You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.04 | ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট নিক্সন প্রদত্ত ভোজসভায় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ভাষণ | ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
৬১। ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট নিক্সন প্রদত্ত ভোজসভায় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ভাষণ ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৪ নভেম্বর ১৯৭১

 

ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ৪ঠা নভেম্বর, ১৯৭১
“ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট নিক্সন প্রদত্ত ভোজসভায় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ভাষণ”

আজ আমরা এই বাড়িতে অবস্থান করছি এটা যেমন সত্য। তেমনি বাস্তবিক অর্থেই এই কক্ষ এমন অনেক ইতিহাসের সাক্ষী। অনেক বিখ্যাত মানুষ এখানে ছিলেন, যাদের আদর্শ এবং কর্ম দ্বারা প্রভাবিত ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা অতিক্রম করেছে।

আমার মনে পড়ে, প্রথম যখন আমার বাবা জেফারসন এবং লিংকনের কর্মচঞ্চল এলাকার সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন, বাচ্চা মেয়ে হিসাবে আমি কতটা শিহরিত হয়েছিলাম। সেই দিনগুলোর পরে বিশ্বে অনেক কিছু ঘটেছে। অনেক উত্থান-পতন হয়েছে। কিন্তু কিছু চিন্তা চেতনা আর আদর্শ মানুষকে একত্র করেছিল। যদিও অনেক ভুখন্ড আর মহাসাগর আমাদের পৃথক করে রেখেছে, আমি মনে করি আপনাদের দেশ ও আমার দেশের মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকলেও দুই দেশের মানুষের মধ্যে অনেক মিলও আছে, আমাদের উভয়েরই জাতিগত উপাদানে গঠিত বৃহৎ সমাজ আছে যারা আমাদের ধর্মীয় মুল্যবোধ নিয়ে গর্বিত, এবং চাপিয়ে দেওয়া বিভিন্ন বিষয়ে ক্ষুব্ধ। আমাদের জনগন বন্ধুত্বপূর্ণ এবং উদার, একে অপরকে জানতে চায়, তাড়াতাড়ি তাদের অনুভূতি প্রকাশ করে এবং একই সাথে ক্ষমা প্রদর্শন এর জন্যও তারা সদাপ্রস্তুত।

স্বাভাবিকভাবেই, সেখানে বৈশিষ্ট্য ও মূল্যায়নের অনেক পার্থক্য আছে। এবং যেহেতু আমাদের জনগণ এবং আমাদের আইনসভা টিকে আছে স্পষ্টবাদিতার জন্য, তাই সেখানে বিশ্রী অকপটতার অনেক মুহূর্ত আছে। কিন্তু এটাও মনে রাখবেন যে উভয় সমাজে আমাদের সবচেয়ে স্পষ্টভাষী সমালোচকগুলো আমরাই।

আমি মনে করি একটি সচল গণতন্ত্র এই ধরনের দুর্বলতাকে সবলে পরিণত করে। গত মার্চে আমাদের পঞ্চম সাধারণ নির্বাচনে, মি. প্রেসিডেন্ট যেখানে আপনি অত্যন্ত উদারভাবে উল্লেখ করেছিলেন যে, আমাদের জনগণ গণতান্ত্রিক উপায়ে জাতীয় সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে। তারা জাতিকে দারিদ্রের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রাম করার জন্য নতুন আত্মবিশ্বাস ও তরুণ উদ্দীপনার একটি পরিষ্কার ও সুসঙ্গত নির্দেশনা দিয়েছিল।

১৯৬০ সালের উন্মাদনা যেটি আমাদের প্রবৃদ্ধিকে দুর্বল করে দিয়েছিল সেটা কাটিয়ে উঠেছি। আপনাদের মূলধন ও খাদ্যের দীর্ঘমেয়াদি সাহায্যের কারণে আমাদের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হয়েছিল। বিদেশী সাহায্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটা সরাসরি অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উন্নত দেশগুলোর, বিশেষভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের, অবদান তুলে ধরে। কিন্তু আমাদের জনগনের একান্ত প্রচেষ্টা আর ত্যাগের মাধ্যমে আমরা অভূতপূর্ব এবং দ্রুত সফলতা অর্জন করেছি।

