শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৫৭। ভিয়েনায় অস্ট্রিয়ান সোসাইটি ফর ফরেন পলিসি এন্ড ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স এ প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার সারাংশ | ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় | ২৮ অক্টোবর ১৯৭১ |
ভিয়েনায় অস্ট্রিয়ান সোসাইটি ফর ফরেন পলিসি এন্ড ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স এ প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার সারাংশ, ২৮ অক্টোবর, ১৯৭১
আপনারা জানেন গত সাত মাস ধরে আমাদের সীমানায় গুরুতর অবস্থা চলছে। সম্ভবত আপনারা জানেন যে পাকিস্তানের দুই অংশ ভারতীয় অঞ্চলের হাজার হাজার মাইল দ্বারা ভাগ করা। পরিস্থিতি সৃষ্টি হবার কারণ পূর্ব বাংলার জনগণের বৈধ অধিকারকে সময় মত মূল্য না দেয়া। যখন নির্বাচন সংঘটিত হয় শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী পার্টির নেতা ছিলেন। তখন একটি ছয় দফা কর্মসূচি ছিল। এতে তারা পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন চেয়েছিল, স্বাধীনতা নয়। তারা ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত রাখতে চেয়েছিল। কারণ পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেহেতু এই বাণিজ্য বন্ধ ছিল তাই তারা চেয়েছিল ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য।
এই দফা প্রকাশ্য ছিল এবং এই দফার ভিত্তিতে নির্বাচন হয়। কেউ বলতে পারবেনা যে এখানে কিছু গোপন করা হয়েছিল। কিন্তু যখন শেখ মুজিবুর রহমান সংখ্যাগরিষ্ঠভাবে জয়ী হন তখন শোষক সরকার এটাকে ভালভাবে নেয় নি।
আরও একটি জিনিস আমি বলতে চাই। এই সংখ্যালঘুর প্রশ্ন না। সম্পূর্ন পাকিস্তানকে এক ধরলে পূর্ববাংলার জনগণ সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু সরকার স্বাভাবিক গণতন্ত্রের পরিবর্তে আলোচনার নামে আরও সৈন্য আনে এবং সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে যা বিশ্ববাসী দেখছে। পূর্ববাংলার জনগণ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিচ্ছে। তাদের সমগ্র জনসংখ্যার প্রায় ১৩ শতাংশ ঘর ছেড়ে চলে যাচ্ছে। শরণার্থী ও নিহতদের মধ্যে হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী লোক আছে। শুরুতে বিশেষ বিশেষ লোকদের – যেমন পণ্ডিত লেখক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক হত্যা করা হয়। ২৫ মার্চ রাতে বৃহস্পতিবার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিশেষ আক্রমণ করা হয় এবং ৩০০ জনেরও বেশি লোক-ছাত্র, অনুষদ সদস্য এবং অন্যান্য দের নিহত করা হয়েছিল।
শত শত বছর ধরে ভারত উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দিয়েছে – কিন্তু এবার তাঁর সংখ্যা ও প্রবেশের হার অনেক বেশী। তাই সমস্যার আকার এবং চরিত্র ভিন্ন। আমাদের দেশে সৃষ্ট উত্তেজনা – রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক – সব দিক থেকে সৃষ্টি হয়েছে। এটি আমাদের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকি স্বরূপ।
আমাদের উন্নতিতে আমাদের জনগণের অধৈর্য শাণিত হয়েছে। এটা সত্য নয় যে গরীবরা আরও গরীব হয়েছে – তাদেরও কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু এটা সত্য যে তারা তাদের দারিদ্র্যকে অনেক সূক্ষ্মভাবে দেখে। তাই তারা আর অপেক্ষা করতে প্রস্তুত নয়। আমরা সমাজতন্ত্রের পথে চলে যাব কারণ আমার মনে হয় অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকলে সত্যিকারের গণতন্ত্র হতে পারে না। এমনকি সংবিধান সমান অধিকারের কথা বললেও জনগণ এর থেকে লাভবান হতে পারবে না। তাই ভারত যদি তার স্থায়িত্ব বজায় রাখতে না পারে তাহলে এটা পূর্ব এশিয়ার জন্য এমনকি বিশ্বের শান্তির জন্যও হুমকি। অনেক দেশের সরকার এবং সংসদীয় নেতাদের বিষয়টি বোঝানো হয়েছে কিন্তু অনেকে অভিনয় করছেন, বলা যায় কিছুটা অন্তর্দৃষ্টির অভাব।
আমি অস্ট্রিয়াতে যে বোঝাপড়া ও সমবেদনা পেয়েছি তার জন্য কৃতজ্ঞ। অনেক সাধারণ মানুষ, একজন মহিলা যিনি শাকসবজি বিক্রি করেন, অনেক শিশু, এরকম বিভিন্ন গ্রুপ, আমার কাছে এসেছেন তাদের সহানুভূতি প্রকাশ করার জন্য এবং এমনকি ছোট ছোট অনুদান দিতেও। আমি এই সহানুভূতির জন্য কৃতজ্ঞ এবং যে সব মানুষ এই কঠিন সময়ে বন্ধুত্বের হাত প্রসারিত করেছেন তাদের অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এটাই বিশ্বের শান্তির ভিত্তি: যখন অন্যরা সমস্যায় পরে আমরা আমাদের নিজস্ব ক্ষমতা অনুযায়ী সাহায্য করার চেষ্টা করি।