শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৫৯। লন্ডনস্থ ইন্ডিয়া লীগ এ প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের সারাংশ | ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় | ৩১ অক্টোবর ১৯৭১ |
লন্ডনস্থ ইন্ডিয়া লীগ এ প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের সারাংশঃ
লন্ডন, ৩১ অক্টোবর ১৯৭১
বন্তব্যের চুম্বক অংশ নিম্নরূপঃ
আপনারা সবাই জানেন যে নির্বাচনের আগে, দলীয় বিভক্তির আগে, ভারতে মারাত্মক খারাপ একটি খরা হয়েছে। বিদেশী সংবাদপত্র ছাপিয়েছিল “ভারত কি টিকবে? ভারতের গণতন্ত্র কি টিকবে? ’’ আমরা মারাত্মক ভুল বোঝাবুঝি এবং সমালোচনার স্বীকার হই। যখন আমরা স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করি – প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছিল: ‘আমরা কি অহিংসা দিয়ে স্বাধীনতা জয় করতে পারি? ” তখন প্রশ্ন তোলা হয়েছিল “এত নিরক্ষরতা নিয়ে এমন একটি বিশাল দেশ গণতান্ত্রিক হতে পারে? ” আমরা পাঁচটি নির্বাচনে প্রমাণ করে দিয়েছি যে গণতন্ত্র কাজ করতে পারে এবং গণতন্ত্র ভারতে গভীর শিকড় দিয়ে বিস্তৃত। গণতন্ত্র একটি শিক্ষামূলক প্রক্রিয়া। কারণ প্রতি নির্বাচনে ভারতীয় জনগণ পরিপক্বতা লাভ করে। আমি বলতে পারব না যে সবাই বিজ্ঞতার সাথে ভোট দেয়। কিন্তু যদিও সেখানে মানুষ অপপ্রচারে বিভ্রান্ত করে তাদের ঐ সংখ্যাটা তেমন বড় হয়না।
এই ছিল ভারত পরিস্থিতি যখন আমরা আমাদের নতুন সংসদ গঠন করি। আমরা উচ্চ আশা নিয়ে এসেছি; ভারতের সমগ্র জনগণের আশা নিয়ে। আমরা কিছু প্রোগ্রাম হাতে নেই। কিন্তু এক সপ্তাহ পরে একটি খুব বড় বোঝা আমাদের উপর আসে। এবং এটি আমাদের সীমানা জুড়ে স্থান নেয়। এতে আমাদের জীবনযাপন বিঘ্নিত হচ্ছে। কিন্তু এটা তার চেয়েও আসলে বড় কিছু। আমি দেখেছি ইংল্যান্ড এবং অন্যান্য দেশে যেখানে আমি পরিদর্শন করেছি; সেখানে এই সীমান্ত পরিস্থিতি সমস্যা নেই বল্লেই চলে। আমি বলতে চাই ৯০০০০০০ সংখ্যাটা মোটেই ছোট নয়। এবং অবশ্যই একসাথে এই অতিরিক্ত মানুষের দেখাশোনা করা সহজ কাজ নয়। কিন্তু বাংলাদেশের সমস্যা নিছক ভারতের উদ্বাস্তু সমস্যা নয়। এটা একটি গভীর সমস্যা এবং নানাভাবে আমাদের প্রভাবিত করে। শরণার্থীদের সমস্যা আমাদের জন্য বড় সমস্যা, কারণ তারা একটি বিশাল অর্থনৈতিক বোঝা। তারা সামাজিক সমস্যা, রাজনৈতিক সমস্যা সৃষ্টি করেছে ও সর্বোপরি নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও ভারতের অখণ্ডতা প্রশ্নে আমরা জর্জরিত। আমাদের দেশের বাইরে যা ঘটছে সেটা নিয়েও আমরা সমানভাবে উদ্বিগ্ন। বিশ্ব দেখতে পাচ্ছে কিরমকম নৃশংসতা ও বর্বরতা চলছে যা আমরা শুনেছি শরণার্থীদের কাছ থেকেও – যা রোজ রোজ বাড়ছে নতুন মাত্রায়।
যখন আমি ভারত লীগের জন্য কাজ করছিলাম আমাদের প্রধান চিন্তার বিষয় হল ভারত-এর স্বাধীনতা। কিন্তু তখন ইউরোপে কি ঘটছে সে সম্পর্কে কম উদ্বিগ্ন ছিলাম। কারণ তখন স্পেনীয় গৃহযুদ্ধ ছিল বেশী গুরুত্তপূর্ণ। সে সময় ফ্যাসিবাদ এবং নাত্সিবাদ ইউরোপে শক্তি লাভ করছিল। ভারত লীগ তখন এই সব আন্দোলন সম্পর্কে সজাগ ছিল। আমরা মনে করি মানবতা যেখানে নিষ্পেষিত সেখানেই মানব জাতির পরাজয়।
