প্রতি লোভের জন্য যুদ্ধ করছিনা। বা অন্য কোন দেশের ক্ষতি করতে ও নয়। আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারবিভিন্ন দেশে পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের আন্তরিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তারা তা করছেন। স্বাধীনতার জন্য বাংলাদেশের মানুষের যে চাহিদা, সেখানে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ ও নৃশংসতা, তরুণ, পুরুষ, নারী ও শিশুদের উপর সংঘটিত অত্যাচার, বন্যার মত আমাদের দেশে শরনার্থিদের আগমন – এগুলোর প্রভাব আমাদের দেশের উপর পড়ছে। যদিও পাকিস্তান সেনাবাহিনী জনগণের উপর যে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে তাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের চোখ বন্ধ করে রেখেছেন।
তারা বলে এটি তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার যদিও তারা একটি পুরো জাতি বা সম্প্রদায় ধ্বংস করে চলছে।
কীভাবে ভারত চুপ করে বসে থাকতে পারে যখন আমরা দেখি লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু আমাদের কাছে এসে আশ্রয় নিচ্ছেন? তাদের মনোবল এবং সংস্কৃতি চূর্ণ করা হয়েছিল। বিদেশে আমার সাম্প্রতিক সফরে আমি পরিষ্কারভাবে এবং উন্মুক্তভাবে বিভিন্ন দেশে বলে এসেছি যে ভারত এই সব ব্যাপারে শুধু নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকবেনা। এমন অভিযোগ করা হয় যে আমি আগে যা বলাছি তা করিনি। তারা সম্ভবত আমাদের চিনতে পারেনি।
আমরা, এই দেশে, যুবক ও মহিলারা, একটি মহান সভ্যতা গড়ে তুলেছি। যা শতাব্দীর ধরে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া। হাজার হাজার বছর ধরে আছে। আমরা কষ্ট সহ্য করতে জানি। কিন্তু আমাদের দুর্ভোগ অনেক হয়েছে। অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছি। বিশেষ করে যখন তা সীমা অতিক্রম করে করেছে। ভারত তার নিজের স্বাধীনতা হারিয়ে অত্যাচারিত হয়েছে। মানুষ এখানে সেখানে তাদের মাথা বাড়াতে চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তারা দাবীয়ে রেখেছে। এমন এক সময় ছিল যখন এই দেশের মানুষ অশিক্ষিত দরিদ্র বা দুর্বল ছিল। কিন্তু এক সময় তারা উঠে দাঁড়াল। তারা জানলো যে স্বাধীনতা তাদের জন্মগত অধিকার। কিন্তু তা দমিয়ে রাখার সব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আমরা জয়ী হলাম।
আমরা বিশ্বাস করি যে আমরা এখন যুদ্ধ করছি আমাদের নিজস্ব স্বাধীনতা শক্তিশালী করার জন্য। বিদেশে আমাদের বিরোধী অনেকে আছেন। পাকিস্তানে কি ঘটেছে সে সম্পর্কে তারা সত্যিই চিন্তিত না। তারা বিরক্ত কারণ আমরা নিজেরাই আমাদের নিজের পথ খুঁজে নেয়ার সাহস দেখাচ্ছি এবং আমরা যা জানি যে আমরা যা করব তা সঠিক। আমরা বিশ্বাস করি যে আমরা আমাদের নিজেদের দেশে এবং আমাদের নিজেদের নীতির জন্য যুদ্ধ করছি। কিন্তু বিশ্বের অনেক দেশ শতাব্দী ধরে বিদেশী দের আধিপত্যের অধীনে নিপীড়িত হয়েছে। এভাবে চলতে পারে না। ঐ সব দেশ উপলব্ধি করতে পারে না কিভাবে তারা বিদেশী আধিপত্যের অধীন নিষ্পেষিত হচ্ছে। আমরা অবশ্য জানি, এবং আমরা সচেতন যে, যদি আমরা আজ যুদ্ধ না করলে ভবিষ্যতে একই ভাগ্য বরণ করতে হবে। ভারত স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করে। আমরা যেকোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত আছি – যেকোন হুমকির মুখে। আমাদের আদর্শ থেকে কেউ টলাতে পারবেনা।
