শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৫৪। পশ্চিম জার্মান টেলিভিশনে প্রচারিত প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজিবন রামের সাক্ষাতকার | দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৭ অক্টোবর ১৯৭১ |
পশ্চিম জার্মান টেলিভিশনে প্রচারিত প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রামের সাক্ষাতকার
২৬ অক্টোবর, ১৯৭১
সাক্ষাত্কারের উপর একটি রিপোর্ট:
প্রশ্নঃ প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে ভারত যুদ্ধের কত কাছে?
উত্তরঃ আমাদের উদ্দেশ্য সবসময় শান্তিপূর্ণ ছিল। আমরা যুদ্ধ চাই না। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী বিদেশে ব্যস্ত সময় কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদি যুদ্ধ আসে তাহলে তার দায় সম্পূর্ণরূপে পাকিস্তানের উপর হবে।
প্রশ্নঃ সম্প্রতি আপনি বলেছেন: যদি যুদ্ধ হয়, এটা পাকিস্তানের মাটিতে হবে, এবং যাই হোক আমরা লাহোরে সোজা চলে যাব এবং সেখানে যা হবার হবে – আপনি কি মনে করেন যে, এই মন্তব্য দিয়ে, আপনার প্রধানমন্ত্রী আত্মরক্ষামূলক ভঙ্গি বুঝিয়েছেন?
উত্তরঃ ঠিক সেরকম নয়। আমরা সবসময় আত্মরক্ষামূলক। কিন্তু আত্মরক্ষামূলক মানে এই নয় যে, যদি আমাদের দেশ আক্রমণ করা হয়, আমরা শুধুমাত্র সীমান্তে বা আমার মাটিতে বসে থাকব। এর মানে হল যে আমরা হানাদারদের ঠেলে নিয়ে যাব তাদের দেশে। এবং আত্মসমর্পণ করতে তাদের বাধ্য করা হবে। এটার মানে আগ্রাসন নয়।
আমি সবসময় বলে যে আমরা যুদ্ধ চাই না। যদি আমরা আক্রান্ত হই অবশ্যই আমরা আমাদের দেশ রক্ষার জন্য লড়াই করব। কিন্তু প্রতিরক্ষা শুধু সীমান্তে যুদ্ধ বা তার সীমানায় ঠেলাঠেলি নয়।
প্রশ্নঃ বর্তমানে সীমান্তে সৈন্য অবস্থানকে কিভাবে দেখেন?
উত্তরঃ আপনারা পুরো বিতর্কের উৎপত্তি জানেন। আমি জানি না কিভাবে কি ঘটবে না ঘটবে তাঁর জন্য আমরা দায়ী হতে পারি? এটা পূর্ববাংলার সঙ্কট। আমাদের নাক গলানোর কিছু নাই। যদি জেনারেল ইয়াহিয়া খান দুষ্ট চক্রান্ত করে ভারতে প্রায় সাড়ে নয় মিলিয়ন লোক পাঠিয়ে ভারতের অর্থনীতি এবং সামাজিক উত্তেজনা তৈরি না করত তাহলে আমরা এতোটা জড়িত হতাম না।
তাছাড়া, তিনি ঘোষণা দেন যে তিনি আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন যদি বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা পূর্ববাংলার কিছু এলাকা মুক্ত করে ফেলে।
এখন যদি মুক্তিযোদ্ধারা নির্দিষ্ট এলাকা মুক্ত করে ফেলে তাঁর জন্য আমরা কেন শাস্তি পাবো? এবং তার ঘোষণা ফলোআপ করার জন্য তিনি সীমান্ত এলাকায় সেনানিবাস থেকে তার সৈন্য পাঠিয়েছেন। এখন, যে কোন দেশের যে কোন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, এই অবস্থায় তাঁর দেশ এবং সীমানার নিরাপত্তা রক্ষা করার জন্য অবশ্যই ব্যবস্থা নিবে।
প্রশ্নঃ কীভাবে আপনি পাকিস্তানীদের সাথে আপনার কমান্ডের অধীনে সেনাবাহিনীর শক্তির তুলনা করবেন?
উত্তরঃ ভারতের যুদ্ধ শক্তি পাকিস্তানের চেয়ে অনেক অনেক গুন বেশী।
প্রশ্নঃ যুদ্ধ লাগলে কতদিন স্থায়ী হবে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তরঃ এসব বিষয়ে বলা খুব কঠিন। বর্তমান যুগে কোনো নিষ্পত্তিমূলক যুদ্ধ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। যুদ্ধ চলতে থাকে এবং বিশ্বের ক্ষমতাধররা এসে যুদ্ধবিরতির জন্য চেষ্টা করে।
প্রশ্নঃ কীভাবে আপনি সীমান্ত পরিস্থিতি মূল্যায়ন করবেন?
উত্তরঃ দুই দেশের সেনারা সীমান্তের উভয় পাশে জমা হচ্ছে। একথাও ঠিক যে, সীমান্ত পরিস্থিতি ভয়াবহ, এবং আমি বলতে পারি পাকিস্তানি সেনাদের ব্যাপক কার্যক্রমের জন্য আমরা আমাদের সৈন্য রাখতে বাধ্য হয়েছি। যখন সৈন্যরা সীমানা জুড়ে একে অপরের মুখোমুখি হয়, তখন অবস্থা গুরুতর হয়।