আজ বাংলাদেশের সমস্যা একই। প্রতিটি মানুষ যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, মৌলিক মানবাধিকারে বিশ্বাস করে – তাদের এটি অনুধাবন করা উচিৎ। অবশ্য যেখানে মানবাধিকার নেই সেখানে কোন গণতন্ত্র হতে পারে না। আমি, অথবা ভারত সরকার, অথবা ভারতের মানুষ, কখনোই পাকিস্তান বা পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে নই। আমরা সবসময় তাদের ভাল চাই কারণ আমরা বিশ্বাস করি এটা আমাদের স্বার্থ যে আমাদের প্রতিবেশী দেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতি বজায় থাকুক। আমরা জানি যে, ঠিক যেমন আমাদের প্রধান সমস্যা দারিদ্র্য ও বৈষম্য তেমনি এটি পাকিস্তানেরও সমস্যা। আমরা গভীরভাবে সেখানে মানুষের মঙ্গলের বিষয়ে উদ্বিগ্ন। কিন্তু আমরা যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির কথা বলি তা শুধুমাত্র আসতে পারে সেখানকার মানুষের চাওয়ার মূল্যায়ন করা হলে। যেখানে আমাদের মানুষ অবহেলিত ও অনগ্রসর সেখানেই আমাদের কাজ করতে হবে। আমরা জানি যে, এটা যাদুর মত মুহুর্তেই সমাধান করা যাবেনা। তবে এই অনুযায়ী আমাদের কাজ করতে হবে। কিন্তু এর জন্য আমাদের প্রতিটি এলাকায় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং জনগণের ন্যায়সঙ্গত ক্ষোভ দূর করতে হবে। মানুষকে নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পরিবেশ দিতে হবে এবং তাদের উন্নয়ন কর্মসূচিকে এগিয়ে দিতে হবে। এটাই গণতন্ত্র। এর জন্য মানুষ আমাদের ভোট দেয়। কিন্তু তাদের সব প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করা উচিত যাতে গণতন্ত্র কাজ করে এবং মানুষের জন্য উন্নত জীবন এনে দিতে পারে।
আমাদের নির্বাচনের আগে সমগ্র পাকিস্তানে নির্বাচন ছিল। সেখানে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমাদের কোনো চুক্তি ছিল না। কিন্তু আমরা অনেক মানুষের কাছ থেকে শুনেছি আওয়ামী লীগের নির্বাচনে জয়লাভ করার সম্ভবনা ছিল। আমরা দেখতে পেলাম একটি অসাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তারা জয়ী হয়। এত বড় জয় হবে তা আমাদের ধারণার বাইরে ছিল। আমার মনে হয় সমস্ত বিশ্বে কোন গণতান্ত্রিক নির্বাচনে এটিই সর্বচ্চ জয়। যখন আমাদের দেশে নির্বাচন হয় স্বয়ংক্রিয় ভাবে যে দল জিতে তার নেতা প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু সীমান্ত জুড়ে ভিন্ন ঘটনা চলছিল। এটি একটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং ভয়ানক দিকে মোড় নেয়। আমাকে বলা হয়েছে যে, ২৪ মার্চ বাংলাদেশের নেতাদের সাথে যে কথা হয়েছিল তার বাইরেও কিছু একটা হতে যাচ্ছে। পরে দেখা গেল এটি ছিল মূলত সমুদ্র পথে সৈন্য আনার জন্য কালক্ষেপণ। তারা মূলত ২৫ মার্চের জঘন্যতার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। গণহত্যার শুরু হয় বুদ্ধিজীবীদের দিয়ে। প্রথম হামলা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং একটি বৃহৎ সংখ্যা, আমি বিশ্বাস করি প্রথম দিনে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ছাত্র, অধ্যাপকদের সহ ৩০০ জনেরও বেশি লোক হত্যা করা হয়।
