শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৬৪। এন .বি.সি. টেলিভিশনে (যুক্তরাষ্ট্র) “মিট দ্য প্রেস” অনুষ্ঠানে প্রচারিত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার | ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় | নভেম্বর ৭, ১৯৭১
|
&nb
এন .বি.সি. টেলিভিশনে (যুক্তরাষ্ট্র) “মিট দ্য প্রেস” অনুষ্ঠানে প্রচারিত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার, নভেম্বর ৭, ১৯৭১
মডারেটর: লরেন্স ই. স্পিভাক
প্যানেল: এ. এম. রোসেন্থাল (নিউ ইয়র্কস টাইমস),
সেলিগ হ্যারিসন (দ্য ওয়াসিংটন পোস্ট)
পলিন ফ্রেডরিক ( এন. বি. সি নিউজ)
মি. স্পিভাক: “মিট দ্য প্রেস” অনুষ্ঠানে আমাদের আজকের অতিথি ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, যিনি সরকারি সফরে বর্তমানে আমাদের দেশে আছেন।
মিস ফ্রেডরিক: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি যখন ওয়াসিংটনে গিয়েছেন, আপনি বলেছেন, আপনি ভারতীয় উপমহাদেশের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে গভীর উপলব্ধি আসা করছেন। আপনি কি মার্কিন কর্মকর্তাদের মাঝে সেই গভীর উপলব্ধি খুঁজে পেয়েছেন?
প্রধানমন্ত্রী: আপনি জানেন, ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি যথেষ্ঠ গুরু গম্ভীর। আমি বলব, আমি এখানে আসার আগে তাদের সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে যে উপলব্ধি ছিল, তাদের এখনকার উপলব্ধি তার তুলনায় যথেষ্ঠ ভাল।
মিস ফ্রেডরিক:
আপনি বলছেন “যথেষ্ঠ ভাল”, যেটা ঠিক “গভীর উপলব্ধি” পর্যায়ে উন্নীত হয়নি। আপনি কি সুনির্দিষ্ট করে বলবেন, “গভীর উপলব্ধি” বলতে আপনি মার্কিন কর্মকর্তাদের থেকে ঠিক কি আশা করেছিলেন?
প্রধানমন্ত্রী: আসলে পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে, এখানে একটি নির্দিষ্ট দেশ বা সরকার বা কর্মকর্তা কি করতে পারে, তা বলা খুব মুশকিল। আমরা শুধু এতটুকু বলতে পারি যে, সেখান যা ঘটছে তার আমাদের মূল্যায়ন আমরা দিতে পারি, এবং পুরো ব্যাপারটিকে আমরা ভারতের গণতন্ত্র এবং ভারতের স্থিতিশীলতার জন্য একটি হুমকি বলে মনে করি। ভারতে আমরা মনে করি যে, আমরা যেভাবে একটি প্রাচীন সভ্যতা থেকে বছরের পর বছর ধরে একটি শক্তিশালী এবং আধুনিক রাষ্ট্র হবার দিকে এগিয়ে চলেছি, তা যদি সামান্য পরিমাণেও বিপন্ন হয়, বিশ্বশান্তির জন্য তা মারাত্বক পরিণতি বয়ে নিয়ে আসবে।
মিস ফ্রেডরিক: আপনি ভারতের গণতন্ত্র এর উপরে হুমকির কথা বললেন, এবং বিশ্বশান্তির উপরে এর মারাত্বক পরিণতির কথা বললেন। সংবাদ মাধমে আমরা সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি, তা যথেষ্ঠই গুরুতর। আপনি কি বলতে চাচ্ছেন, এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র আপনাকে যা করতে বলছে, তা বুমেরাং হবে নাকি যুক্তরাষ্ট্র আপনাকে যা করতে পরামর্শ দিচ্ছে, সেটা আপনার কাছে গ্রহনযোগ্য নয়?
