You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.02 | “আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থে যা ভাল তাই করব”- দিল্লীতে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ঘোষণা | দি স্টেটসম্যান - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম
সূত্র
তারিখ
৭১। “আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থে যা ভাল তাই করব”- দিল্লীতে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ঘোষণা দি স্টেটসম্যান

২ ডিসেম্বর ১৯৭১

আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থে যা ভাল তাই করবঃ মিসেস গান্ধী
নয়া দিল্লী, ২রা ডিসেম্বর

প্রধানমন্ত্রী, মিসেস ইন্দিরা গান্ধী, আজকে ঘোষণা দেন যে, ভারতকে কে আগ্রাসী রাষ্ট্র বলল এ নিয়ে ভারত মোটেও বিচলত নয় যখন ভারত কোন প্রকার আগ্রাসনই চালানো হয়নি, পিটিআই’এর প্রতিবেদন। লন্ডন হতে প্রকাশিত সংবাদপত্রে ব্রিটেন আবারও ভারতকে স্পষ্টভাবে আগ্রাসী রাষ্ট্র বলে উল্লেখ্য করে। মিসেস গান্ধী বলেনঃ “শেষ পাঁচ বছরে সময় পরিবর্তন হয়েছে। যদি কোন রাষ্ট্র ভাবে যে আমাদের আগ্রাসী বলার মাধ্যমে আমাদেরকে জাতীয় স্বার্থ ভুলে যেতে প্রভাবিত করবে তাহলে সে রাষ্ট্র বোকার স্বর্গে বসবাস করছে এবং তাদের স্বাগত জানাচ্ছে।” মিসেস গান্ধী দিল্লীর কংগ্রেস সদস্যদের কথা উল্লেখ্য করেন যারা জাতীয় এই সংকটকালে আজ সকালে তার বাসভবনে সমবেত হয়ে তাদের সংহতি প্রকাশ করেন।

মিসেস গান্ধী বলেনঃ “সময় পরিবর্তন হয়েছে যখন তিন বা চার হাজার মাইল দূর থেকে কোন দেশ তাদের শ্রেষ্ঠত্বের উপর ভিত্তি করে তাদের ইচ্ছে মত ভারতীয়দের নির্দেশ দিত। ভারতের পরিবর্তন হয়েছে এবং তা কারো নিজের সম্পত্তি নয়।”

“আজকে আমরা তাই করব যা আমাদের জাতীয় স্বার্থে ভাল এবং তা নয়, যা এ সকল তথাকথিত বড় রাষ্ট্রগুলো আমাদের দিয়ে করাতে পছন্দ করে। আমরা তাদের সাহায্য সহযোগিতার এবং বন্ধুত্বের সম্মান দেই কিন্তু আমরা রাষ্ট্রের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌম ক্ষমতা ত্যাগ করতে পারি না। ”

ব্রিটেনের কথা উল্লেখ্য করে মিসেস গান্ধী বলেন যে, ১৯৬৫ সালের ইন্দো-পাক যুদ্ধের সময় ব্রিটেন ভারতকে আগ্রাসী রাষ্ট্র বলে ভুল করেছে। “কিন্তু এখন তাদের বাস্তবতা দেখা উচিৎ, একের পর এক ঘটনা, বাংলাদেশের ভেতরকার কার্যকলাপ এবং ইন্দো-পাক সীমান্তের অবস্থা।”

“ব্রিটেনের কাছে আমার একমাত্র চাওয়া হচ্ছে যে, তারা এই পরিস্থিতির দিকে আলোকপাত করবে।” তিনি যোগ করেন।
পশ্চিমবঙ্গে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকদের নিযুক্তিতে পাকিস্তানের সামর্থ্যের কথা উল্লেখ্য করে মিসেস গান্ধী বলেন যে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই সকল পর্যবেক্ষকরা কোন উপায়ে পর্যবেক্ষণ করবে তা তিনি বুঝতে পারছেন না।

বিভিন্ন দেশ, জাতিসংঘ সিনেটরস, ত্রানদলের বিদেশী গণ্যমান্য নীতিনির্ধারকগণের একটি বিরাট সংখ্যা, স্বাধীন সংস্থাসমূহ, মন্ত্রীবর্গ এবং অন্যান্যরা পশ্চিমবঙ্গের সাথে পূর্ব বাংলার সীমান্ত পরিদর্শন করে উদ্বাস্তুদের দুরাবস্থার সাক্ষী হয়েছেন। সন্ত্রাস মুক্ত এলাকায় বাংলাদেশের মানুষের উপর পাকিস্তানী আর্মির কার্যকলাপও তারা দেখেছে কিন্তু কি হল? “এটি কি বাংলাদেশের সমস্যা সমাধান করবে? এই সকল বড় রাষ্ট্রগুলোর কেউ কি বাংলাদেশের গণহত্যা বন্ধ করতে পাকিস্তানকে বলবে? না, তারা এটা করবে না।”

তিনি বলেন, “শুধুমাত্র পাকিস্তানী আর্মিকে বাংলাদেশ ছেড়ে আসতে বলার মাধ্যমে বাংলাদেশের এই সমস্যা সমাধান হতে পারত, যাতে করে তাদের ফেলে আসা বাসস্থান এবং হৃদয়ে এই হাজার হাজার মানুষ ফিরে যেতে পারে এবং শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারে।”