এরপরে ভারতে বন্যার পানির মত মানুষ আসতে শুরু করল – পরিমাণ এত বেশী ছিল যে সমস্ত বিশ্ব এর আগে এমনটি পরখ করেনি। ভারত উদ্বাস্তুদের আশ্রয়স্থল হিসাবে ব্যাবহ্রিত হয়। এটা আমাদের জন্য একটা নতুন ঘটনা নয়। নতুন জীবন খুঁজে পেতে যারা আমাদের দেশে এসেছে তাদের সাহায্য করার জন্য আমাদের দরজা ঐতিহ্যগতভাবে খোলা রয়েছে প্রায় শত বছর ধরে এটা আমাদের রীতি। কিন্তু যদি কয়েক সপ্তাহের মধ্যে লক্ষ লক্ষ লোক আসে তখন ভারতের মতো একটি বিশাল দেশও তা পরিচালনা করতে পারবেনা। আমাদের জায়গা, টাকা বা উপকরণ কোনটাই নেই। তাই আমরা বাইরে থেকে আসা সাহায্যকে স্বাগত জানাই। কিন্তু, আমি আগেই বলেছি, সাহায্য করতে গিয়ে বিশ্ব যেন ভুলে না যায় যে কেবল মাত্র উদ্বাস্তুদের সাহায্য করাই মূল সমস্যার সমাধান নয়। উদ্বাস্তুদের সাহায্য মানে ভারতকে সাহায্য করা নয়। আবার এটি বাংলাদেশের জন্যও সাহায্য নয়। কারণ আমরা শরণার্থীদের ফেরত পাঠাতে চাই, এবং আমরা সম্পূর্ণরূপে সচেতন যে তারা এই মুহুর্তে সম্ভবত ফিরে যেতে পারবেনা। আরো শরণার্থী আসা বন্ধ করতে হবে। তাদের পরিমাণ এখন ৯০০০০০০ এর অধিক এবং প্রতিটি দিন আরও ৩০ থেকে ৪০০০০ নতুন উদ্বাস্তু আসছে। বেশিরভাগ তথ্য আমরা তাদের কাছ থেকেই পাই।
তাই আমাদের এমন অবস্থা সৃষ্টি করতে হবে যাতে আরও মানুষ নিজেদের বাস্তুভিটা ছেড়ে যেতে বা চায়। এরপর দ্বিতীয় ধাপে আমরা যারা ইতিমধ্যে এসে পড়েছে তাদের যেতে বলতে পারি। প্রশ্ন হল এই মুহুর্তে এটা সম্ভব কিনা – উত্তর হল অবশ্যই না। আমাদের বলা হল জাতিসংঘ থেকে পর্যবেক্ষক গ্রহণ করা। কিন্তু এতে খুব বেশি পার্থক্য হবেনা। সম্ভবত আপনারা জানেন ইতোমধ্যে এখানে তাদের ১০ জন আছে। জাতিসংঘের হাই কমিশন থেকে আসা দশ জন পর্যবেক্ষক আমাদের আছে এবং তারা সেখানে শুরু থেকে আছে। আমাদের লুকানোর কিছু নেই। সীমান্ত, সেইসাথে ক্যাম্পে সব বিদেশী সংবাদদাতারা আছেন। তাদের জন্য সেগুলো সব সময় খোলা থাকে। আপনারা যারা ইংল্যান্ডে বসবাস করছেন তারা ব্রিটিশ সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর দেখেছেন। এবং সম্ভবত আপনারা জানেন যে অনুরূপ রিপোর্ট আমেরিকান পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। ইউরোপের অনেক দেশ এবং বিশ্বের অন্যান্য অংশেও এসব খবর যাচ্ছে। সুতরাং সেখানে যে সংস্করণটি বেরিয়ে আসছে সেটি ভারতীয় সংস্করণ নয়। এটা প্রত্যক্ষদর্শী যারা নিজেরা এই ঘটনা দেখেছ তাদের সংস্করণ। বস্তুত, আমাদের অধিকাংশ তথ্যও এই সব মানুষের কাছ থেকে পাচ্ছি। প্রকৃতপক্ষে সেখানকার উদ্বাস্তু এবং সেইসব মানুষ ছাড়া আমাদের নিজস্ব তথ্য সংগ্রহ করার আর কেউ নেই।