প্রধানমন্ত্রী: কোন কিছু করতে আমাদের পরামর্শ দেওয়া হয়নি। আমি মনে করি, সমস্যা সমাধানের জন্য একটি আন্তরিক প্রয়াস আছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা বিশ্বের সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উপলব্ধি আছে কিনা, আমি নিশ্চিত নই। পশ্চিমা বিশ্বের ভারত এবং পাকিস্তানকে সমতায় রাখার একটা প্রবণতা আছে। এখন সেটা পাকিস্তানকে সাহায্য করবে কিনা আমি বলতে পারবনা।
মি. রোসেন্থাল: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমার মতে, এই মুহূর্তে সবার মনে যে শঙ্কা উঁকি দিচ্ছে, তা হলো ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধের বিপদ। পরিস্থিতির ব্যাপারে আপনার যে মূল্যায়ন, তাতে এই বিপদ কতটা নিকটবর্তী বলে মনে করেন?
প্রধানমন্ত্রী: এটা আসলে বলা খুব মুশকিল। আমরা সারা পৃথিবীর কাছে এই ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, কারন আমরা জানি, পূর্ব বাংলায় যখন থেকে বিশৃখল পরিস্থিতি তৈরী করা হয়েছে এবং শরণার্থীর ঢল নেমেছে, তখন থেকেই সম্ভাব্য যুদ্ধের এই পরিণতির দিকে পরিস্থিতি মোড় নিতে পারে।
এখন যুদ্ধের এই বিপদ যে শুধু আমাদের পূর্ব সীমান্তেই তা নয়, পশ্চিম সীমান্তেও ভারত এবং পাকিস্তানের সেনাবাহিনী পরস্পরের মুখোমুখি অবস্থানে আছে।
ভারত নীতিগতভাবে সবসময় যুদ্ধের বিরুদ্ধে, এবং বিশ্বশান্তি বজায় রাখতে ব্যাপারে আমাদের দৃঢ় অবস্থান আছে। আমরা বিশ্বের অন্যান্য বিভিন্ন সমস্যার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের পক্ষে দাঁড়িয়েছি, কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কি করণীয় তা আমরা বুঝতে পারছি না। আমরা কোন পদক্ষেপ নেবার আগেই, সপ্তাহ খানেক বা দিন দশেক আগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পশ্চিম সীমান্তে মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি, বিশ্ব বিবেক এ ব্যাপারে নীরব, এবং পাকিস্তানিদের এই ব্যাপারে জাতিসংঘে জিজ্ঞেস করলে তারা জানিয়েছে, সেখানে তারা সেনাবাহিনীর নিয়মিত প্রশিক্ষন শিবির পরিচালনা করছে।
পরিস্কারভাবেই এখনকার পরিস্থিতিতে তাদের এই জবাব একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য না। সুতরাং বাধ্য হয়েই আমরাও আমাদের সেনাবাহিনীকে সেখানে নিয়ে এসেছি। এই হলো এখানকার আজকের পরিস্থিতি।
মি. রোসেন্থাল: সত্যি কথা বলতে সীমান্তের উভয় পাশেই যদি সেনাবাহিনী এরকম শক্ত অবস্থান নেয়, তাহলে যে কোন মূহ্র্তেই দুর্ঘটনাক্রমে যুদ্ধ আরম্ভ হয়ে যেতে পারে, যেই যুদ্ধ পরিকল্পনা মাফিক শুরু হয়না। কেউ কেউ মনে করেন, দুর্ঘটনাক্রমে যুদ্ধ এড়ানোর জন্য জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক দল যদি সীমান্তের দুই পাশে থাকে, তাহলে তা একটা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। আমি জানি, আপনি এই ব্যাপারে তেমন উৎসাহী নন। আপনি কি আপনার এই অবস্থানের কারন একটু ব্যাখ্যা করবেন আমাদের কাছে?
