You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিফৌজের দুর্বার অভিযান অব্যাহত শত্রুপক্ষ মরিয়া হইয়া আবার বিমান বহর নামাইয়াছে

(নিজস্ব প্রতিনিধি)। বাঙলার নগরে প্রান্তরে মুক্তিযােদ্ধাদের দুর্বার অভিযান অব্যাহত। প্রতিদিনই বিজয়ের সংবাদ আসিতেছে। মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার দুর্জয় শপথে বলীয়ান অপরাজেয় মুক্তি বাহিনী প্রতিটি রণাঙ্গনে জীবন মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করিয়া লড়িয়া যাইতেছেন। ছিনাইয়া আনিতেছেন একটি একটি করিয়া জয়ের মালা। শত্রুকে করিতেছেন পর্যদস্তু কোণঠাসা বাড়াইতেছেন মুক্তাঞ্চলের পরিধি ।  কসবা মুক্ত খবরে প্রকাশ, কুমিল্লা রণাঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ কসবা শহরটি মুক্তি বাহিনীর সম্পূর্ণ অধিকারে । ১৩ই অক্টোবর হইতে এক সপ্তাহব্যাপী দুই পক্ষ তুমুল লড়াইয়ের পর গত বৃহস্পতিবার মুক্তিবাহিনী কসবা | শহরটির দখল নেয় ও নদীর পূর্ব তীরে দুই শত বর্গমাইল এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ সুপ্রতিষ্ঠিত করে। এই যুদ্ধে শত্রুপক্ষে শতাধিক হতাহত হয় বিস্তারিত খবর পাওয়া যায় নাই। স্থলপথে আঁটিয়া উঠিতে না পারিয়া হানাদার বাহিনী বিমান হইতে বােমা ও গুলি বর্ষণ করে। মুক্তিবাহিনীর অগ্রাভিযান অব্যাহত রহিয়াছে। ছাতক উদ্ধার সাতদিন একটানা যুদ্ধের পর সিলেটের শিল্পশহর ছাতক মুক্তি বাহিনীর দখলে আসে। মুক্তি বাহিনীর সদর দপ্তরের সমর বুলেটিনে এ খবর জানা যায়। এই ছােট শহরটিতে মুক্তি বাহিনী অসম সাহসিকতার সাথে লড়ে। শত্রুপক্ষ স্যার জেট বােমারু বিমান ব্যবহার করে। সাতদিনের লড়াইয়ে পাকবাহিনীর একজন মেজর ও একজন ক্যাপ্টেন সহ ৫০ জন প্রাণ হারায়। একজন ব্রিগেডিয়ার আহত হয়। মুক্তি বাহিনী ছাতকের চতুর্দিকের সকল যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন করিয়াছে। এই রিপাের্ট লেখা পর্যন্ত শহরটি মুক্তি বাহিনীর দখলে এবং পাক বাহিনী ১০ মাইল দূরবর্তী সুনামগঞ্জে অবস্থান করিতেছে।

তবে ব্যাপক বিমান হামলার আশঙ্কা আছে। জাহাজ নিমজ্জিত মুক্তিবাহিনীর সমর বুলেটিনে প্রকাশ, মুক্তিবাহিনীর নৌ কম্যাণ্ডোরা গত ৮ই অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দরে আরও দুইটি জাহাজ ডুবাইয়া দিয়াছে। ইহাদের মধ্যে নাসিম’ নামে একটি পাকিস্তানী জাহাজে ২টি। ট্যাঙ্ক বহন করা হইতেছিল ও অপর একটি গ্রীক জাহাজ ‘অ্যাভিলস’। আবার বিমান হামলা : আগুনে বােমা পাকিস্তানের বােমারু বিমানগুলি আবার হানা দিতে শুরু করিয়াছে। গত সপ্তাহে কুমিল্লা, সিলেট, ঢাকা ও ময়মনসিংহের গ্রামাঞ্চলে হানাদার দস্যুরা বিমান আক্রমণ চালাইয়া অনেক বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করে। ছাতক ও কসবায় মুক্তি বাহিনীর সাথে সংঘর্ষ ছাড়াও গেরিলাদের তৎপরতা প্রতিহত করার জন্য হানাদার পিশাচরা ঢাকার শিবপুর, কাপাসিয়া ও রায়পুরায় আগুনে বােমা বর্ষণ করিয়া গ্রাম বাজার পুড়াইয়া দিয়াছে। অপরাজেয় ঢাকা শত্রুর সহস্র আঘাতে জ্বলেপুড়ে ছারখার, তবু ঢাকা নগরী মাথা নােয়ায় নাই ।। রয়টারের খবর, গত মঙ্গলবার সকালে মতিঝিলের একটি ব্যাঙ্কের সামনে একটি গাড়ীতে বােমা ছুড়িয়া গেরিলারা ২ জন শত্রুকে খতম ও ১১ জনকে আহত করিয়াছে। আমাদের প্রতিনিধি খবর দিতেছেন, গত ৫ই অক্টোবর পিলখানায় ইপি আর হেড কোয়ার্টার্সের ১নং গেটে গেরিলারা গ্রেনেড ছােড়ে। ঐ দিনই নবাবপুর রােডে পাক সামরিক বাহিনী ও দালালদের আড্ডাখানা পেশােয়ার হােটেল (বিখ্যাত মরণচাদ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারকে হানাদাররা এই নামে রূপান্তরিত করিয়াছে) হইতে বাহির হইবার সময় গেরিলারা বােমা ছুড়িয়া দুই জন হানাদারকে খতম করে।

মুক্তিযুদ্ধ । ১; ১৬

২৪ অক্টোবর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!