You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.14 | বিশ্ব এখন বাংলাদেশ সংকট সম্পর্কে আগের চাইতে বেশী সচেতন - বিদেশ সফর শেষে ডিলিটে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মন্তব্য | দি স্ট্যাটসম্যান - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
৬৬। বিশ্ব এখন বাংলাদেশ সংকট সম্পর্কে আগের চাইতে বেশী সচেতন – বিদেশ সফর শেষে ডিলিটে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মন্তব্য দি স্ট্যাটসম্যান ১৪ নভেম্বর, ১৯৭১

“বিশ্ব এখন বাংলাদেশ সঙ্কট সম্পর্কে আগের চাইতে বেশি সচেতন
– মিসেস গান্ধী

নতুন দিল্লী, ১৩ই নভেম্বর – তিন সপ্তাহের বিদেশ সফর থেকে ফিরে মিসেস গান্ধী আজ সকালে বললেন, তিনি বিশ্বনেতাদের সাথে বৈঠক নিয়ে “মোটের উপর” সন্তুষ্ট হলেও, একটা যুদ্ধ ছাড়া শুধুমাত্র তাদের হস্তক্ষেপে বাংলাদেশ সমস্যা সমাধান কতটা কার্যকর হবে তা তিনি বলতে পারছেন না। পালামে নামার পরপরই প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সারাবিশ্ব উপমহাদেশের সঙ্কটের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছে।

তিনি বলেন, ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যকার যুদ্ধের প্রশ্ন যেমন তার মনকে ভাবাচ্ছে তেমনি বিশ্বনেতাদের মনেও উদ্বেগ তৈরি করছে। তিনি সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত আছেন, কিন্তু এর সঠিক মূল্যায়ন নির্ভর করছে তার সহকর্মীদের সাথে করা আলোচনার উপর।

মিসেস গান্ধী, সেখানে তার ও প্রেসিডেন্ট নিক্সন মধ্যে কোন সাক্ষাত হয়নি, বিদেশী সাংবাদিকদের এরূপ মন্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন। এই সিদ্ধান্ত সম্পুর্নরুপে ঠিক ছিলনা। উল্লেখযোগ্যভাবে, প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, অস্ত্র বিক্রির উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আমেরিকার অন্যান্য তৃতীয় পক্ষের অস্ত্র বিক্রয়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে কিনা সে ব্যাপারে তিনি স্পষ্ট নন। উপরন্তু কিভাবে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব উইলিয়াম রজারের বক্তব্য, যাতে বলা হয়েছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের একটা ভারত-পাকিস্তান বিরোধ টিকিয়ে রাখবে, এর প্রেস রিপোর্ট ব্যাখ্যা করবেন সেটাও অনিশ্চিত।

চীনাদের উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিজেকে এবং প্রেসকে অবশ্যই প্রকাশিত সংবাদের উপর নির্ভর করতে হয়েছিল। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, চীনাদের আচারনে একটা পরিবর্তন এসেছে। প্রেস রিপোর্ট ও অন্যান্য সাম্প্রতিক “ঘটনায়” তা প্রতিফলিত হয়েছিল। তিনি এমন ভাব দিয়েছিলেন যেন জনাব ভুট্টোর উদ্দেশ্য খুব বেশি সফল হয়নি।

এক বিদেশী সংবাদদাতার শরনার্থী সমস্যা আপোষের সম্ভবনা সম্পর্কিত এক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বিরক্ত হন। প্রশ্নকারী প্রস্তাব দেন যে, যেহেতু শরনার্থীদের অধিকাংশ হিন্দু তাই ভারত তাদের গ্রহন করতে পারে। মিসেস গান্ধী তখন জোর গলায় বলেন, কোন দেশ এসব বিদেশী নাগরিকদের কেন গ্রহন করবে যারা নিজেদের ইচ্ছায় তাদের দেশ ত্যাগ করেনি, বরং একটি গনতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার কারনে তাদেরকে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হওয়ার পাশাপাশি, “আমরা ভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে কোন তারতম্য করিনা”।

যদিও শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্য সম্পর্কে তিনি কোন তথ্য পাননি, তবু জেনারেল ইয়াহিয়া খান এমন প্রস্তাব করবেন ভেবে মিসেস গান্ধী বলেন এটা অসম্ভব যে আওয়ামীলীগ নেতারা তাকে ছাড়া সামরিক শাসকদের সাথে কথা বলতে একমত হবেন। শুধুমাত্র নির্বাচিত নেতৃবৃন্দরাই কোন সমাধান গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করতে পারেন। একটা রাজনৈতিক সমাধানে আসতে বিশ্বসম্প্রদায়, ভারত বা পাকিস্তানের কতদিন লাগতে পারে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মিসেস গান্ধী বলেন, এ ধরনের সমস্যায় কেউ নির্দিষ্ট তারিখ বলতে পারেনা।

তিনি চ্যান্সেলর ব্রান্ডিট এর সঙ্গে একমত হয়েছিলেন যে, তিনি বা অন্যান্য বিশ্ব নেতাদের হয় স্বতন্ত্রভাবে অথবা সমষ্টিগতভাবে সম্ভাব্য পরিণতির জন্য পাকিস্তানি সামরিক শাসকদের উপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে কোন রাজনৈতিক সমাধান ছাড়া। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যদি চায় তাহলেই শুধুমাত্র রাজনৈতিক সমাধান সম্ভব, অন্য কোন কিছু দীর্ঘস্থায়ী হবেনা।

উদ্বাস্তু ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে কোন পদ্ধতিগত ব্যবস্থা নিয়ে তিনি আলোচনা করেননি। এটা সত্য যে, পুর্বাঞ্চলের পরিস্থিতির গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি তার ইচ্ছাগুলো বিদেশে উল্লেখ করেছিলেন। মূলত, পশ্চিম সীমান্তে কি ঘটছে তাতে পুর্ব বাংলার অবস্থায় কোন প্রভাব ফেলছেনা। বাংলাদেশ সমস্যা সমাধান নাহলে, টানাপোড়েন লেগে থাকবে।

প্রেসিডেন্ট গিরি এবং মিসেস গান্ধীর মন্ত্রীসভা সহকর্মীরা বিমানবন্দরে তাকে অভিবাদন জানানোর জন্য উপস্থিত ছিলেন। সেখানে কূটনৈতিক দল এবং সংসদ সদস্যদের বড়সড় একটা সমাবেশ ঘটেছিল। বিমানবন্দরে বিপুল জনগন তাকে উৎফুল্ল করেছিল, এছাড়াও বিমানবন্দর থেকে তার বাসভবনে ফেরার সময় রাস্তার পাশে জনতার ভিড়ের উৎফুল্লতা তিনি গ্রহণ করেছিলেন।