শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৫০। কয়েকটি রাষ্ট্র সফরে যাওয়ার প্রাক্বালে দেশবাসীর উদ্যেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর বেতার ভাষণ | ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় | ২৩ অক্টোবর ১৯৭১ |
জাতির উদ্যেশ্যে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সম্প্রচারিত ভাষণ
২৩ অক্টোবর ১৯৭১
কাল সকালে, আমি কিছু দেশে সফরে যাচ্ছি। আমি বলতে চাই যে, আমি যত দুরেই যাই আমি আপনাদের সাথই থাকব। এইরকম একটি মুহূর্তে আমি বসে থাকতে পারিনা। আমাদের দেশ বিপদের সম্মুখীন। তা সত্ত্বেও, অনেক চিন্তার পর, আমি যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অন্যান্য দেশের নেতাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য ও মতামত বিনিময়ের জন্য দীর্ঘদিনের আমন্ত্রণ ছিল। আমি তাদেরকে আমাদের বর্তমন পরিস্থিতির বাস্তবতা সম্পর্কে বলতে চাই।
আমাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারে আমরা যখন কোন সমস্যায় পড়ি তার সমাধান আসলে আমাদের হাতেই থাকে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি এমন যে আমরা এটাকে এভাবে চলতে দিতে পারিনা। শুধু রাগ বা তাড়াহুড়া করে আমরা অবস্থান নষ্ট করতে চাইনা। শুধুমাত্র আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপর নির্ভর করে বসে থাকলেই চল্বেনা। এই মুহুর্তে আমাদের সব মানুষের সতর্কতা প্রয়োজন। গত কয়েক মাসে, সাহস, মর্যাদা ও সংযম দিয়ে আমরা এই চ্যালেঞ্জ প্রতক্ষ্য ও মোকাবেলা করেছি। আমি নিশ্চিত যে ভবিষ্যতে আপনারা যে কোন বিপদ একই ভাবে মোকাবিলা করবেন। আমাদের ঐক্য ও শৃঙ্খলা প্রয়োজন। আমি আন্তরিকভাবে আশা করি যে আমাদের সকল রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের সাথে দাঁড়াবেন।
দেশের প্রত্যেকটি জনগণ তাদের বাড়িতে কষ্ট করছেন। জাতির সম্পদ রক্ষা করা এবং আরো সম্পদ বাড়াতে আমাদের সব রকমের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। কৃষি ও শিল্পে আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। কৃষক ও শ্রমিক, ব্যবস্থাপক ও কারখানার মালিক সবাই একটি অতিরিক্ত জাতীয় দায়িত্ব হিসেবে তদের সর্ব শক্তি দিয়ে এটা করার চেষ্টা করবেন।
যে কোন সংকটে, মজুদ দেশ-বিরোধী অপরাধ। ব্যাবসায়িদের একটি বিশেষ দায়িত্ব এই সময়ে লাভের আশায় দাম বৃদ্ধি না করা। আমাদের আরও কাজ করতে হবে এবং সঞ্চয় করতে হবে। গুজব ছড়ানো্, সাম্প্রদায়িকতা উস্কানি ইত্যাদি আমদেরকে প্রতিহত করতে হবে।
বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তুর অন্তঃপ্রবাহ আমাদের জন্য একটি বোঝা। তবুও আমরা আমাদের সীমান্তে সঙ্কটের পরেও তাদের দেখাশোনা করছি – এই মুহুর্তে তারা ভূমিহীন এবং বেকার। আমরা পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। ভারতীয় জনগণের অসুবিধা সাময়িক এবং একটি ভাল এবং শক্তিশালী দেশ গড়ে তোলার ব্যাপারে আমাদের আরও আন্তরিক হতে হবে।
আমার সংহতি এবং ভারতীয় জনগণের প্রতি দায়িত্বানুভূতির কারণে আমাকে এই সফরে যেতে হবে। দল ও ধর্মগত সব পার্থক্য মুছে যাক। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই এবং একসাথে দাঁড়াই। আসুন আমরা একসাথে কাজ করি। আমাদের জাতির অখণ্ডতা ও স্বাধীনতা ধরে রাখতে একসাথে কাজ করি।
জয় হিন্দ