প্রধানমন্ত্রী: এখন এই প্রশ্নটিকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। আপনি জানেন, পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ বিরতির চুক্তি মোতাবেক, পশ্চিম সীমান্তে কাশ্মীরে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক দল ইতিমধ্যেই আছে। তাই সেই সীমান্তে আরো জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক আনলে তা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে কিনা, সেই প্রশ্ন অবান্তর। তাই সত্যিকারের প্রশ্ন হলো পূর্ব সীমান্তে তাদের আনা দরকার কিনা। এই মুহূর্তে পূর্ব সীমান্তেও দশজন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের পর্যবেক্ষক আছেন। এছাড়াও এই বিষয়ক কমিশনার জনাব সদরুদ্দিন সাহেব ও সেখানে আছেন বা দু-একদিনের মধ্যে ভারতে এসে পৌঁছাবেন। যদি আরো লোক আসতে চায়, আমাদের দিক থেকে কোন বাধা নেই। আপনি জানেন, আমাদের সেখানে একটি উম্মুক্তসমাজ ব্যবস্থা আছে, যেটা কারো কারো মতে একটু বেশিই উম্মুক্ত। আপনাদের সংবাদ মাধ্যমের লোকজন, রেডিওর লোক, টেলিভিশনের লোক, পত্রিকার সাংবাদিক, আপনাদের সংসদের প্রতিনিধি, এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকগণ পূর্ব সীমান্তে বিভিন্ন ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। তাই আমাদের সেখানে লুকানোর কিছু নাই। কিন্তু আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই মুহূর্তে জাতিসংঘের আরো লোক এনে সমস্যা সমাধানে কোন কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারবে না। আপনাকে যা বললাম, তাদের দশজন প্রতিনিধি ইতিমধ্যেই সেখানে আছে।
প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত, পূর্ব বাংলায় একটি শান্তিপূর্ণ অবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, যাতে নতুন করে আরো শরণার্থীর ঢল না নামে কারন প্রতিদিন সেখান থেকে শরণার্থী আসছে। তাই এটাই সর্ব প্রথম করণীয়। এই পরিস্থিতিতে সীমান্তে পর্যবেক্ষন করে কাজের কাজ কি হবে আমি সত্যি জানি না, এবং যে ক্ষতি এর মধ্যে দিয়ে হচ্ছে সেটা হলো, বিশ্ববাসীর চোখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেব হচ্ছে, সত্যিকারের মানুষের কষ্ট, দুর্দশা, ভুলন্ঠিত মানবতার বদলে বিশ্বের অনেকে এটাকে ভারত-পাকিস্তান বিবাদ হিসেবে দেখছে, যেটা আদৌ সত্যি না। সত্যিকারের বিবাদ হচ্ছে পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক জান্তার সাথে পূর্ব বাংলার জনগণ আর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির। ভারতে শরণার্থীর ঢল নামাতে এবং শরণার্থীর ছদ্মবেশে বা অন্য ভাবে কিছু বাজে লোক এখানে এসে অন্তর্ঘাত কার্য্ক্রম করাতে ভারত এই সমস্যার মধ্যে জড়িয়ে পড়েছে এবং আমি আবার বলছি, আমরা বিশ্বাস করি, এই পরিস্থিতি আমাদের জন্য সত্যিকারের বিপদ ডেকে আনছে।
মি. হ্যারিসন: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, গত এপ্রিল মাসে নয়াদিল্লিতে আমাদের সাক্ষাৎকারের সময় আপনি বলেছিলেন, সংঘাত শুরু হবার পূর্বে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া যদি আরো আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাওয়া অনুমোদন করতেন, তাহলে পূর্ব পাকিস্তানের সরকার স্বাধীনতার জন্য দাবি করত না। আপনার বোধহয় ধারণা হয়েছিল যে পাকিস্তানের দুই প্রান্তের মধ্যে দুর্বল যোগাযোগ এখনো সম্ভব এবং পূর্ব বাংলাকে আরো স্বায়ত্বশাসন দেবার মাধ্যমে একটা রাজনৈতিক মধ্যস্থতা হতে পারে।
আপনি কি এখনো মনে করেন যে জনৈতিক মধ্যস্থতা হতে পারে নাকি গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে পূর্ন স্বাধীনতা অর্জনই বর্তমান অবস্থার একমাত্র সমাধান?
প্রধানমন্ত্রী: পূর্ব বাংলার জনগণ যদি অনুমোদন করে, তাহলে যেকোন কিছুই সম্ভব। আমার মনে হয় না তারা কি অনুমোদন করবে আর কি করবে না, সে বিষয়ে কথা বলার কোন অধিকার আমাদের আছে। এটা তাদের দেশ, তাদের আন্দোলন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তারাই নিবে।
মি. হ্যারিসন: যদি যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম পাকিস্তানকে আর কোন সামরিক এবং অর্থনৈতিক সাহায্য না করে, তাহলে যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করতে তাদের কতদিন লাগবে বলে আপনি মনে করেন?