আজ আমরা খাদ্য-শস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বৈদেশিক ঋণ আমাদের সম্পদের সামান্য কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। সবকিছু এত সহজে অর্জিত হয়নি। এবং যদিও এই সময়গুলোতে আমরা অনেক হাসিখুশি ছিলাম, মি. প্রেসিডেন্ট আপনি জানেন, ভারতের জন্য তা কতটা কঠিন ছিল।

খরার সময়ে অনেকেই মনে করেছিল আমরা হয়তো আর বাঁচবো না। কিন্তু ঐ গুরুত্বপূর্ণ সময়টাতে আমরা কৃষিক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিলাম যেটি আজ আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলেছে।

আপনি আমাদের নির্বাচনের কথা বলেছিলেন। তারা খুব সহজে জয়ী হয়নি। আমি তখনই মিসেস নিক্সনকে বলছিলাম যে সব কিছু নিষ্পত্তি করার জন্য আমাদের হাতে সময় খুব কম কারণ আমরা নির্দিষ্ট সময়ের ১ বছর ৩ মাস আগেই নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কারণ জনগন প্রায়ই বলতো “আপনারা সংখ্যালঘু সরকার। আপনাদের এটা করার অধিকার নাই, ওটা করার অধিকার নাই”, এসবে আমরা বিরক্ত হয়ে গেছিলাম। আমরা বলেছিলাম, “ঠিক আছে, তাহলে নির্বাচন করি”। তেতাল্লিশ দিনে আমি ৩৬০০০ মাইল পথ ঘুরেছিলাম। আমি ৩৭৫টা সভায় অংশ নিয়েছিলাম যার মধ্যে কোথাও ১ লাখের বেশী, কোথাও ২ বা ২.৫ লাখ মানুষ হয়েছিল। এটা ছিল একজন মানুষের প্রচেষ্টা, কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই এটা করতে লক্ষ মানুষের দরকার ছিল। আমরা কেন নির্বাচনে জিতেছিলাম তার বড় কারণ আমাদের প্রচেষ্টা না, বরং আমরা জনগণ তথা গরিব মানুষ, ছোট ব্যবসায়ী, গরীব কৃষক, যারা দারিদ্রতার নিম্নসীমায় বাস করে, এবং সর্বোপরী যুবক শ্রেণীর মানুষদেরকে আমরা বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলাম যে আমরা তাদের জন্য যতটুকু করেছি অন্যরা সেটুকু করেনি।

তাই প্রচারনা শুধু দলীয় না জনগণের প্রচারণায় রূপ নিয়েছিল। আমি জানিনা যুক্তরাষ্ট্রে কি হয়, কিন্তু আমাদের দেশের নেতা-কর্মীরা প্রার্থীর ব্যাপারে সমানভাবে উৎসাহী ছিল না। (প্রেসিডেন্ট নিক্সন – আমাদের ক্ষেত্রেও একই) কিছু জায়গায় স্বাভাবিকভাবেই আমরা ভেবেছিলাম আমাদের সবচেয়ে ভালো প্রার্থীকে পেয়েছি। আবার কিছু জায়গায়তে আমরা বিভিন্ন কারনে তা হয়নি। আবার এমন অনেক জায়গা ছিল যেখানে আমরা ভেবেছিলাম আমাদের প্রার্থী জিতবে না, কারণ যারা (মাঠ পর্যায়ের দলীয় নেতা-কর্মী) আমাদের প্রার্থীকে জিততে সাহায্য করবে তারা প্রার্থীকে কোন ধরনের সহযোগীতাই করে নি। কিন্তু আবার এমন অনেক জায়গায় জনগন এভাবে বলেছে যে – প্রার্থী যেই হোক, সে যদি মিসেস গান্ধীর অধীনে প্রার্থী হয় আমরা তাকে নির্বাচনে জিতাব, সেখানে দলীয় লোক কি বলল বা অন্য কেউ কি বলল তা মুখ্য ছিল না। এভাবেই আমরা এই নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলাম।