“এই উপমহাদেশে শান্তি ফিরে আসবে কেবল যদি সীমান্ত অথবা ভারতের পূর্ব একই সাথে পশ্চিম থেকে পাকিস্তানী আর্মি সরিয়ে নেয়া হয়।” বলেন মিসেস গান্ধী।

মিসেস গান্ধী বলেন, “যখন পাকিস্তান তার আর্মি ভারতের সীমান্তে আনে তখন এই সকল দেশের কেউ কিংবা জাতিসংঘ টুঁ শব্দটি করে না, সময়ের সাথে ভারত যখন ভূমি রক্ষার্থে তার বাহিনী এগিয়ে নিয়ে যায়, তখনই শান্তি বিপদাপন্ন বলে চেঁচামেচি হয়। আমি এই বিষয়গুলি বুঝি না।”

পাকিস্তান ভারত আক্রমন করবে না এই ব্যপারে জাতিসংঘ নিশ্চয়তা দিতে পারবে কিনা মিসেস গান্ধী তার ঘণ্টাব্যপি বক্তব্যে জানতে চান, “জাতিসংঘ কি নিশ্চিত করতে পারবে যে এই সকল আক্রমণের ঘটনায় পাকিস্তান কর্তৃক দখলকৃত কোন ভূখণ্ড জনশূন্য ছিল?”

তিনবার আক্রমন
আগে তারা পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তের সৈন্যবাহিনী অপসারণের কথা বলে। তাদের মনে রাখা উচিৎ যে ভারত তিনবার পাকিস্তান কর্তৃক আগে আক্রান্ত হয়েছিল কিন্তু জাতিসংঘ কিংবা অন্য কোন শক্তি একবারও পাকিস্তানকে দোষারোপ করেনি। এখন কিভাবে তারা আশা করে আমরা তাদের উপর বিশ্বাস রাখব?

তিনি বলেন, “পাকিস্তানী আর্মি সম্মুখবর্তী অবস্থান দখলের পর ভারত দশ দিনের জন্য পূর্ব সীমান্তে আর্মি নিত না। আমরা জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকদের কাছে গিয়েছিলাম এবং তাদের কাছে প্রতিবাদ করি যে পাকিস্তানী বাহিনীদের সামনের এগিয়ে নিয়ে আসার সহায়ক হওয়া উচিৎ হবে না। পর্যবেক্ষণের পর জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকগণ আমাদের জানান যে পাকিস্তানীরা সামরিক মহড়া চালাচ্ছে এবং দশ দিন পর তা তুলে নিবে। দশ দিন কি শেষ হয়নি? এ সকল কর্মকাণ্ডে আমি বুঝতে পারছি না কি করে আমরা তাদের উপর বিশ্বাস রাখব।”

মিসেস গান্ধী বলেন যে, মুক্তিবাহিনীর কার্যকলাপ খতিয়ে দেখাই ছিল পশ্চিমবঙ্গে জাতিসংঘ প্রতিনিধিদের পাঠানোর প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু তারা ভুলে গিয়েছিলেন যে ভিয়েতনামে গেরিলা কার্যক্রম বন্ধ করতে সকল প্রকার গুপ্তচরবৃত্তি ও কর্তৃত্ব প্রদর্শন পরাজিত হয়েছিল। “আমি ভাবতে পারি না কিভাবে পর্যবেক্ষকরা কাজ করবে যখন বাংলাদেশ সরকারই এটি তৈরি করেছে এবং এটি তাদের জীবনের নিশ্চয়তা দিতে পারছে না।” মিসেস গান্ধী যোগ করেন।

তিনি বলেন, “এখানে বলতে পারেন যে ভারত তার মাটি থেকে মুক্তিবাহিনীকে পরিচালনা করতে সহায়তা দিচ্ছে। আমরা কি করে এটি বন্ধ করতে পারি? পশ্চিমবঙ্গে আমাদের সীমানা এত দীর্ঘ যে আমরা এটা করতে পারি যদি ভারত তার সম্পূর্ণ সেনা সেখানে নিয়জিত করে। তাদেরকে নিবৃত্ত করা সম্ভব নয়। ”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতিসংঘ অথবা কোন দেশ তখন এই সকল প্রশ্নে দৃষ্টিপাত করতে প্রস্তুত ছিল না। ”

ভারত তার প্রতিবেশীর ভেতরকার ঘটনায় অনধিকার চর্চা করছে বলে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন বলে মিসেস গান্ধী ব্যাখ্যা করেন। পাকিস্তানী আর্মি বাংলাদেশের ভেতরে কি করছে আমরা কেবল বিশ্বকে তা বলছিলাম। হাজারে হাজারে মানুষ হত্যা হয়ত বিশ্বের কাছে নগণ্য কিন্তু ভারত এতে বিচলিত এবং এটি’ই উদ্বাস্তুদের ভারতের মাটিতে আসার অনুমতি দিতে ভারতকে প্ররোচিত করেছে।
“এই সকল দেশগুলো যারা আজ পাকিস্তানের ভেতরকার ঘটনায় ভারতের অনধিকার চর্চা বলে চেঁচাচ্ছে [হাউকাউ করছে!], তারা, যখন তাদের দরকার ছিল, অন্যান্য দেশের ঘটনায় অনধিকার চর্চা করেছিল এবং এখানে যখন আমরা কিছুই করি নি। আমাদের অভিযুক্ত করা হচ্ছে। তবে, এটি আমাদের তেমন বিচলিত করছে না। এমনকি চীনের মত দেশ অন্য দেশের ব্যপারে নাক গলায়।”