বিদেশী শক্তি আমাদের হুমকি দিয়েছে। এটা আমাদের বলা হয়েছে যে, পাকিস্তানের সঙ্গে নির্দিষ্ট চুক্তি করে সমঝোতা করতে। যতদূর আমি জানি তারা কমিউনিজম ধারণ করার উদ্দেশ্যে করেছে। এই জোট গণতন্ত্রের জন্য ছিলোনা। এটি ছিল দুনিয়াকে ধোঁকা দেয়ার প্রচেষ্টা। এখানকার কিছু মানুষ আমাদের নীতি নিয়ে সমালোচনা করতেন। এবং এই দেশে কমিউনিজম উত্সাহিত করতেন। তারা আমাদের বলেছেন যে, তারা আমাদের চীন থেকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমরা তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করিনি।
যাই হোক তাদের মনোভাব এর মধ্যে একটি সম্পূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। তারা আজ বলছে চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ। এতে বোঝা যায় কিভাবে বড় ক্ষমতা ধর দেশগুলো সম্পূর্ণরূপে তাদের অবস্থান পাল্টে ফেলেন। আপনি যদি অতীত ইতিহাসের দিকে তাকান তাহলে দেখতে পাবেন শুধুমাত্র এক দেশ ও এক জাতি নীতিতে চলা ভারত তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেনি। আমরা সবসময় আমাদের নীতির প্রতি অটল ছিলাম থাকব।
আমি আবার বলি, আমাদের সেনা বাহিনী অন্য বিশ্বশক্তিগুলোর চেয়ে দুর্বল হতে পারে, কিন্তু আমরা অস্ত্র দিয়ে কারো ভোগদখল করিনা। কারণ আমরা সত্য ও ন্যায়ের পথ অনুসরণ করি। বিশ্বের সেই সব বাহিনীর বিরোধিতা সত্ত্বেও, পৃথিবীর কোন শক্তি নেই যা আমাদের বাকিয়ে ফেলবে। আমরা যে ধরনের মনোভাব পোষণ করি তা শুধুমাত্র দৃঢ় সাহস এর উপর ভিত্তি করে হতে পারে। এটা বলতে চাই যে আমরা অন্য কোন জাতি কে ধ্বংস করার অভিব্যক্তি নিয়ে চলিনা। এটা ঠিক যে সাহস দৃঢ় আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত।
আমাদের প্রথম প্রতিশ্রুতি গণতন্ত্র এবং এটিকে মানুষের জন্য অর্থবহ করা। এটা কেবল তখনই সম্ভব যখন সবাই ধর্ম বা সম্প্রদায় যাই হোক না কেন এক দেশে একসাথে বাস করতে পারে এবং ভাষা যাই থাকুক তাদের অধিকার সমান দেয়া হয়।
আমাদের মৌলিক নীতি সব ধর্মের মানুষের সাথে সমান আচরণ করতে হবে। গণতন্ত্র গভীরে প্রোথিত হবেনা যদি ধনী ও দরিদ্র মধ্যে বৈষম্য হ্রাস করা হয়। যদি আমরা এই আদর্শের অনুধাবন করি তাহলে সত্য বিজয় লাভ করবে।
কিভাবে আমরা এই সংকটে জড়িত হতে পারি?
আমি আগেই বলেছি, একটি দরিদ্র প্রতিবেশী দেশকে পিষে ফেলার সকল প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে। এটা এগিয়ে যাওয়ার জন্য কোনো সুযোগ পায়নি। এটি আমাদের চেয়ে বেশি পিছিয়ে। এটি একটি অসম যুদ্ধ, একপাশে সাধারণ নিরস্ত্র মানুষ এবং অন্য পাশে সেনা। এমনকি যদি এই দেশ আমাদের সীমানা থেকে দূরেও হত আমরা তাদের স্বাধীনতার জন্য তাদের সংগ্রামে আমাদের সহানুভূতি প্রকাশ করতাম। এই বিশেষ ক্ষেত্রে, সংশ্লিষ্ট দেশ আমাদের প্রতিবেশী, আমাদের দোরগোড়ার প্রতিবেশী। তাই আমরা আমাদের চোখ কান বন্ধ রাখতে পারিনা। কারণ সেখানে যা ঘটছে তা আমাদের অর্থনীতি, আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় বা রাজনীতিতে – এমনকি আমাদের নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করছিল।
যেসব দেশগুলি দূরে ছিল তারা তাদের চোখ বন্ধ করে রেখেছে। আমরা এক দিন না, এক সপ্তাহ না, এক মাস না, পুরো নয় মাস ধৈর্য ধরে এই সব ঘটনা দেখেছি। একটি দিনও নেই যেদিন আমরা আমাদের সর্বাত্তক প্রচেষ্টা চালাইনি বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ন পরিবেশ স্থাপনের লক্ষে যাতে তারা তাদের স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে। আমরা দেখেছি সেখানে মানুষরা স্বাধীনতা ছাড়া আর কোন বিকল্প চিন্তা করছিলোনা। আমি বিশ্বের অনেক দেশে গিয়ে এটা বলেছি। কিন্তু ভারত কি চায় বা না চায় তাতে তারা তেমন অনুভূতি দেখায়নি।