এটা আমাদের জন্য খুবই মারাত্মক সমস্যা। এটা নিছক ভারত-এশিয়ার উদ্বেগ নয় বরং এটি পুরো বিশ্বের উদ্বেগ। সবাই আজ আমাদের বলার জন্য ব্যস্ত যে আমাদের সংযম প্রদর্শন করতে হবে। আমি মনে করি না যেকোনো ব্যক্তি বা কোনো সরকার আমাদের চেয়ে বৃহত্তর সংযম দেখাতে পারবে। তাছাড়া আমাদের উস্কানী ও দেয়া হচ্ছে এবং আমাদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে এবং আমাদের তা দূর করতে হবে। কিন্তু সংযম আমাদের কি দিচ্ছে? এতে কোন সমাধান তো হচ্ছেনা। বরং আমাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক অবস্থা দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে।
লোকজন আমাকে জিজ্ঞাসা করে কতদিন ভারত এভাবে চালাতে পারবে? আসলে সেই তারিখ আগেই গত হয়ে গেছে। আমি মনে করি যে, আমি একটি আগ্নেয়গিরির উপরে বসে আছি এবং আমি সত্যিই জানিনা কখন এটি বিস্ফোরণ হতে যাচ্ছে। তাই আমরা কিভাবে সংযত থাকব সেটি এখন প্রশ্ন নয়। বরং সীমান্তজুড়ে কি ঘটবে সেটাই এখন প্রশ্ন হওয়া উচিৎ। আমরা মনে করি এই যে একটি উপায় খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব আছে। একথাও ঠিক যে, সবচেয়ে ভালো উপায় হলো, মানবিক পথ, রাজনৈতিক সমঝোতা এবং রাজনৈতিক নিষ্পত্তির চেষ্টা এবং এটা হতে পারে শুধুমাত্র বাংলাদেশের জনগণের নির্বাচিত নেতাদের সাথে গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপেরে মাধ্যমে।
এটা আমার কাছে খুব অদ্ভুত মনে হয় এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ কিছু নির্বাচিত ব্যক্তিকে নিখোঁজ করে দিলেই নাকি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে যেখানে তাদের অস্তিত্ব বিশ্বজুড়ে। আপনি হঠাৎ যদি বলেন যে আপনি নতুন নির্বাচন দেবেন এবং তাতেই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে – কিন্তু আসলে তা হবেনা। নির্বাচন যখন হয়েছিল তখন তা অবৈধ হিসেবে গণ্য করা হয়নি। এবং নির্বাচন একই সরকারি কর্তৃপক্ষের অধীনে হয়েছে। তারা একটি ছয় দফা কর্মসূচি দিয়েছে যা উভয় পাকিস্তান এর লোকদের দ্বারা সমর্থিত ছিল। কেউ তাতে আপত্তি করেনি। কিন্তু তারা আপত্তি উত্থাপন করেছে যে তারা ৬ দফা মানেনা।
আজ ভারত খুবই গুরুতর পরিস্থিতির মুখোমুখি। সত্যি বলতে, আমি জানিনা এটা কিভাবে মোকাবেলা করব। আমি শুধুমাত্র দেখতে পাচ্ছি যে দিন দিন পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। সঙ্কট আরও তীব্র হয়ে উঠছে। ভারত একটি দেশ যা সবসময় যুদ্ধের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছে। আমরা সব সময় বিশ্বাস করি সমস্যা ও বিরোধ আপস এবং আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। কিন্তু জাতীয় স্বার্থের বিবেচনায় আমি আমাদের জনগণের স্বার্থ, তাদের নিরাপত্তা এবং তাদের স্থায়িত্ব বিঘ্নিত হতে দিতে পারিনা। আমি ভারতে আমার জনগণকে বলতে চাই এই অবস্থায় আমাদের এক থাকতে হবে এবং ঠাণ্ডা মাথায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। যাই ঘটুক না কেন, আমরা না শুধুমাত্র অদূর ভবিষ্যত না দূরবর্তী ভবিষ্যতের কথাও মাথায় রাখব। আমাদের নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য স্বাধীনতার আগে এবং স্বাধীনতার পর যা ভেবেছি সেভাবে কাজ করে যেতে হবে।