আমাদের নতুন সংসদে সপ্তাহে মাত্র একবার দেখা হয়েছিল, এবং অন্যান্য সকল রাজনীতিবিদদের মত তখনো আমরা একে অন্যকে পিঠ চাপড়ে অভিনন্দন জানাতেই ব্যস্ত ছিলাম, তখন হটাৎ করেই সমগ্র বিশ্বে পরিবর্তন ঘটে গেল। যেটাকে আমরা সূর্যের আলো ভেবে সামনে এগিয়ে যেতে এবং বাকি সমস্যাগুলো সমাধানের কথা ভেবেছিলাম সেটা অন্ধকারের কালো ছায়ায় ঢেকে গেল। এবং কোন সতর্কবার্তা ছাড়াই আমাদের সীমান্ত জুড়ে গুরুত্বর সঙ্কট সৃষ্টি হয় এবং প্রায় আমাদের গ্রাস করে ফেলে, আমাদের কষ্টার্জিত স্থিতিশীলতাকে হুমকির মধ্যে ঠেলে দিল।

যা ঘটেছিল, তা সমসাময়িক ইতিহাসের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ, আমার এটা নিয়ে ভাবা ঠিক না, কিন্তু আমি কি সেই সমস্যার সত্যিকারের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারি? আপনারা কি ভাবতে পারেন মিশিগানের সমস্ত জনগন হঠাৎ করে নিউ-ইয়র্কে জড়ো হলো? কল্পনা করুন তখন নিউ-ইয়র্ক প্রশাসনিক অবস্থা, স্বাস্থ্য সেবা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা, খাদ্য এবং আর্থিক অবস্থা কেমন হবে? এবং এটা সমৃদ্ধিশালী অবস্থায় ছিলনা, বরং দেশটি ইতিমধ্যে দারিদ্র্য এবং জনসংখ্যা সমস্যার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতেছিল।

আমরা আমাদের উন্মুক্ত সমাজের ঐতিহ্যের মূল্য দিয়েছি। নিশ্চিতভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের জনগন এটা বুঝবে। আপনার সমাজ কি এমন লোক দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়নি যারা সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবিচার থেকে দূরে থেকেছেন? আপনাদের দরজা কি তাদের জন্য সবসময় উন্মুক্ত ছিল না?

প্রত্যেক জাতিকে তার নিজের ক্রুশ বহন করতে হবে। আমাদের জনগণ দৃষ্টান্তমূলক একতা, আত্ননীর্ভরশীলতা, এবং সংযমের সাথে এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। কিন্তু কাছের এবং দূরের প্রতিবেশী এবং অন্য যারা গণতন্ত্রকে গুরুত্ব দেয় এবং গণতান্ত্রিক নীতি মেনে চলে, আমরা তাদের বোঝার এবং আমি আরো বললে – আমরা তাদের থেকে বড় ধরনের সাহায্য কামনা করি।

আমাদের কোন বন্ধু চাইবেনা, এবং বিশেষ করে যারা আমাদের আদর্শের কেউ না, যে আমরা আমাদের দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিক নীতি পরিহার করি। যদি আজ আমরা ভয়াবহ আর্থিক মন্দায় পড়ি এবং আমাদের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হয়, তার জন্য দায়ী থাকবে আমাদের গণতান্ত্রিক নীতি এবং ভৌগোলিক নৈকট্য যেটা আমাদেরকে মধ্যযুগীয় বর্বরতার শিকার হয়ে লক্ষ লক্ষ অসহায় শরনার্থীতে পরিণত করেছে।

পরিস্থিতি আমাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিণতির কথা ভাবার সুযোগ দেয়নি। আমাদের প্রশাসন ইতিমধ্যে বিশাল জনসাধারনের চাহিদা মেটানো নিয়ে চাপে আছে, তার মধ্যে অতিরিক্ত আশ্রয়হীন নয় মিলিয়ন মানুষের দেখাশোনার ঝামেলায় আছে যারা সবাই অন্যদেশী। খরার জন্যে রাখা মজুদ খাদ্য ব্যবহার করা হচ্ছে। উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বরাদ্ধকৃত সীমিত সম্পদের পরিমান ক্রমশই হ্রাস পাচ্ছে।