মৌলিক প্রশ্ন হল বাংলাদেশের জনগণ কি চায়। আমরা তাদের যতটুকু দেখেছি তাতে বোঝা যায় তাদের স্বাধীনতাই একমাত্র লক্ষ্য। ৯ মাস গেছে বিশ্বশক্তিগুলো মধ্যস্থতা করে সমাধান খুঁজে বের করেনি। অথচ এই পুরো সময়ের মধ্যে ভারত কি করবে না করবে তারা সেই উপদেশ দিয়ে গেছে।
আর যখন আমরা আক্রান্ত হই, আমাদের “আগ্রাসক” বলে অভিযুক্ত করা হল। আমাদের জাতির জীবনে এই ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছে। সেইসাথে আন্তর্জাতিক বিষয়ক অভিজ্ঞতাও আছে। বিশ্ব এই ঘটনা সম্পর্কে এবং এর প্রভাব সম্পর্কে জানে। এই ধনী দেশগুলোর অনেকে অভিযোগ করেছেন যে তাদের লোকেরা ভুল পথ অনুসরণ করছে। তারা তাদের নিয়ম-কানুন ও অনুশীলন এর প্রভাব দেখতে ব্যর্থ। মৌলিক বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা আবশ্যক। সময় এখন এসেছে যখন আমাদের আরও দূরদর্শী হতে হবে। আর যা কিছু প্রয়োজন হয় তার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। কিন্তু আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে ঐক্য আমরা অর্জন করেছি তা শুধুমাত্র যুদ্ধের সময় নয়। আমাদের মৌলিক আদর্শ ও চিন্তার ঐক্য ও বজায় থাকবে। সত্যিকারের একতা থাকলেই আমরা দেশকে শক্তিশালী করতে পারব। আমরা যুদ্ধের মোকাবিলা করার জন্য আমাদের পক্ষে যা কিছু করা সম্ভব আমরা তার সবটাই করছি। আমরা আমাদের সেনাবাহিনীর জন্য প্রর্থনা করি এবং জয় আশা করি। আমাদের শুভ কামনা তাদের জন্য রয়েছে। আমরা তাদের সাহস, উৎসাহ নিয়ে গর্বিত। আমরা তাদের আশ্বাস দিতে চাই যে দেশের মানুষ তাদের পিছনে দৃঢ়ভাবে আছে। একটি শক্তিশালী জাতি, একটি পরিষ্কার এবং প্রগতিশীল জাতি গড়ার দায়িত্ব আমাদের সকলের। আমাদের দারিদ্র্য দূর করতে হবে। এই আত্ম বিশ্বাস আমাদের জওয়ানদের মাঝে দিতে হবে।
যখন আমরা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসা করি আমরা যেন আমাদের মুক্তিবাহিনী ভাইদের কোথা ভুলে না যাই। ১২ বছর বয়সের ছেলেরা মুক্তিবাহিনীতে যোগদান করেছে এবং তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে কয়েক দিন পর যুদ্ধে চলে গেছে। তারা মহান সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। এটি কোন সাধারণ সাহস নয় – এটি এত শক্তিশালী যাতে নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ এবং বাংলাদেশের তরুণরা অনুপ্রাণিত হয়েছে। এই সাহস শুধু স্বাধীনতার ইচ্ছা থেকে বের হয়ে আসতে পারে। তাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ আজ বাস্তবে পরিণত হয়েছে। তাদের ভিত্তি যথেষ্ট শক্ত। আমরা আশা করি যে তাদের নেতারা এবং যোদ্ধারা একটি শক্তিশালী জাতি গড়ে তুলতে চেষ্টা করবে। আমাদের মনে রাখা দরকার যে শক্তিশালী যুদ্ধ দীর্ঘ স্থায়ী হবে না। বাস্তব যুদ্ধ শুরু হবে আরও পরে। বাংলাদেশের জনগণের দুর্ভোগের কাহিনী খুবই প্রাচীন। কারণ তারা স্বাধীন। ভারত তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চায় না এবং তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সাথে বাস করতে চায়। এবং বিশ্বকে দেখাতে চাই কিভাবে দুই প্রতিবেশী তাদের আভ্যন্তরীন বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই একে অপরকে সাহায্য করতে পারে। আমরা একটি নতুন আদর্শ বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করব।