প্রধানমন্ত্রী: আমার মনে হয়না যে কোন সুনির্দিষ্ট তারিখ বলে দেওয়া সম্ভব, কিন্তু আমরা যেই ধরনের খবরাখবর পাচ্ছি, তাতে গেরিলা কার্য্ক্রম শুধু সীমান্তবর্তী এলাকাতেই সীমাবদ্ধ না, বরং পূর্ব বাংলার একেবারে গভীরে যেমন সবচেয়ে সুরক্ষিত ঢাকা শহরেও চালিত হচ্ছে।
মি. জাব্বালা: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই দেশে এবং অন্যত্র একটা সন্দেহ অনেকদিন ধরেই বিরাজমান যে, ভারত পাকিস্তানকে আপাদত দুর্বল করা এবং ভবিষ্যতে ধংস করে ফেলার গভীর চক্রান্তে লিপ্ত। এখন এই সন্দেহ ঘুচানোর জন্য শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া এবং সাহায্য করা ছাড়া আপনি কি আপনার সরকারের গৃহীত আর কোন সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ এর কথা বলতে পারেন?
প্রধানমন্ত্রী: এই কথা পাকিস্তানের সরকার গত ২৪ বছর ধরেই শুরু থেকেই বলে আসছে। কিন্তু সত্যিকারের অভিজ্ঞতা কি বলে? অভিজ্ঞতা এটাই বলে যে পাকিস্তানই বরং আমাদের উপজাতি বিদ্রোহীদের, সে মিজো হোক বা নাগা হোক, তাদের অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ দিয়েছে। পাকিস্তানই কাশ্মীরকে অস্থিতিশীল করার জন্য সেখানে হাজার হাজার অনুপ্রবেশকারী পাঠিয়েছে, যা সেই বছর সেখানে সংঘাত উস্কে দিয়েছে। আর আপনি দেখছেন, তারা বর্তমানে রেডিও এবং অন্যান্য গণমাধ্যমে উস্কানিমূলক এবং হুমকির ভাষায় কথা বলছে। ভারত এরকম কোন ঘোষণা দেয় নাই এবং আমি আপনাকে নিশ্চিত করে বলতে পারি, ভারতের সরকার বা ভারতের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সেই ধরনের কোন বাসনা নেই। আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নই, এবং পাকিস্তানের জনগনের প্রতি আমাদের বন্ধুভাবাপন্ন মনোভাব আছে। আমরা মনে করি, এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক যে, পাকিস্তান তাদের অস্তিত্ব এবং ঐক্যের জন্য সারাক্ষন ভারতবিদ্বেষের উপরে নির্ভর করে।
মি. জাব্বালা: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি কিছুক্ষন আগে বলেছেন যে, আপনি মনে করেন, ভারতীয় উপমহাদেশের অবস্থা সম্পর্কে নিক্সন প্রশাসনের এখন যথেষ্ঠ ভাল উপলব্ধি হয়েছে। যদি এই যথেষ্ঠ ভাল উপলব্ধির কোন বাস্তব প্রতিফলন তাদের কাজকর্মে দেখা না যায়, তাহলে আপনার প্রতিক্রিয়া কি হবে?
প্রধানমন্ত্রী: আমরা খুবই পরিণত মানুষ মি. জাব্বালা। আপনি জানেন আমাদের চীনের সাথে সংঘাত আছে, কিন্তু আমরা সবসময় সংযত এবং পরিণত আচরণ করে আসছি, এবং আমরা আমাদের মূলনীতিতে সবসময় অটল ও আপোষহীন। যদি যুক্তরাষ্ট্র ভারতের স্বার্থের পরিপন্থী কিছু করে, আমরা অবশ্যই অসন্তুষ্ট হবে, কিন্তু এর জন্য আমাদের মাথা খারাপ হয়ে যাবে না।
মি. স্পিভাক: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পরিস্কারভাবেই আপনি মনে করছেন, এই কঠিন সমস্যার একটা সমাধান আছে। মনে হচ্ছে আমরা কোন সমাধান খুঁজে পাচ্ছি না। জাতিসংঘ ও কোন সমাধান বের করতে পারছে বলে মনে হচ্ছে না। আপনি কি সমাধান প্রস্তাব করছেন?
