শত্রুর ঐ কামানের ঠোটে মৃত্যুর কালাে ছায়া
পাকিস্তানের সামরিক জান্তার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে-বাঙলার মাটি আর মানুষ ওরা যেমন গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে ছড়িয়েছে যুদ্ধ আর মৃত্যু ঠিক তেমনই বাংলার মানুষ গ্রামে গঞ্জে-শহরে আর বন্দরে গড়ে তুলেছে প্রতিরােধের দুর্গ, যে দুর্গ অজেয়। | প্রতি মুহূর্তে বাংলার বীর মুক্তিবাহিনীর বীর যােদ্ধারা সৃষ্টি করে চলেছে একের পর এক বীরত্বের, ত্যাগের আর ধৈর্য্যের নতুন নতুন ইতিহাস। প্রতিদিনই মুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা সেখানে উড়ছে সবুজ সােনালী আর লাল রঙে বর্নাঢ্য বাংলাদেশের পতাকা। বাংলাদেশের প্রতিটি রণাঙ্গনে সর্বাত্মক সম্মুখ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত বাংলার মুক্তিবাহিনীর নও-জওয়ানরা। ৩০ হাজার নিয়মিত সেনাবাহিনীসহ এক লক্ষ সেনার একটি সুদ বাহিনী স্থরে জলে আর অন্তরীক্ষে প্রস্তুত যে কোন মুহুর্তে শক্রর বিরুদ্ধে
ঝাপিয়ে পড়ার জন্য। বাংলাদেশের বিভিন্ন রণাঙ্গনে আর মুক্তাঞ্চলের গণ মানুষের মধ্যে অভূতপূর্ব মনােবল ও হানাদার বাহিনীকে পর্যুদস্ত করার ইস্পাতকঠিন শপথের সঞ্চার হয়েছে। অপরদিকে পাক হানাদার বাহিনীর মনােবল দিন দিন হিমাঙ্কে নেমে এসেছে। প্রতিদিনই হানাদার বাহিনীর কামান বিভিন্ন রণাঙ্গনে স্তব্ধ হয়ে যায় আমাদের মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের সম্মুখে। বাংলাদেশে সামরিক ব্যর্থতাকে চাপা দেয়ার জন্যই পাকিস্তান আজ পাক-ভারত বিরােধের মত আর একটি সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাংলাদেশে এই নব্য নাসীদলের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী এটা তারা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছে। পশ্চিম পাকিস্তানসহ সমগ্র বিশ্বকে ধােকা দেওয়ার এটা অন্যতম। পন্থা। ইয়াহিয়া খান সম্প্রতি তেহরানে কিছু বিদেশী রাষ্ট্রনায়কদের কাছে সীমান্তে ব্যাপক সৈন্য সমাবেশের কথাও স্বীকার করেছে। বাংলাদেশে সামরিক পরাজয়কে চাপা দেয়ার এই অপ-কৌশলে ইয়াহিয়া সাফল্য লাভ করতে পারবেনা, কেননা আমরা আজ শত্রুর কামানের ঠোটে মৃত্যুর কালাে ছায়া দেখতে পাচ্ছি। পাকিস্তান মরণকামড় দেওয়ার জন্য এই ব্যর্থ প্রয়াসে মত্ত।
স্বদেশ ১ : ৪
২১ অক্টোবর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