অপপ্রচার নিয়ে ভাবার থেকে এই অনুষ্ঠান অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জনগন বুঝতে পারছে না যে, কিভাবে আমরা ক্ষতির শিকার হলাম, আমরা যারা সব ধকল বহন করেছি এবং বীরত্বপূর্ন সহিষ্ণুতার সাথে নিজেদের সামলাচ্ছি, আমদের কেন যারা এই দুর্দশার জন্য দায়ী তাদের সমান গণ্য করা হচ্ছে।

এর পরিনাম কতদুর পৌছাবে সেটা এখনো বলা যাচ্ছেনা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এই সমস্যার মূলোৎপাটনের চেষ্টা করা। ভারত এব্যাপারে যর্থাথ উদার প্রতিক্রিয়া দেখাবে।

তন্মধ্যে, আমার দেশের জনগনের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার দায়িত্ব বা কর্তব্য আমি এড়িয়ে যেতে পারি না।

মি. প্রেসিডেন্ট, আমরা আমাদের স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের উপর বিশ্বাস রেখে আপনার সাথে আছি। আমার দেশের আকার, এবং জটিল পরিস্থিতি আমাদের অনেক হতাশাজনক ভবিষ্যদ্বাণীর মুখোমুখি করেছে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত ভারতের অনেক সহনশীল যা সমাজ, বিভিন্ন সঙ্কট থেকে বের হওয়ার সমাধান এবং শক্তির নতুন উৎস ভেদে ব্যাতিক্রম নয়।

মি. প্রেসিডেন্ট, সুচিন্তাভাবনার জন্য সারা বিশ্বেই আপনার তারিফ রয়েছে যার জন্যে আপনি সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আমি নিশ্চিত যে, এত সুন্দর লাবন্যময়ী এবং মনোমুগ্ধকর ফার্স্ট লেডি আপনার শক্তির উৎস।

আজ সকালে, আপনি যখন ঝলমলে রোদের কথা বলেছিলেন, এবং বাস্তবিক অর্থেই দিনটি ছিল অসাধারন। আমি জানিনা এরজন্য আপনি নাকি আমি দায়ী কারণ ভারতে মানুষের ইচ্ছানুযায়ী আবহাওয়া আনার জন্য আমার বেশ সুনাম আছে। স্বাভাবিকভাবেই এটা বৃষ্টি, মোটেই ঝলমলে রৌদ্র না, কারণ আমাদের ফসলের জন্য বৃষ্টি দরকার এবং এমনকি খরার মৌসুমে প্রচন্ড খরার সময়ে, আমি যখন কোথাও যেতাম, সেখানে বৃষ্টি হত, যদিও পার্থক্য তৈরি করার জন্য সেটা নগন্য কিন্তু দুই বা তিন ফোঁটা হত শুধু বলার জন্য যে, “বেশ, আমি সেখানে ছিলাম”।
সম্ভবত, ঝলমলে রৌদ্রজ্জল দিনে আমার কিছু করার ছিল।

কিন্তু ঐ সূর্যকিরণ যখন স্বাভাবিকভাবেই আপনার অতি চমৎকার বাগান ও বাড়ির সৌন্দর্য্য বাড়ায় এবং যেটা আমরা এখান থেকে দেখতে পারছি, আপনি তখন অন্য একটি গাঢ় সূর্যকিরণের উল্লেখ করেন, যেটি আপনি মনে করেন আমাদের বন্ধুত্বকে ব্যাপক অর্থবহ এবং উদ্দেশ্যমন্ডিত করবে।

সুতরাং, যখন আপনি সূর্যকিরণের কথা উল্লেখ করলেন, তখন কিছু একটা আমার মনের মাঝে একটা ঘন্টা বাজল, কিন্তু আমি তাৎক্ষনিকভাবে বিশ্ব নিয়ে ভাবিনি। সেসব বিষয় আমার পরবর্তীতে মনে এসেছিল। আমাদের একটি বেদ গ্রন্থে যা বিশ্বের বিদ্যমান প্রাচীন সাহিত্য, সেখানে একটা উদ্ধৃতি খুঁজে পেলাম – সূর্যোদয়ের সাথে যেমন পদ্ম তার দ্যুতি পায়, তেমনিভাবে বন্ধুদের চিন্তা ভাবনা সুপ্রসন্ন হয় এবং সমৃদ্ধি বয়ে আনে।