প্রধানমন্ত্রী: আমরা আগে যেই সমাধান প্রস্তাব করেছিলাম, এবং আমি মনে করি, সেটাই একমাত্র সত্যিকারের সমাধান, সেটা হলো, পূর্ব বাংলার মানুষের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবর রহমানের সাথে কথা বলা উচিত এবং আপনার নিশ্চয় মনে আছে, তিনি গত নির্বাচনে সেখানে বিপুলভাবে নির্বাচিত হয়েছেন, যেমন ভারতে গত সাধারণ নির্বাচনে আমি বিজয়ী হয়েছি। কিন্তু আমি বলব, শেখ মুজিব আমার চেয়েও বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন, এবং তাকে পাকিস্তানি সামরিক জনতার অধীনে অনেক বেশি প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে নির্বাচন করতে হয়েছে। তাঁর নির্বাচনী কার্য্ক্রম, নির্বাচনী প্রচারণা অত্যন্ত সত্তা এবং নিষ্ঠার সাথে সেখানকার সরকার ও জনগনের সামনে পেশ করা হয়েছিল, যার ভিত্তিতে তিনি এরকম ভূমিধস বিজয় লাভ করেছেন।
এখন কথা নাই, বার্তা নাই, আপনি হঠাৎ বললেন, তিনি বিশ্বাসঘাতক। তিনি কিন্তু স্বাধীনতা চাননি আগে। তিনি সীমিত স্বায়ত্বশাসন, ভারতের সাথে বাণিজ্য এরকম কিছু বিষয় চেয়েছিলেন। পাকিস্তানের সরকার বিচক্ষনভাবে হোক আর অবিবেচকভাবে হোক, যেটা আপনি বলেন, তাকে বন্দি করল এবং তাকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে ঘোষণা করল। তারা আবার পুন্:নির্বাচনের চেষ্টা করছে, যেখানে নির্বাচনী জনপ্রতিনিধি বর্তমান আছেন। প্রথমে নির্বাচন করা এবং এরপরে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জোর করে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা, এটা অত্যন্ত আশ্চর্যজনক ব্যাপার। আপনি একদিকে সমস্যা সমাধানের কথা বলবেন, অন্য দিকে যে আপনার বিরোধিতা করবে, তাকে দেশছাড়া করবেন, এটাতো একটা বর্বর ব্যাপার।
মি. স্পিভাক: আমরা কি ধরে নিব, আপনি এখন যা বললেন, সেটাই একমাত্র সমাধানের পথ বলে মনে করছেন?
প্রধানমন্ত্রী: হ্যা, কারন আর কিভাবে আপনি জানতে পারেন যে একটা সমাধান সেখানকার মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্য হবে? আমি বা আপনি আমাদের কাছে যেটা সঠিক মনে হয়, সেরকম সমাধান দিতে পারি, কিন্তু সেটা যদি তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য না হয়, তাহলে সংঘাত চলতেই থাকবে, কেননা এটা তাদের লড়াই, তাদের আন্দোলন, তাদের যুদ্ধ।
মি. স্পিভাক: কিন্তু সেটা কি তাদের একটা অভ্যন্তরীন সমস্যা না?
প্রধানমন্ত্রী: আমরা বলেছি, এটা অভ্যন্তরীন সমস্যা, কিন্তু সেটা শুধু তাদের ভূখণ্ডেই সীমাবদ্ধ নেই, সেটা ভারতের মধ্যে ঢুকে গেছে। আমাদের অর্থনীতির উপরে এর প্রভাব পড়ছে। শুধু নয়, এটা রাজনৈতিক, সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করছে এবং সবচেয়ে যেটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হলো আমাদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে বলে আমরা মনে করছি।
মিস ফ্রেডরিক: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অনেকেই ভাবছেন যে পরিস্থিতি কেন, কিভাবে এতো বেশি উত্তপ্ত হলো, এবং সেখানে একটা বড় ধরনের যুদ্ধের সম্ভাবনা আছে, অথচ ভারত কেন ইউ থান্ট এর সাথে আলোচনায় অনাগ্রহী বা আপনি কেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে সরাসরি আলোচনা করার কথা ভাবছেন না?