আমি শুধু বলতে চাই যে এই দূরত্বে বসে মানুষ শুধুমাত্র আমাদের ভুল, অভাব, দুর্বলতা আর কলহ দেখতে পায়। কিন্তু বাস্তবে এই সব জিনিস বিদ্যমান নয়। আপনারা যদি মনে করেন এটি সমগ্র ভারতের চিত্র তাহলে ভুল হবে। আমরা ষোলটির বেশী ভাষায় কথা বলা দেশ। কিন্তু সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এবং ঐ সব ভাষার প্রত্যেকটিতে ইউরোপের যে কোনো দেশের জনসংখ্যার চেয়ে বেশী লোক কথা বলে। আমরা হস্তক্ষেপ করতে চাই না, আমরা অভিন্নতা চাই না। কিন্তু সত্য যে তার পরেও বিভাজন-প্রক্রিয়া, আন্দোলন ক্রমাগত স্থান দখল করে আছে। তবুও ভারতীয় ঐক্যের সুদৃঢ় ভিত্তি আছে। ভারতীয়দের আছে শক্তিশালী আত্মবিশ্বাস। বলা হয়েছিল আমরা কিছু করতে পারিনা এবং আমরা দেখিয়েছি যে, আমরা করতে পারি। আমি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কে, গণতন্ত্র সম্পর্কে কথা বলেছি। ইন্ডিয়ার উইকলি পত্রিকা বলেছিল ভারত কোনোদিন তার ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাবারের ব্যাবস্থা করতে পারবে না। অথচ এই বছর, ১৯৭১ সালে আমরা সম্পূর্ণরূপে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হই। যদিও আমরা শুধুমাত্র গম ও চালের দিকে মনোযোগ দিয়েছি। আমাদের এখনো অনেক গবেষণা করতে হবে। অন্যান্য ক্ষেত্র সব ধরণের উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের বলা হয়েছিল যে আমাদের পরিকল্পনা কাজ করবে না। পরিকল্পনার অবশ্যই উত্থান পতন আছে কিন্তু আমরা এটিকে নির্দিস্ট দিকে ধাবিত করেছি। এটা সত্য যে আমরা মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন। কিন্তু মনে করি না যে আমরা হতাশ। মনে হয় না যে আমরা নিরুৎসাহিত। আমাদের সাহস পরিপূর্ন, আত্মবিশ্বাস পূর্ণ এবং আমরা জানি যে আমরা ধৈর্য ধরে অবশ্যই ভারী বোঝা বহন করতে পারব। আমরা সাহায্যের হাতকে স্বাগত জানাই এবং আপনাদের সমর্থন চাই। তবে আমরা কারো সাহায্য বা সহানুভূতি উপর পুপোপুরি নির্ভরশীল নই।
আরেকটি প্রশ্ন হল কেন আমরা আমেরিকানদের বাদ দিয়ে রাশিয়ার কাছে গেছি। সত্যি বলতে আমরা আসলে কারো কাছে যাইনি। আমাদের সাহায্য যদি কেউ করতে চায়, আমরা না বলতে পারিনা। আমাদের জাতীয় স্বার্থের জন্য ভালো হবে এমন যে কোন কিছু আমরা সাদরে গ্রহণ করতে রাজি আছি।
অর্থনৈতিক উন্নতি ও প্রবৃদ্ধির জন্য দারিদ্র্য ও বৈষম্য কমিয়ে আনা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। তা হল আমাদের স্বাধীনতা। আমরা শুধুমাত্র সেই সাহায্য গ্রহণ করছি যা আমাদের স্বাধীনতার উপর কোন প্রভাব ফেলবে না। আমরা সবসময় বন্ধু দেশের সঙ্গে বিশ্বাস স্থাপন করেছি এবং আমরা এটি অব্যাহত রাখব কিন্তু আমি আগেই বলেছি, আমাদের জাতীয় স্বার্থে অনেক কিছু বিবেচনায় আনা লাগতেS পারে – এবং আমরা সবসময় তার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।