এখন বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তেমন শক্তিশালী নয়। আমি আশা করি তারা বাংলাদেশের মানুষের দাবী বুঝতে পারবে। এবং কি উদ্যমে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সৈন্যদের মানুষ স্বাগত জানিয়েছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বাস্তব পরিস্থিতি দেখে এবং অবিলম্বে সেখানে থেকে সেনা প্রত্যাহার করা উচিৎ। আজ কের একটি ছোট পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে পারে যে তারা ভবিষ্যতে ভালো বন্ধু হতে পারবে। এটি হবে শুধুমাত্র যদি তারা বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তু ফিরিয়ে নেয় এবং তাদের বাড়িতে ফিরে যাবার ব্যাবস্থা করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তান নিজের বাড়িতে চুপ করে বসে আছেন এবং উদ্বাস্তুদের ফিরে যেতে দিচ্ছেনা। বিপরীতভাবে, বাংলাদেশে যা কিছু ঘটছে তার জন্য ভারতকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের কয়েকজন কর্মকর্তা নিরাপদে ঢাকা থেকে বের হতে চাইছিল। তারা আমাদের অনুরোধ করেছিল শহরের বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে যাতে তারা সহজেই বেড় হতে পারে। আমরা তাদেরকে বলেছি যে, ভারত তাদের প্রস্তাবনায় একমত এবং ঢাকা থেকে তারা নিরাপদে প্রস্থান করতে সক্ষম হবে। আমরা তাদেরকে বলেছি যে, যদি তারা আমাদের সাহায্য চায় তাহলে কলকাতা আসেন এবং সেখানে থেকে নিরাপদে ফিরে যান। আমরা তাদের কলকাতায় আনতে একমত হলাম এবং তাদের আশ্বস্ত করলাম যে তারা কোন বিপদের মধ্যে পরবেনা। কিন্তু যখন বিমান ঢাকা পাঠানো হল তারা বিমানকে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ অবতরণ করার অনুমতি দিলনা। আর এটা বলা হয়েছে যে ভারত প্রথমে তাদের প্রথমে জায়গা ফাকা করে দিতে বলে কিন্তু পরবর্তীকালে প্লেন অবতরণ না করে প্রত্যাখ্যান করে। মিথ্যা অপপ্রচার করে যে ভারত প্লেন অবতরণ করায় নি। বিদেশীদের বোঝানো হয় যে আমরা তাদের সাহায্য করতে আসিনি। তবে আমরা যথাযত সাহায্য করেছি যাতে তারা নিরাপদে ফিরে যেতে পারে।
আমি আশা করি আপনারা সকলেই জানেন বর্তমান পরিস্থিতিতে কী করতে হবে। আপনি নিশ্চিত, দাম ওঠানোর জন্য কিছু মজুদ করা হয় না। মানুষ শুধুমাত্র দরকারি জিনিস ক্রয় করবেন এবং অকারণে ব্যয় করবেন না। আমাদের, পুরুষ, নারী ও শিশুদের সবাই মূলত এক একজন সৈন্য। আমরা দেখতে চাই যে দেশ ঐক্যবদ্ধ এবং শক্তিশালী। এই অন্ধকার দিনে আমরা শুধুমাত্র যদি সংযম ও কঠোরতা প্রয়োগ করব।
আমি খুব দু:খিত যে স্বাধীনতা সংগ্রামের আমাদের পুরানো কমরেড কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী গুলাম মোহাম্মদ সাদিক, আজ দেহত্যাগ করেছেন। তিনি বেশ কয়েক মাস ধরে অসুস্থ ছিলেন। গত দুই সপ্তাহ ধরে গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। তাঁর মৃত্যু আমাদের জন্য এক বিরাট ক্ষতি। আমি তাকে ১৯৫৩ সালে প্রথম দেখি এবং তিনি মুষ্টিমেয় যারা কাশ্মীরে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর আগমনের পূর্বে, তিনি তাদের মানুষদের পাকিস্তানী সৈন্য এবং অনিয়মিত যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত। মানুষ, নারী, পুরুষ, যুবক-বৃদ্ধ এবং তাদের কি ভারত দাঁড়িয়ে বলেন.। কাশ্মীরে যখন সময় তাদের মুসলিম লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ এবং