প্রধানমন্ত্রী: আমরা সরাসরি আলোচনা করছি না, কেননা এটা ভারত-পাকিস্তানের কোন সমস্যা না। এই সমস্যাটা পাকিস্তানের সামরিক জান্তার সাথে পূর্ব বাংলার জনসাধারণের বা জনগনের দ্বারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের। কেউ থান্ট এর ব্যাপারে বলতে পারি, তিনি আমাদের কাছে সবসময় আমন্ত্রিত কিন্তু এটাও পরিষ্কার হওয়া দরকার, জাতিসঙ্ঘ এখানে কি লক্ষ্য অর্জন করতে চাচ্ছে বা তার সাথে আলোচনা করে কি অর্জন করা সম্ভব। আমরাই প্রথম এই বিষয়ে উনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি অথচ এখন মনে হচ্ছে উনি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আমাদের সাথে কথা বলতে চাচ্ছেন।
মিস ফ্রেডরিক: কিন্তু এই পরিস্থিতি যদি চলতেই থাকে, তাহলে আপনিও হয়তো আমার সাথে একমত হবেন, যে পৃথিবীর বৃহৎ শক্তি দেশগুলোর এতে জড়িয়ে পড়ার ভয় রয়েছে। ভারত সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে প্রথম প্রতিরক্ষা চুক্তি করে ফেলেছে। ঐ দিকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক প্রতিনিধি ভুট্টো পিকিং সফরে গেছেন অবশ্যই কোন সাহায্যের আশায়, কেননা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বলেছেন, তিনি পিকিং এর দিকে ঝুঁকবেন। এখন তাহলে কি হবে? বৃহৎ শক্তিগুলো কি সেখানে জড়িয়ে পড়বে অনিবার্যভাবে নাকি বৃহৎ শক্তিগুলোর সংঘাতে জড়িয়ে পড়া কোনভাবে এড়ানো সম্ভব? প্রেসিডেন্ট নিক্সন কি বলেছেন যে তিনি পিকিং এবং মস্কোর সাথে এই ব্যাপারে কথা বলবেন দেশ দুটিতে সফরের সময়?
প্রধানমন্ত্রী: আমার মনে হয় না, এরকম কোন কথা তিনি নিশ্চিত করে বলেছেন কিন্তু তিনি বলেছেন যে তিনি উদ্বিগ্ন এবং অন্য পক্ষগুলোর এতে কোনভাবে জড়িয়ে পড়া ঠিক হবে না। আমি আগেই পরিষ্কার করে বলেছি, আমরা যে কোন ধরণের যুদ্ধের বিরুদ্ধে এবং যুদ্ধ শুরু হতে পারে, এরকম উস্কানিমূলক কিছু আমরা করব না। কিন্তু একটা বিষয় যে কোন দেশের জন্যই অধিক গুরুত্বপূর্ন। আমরা স্বাধীনতার জন্য অনেক বছর ধরে লড়াই করেছি এবং আমাদের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়লে আমরা তা কিছুতেই বরদাস্ত করব না, সেটা যার দ্বারাই হোক না কেন। আমরা সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে কোন প্রতিরক্ষা চুক্তি করিনি। এটাকে বন্ধুত্ব, সহযোগিতার এবং শান্তির চুক্তি বলা যেতে পারে। আমরা হয়তো তাদের সাথে এটা নিয়ে কথা বলতে পারি, কিন্তু এই চুক্তিকে কোনভাবে সামরিক চুক্তি বলা যায় না।
মিস ফ্রেডরিক: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি তাহলে আর্টিকেল ৯ সম্পর্কে কি বলবেন, যেখানে বলা হয়েছে, দুই দেশের যে কোন এক দেশ আক্রান্ত হলে অন্য দেশ অন্য দেশ তার সুরক্ষায় ব্যবস্থা নিবে? এটাকে কি সামরিক চুক্তি বলা যায় না?
