You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
৬৯। আত্মরক্ষার প্রয়োজনে ভারতীয় সেনাবাহিনী সীমান্ত অতিক্রম করবেঃ সরকারী মুখপাত্রের ঘোষণা দৈনিক যুগান্তর ২৫ নভেম্বর, ১৯৭১


যশোর সীমান্তে ১৩ খানি পাক ট্যাঙ্ক ধ্বংসঃ সরকারী মুখপাত্রের ঘোষণা
আত্মরক্ষায় ভারতীয় সৈন্য সীমান্ত অতিক্রম করবে
(দিল্লী অফিস থেকে)

২৪শে নভেম্বর- আজ এখানে একজন সরকারী মুখপাত্র বলেন যে, সৈন্যবাহিনীর প্রতি পূর্বনির্দেশের পরিবর্তন করা হয়েছে। আত্মরক্ষার জন্য সৈন্যবাহিনীকে সীমান্ত অতিক্রমের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

সোমবার পশ্চিমবঙ্গ-যশোর সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সৈন্যবাহিনী কর্তৃক ১৩টি পাকিস্তানী ‘সাফে’ ট্যাঙ্ক ধ্বংস করার কারণ বিশ্লেষণ করে এই মুখপাত্রটি বলেন, পরিস্থিতিকে আরও সঙ্কটজনক করে তোলা অথবা সংঘর্ষ শুরু করা আমাদের কোন সময়েই ইচ্ছা নয়। কিন্তু পাকিস্তানী বাহিনী আক্রমণাত্মক কার্যকলাপ জোরদার করায় পশ্চিমাঞ্চলের চেয়ে পূর্বাঞ্চলে পরিস্থিতি গুরুতর আকার ধারণ করেছে। পাক বাহিনীর এই ধরনের জঙ্গীবাজী বৃদ্ধি পাওয়ার যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে তারই ফলে সরকার নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি প্রদত্ত পূর্বনির্দেশের কিছু পরিবর্তন করেছেন।

গত রবিবার বয়রার কাছে পাকিস্তানী বাহিনী ট্যাঙ্ক ও কামান নিয়ে বিপজ্জনকভাবে সীমান্তের দিকে অগ্রসর হলে ভারতীয় প্রতিরক্ষা ঘাঁটি বিপন্ন হওয়ায় নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি পূর্বনির্দেশ পরিবর্তন প্রয়োজন হয়ে পড়ে। স্পষ্টতই পাক বাহিনীর এই অভিযান প্রতিরোধ করার জন্যই ভারতীয় বাহিনীকে ট্যাঙ্ক নিয়োগ করতে হয়। এই সংঘর্ষের ফলে ১৩টি পাকিস্তানী সাফে ট্যাঙ্ক ধ্বংস হয়েছে। ভারতের কোন ট্যাঙ্কের ক্ষতি হয়নি এবং ভারতীয় যে ন্যাট বিমানগুলি পাকিস্তানী স্যাবর জেট বিমান ভূপাতিত করে সে বিমানগুলিরও কোন ক্ষতি হয়নি।

এই মুখপাত্রটি বলেন, এই প্রথম ভারতীয় বাহিনীকে আত্মরক্ষায় সীমান্ত অতিক্রম করতে হয়। ভারতীয় ট্যাঙ্কগুলি তাদের কাজ শেষ করার পর সেদিনই ভারতীয় এলাকায় ফিরে আসে। তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে যদি আবার এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাহলে ভারতীয় বাহিনী অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। ভারতীয় ট্যাঙ্ক এবং বিমান ধ্বংস হয়েছে বলে পাকিস্তান যে দাবী করছে এই মুখপাত্রটি তা সুস্পষ্টভাবে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন সামান্য হয়ে থাকতে পারে।

এই মুখপাত্রটি বলেন, পশ্চিমাঞ্চলের চেয়ে নিশ্চিতভাবেই পূর্বাঞ্চলের পরিস্থিতি আরও গুরুতর। তবে পশ্চিমাঞ্চলে পাকিস্তানীরা সীমানা লঙ্ঘন করছে।

মুখপাত্রটি বলেন, ভূপাতিত তৃতীয় পাকিস্তানী স্যাবর জেট বিমানের পাইলটকে পাওয়া যায়নি। এই পাইলট পাকিস্তানী এলাকাতেও থাকতে পারে। সীমান্ত অতিক্রম না করার জন্য পূর্বে সৈন্য বাহিনীকে যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তা পরিবর্তনের কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এই মুখপাত্রটি বলেন, অপর পক্ষের সৈন্যরা যখন ট্যাঙ্ক নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে তখন স্বভাবতই এইসব নির্দেশের কিছু পরিবর্তন করতে হয়েছে। আমরা আমাদের লোকদের এগিয়ে গিয়ে এদের প্রতিরোধ করতে বলা ছাড়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ট্যাঙ্কগুলিকে অগ্রসর হতে দেখতে বলতে পারি না।