একটি ইসলামী রাষ্ট্র, একটি সাম্প্রদায়িক ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য এসেছিলেন ভারতের অংশ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন. কিন্তু তারা তাদের নীতি দৃঢ়ভাবে আটকে. যা আমাদের নিজের মতই. তারা এই আদর্শের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা খুব দু: খিত যে সময় আমরা যখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল শ্রী সাদিক এর পরামর্শ এবং জ্ঞান, তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছে মনে হয়. যাইহোক, আমি নিশ্চিত যে কাশ্মীরের জনগণ তাঁকে পছন্দ করে এবং তাকে সম্মানিত, তাঁর প্রদর্শিত করবে ও পথে পরিচালিত মেনে চলে এবং সব ধর্মের
এমন বিয়োগান্তক অবস্থা নানা ব্যাক্তি ও জাতির জীবনে ঘটেছে। এখন দাবী হল আমার কি তাদেরকে আমাদের সাথে যুক্ত করব নাকি তাদের হাওয়া লাগাতে পারলেই হবে।
অসুবিধা এবং বিপদ যদি কিছু আসে আমরা তাদের মুখোমুখি হব। কিছুই সামনে চলাকে বাধ্যতামূওক করবেনা। আমি আপনাদের সমস্ত মানুষকে অভিনন্দন জানাচ্ছি, কারণ আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পেরেছি। আমরা আমাদের শক্তি বাড়িয়েছি শত্রুদের তাড়িয়ে দেবার জন্য ও তাদের পরিকল্পনা নষ্ট করার জন্য।
আমাদের শত্রু পাকিস্তান বা তার জনগণ নয়। পাকিস্তানের জনগণ দীর্ঘ দিন নিষ্পেষিত হয়েছে। যুদ্ধের কারণে তারা হয়ত আমাদের অপব্যবহার করতে পারে কিন্তু তারা দরিদ্র। তাদের দেশের প্রশাসন বলে কিছু ছিল না। এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিলোনা। আমি জাই যে তারা দারিদ্র্য নির্মূল করতে চায় এবং নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। তাদের নেতারা তাদের অন্য দেশের উপর নির্ভরশীল করেছেন এবং তারা যে নীতি অনুসরণ করছেন তা জনগণের স্বার্থে নয়। একটি দরিদ্র ও দুর্বল দেশে একটি বড় জাতি বৃহৎ পরিমাণ অস্ত্র বিনামূল্যে সরবরাহ করছে। এতে করে শান্তি আসবেনা। তাতে যাই ঘটুক না কেন। পাকিস্তানি শাসকরা জানতেন যে বড় শক্তিশালী জাতি তাদের উপরে আছে। পাকিস্তানি শাসকরা ভাবতেন বিদেশ থেকে প্রাপ্ত সাহায্য ও অস্ত্র দিয়ে তারা জনগণেকে শাসন করবেন এবং জনগণের ইচ্ছাকে উপেক্ষিত করবেন। পাক সরকার বাঙালি, বেলুচ ও সীমান্ত প্রদেশের মানুষ দের দাবী উপেক্ষিত রেখেছেন। আমি বলতে পারি যেসব দেশ পাকিস্তানে অস্ত্র সরবরাহ করছে তারা আসলে পাকিস্তানকে দুর্বল করে দিচ্ছে। পাকিস্তান আজ যদি কোন ক্ষতি করতে আসে তাহলে, এর জন্য তারাই দায়ী হবে। এই ক্ষমতাশালীরা আমাদের সঙ্গে ভালো থাকেনা। আমরা এই ধরনের সাহায্যের প্রত্যাখ্যান করেছি। কারণ, আমরা জানতাম যে, আমরা যদি আমাদের নিজস্ব স্বাধীনতা খর্ব করি তাহলে কেউই আমাদের শক্তিশালী করতে পারবে না। আমাদের স্বাধীনতা যদি সত্যি হয় আমরা শক্তিশালী হব। কোন বিদেশী এইড ছাড়া, আমরা আমাদের প্রয়োজন মিতাতে পারব।
আসুন সবাই একসাথে যোগদান করে সঠিক পথে চলি। এবং আমি নিশ্চিত আমাদের অসুবিধা দূর হয়ে যাবে। আমাদের সৈনিকের পোশাক গায়ে থাক বা না থাক, আমাদের সঙ্গে বন্দুক থাক বা না থাক, আমরা সৈন্য হিসাবেই কাজ করব, তাদের মত যারা সম্মুখযুদ্ধে লিপ্ত। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করব। শুধুমাত্র তখনি আমরা আমাদের জওয়ানদের ও দেশকে তার প্রয়োজনে সাহায্য করতে পারব। আমাদের একসঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। শুধুমাত্র সেক্ষেত্রেই আমরা বিজয় সুনিশ্চিত করতে পারব।