প্রধানমন্ত্রী: এটাকে ঠিক সেভাবে প্রতিরক্ষা চুক্তি বলা যায় না, কেননা সামরিক সাহায্যই আসবে, এরকম কোন সিদ্ধান্ত হয়নি এই চুক্তিতে। তাছাড়া স্বাভাবিক অবস্থায় তাদের সাথে বা অন্য বন্ধু দেশের সাথে আমাদের যেই ধরনের সহযোগিতা আগে হয়েছে, এখানে তার ব্যতিক্রম কিছু হয়নি। আমরা অবশ্যই আশা রাখি, আমরা বিপদে পড়লে শুধু সোভিয়েত ইউনিয়নই নয়, বরং অন্য সকল বন্ধু দেশ আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে।
মি. রোসেন্থাল: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি কিছুক্ষন আগেই চীনের প্রসঙ্গে কথা বললেন। আপনার দেশ যদিও যুদ্ধ চায় না, কিন্তু বাস্তবতা হলো, আপনার দেশ প্রায় দশ বছর আগে চীনের সাথে যুদ্ধে জড়িয়েছে এবং এজন্য আপনাদের যথেষ্ট ভোগান্তি হয়েছে, বলা যায় শোচনীয় পরাজয়। চীন সেনাবাহিনীর উপস্থিতি নিয়ে কি আপনি উদ্বিগ্ন? আপনি কি মনে করেন যে তারা ভারতের জন্য অব্যাহত হুমকি?
প্রধানমন্ত্রী: আমি মনে করি, বিশ্বের প্রতি চীনের দৃষ্টিভঙ্গির যথেষ্ট পরিবর্তন এসেছে এবং ব্যক্তিগতভাবে আমার ধারণা তারা এই ধরণের কোন সংঘাতে এখন জড়াতে চাইবে না। কিন্তু অবশ্যই এই বিষয়ে নিশ্চিতকরে কোন ভবিষ্যৎবাণী করা খুব কঠিন হবে।
মি. রোসেন্থাল: সেটা কি তাহলে আপনার প্রতিরক্ষা সমস্যা অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে বা চীন সীমানায় কি তাহলে তাহলে সেভাবে নজরদারীর সেরকম দরকার নেই বলেছেন?
প্রধানমন্ত্রী: আমার মনে হয়, আমাদের সব সীমান্তেই সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
মি. হ্যারিসন: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ হলো, আপনি কাশ্মীরের বিষয়ে আর পাকিস্তানের বিষয়ে দ্বৈত নীতি অনুসরণ করছেন। একদিকে আপনার দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতা শেখ আব্দুল্লাহ। তিনি বলেছেন, একদিকে আপনি পাকিস্তানের সমালোচনা করছেন শেখ মুজিবর রহমানের বাঙালি নেতাদের জেলে ঢুকানোর জন্য। অন্য দিকে আপনি শেখ আব্দুল্লাহর চলাফেরার উপরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। তিনি গত ৯ মাস ধরে কাশ্মীরে যাবার এবং সেখানে নির্বাচন করার অনুমতি পাননি। আপনি কেন তার চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করছেন?
প্রধানমন্ত্রী: প্রথমত, আমি অবাক হচ্ছি দেখে যে, আপনি এই দুটোর মধ্যে কোন পার্থক্য দেখছেন না। পূর্ব বাংলার মানুষের উপরে চলমান গণহত্যা, তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে গলা টিপে মেরে ফেলা, মেয়েদের পাইকারি হরে ধর্ষণ- নির্যাতন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের হত্যা করা, লক্ষ লক্ষ পূর্ব বাংলার মানুষকে দেশ ছাড়া করে আমাদের দেশে ঠেলে দেবার সাথে কি আপনি শান্তিপূর্ণ কাশ্মীরের কোন পার্থক্য দেখছেন না, যেখানে এখন নির্বাচিত সরকার রয়েছে, যেখানে মানুষ পড়াশুনা, প্রগতি এবং সব ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে?