সুতরাং আমরা আশা করি এই কক্ষে বন্ধুদের মাঝে হওয়া আলোচনা সমৃদ্ধি বয়ে আনবে। অবশ্যই ইতিমধ্যে আপনার দেশ উন্নতির শিখরে পৌঁছে গেছে, কিন্তু আমরা আশা করি আপনি অন্যদেরও সাহায্য করবেন যারা এখনো সেখানে পৌঁছায় নি, এবং আপনারা আরো উন্নতির চরম শিখরে পৌছান। গ্রহণযোগ্যতা মানুষকে সমৃদ্ধি উপভোগ করতে সাহায্য করে। আপনার সমৃদ্ধ হওয়ার উপাদান আছে। আমরা অনেক দেশ দেখেছি যাদের অনেক কিছু আছে, কিন্তু কোন কারণে জনগন তা উপভোগ করছে না। তারা কিছু একটা খুঁজছে কিন্তু তারা জানে না তারা কি খুঁজছে।

আমি আন্তরিকভাবে এই ইচ্ছা আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করছি, শুধু ব্যক্তিগতভাবে নয় বরং ভারত সরকার এবং ভারতের সমগ্র জনগনের পক্ষ থেকে বলছি যারা যুক্তরাষ্ট্রের জনগনের প্রতি শ্রদ্ধাভাজন এবং বন্ধু সুলভ।

আমি বলেছিলাম, স্বাধীনতার সংগ্রামকালে যুক্তরাষ্ট্রের আহবানে এবং পরবর্তীতে আপনাদের বিজ্ঞানীদের এবং আরো যারা বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞানকে এগিয়ে নেয়ার কর্মকান্ডে আমাদের জনগন কতটা উৎসাহ পেয়েছিল।

ভারতে, যদিও আমাদের অনেকেই আগামী দিন নিয়ে ভাবে, কিন্তু যখন আমরা কিছু বলতে চাই, আমরা নিজের অজান্তেই অতীতে খুজতে থাকি। অনেক কথা আছে যেগুলো হাজার বছর পূর্বে লেখা হলেও সেটা আজো খুব ভালোভাবে লেখা যেতে পারে। আমাদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসে এমন কিছু অংশ (আমি নিশ্চিত আপনাদের আমেরিকাতেও তেমন আছে) এবং কিছু মহান আদর্শ আছে, যত উন্নতিই হোক আর মানবজাতি যত অগ্রসরই হোক আমরা সেগুলো টিকিয়ে রাখতে চাই।

তাই কিছু বিষয় থাকা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ন কিন্তু এর থেকে আরো গুরুত্বপূর্ন হলো কিভাবে তা উপভোগ করবেন এবং তাদের মধ্য দিয়ে কিভাবে আনন্দকে অন্যদের সাথে ভাগাভাগি করবেন।

আমি আপনাকে আবারো একবার ধন্যবাদ দিতে চাই আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য যার জন্য আমার এখানে আশা সম্ভব হয়েছে এবং আপনার সাথে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং আনন্দদায়ক কথা বলার সুযোগ করে দেয়ার জন্য মি প্রেসিডেন্ট, এবং আশা করি আগামীকাল এই প্রসংসনীয় সমাবেশের সুন্দর মনোমুগদ্ধকর পরিবেশে উপস্থিত থেকে আরো অনেক বিশিষ্ট মানুষের সাথে গুরুত্বপূর্ণ সময় কাটাবো।

আমি কি আপনাদের সবাইকে, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি এবং বিভিন্ন সময়ের ফার্স্ট লেডি এবং আগামী দিনের মহান ব্যক্তিবর্গদের সুস্বাস্থ্য কামনা করে এবং আমাদের দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উপলক্ষ্যে ভোজসভার আয়োজনে অংশ নেওয়ার জন্য বলতে পারি?