ভারতীয় ট্যাঙ্কগুলি কতখানি সীমান্ত অতিক্রম করেছিল এই প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্রটি বলেন- খুব সামান্য দূর। আর একটি প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কতদূর তারা যেতে পারবে তা নির্দিষ্ট করে কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে তিনি মনে করেন না যে, এইরকম পরিস্থিতি উদ্ভব হলে যাতে মার্কিন সৈন্যরা কম্বোডিয়াতে যতটা ভেতরে ঢুকেছিল ভারতীয় সৈন্যদের পাকিস্তানের ততদূর ভেতরে প্রবেশ করতে হবে। আত্মরক্ষার জন্য সীমান্ত অতিক্রম করা যখন প্রয়োজন, স্থানীয় কমান্ডারই তা ঠিক করবেন।

এই মুখপাত্রটি বলেন, বাংলাদেশে কোন ভারতীয় সৈন্য নেই। এখন যে যুদ্ধ হচ্ছে তা মুক্তিবাহিনী ও পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের মধ্যে।

মুখপাত্রটি বলেন, পাকিস্তানী সৈন্যরা আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে ভারতীয় এলাকার ওপর গোলাবর্ষণ করে চলেছে। গতকাল পাকিস্তানী সৈন্যরা কিষাণগঞ্জের পূর্বে এবং রাণাঘাটের দক্ষিণ-পূর্বে ভারতীয় ঘাঁটির ওপর গোলাবর্ষণ করে। ২২শে নভেম্বর মধ্য রাত্রে পতিরানের উত্তরে মাঝে মাঝে পাকিস্তানী সৈন্য ও ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মধ্যে গুলী বিনিময় হয়। গত ২২শে নভেম্বর শিকারপুরের বিপরীত দিকে অবস্থিত পাকিস্তানী সৈন্য লাইট মেশিনগান ও ক্ষুদ্রাস্ত্র থেকে গুলিবর্ষণ করে। সীমান্ত রক্ষী বাহিনী পাল্টা জবাব দেয়, পাকিস্তানী সৈন্যরা অপসারণ করে। ভারতীয় পক্ষে কেউ হতাহত হয়নি। একই দিনে রাণাঘাটের দক্ষিণ-পূর্বে পাকিস্তানী সৈন্য ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময় হয়। ২২শে নভেম্বর পাকিস্তানী সৈন্য গঙ্গারামপুরে এবং কালুরঘাটের নিকটবর্তী অঞ্চলের ওপরও গোলাবর্ষণ করে।

২২শে নভেম্বর আসামের করিমগঞ্জের দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারতীয় পর্যবেক্ষক বিমান যখন ভারতীয় এলাকার মধ্যে ঘুরছিল তখন পাকিস্তানী সৈন্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। ভারতীয় বিমানের কোন ক্ষতি হয়নি। একই দিনে পাকিস্তানী সৈন্যরা করিমগঞ্জের উত্তরে একটি এলাকায় ভারতীয় টহলদারী সৈন্যদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। একজন সীমান্ত রক্ষী আহত হয়েছে। একুশে নভেম্বর পাকিস্তানী সৈন্যরা করিমগঞ্জের পশ্চিমে ভারতীয় ঘাঁটির ওপর গোলাবর্ষণ করে। সীমান্ত রক্ষী বাহিনী এই গোলাবর্ষণের পাল্টা জবাব দেয়। কেউ হতাহত হয়নি।

১৯শে নভেম্বর পাকিস্তানী নাশকদের পোঁতা দুটি বোমা বিস্ফোরণের ফলে কিষাণগঞ্জের প্রায় আটত্রিশ কিঃ মিটার উত্তর-পূর্বে ইসলামপুরে একটি স্কুলবাড়ী সৈন্যরা সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

২২শে নভেম্বর, পাকিস্তানী সৈন্যরা যুদ্ধবিরতি সীমারেখার ওপার থেকে গুরাইস-এর উত্তর-পূর্বে ভারতীয় টহলদারী সৈন্যদের ওপর লাইট মেশিনগান ও রাইফেলের গুলিবর্ষণ করে। একই দিনে ঐ এলাকার ওপর পাকিস্তানী সৈন্যরা সীমান্তের ওপার থেকে লাইট মেশিনগানের গুলিবর্ষণ করে।

রাজৌরী ও নওশেরা সেক্টরে পাকিস্তনী সৈন্যরা গত ২২শে নভেম্বর উড়ির দক্ষিণ-পশ্চিমে ও নওশেরার উত্তর-পশ্চিমে যুদ্ধবিরতি সীমারেখার ওপার থেকে গুলিবর্ষণ করে। নওশেরা এলাকায় একজন সীমান্ত রক্ষী আহত হয়েছে। কারমিলের উত্তর-পূর্বে এবং উড়ির দক্ষিণ-পূর্বে পাকিস্তানীরা নতুন বাংকার তৈরী করছে। রাষ্ট্রসংঘ পর্যবেক্ষকদের কাছে এইসব যুদ্ধ-বিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হয়েছে।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!