এটা সত্যি যে আমরা শেখ আব্দুল্লাহর উপরে কিছু বিধি নিষেধ দিয়েছি, কিন্তু তিনি একজন মুক্ত মানুষ। তিনি কাশ্মীর ছাড়া যেকোন জায়গায় স্বাধীনভাবে যেতে পারেন, কিন্তু কাশ্মীরে সর্বোপরি শান্তিপূর্ণ অবস্থা থাকলেও কিছু রাজনৈতিক অস্থিরতা আছে এবং কিছু নিরাপত্তার সমস্যা আছে। তাই আমরা সেখানে যেয়ে ঝামেলা পাকাতে পারে, এমন কারো ঝুঁকি নিতে পারি না।
মি. জাব্বালা: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মিস ফ্রেডরিক এর প্রশ্নের উত্তরে আপনি যা বলেছেন, আমি একটু সেই প্রসঙ্গে ফিরে আস্তে চাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি পাকিস্তানকে সবরকম সামরিক এবং অর্থনৈতিক সাহায্য দেবা বন্ধ করে দেয়, তাহলে তা বর্তমানের সেখানকার রাজনৈতিক অবস্থার সমাধানে কি ভূমিকা রাখবে বলে আপনি মনে করেন?
প্রধানমন্ত্রী: আপনি বুঝাতে চাচ্ছেন, যদি তারা শেখ মুজিব বা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সাথে কোন আলোচনা না করে?
মি. জাব্বালা: না। আমি বলতে চাচ্ছি, যদি আমেরিকা পাকিস্তানকে সামরিক সাহায্য দেবা বন্ধ করে দেয়, তবে তা পরিস্থিতির সমাধানে কি ভূমিকা রাখবে বলে আপনি মনে করেন? তাহলে কি ইয়াহিয়া বাধ্য হবে শেখ মুজিবের সাথে আলোচনা করতে?
প্রধানমন্ত্রী: আমার মনে হয়, আমেরিকা এবং আরো কিছু শক্তিশালী দেশ ইচ্ছা করলে পশ্চিম পাকিস্তানের নেতাদের উপরে চাপ দিতে পারে, যেন তারা পূর্ব বাংলার নেতাদের সাথে সমস্যা সমাধানে আলোচনায় বসে।
মি. স্পিভাক: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমাদের দেশের সংবাদমাধ্যমে অভিযোগ উঠেছে, ভারত বাংলার গেরিলা মুক্তিবাহিনীকে আশ্রয়, অস্ত্র, গোলা বারুদ, গেরিলা ট্রেনিং এবং যাবতীয় সবকিছু দিয়ে সাহায্য করে যাচ্ছে। এই অভিযোগের বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি?
প্রধানমন্ত্রী: খোলাখুলিভাবে আমার বলতে কোন দ্বিধা নেই, পূর্ব বাংলার মানুষের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামের প্রতি আমাদের সমর্থ রয়েছে। আমি আগেই বলেছি, তারা আগে স্বাধীনতা বা বিচ্ছিন্ন হতে চায়নি। তারা গণতান্ত্রিক ভাবে চলে এসেছে, তাদেরকে যেভাবে গণতান্ত্রিকভাবে নির্ভয়ে ভোট দিতে বলা হয়েছে, তারা তাই করেছে অথচ সেই কারণেই আজ তাদের শাস্তি পেতে হচ্ছে। তারা নিজেরাই গেরিলা বাহিনী তৈরী করেছে এবং ততক্ষন পর্যন্ত আমরা কোন হস্তক্ষেপ করিনি। আপনি হয়তো জানেন, ইস্ট বেঙ্গল রাইফেলস এবং ইস্ট পাকিস্তান রেজিমেন্ট থেকেই এই গেরিলা বাহিনী তৈরী হয়েছে। এই গেরিলা যুদ্ধের সেটাই ভিত্তি। তারাই সেখানকার তরুণ যুবকদের যুদ্ধের ট্রেনিং দিচ্ছে। তারা হয়তো কখনো কখনো ভারতের ভূখণ্ডে আসে, কিন্তু তাদের ভিত্তি ভারতে না। ভারতের সীমান্ত থেকে পূর্ব বাংলার গভীরে পর্যন্ত গেরিলা লড়াই ছড়িয়ে পড়েছে। আর্মির ভয়ঙ্কর জুলুম সত্বেও পূর্ব বাংলার সাধারণ জনগনের অভূতপূর্ব সমর্থনের কারণেই একমাত্র তা সম্ভব হচ্ছে।
মি. স্পিভাক: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, “মিট দ্য প্রেস” অনুষ্ঠানে আমাদের আজকের অতিথি হয়ে আসার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
sp;