শীত আসছে,
মায়েরা তৈরী হােন। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম পশ্চিম পাকিস্তানী কায়েমী স্বার্থ ও তাদের বেতনভূক রাজনৈতিক ভৃত্যদের শােষণে বাঙলাদেশ সর্বহারা। অধিকার হারা । দুঃখের ভরা দরিয়ায় সে নিমজ্জমান । এই অসহনীয় অবস্থা থেকে সাড়ে সাত কোটি মানুষকে উদ্ধারের জন্যেই বঙ্গবন্ধু বলেছেন, এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।’ তিনি বলেছেন, অত্যাচারীদের খতমের জন্যে বাঙলাদেশের প্রতিটি ঘরকে দুর্গ বানিয়ে তােল। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অনুযায়ীই বাঙলাদেশে মুক্তি সংগ্রাম শুরু হয়েছে। বাঙলার দুঃসাহসী দামাল ছেলেরা ঝাপিয়ে পড়েছেন অত্যচারী হানাদারদের বিরুদ্ধে। রক্তের জবাব তাঁরা রক্তে দিচ্ছেন। বাঙলার। বিরাট অঞ্চল আজ শত্রু কবলমুক্ত। বঙ্গজননীর যে সব সােনার টুকরাে ছেলে জীবনপণ করে আজ পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়ছেন, তারা আমাদের ভাই। তাদের বীরত্বে আমরা গৌরবান্বিত। কিন্তু তাদের গৌরবে আমাদের গৌরবান্বিত হলেই চলবে না। আমরা মায়েরা, মেয়েরা সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর অর্ধাংশ। এই অর্ধাংশ যদি হা-পা গুটিয়ে থাকেন, তাহলে নারীত্ব, মাতৃত্বের পক্ষে অপমানকর ।
কোন দেশের মুক্তি সংগ্রামই মা-বােনদের অন্তহীন ত্যাগ ছাড়া সফল হয়নি। মুক্তির পাঠপীঠে পুরুষের সঙ্গেই তাই নারীর স্থান। তবে রণক্ষেত্র যারা লড়াই করেন, তারাই শুধু মুক্তি-সৈনিক নন। সে সংগামে যারা সহযােগিতা করেন মুক্তি সম্রামের ইতিহাসে তাদের ভূমিকাও বরেণ্য। সে দিক দিয়ে আজকের মুক্তি যুদ্ধে স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে সাড়ে সাত কোটি বাঙালীই মুক্তি সেনা। এ যুদ্ধে আমরা মায়েরা-মেয়েরা কি ভূমিকা গ্রহণ করতে পারি? আমরা পারি মুক্তি ফৌজকে আশ্রয় দিতে পারি পাক হানাদারদের গতিবিধি ও অবস্থানের কথা মুক্তি সেনাদের জানিয়ে দিতে। করতে পারি তাদের অসুস্থতায় সেবা, জোগাতে পারি তাদের ক্ষুধায় অন্ন। ঘর ছাড়া, বান্ধব ছাড়া এই সব সােনার টুকরাে ছেলে আমাদের স্নেহে, আমাদের সেবায় তৃপ্ত হয়ে নতুন উদ্যমে শক্র বাহিনীর উপর ঝাপিয়ে পড়তে পারেন। সামনেই শীত। মুক্তি যুদ্ধ তখন চলবে প্রচণ্ডভাবে। সে শীতে গরম জামা না থাকলে, মুক্তি যােদ্ধাদের অসুবিধা হবে। সুতরাং আসুন, এখন থেকেই গরম জামা-কাপড়ে আমাদের ভাণ্ডার ভরে রাখি। আমাদের মুক্তি যােদ্ধা ভাইয়েরা যেন শীতের আক্রমণে কোন রূপ কষ্ট না পান। আমাদের দেওয়া গরম-জামা কাপড়ের উত্তাপে, আমাদের প্রাণঢালা সেবাও স্নেহের উত্তাপে তাদের দেহ-মন যেন চাঙা হয়ে ওঠে।
ময়ের জাক ১: ২।
২২ অক্টোবর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